জনসম্মুখে এক যুবক চার-পাঁচটা ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়ে যাচ্ছে। জটলা বেঁধে মানুষ জন শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে তামাশা দেখছে। কেউ এগিয়ে আসছেনা প্রতিবাদ করতে। ভীড়ের মাঝ থেকে হঠাৎ এক কিশোরী কন্ঠে উচ্ছাস নিয়ে প্রফুল্লচিত্তে বলে ওঠে,
“ওয়াও! একা একটা মানুষ কি সুন্দর এতো গুলো ছেলেকে পিটিয়ে যাচ্ছে! একেবারে সিনেমার হিরোর মতো। তুসু! তোদের এলাকায় এতো সুন্দর, সাহসী একটা হিরো আছে আগে বললি না কেন? আমি তো জাস্ট ফিদা হয়ে গেছি।”
খালাতো বোন দৃষ্টির মুখে এমন কথা শুনে নাক-মুখ কুঁচকে বিরক্ত নিয়ে তাকায় তুসী। কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে একেবারে দৃষ্টির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“এভাবে নির্দয়ের মতো ছেলে গুলোকে মারছে সেটা দেখে কষ্ট না পেয়ে তুই মুগ্ধ হচ্ছিস? পাষাণ মেয়ে কোথাকার।কোনো অঘটন না চাইলে নজর সরা ঐ গুন্ডার থেকে। তুই জানিস এই ছেলে কতটা ভয়ংকর? যদি জানতি তাহলে ঐ সুন্দর চেহারা দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছিস তার থেকেও দ্বিগুণ আতঙ্কে নীল হয়ে যেতি।”
তুসীর কথায় যথাপরনায় অবাক দৃষ্টি। কন্ঠে বিস্ময় ভাব ধরে বলে,
“ওমা! চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটা রিয়েল হিরো দেখে মুগ্ধ হব না! এমন ফাইটিং স্কিল কয়জনের থাকে? তোদের এলাকায় এরকম ছেলে আর এক পিস আছে না কি? আর এমন মারামারি সিনেমায় দেখে মুগ্ধ হতে পারলে রিয়েল লাইফে দেখে কেন মুগ্ধ হব না? শুধু সিনেমায় অভিনয় করে মারামারি করলে হিরো আর বাস্তবে করলে গুন্ডা! এটা তোর কেমন যুক্তি ভাই?”
দৃষ্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয়না তুসী। হাত ধরে ঝড়ের গতিতে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসে। দ্রুত পায়ে কিছুটা দূরে গিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলে,
“বোইন!দুইদিনের জন্য বেড়াতে আসছিস ভদ্র মেয়ের মতো বেড়ানো শেষ করে চলে যা। দয়া করে কোনো ফালতু টপিক নিয়ে যুক্তি খাটিয়ে নিজের মাথার সাথে সাথে আমার মাথাটাও নষ্ট করিস না।”
ঝারি মেরে তুসীর হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় দৃষ্টি। চোখ পিট পিট করে বলে ওঠে,
“অদ্ভুত তো! আমি কখন তোর মাথা নষ্ট করতে গেলাম? জাস্ট বললাম ছেলেটাকে ভালো লেগেছে। সিম্পল! বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সব মানুষেরই আকর্ষণ থাকে। সেই আকর্ষণ থেকেই আমার ছেলেটাকে ভালো লেগে গেছে। বলতে পারিস লাভ এট ফার্স্ট সাইট। এতে তোর সমস্যা হচ্ছে কোথায়?”
“তুই জানিস এই ছেলে কে? কি তার পরিচয়, তার চরিত্র কেমন?”
তুসীর প্রশ্নে খুশি মনে দৃষ্টি বলে ওঠে,
“আমি তো সেই কখন থেকেই প্রশ্ন গুলো তোকে করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তুই সেই সুযোগ দিলে তো! আচ্ছা এখন বল ছেলেটা কে?”
হতাশ হয় তুসী। বুঝতে পারে এই পাগল মেয়েকে যে পযর্ন্ত তার মুগ্ধ পুরুষের কুকীর্তি খুলে বলা না হবে সে পযর্ন্ত তার পাগলামি থামবেনা। ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“সব বলব। কিন্তু এখানে না। আগে বাড়ি চল। তারপর যা যা জানতে চাইবি সব সব বলব। তবুও প্লিজ বোন রাস্তায় আর কোনো পাগলামি করিস না!”
