#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_2
আবিরের কথা শুনে তিশার মেজাজটা গরম হয়ে যায়। তিশা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রেগে বলে।
“আমি বলেছি তো এক বার, আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝার চেষ্টা করছেন না।”
তিশা এই কথাটা বলে ঘরে ভিতরে যায়।
“মা বাবা প্লিজ তোমরা আমার কথাটা একটু শুনো প্লিজ।”
রেহেনা বেগেম আর নিসা তিশার কাছে আসে তিশা পুনরায় বলে, “মা বিশ্বাস করো ওই লোকটা সব মিথ্যা কথা বলছে আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করে নি। আমি তো ওই লোকটাকেও চিনি না।”
রেহেনা বেগম ঠান্ডা গলায় বলেন, “তিশা তুই চলে যা এই বাড়ি থেকে। তোর ববার শরীরটা ভালো না তোকে দেখলে হয়তো আরও অসুস্থ হয়ে যাবে। প্লিজ তুই চলে যায় প্লিজ আমি তোকে হাত জোড় করে বলছি তুই চলে যায় আর কোনো দিন এই বাড়িতে আসবি না কোনো দিন না।”
“মা তুমিও আমাকে অবিশ্বাস করছো।”
“হে করছি অবিশ্বাস আর অবিশ্বাস করার কারণ ওই পেপারগুলো সব সত্যি যেখানে তোর নিজের সাইন আছে। তাই তুই চলে যা এই বাড়ি থেকে আর এই বাড়িতে থেকে তুই অশান্তি বাড়াস না তোর বাবার অবস্থাটা একটু বোঝ লোকটা আজকে অনেক আপমানিত হয়েছে তোর জন্য। আমি আর চাই না তোকে দেখে ওনার আরো শরীর খারাপ হয়ে যাক। তাই তুই যদি আমাদের ভালো যাস তাহলে চলে যা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।”
তিশা দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে মা আমি চলে যাচ্ছি এই বাড়ি ছেড়ে তোমরা যখন চাও আমি এই বাড়িতে না থাকি তাহলে তাই হবে আমি চলে যাচ্ছি এই বাড়ি ছেড়ে আর কোনো দিন আসবো না কোনো দিন না।”
তিশা বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে দেখে আবির এখন দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে দেখে তিশার রাগটা দিগুন বেড়ে যায়। তিশা দৌঁড়ে গিয়ে আবিরের কলার চেপে ধরে।
তিশা আবিরের কলার ধরাতে আবির কিছুই বলে নি বরং ওর ভালোই লাগছে তিশা ওর কাছে আসাতে। অন্য কেউ যদি আবিরের কলার ধরতো তাহলে আবির হয়তো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো না। যে দুটো হাত দিয়ে আবিরের কলার ধরেছে সেই দুটো হাত এতক্ষণে ভেঙ্গে দিতো।
“কেন আমার সাথে এমনটা করলেন কেন? কি দোষ করেছি আমি কি দোষ?”
তিশা আর কিছু বলার আগেই আবিরের গায়ের উপর ঢলে পড়ে। তিশার হঠাৎ করে এমন হওয়াতে আবির অস্থির গলায় বলে।
“তিশা,, এই তিশা কি হলো তোমার? প্লিজ কথা বলো।”
তিশা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আবির তিশাকে তাড়াতাড়ি করে কোলে তুলে নিয়ে গাাড়িতে শুয়ে দেয়। আবিরের কোলের উপর তিশার মাথাটা রাখে। আর ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে।
________
প্রায় আধ ঘন্টা পর তিশার জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবিষ্কার অচেনা একটা ঘরে। তিশা ধপ করে উঠে বসে সামনে তাকিয়ে দেখে আবির সোফার ওপরে পা উপরে পা তুলে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবিরের এমন ভাবে তাকানো দেখে তিশা রেগে বলে।
“আমাকে এখানে কোন সাহসে আনা হয়েছে???