মেনে নেয় দৃষ্টি। ভদ্র মেয়ের মতো মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়ে তুসীর হাত ধরে এগিয়ে যায় বাড়ির দিকে। মনের ভিতর তার রঙিন প্রজাপতি গুলো ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে। তার সতেরো বছরের জীবনে এই প্রথম কোনো পুরুষকে দেখে মন পায়রা গুলো বাকবাকুম করে ডাক পারছে। প্রেমহীন সতেরোটা বসন্তের পর তার জীবনে রঙিন বসন্তের কোকিল ডেকে উঠেছে। এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে!
সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় গতকাল খালামনির বাড়িতে বেড়াতে এসেছে দৃষ্টি। নিজের চিরচেনা ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে এতোদূর ঢাকা শহরের ব্যস্ত নগরী সাভারে খালামনির বাসায় খুব একটা আশা হয়নি তার। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে হওয়াই সেই ছোট থেকেই একটু পাগলাটে স্বভাবের ছিল দৃষ্টি। যার কারণে মেয়েকে কাছ ছাড়া করতে বড্ড ভয় কাজ করে সাদেক সাহেব আর দিলশান আরা’র। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। দিনভর কান্নাকাটি করে বহু কষ্টে বাবা-মা’কে মানিয়ে তবেই খালামির বাড়িতে কিছুদিনের জন্য আসতে পেরেছে দৃষ্টি। আসার পর এই প্রথম খালাতো বোন তুসীর সাথে এলাকাটা ঘুরে দেখার জন্য বেড়িয়েছিল। আর সেখানেই দেখা পেয়ে গেল তার জীবনের বসন্তের কোকিলের।
সদর দরজা ডিঙিয়ে ড্রয়িং রুমে ডুকতেই শিউলী বেগমের প্রশ্নে সহসা থেমে যায় দুজন,
“কি রে! এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে? মাত্রই না বের হলি! এর মাঝে ঘুরাঘুরি শেষ?”
খালামনির প্রশ্নে অস্থিরচিত্তের দৃষ্টি কিছু বলতে নিলেই ফট করে তার মুখ চেপে ধরে তুসী। চোখ রাঙিয়ে দৃষ্টির দিকে এক পলক তাকায়। পরোক্ষণে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখে মেঁকি হাসি ফুটিয়ে বলে,
“বাইরে প্রচুর গরম আম্মু। এমন ভর দুপুরে রোদের মাঝে কেউ হাঁটতে যায়? তোমার আহাম্মক বোন ঝি’র কথায় ঘুরতে গিয়ে গরমে আমার জান বেড়িয়ে আসছে। তাই চলে এসেছি। বিকেলে আবার যাব।”
মেয়ের কথায় পাত্তা দেয়না শিউলী বেগম। চোখ-মুখ কুঁচকে তুসীকে বলে ওঠে,
“তুই ওর মুখ চেপে ধরেছিস কেন? কি বলতে চাইছে বলতে দে। ওর মুখ থেকে হাত সরা বলছি।”
মায়ের কঠিন ধমকে ধপ করে নিভে যায় তুসী। সাথে সাথেই দৃষ্টির মুখ থেকে হাত সরিয়ে ইশারায় অনুরোধ করে, “প্লিজ বোন! দয়া করে আম্মুকে রাস্তার ঘটনা বলতে যাস না।” দৃষ্টি বোঝে নেয় তুসীর চোখের ভাষা। কথা ঘুরিয়ে বলে,
“তেমন কিছুনা খালামনি। আমি আর একটু ঘুরতে চাইছিলাম কিন্তু তোমার মেয়ে দিলনা। এটাই বলে চাচ্ছিলাম তোমাকে।”
শিউলী বেগমের কুঁচকানো ভ্রু-দ্বয় শিথিল হয়। মুখে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,