আবির উঠে দাঁড়ায় কিন্তু কিছু বলছে না। আবিরকে কথা বলতে না দেখে তিশা আবার বলে।
“কি হলো কথা বলছেন না কেন? আর আমি কোথায়? কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে?
তিশা ভালো করে সারা ঘর চোখ বুলিয়ে দেখে অনেক সুন্দর করে ঘরটা সাজানো। ঘরের চারিদিকে দামি দামি সব জিনিসপত্র। দেখে বুঝা যাচ্ছে লোকটা খুব সৌখিন। তিশা বেড থেকে নেমে আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
“কি হলো বলুন?”
আবির শান্ত গলায় বলে, “রিলেক্স শান্ত হও তুমি।”
“শান্ত হবো মানে আপনি আমার জীবনটা পুরো ধ্বংস করে বলছেন আমি শান্ত হবো। আর ওই সব বিয়ের পেপারের আমার সাইন আসলো কোথা থেকে? আমি তো এমন কোনো কিছুতে সাইন করি নাই যেটাতে আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা ছিলো। তাহলে এসব পেপারের সাইন আসলো কোথা থেকে আমার বলুন?
আবির মুচকি হেসে বলে, “জানতে চাও তাই না কোথা থেকে আমাদের বিয়ের কাবিন নামাতে তোমার মূল্যবান সাইন এসেছে।”
“হে জানতে চাই আর বিয়ে নামক এই ছেলেখেলা আমি মানি না বুঝতে পেরেছেন আপনি।”
“তুমি মানো আর না মানো তুমি আইনগত ভাবে আমার স্ত্রী আর সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়েই থাকবে বুঝলে।”
“আপনার স্ত্রী আমি হয়ে থাকবো কোনো দিন না যেখানে আমার অজান্তে আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন সেখানে আপনাকে আমি আমার স্বামী হিসেবে মানি না। আর আপনি কি করে আমাকে বিয়ে করলেন। এ রকম ভাবে কি আপনি সব মেয়েদের বিয়ে করেন আর মেয়েদের বিয়ের দিন গিয়ে হাজির হয়ে নিজেকে ওই মেয়ের স্বামী দাবি করেন।”
আবিরের রাগ উঠে যায় তিশার লাস্ট কথাটা শুনে। আবির রাগে বশে তিশার দু বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“একদম চুপ আর একটা কথা বলবে না। আর কি বলছিলে তুমি আমি সব মেয়েদেরকে এভাবে বিয়ে করে তারপর ওদের বিয়ের সময় গিয়ে ওদের বাড়িতে হাজির হই। আরে তুমিই প্রথম মেয়ে যাকে প্রথম দেখাতে ভালোবেসেছি। তাই তোমাকে যাতে আমি না হারাই তার জন্য আমি তোমার অজান্তেই তোমাকে বিয়ে করেছি বুঝলে তুমি।”
তিশা আবিরের রাগ দেখে খুব ভয় পায় কারন এতক্ষণ যাবত আবির একটুও রাগ দেখায় নি। তিশার সব কথা শান্ত হয়ে শুনেছে কিন্তু তিশার এই কথাটা শুনে যেন আবির ক্ষেপা ষাঁড় হয়ে গেছে। তিশা ছোট করে বলে।
“আমাকে ছাড়ুন প্লিজ আমার খুব লাগছে।”
আবির তিশাকে সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে রাগটা ধমন করে বলে।
“আর শুনো তোমাকে আমি কি করে বিয়ে করেছি? ওই দিন যখন তুমি নিজেকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলি ওই দিনেই আমি তোমাকে মন দিয়ে বসেছিলাম। তুমিই প্রথম মেয়ে যাকে দেখে আমার বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত টান অনুভব হয়েছিলো তোমার জন্য। তোমার ওই চোখ তোমার ওই হাসি, তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট, তোমার ওই ঘন রেশমি কালো চুল সব কিছু মিলিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম তোমার জন্য। শুধু মাত্র তোমার ওই মায়াবী মুখটা