“এই গরমে এভাবে ঘুরে বেড়ালে অসুস্থ হয়ে যাবি মা। বিকেলে রোদ পরলে না হয় আবার যাবি। এখন ঘরে গিয়ে দুজন হাত-মুখ ধুয়ে নে। সন্ধ্যায় তোর তূর্ণা আপু আসবে। জামাই আসবে সাথে। হাতে আমার প্রচুর কাজ। এই অল্প সময়ে কিভাবে কি করব বুঝতে পারছিনা। তোরা দ্রুত এসে খেয়ে নে। আমি পরে আর সময় পাবনা।”
বড় বোন আর বোন জামাই আসার খবর পেয়ে দৃষ্টি, তুসী দুজনেই খুশিতে আত্মহারা। আমুদে কন্ঠে দৃষ্টি চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
“সত্যি খালামনি ওরা আসবে? ইশ! কতদিন ধরে আপুর সাথে দেখা হয় না। আমি যখন আসি তখন আপু শশুর বাড়ি থাকে। আবার আমি চলে গেলে আপু আসে। ফাইনালি এবার দেখা হবে আমাদের।”
দৃষ্টির বাচ্চামো দেখে মুচকি হাসে শিউলী বেগম। মুখে কিছুই বলেনা। শুধু মনে মনে ভাবেন তার বোনের মেয়েটা আর কখনো বড় হবেনা।
****
অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই কখন থেকে জ্বলজ্বল চোখে কিছু শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে তুসীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দৃষ্টি। গুন্ডা একটা ছেলের প্রতি তার এমন মাত্রাহীন আগ্রহ দেখে ক্ষণে ক্ষণে বিস্মিত হচ্ছে তুসী। গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলে সন্তুর্পণে দরজার দিকে তাকিয়ে কেউ আছে কি না দেখে নিয়ে নিচু কন্ঠে বলতে শুরু করে,
” রক্তিম শিকদার। আমাদের মেয়ের আজীজ শিকদারের বড় ছেলে। পেশায় একজন আর্মি মিলিটারী অফিসার ছিল।”
“ছিল বলছিস কেন? তারমানে কি এখন আর নেই? আমার তো গুন্ডা+ ডিফেন্স অফিসার দুটোই পছন্দ। ইশ! ভাই দেখেছিস আমার কি ভাগ্য! প্রথম দর্শনে যাকে ভালো লাগল তার মাঝে আমার পছন্দ অনুযায়ী সব গুণ আছে। কি লাকি রে আমি! খুশিতে তো আমার নাচতে ইচ্ছে করছে।”
কথার মাঝে বাঁধা পরায় বিরক্ত হয় তুসী। বিরক্তি ভাবটা লুকিয়ে মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“থাম বোন! আগেই এতো নাচন-কুদনের দরকার নাই। আগে সবটা শুন। পরে যদি নাচার আগ্রহ থাকে তবে স্পিকারে পছন্দের গান ছেড়ে উড়াধুড়া নাচিস। তার আগে আমাকে সবটা বলতে দে। কথার মাঝে যদি আবার বাঁধা সৃষ্টি করিস তাহলে কিন্তু আমি আর বলবনা।”
একটু নড়েচড়ে বসে দৃষ্টি। চোখে-মুখে সিরিয়াস ভাব ফুটিয়ে বলে,
“আর বাঁধা দিবনা। বল তুই।”
কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলতে শুরু করে তুসী,
” ক্যাডেট কলেজে থাকতে একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয় রক্তিম শিকদারের।” কথাটা শুনে উৎফুল্ল মুখটা চুপসে যায় দৃষ্টির। প্রেম শুরু হবার আগেই কি তবে বিরহ যন্ত্রণা সইতে হবে তার? তার হিরো প্রেম করে অন্য একটা মেয়ের সাথে! কথাটা শুনেই কেমন বুকের ভিতর হলকা ফুটছে। ইশ! কি যন্ত্রণা কি যন্ত্রণা! দৃষ্টির চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে অল্প হাসে তুসী। বেচারীর অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছে শুনেই এই দশা! পুরোটা শুনে কার্ডিয়াক অ্যাটাক না হলেই হয়। দৃষ্টির দুঃখি ভাবটা পাত্তা দেয়না তুসী। বরং তার এই অবস্থা দেখে আরও উৎফুল্লতার সাথে বাকী টুকু বলতে থাকে,
“দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রেম করে আর্মিতে জয়েন করার পর মেয়েটাকে বিয়ে করে রক্তিম শিকদার। ওনার বাবা-মা, ছোট ভাই, বোন আর ওনার স্ত্রী জেরিন সাভারে তাদের বাড়িতেই থাকত। রক্তিম শিকদার তার কর্মসূত্রে চট্টগ্রাম ক্যান্টলমেন্ট থাকত। ছুটিতে অনেক দিন পর পর বাড়িতে আসত। এভাবেই দূরত্বের মাঝেও তাদের সুখের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কি জানি হলো। সুখে ভরপুর শিকদার বাড়িতে ছড়িয়ে পরে শোকের ছায়া। এক সকালে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পরে রক্তিম শিকদারের হাতে খুন হয় তার স্ত্রী। ছোট ভাই গুরুতর আঘাতে ছয় মাস কোমায় থেকে মারা যায়। দুটো খুনের দায়ে জেল হয় তার। চাকরি চলে যায়।পরবর্তীতে অবশ্য তদন্ত করে রক্তিম শিকদার নির্দোষ প্রমাণিত হয়। কিন্তু এলাকা বাসীর কাছে দিনকে দিন সে নিজেই নিজেকে একটা আতঙ্ক হিসেবে জানান দেয়। শান্ত, বিনয়ী, ধৈর্যশীল রক্তিম শিকদার হয়ে যায় অশান্ত, দূর্বার এক ত্রাস। যে ত্রাসের নাম শুনলেই ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে পুরো এলাকাবাসী। দুদিন পর পর এখানে ওখানে মারামারি, রক্তারক্তি এসব যেন ওনার নিত্য দিনের রুটিন হয়ে ওঠেছে। আজীজ শিকদার একজন মেয়র পরিচয়ের বাইরে সাধারণ ব্যক্তি হিসেবেও খুবই পরোপকারী। দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। তবে আজীজ শিকদারের নামে যদি একটা দোষ খোঁজে পাস তবে বিপরীতে একশোটা গুণ খোঁজে পাবি। এলাকাবাসীর চোখের মণি শ্রদ্ধাভাজন সেই আজীজ শিকদারের ছেলের এমন পরিণতি দেখেও জনগণ নির্লিপ্ত। কারণ সকলের চোখেই রক্তিম যা করে তা ভালোর জন্য করে। এই রক্তিম শিকদারের জন্য আজ দুই বছর যাবৎ এই এলাকায় কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে ইভটিজিং করার সাহস পায়না। জনগণের কাছে রক্তিম শিকদারের এই কাজ গুলো ভালো হলেও আজীজ শিকদারের কাছে লজ্জার বিষয়। একজন সনামধন্য মেয়রের ছেলে এমন গুন্ডামি করে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায় এটা মানতে না পেরে ছেলেকে বোঝাতে অপরাগ হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যদি বলে। রক্তিম শিকদার ও কোনো উচ্চবাচ্য না করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। তবে গুন্ডামি বা এই এলাকা ছাড়েনা। নিজের পাওয়ার খাটিয়ে ঠিকই রাজ করে বেড়ায় পুরো এলাকায়।”
অবাক বিস্ময়ে বিহ্বল দৃষ্টি। অবাকতার রেশ ধরে রেখেই বিস্মিত বদনে প্রশ্ন করে,
“ওনার ভাই আর স্ত্রী’কে যদি রক্তিম শিকদার না মেরে থাকে তবে কে হত্যা করেছিল?”
” আততায়ীর হামলা। যে মেয়ের সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রণয়ের পর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল সেই মেয়েকেই রক্তিম শিকদার মেরে ফেলবে বিষয়টা সবার কাছেই হাস্যকর। কারণ এলাকা বাসী কমবেশি সবাই জানে তাদের প্রেম কাহিনি সম্পর্কে। পুরো সাভারের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে তাদের প্রেমের স্মৃতি। মেয়েটাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো রক্তিম শিকদার। আর ওনার ছোট ভাই সেও ছিল তার প্রাণ। খুব কাছের দুজন মানুষকে হারিয়েই না কি রক্তিম শিকদারের এই পরিণতি। এলাকা বাসী এটাই মানে।”
নিজ মনে কতক্ষণ কিছু একটা ভাবে দৃষ্টি। এরপর ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
“সে যায় হোক। আমার রাস্তা তো ক্লিয়ার। বউ ছিল। এখন তো আর নেই। সুতরাং আমার সাথে প্রেম করতে বা বিয়ে করতেও কোনো অসুবিধা থাকার কথা না।”
বিস্ময়ে তুসীর চোখ দুটো কুঠোর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কি বলে এই মেয়ে! মাথা কি পুরোপুরি গেল না কি? এতো কাহিনি জানার পরও কিভাবে এমন একটা ছেলের সাথে নিজেকে জড়ানোর কথা ভাবতে পারে? এই মেয়ে কি আদও সুস্থ্য মস্তিষ্কে ভেবে কথা গুলো বলেছে?,
“পাগল হলি তুই? এতো কিছু জানার পরও কিভাবে এসব কথা বলিস তুই? শুন দৃষ্টি! জীবনটা কোনো নাটক সিনেমা না যে ফেন্টাসি জগতে বাস করে যা ইচ্ছে তাই ভেবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে নিবি আর তুই সাকসেস হয়ে যাবি। এটা বাস্তব জীবন। এখানে কোনো সিনেমাটিক ঘটনা ঘটেনা। এমন কোনো ভুল করিস না যা তোর সহ তোর পুরো পরিবারের আজীবনের কান্না হয়ে দাঁড়ায়।”
কথা গুলো একটুও পছন্দ হয় না দৃষ্টির। চোখ-মুখ কুঁচকে বলে ওঠে,
“বড়দের মতো আচরণ বাদ দে। ভুলে যাস না আমি তোর থেকেও গুণে গুণে তিন মাসের বড়। সো এসব জ্ঞান তোর থেকে একটু হলেও বেশি আছে আমার। আর একটা কথা ভুল বললি তুই। জীবন কোনো সিনেমা না হলেও নাটক, সিনেমা কিন্তু জীবনের একটা অংশ থেকেই তৈরী হয়। মানুষের জীবনে যদি ঐসব নাটকীয় ঘটনা না ঘটত তাহলে কখনো এসব মানুষের ভাবনায় আসতনা। আর ভবিষ্যতে কি হবে না হবেএটা কেউ আগাম বলতে পারে? অযথা এসব ভেবে কেন ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাব! যুদ্ধের পরেই তো জয় আসে। আমিও না হয় যুদ্ধে নামলাম। প্রেমের যুদ্ধ। আমার বিশ্বাস এই যুদ্ধে জয় আমার হবেই। তুই শুধু একটু আমার পাশে থেকে আমাকে অনুপ্ররেণা দিস। সেটা যদি না পারিস তবে চুপ করে থাকিস। তবুও অহেতুক কথা বলে আমার মনটা আগেই ভেঙ্গে দিসনা প্লিজ।”
এমন কথার পর আর কিছু বলার থাকতে পারে তুসীর! অসহায়ের মতো শুধু তাকিয়ে থাকে দৃষ্টির মুখের দিকে। ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্কে বুকটা ধরাস করে ওঠে আগাম বিপদের কথা ভেবে। শেষমেশ উপায় না পেয়ে বলে ওঠে,
“তুই কিন্তু আগুন নিয়ে খেলতে চাইছিস দৃষ্টি। যেটা আমি হতে দিবনা। আমার কথায় যদি এসব পাগলামি বন্ধ না করিস। তবে কিন্তু আমি আম্মু-আব্বু, খালামনি-খালুজান সবাইকে বলে দিব। তখন আজীবনের জন্য তোর সাভার আসা বন্ধ হবে। এটা ভালো হবে তোর জন্য?”
তুসীর কথার বিপরীতে জিদ্দি স্বরে অনঢ় হয়ে বলে ওঠে দৃষ্টি,
“পুরো ঘটনাটা আমি আর তুই ছাড়া তোর মুখ থেকে যদি অন্য কেউ জানতে পারে তবে কিন্তু তোর সাথে আমার আজীবনের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হবে। ভুলে যাব আমি তুই একসময় আমার খালাতো বোন+ প্রাণের থেকেও প্রিয় বান্ধবী ছিলি।”
দৃষ্টির কথায় মর্মাহত হয় তুসী। অসহায় নয়নে তাকিয়ে থাকে শুধু তার দিকে। বলার মতো আর কিছুই খোঁজে পায়না।
চলবে….
#দৃষ্টির_আলাপন
#আদওয়া_ইবশার
#সূচনা_পর্ব