এক নজর দেখার জন্য আমি অফিসের সব কাজ ফেলে তোমার কলেজের সামনে ছুটে আসতাম। যে আবির রহমান কাজ ছাড়া কোনো কিছু ভাবতে পারতো না সেই আবির রহমানের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছিলে তুমি। নিজের মাঝে এমন পরির্বতন দেখে বড্ড হাস্যকর লাগত নিজের কাছে। তখনেই আমি বুঝতে পেরেছি তুমি সেই মেয়ে যাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। ভেবেছিলাম তোমার বাবা মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো কিন্তু পরে জানতে পারি তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। যখন তোমার বিয়ে হয়ে যাবে খবরটা শুনি তখন নিজেকে খুব অসহায় লেগেছিল। যাকে মন দিয়ে বসলাম সেই মেয়েটার বিয়ে সামনে যখনেই কথাটা মনে পড়ত তখনেই নিজেকে পাগল পাগল লাগত। ভাবে পাচ্ছিলাম কি করবো, মাথায় অদ্ভুত রকমের চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খেতো। কি করে তোমাকে নিজের করে পাওয়া যায় আর তখন তোমাকে আমি বিয়ে করার প্ল্যান করি আর তোমার বিয়ের দিনেই হাজির হবো ভেবে রেখেছিলাম আর ঠিক সেটাই করলাম আজকে। আর তোমাকে আমি বিয়ে করি কি করে জানো?”
তিশা প্রশ্নবোধক নয়কে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবির নিঃশব্দে হেসে আবার বলা শুরু করে, “মনে আছে তোমার তুমি এক বার নাম করা রহমান রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলে তোমরা সবাই বন্ধু মিলে। আর তখন তোমাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় নি। তখন অবশ্য তোমার একটু সন্দেহ হয়েছিল টাকা না নেওয়ার জন্য যেটা তোমার মুখ দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম।”
তিশা ভ্রু কুচকে বলে, “তার মানে ওই দিন আপনি টাকা দিয়েছিলেন যার জন্য টাকা নেওয়া হয় নি আমাদের কাছ থেকে।”
“হে কারন ওই রেস্টুরেন্টা আমার আর আমার বউ আমার রেস্টুরেন্ট খাবে তাও আবার টাকা দিয়ে তা কি করে হয় বলো।”
“তার মানে ওই রেস্তোরাটা আপনার!”
“হুম যেখানে আমাদের দুজনের বিয়েটা হয়েছিল।”
“কিহ?”
“হে ওখানেই আমাদের বিয়ে হয়েছে আমি ভাবতেই পারি নি তুমি নিজে থেকে এসে আমার কাছে ধরা দেবে। তুমি যেখানে বসে ছিলে ঠিক ওপর সাইডেই আমি বসা ছিলাম কিন্তু তুমি আমার মুখ দেখো নি কিন্তু আমি তোমার গলা শুনেই ঠিকেই তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম। তোমার মনে আছে একজন তোমার কাছে কত গুলো পেপার নিয়ে এসেছিল আর সাইন করে দিতে বলেছিল।”
“হে মনে আছে।
“বলো তো ওই গুলো কিসের পেপার ছিল?”
“আপনার রেস্টুরেন্টে আর আপনি জানেন না কিসের পেপার?”
“না জানি না তুমি বলো শুনি।”
“শুনুন আমি এতটাও ভালো মুডে নেই যে আপনার এসব আজাইরা প্রশ্নের উত্তর দিবো।”
এরপর আবির যা বলে তিশাকে তাতে তিশা অবাকের শেষ চূড়ায় পৌঁছে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার পেটে পেটে যে এত কুবুদ্ধি থাকতে পারে চেহারা দেখে বুঝা বড় মুশকিল।
#চলবে
#মিশে_আছি_তোমাতে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122119423562106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc