মিশে_আছি_তোমাতে ❤ #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_13

2
279

#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_13

আবির ঘরে ঢুকে দেখে তিশা ফ্লোরে বসে কান্না করছে। আবির দৌঁড়ে তিশার কাছে গিয়ে হাটু ঘেড়ে বসে বলে।

“কোথায় ছিলে‌ তুমি এতক্ষণ? তুমি জানো তোমাকে আমি কোথায় কোথায় খুজেছি পাগলের মতো? তোমাকে দেখতে না পেয়ে বুঝতে পারছো আমার কি অবস্থা হয়ে ছিল! কি হলো কথা বলছো কেন? তোমাকে আমি কিছু বলছি তো কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ?”

তিশা কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে, “আমি যেখানেই থাকি তাতে আপনার কি?”

আবির ভ্রু কুঁচকে বলে, “আমার কি মানে? তুমি আমার স্ত্রী তোমার জন্য আমার চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক।”

তিশা উঠে দাঁড়ায় সাথে আবিরও। তিশা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে, “স্বামী আপনি? হু আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না আর মানবোও না কোনো দিন।”

“কোন কি এমন দোষ করেছি যে তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবে না। ও তোমাকে আমি জোর করে বিয়ে করেছি তার জন্য।”

তিশা আচমকা আবিরের কলা ধরে বলে, “হ্যাঁ এটাই আপনার দোষ। আপনার জন্য শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার বাবা আমাকে আর নিজের মেয়ে হিসেবে মানে না বুঝতে পারছেন আপনি আমার কষ্টটা। কোন জন্মের প্রতি শোধ নিচ্ছেন আপনি আমার উপর কোন জন্মের?”

“তিশা আমার কথাটা শুনো একটু প্লিজ।”

“কি কথা শুনবো আপনার আপনি বুঝতে পারছেন যে আপনি আমার কত বড় একটা ক্ষতি করেছেন। কেন এমনটা করলেন আপনি কেন?”

তিশা আবিরের কলার ছেড়ে দিয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। আবির তিশাকে ধরতে যাবে। সাথে সাথে তিশা বলে, “একদম আমাকে টাচ করবেন না আপনি একদম না। আপনি চলে যান আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান। আপনাকে আমি আর সহ্য করতে পারছি না চলে যান এখান থেকে চলে যান। আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দেন প্লিজ।”

তিশা আর কিছু বলতে পারে না সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পড়ে যেতে নিয়ে আবির তিশাকে ধরে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে‌ বিছানাতে শুয়ে দেয়।

“তিশা প্লিজ চোখ খুলো তিশা।”

আবির তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে কল করে। কিছুক্ষন পরেই ডাক্তার এসে তিশাকে চেকাপ করে বলেন, “চিন্তার কোনো কারন মানসিক চাপের কারনে ওনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরবে ওনার।”

“ধন্যবাদ আপনাকে।”

“আচ্ছা এবার তাহলে আমি আসি।”

আবির সোফাতে বসে তিশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আধ ঘন্টা পর তিশার জ্ঞান ফিরে আস্তে আস্তে নিজের দু চোখ খুলে। তিশার জ্ঞান ফিরতে দেখে আবির তিশার কাছে গিয়ে বলে, “তিশা তুমি ঠিক আছো তো?”

তিশা উত্তেজিত হয়ে বলে, “আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? আপনি আমার কথাটা বুঝতে পারেন নি আপনাকে আমি সহ্য করতে পারছি না প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দেন প্লিজ।”

আবির আর কোনো কিছু না বলে চলে‌ যায়। তিশার ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে ফেলতে। কিন্তু এটা যে তিশা করতে পারবে না আত্নহত্যা করা যে মহাপাপ।

এদিকে আবির বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে। গার্ডরা আবিরের পেছনে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় সাথে সাথে আবির রেগে বলে উঠে।

“কেউ আমার সাথে আসবে না কেউ‌ না।”

সোহেল ভয়ে ভয়ে বলে, “কিন্তু স্যার।”

আবির এবার চিৎকার করে বলে, “আমি একবার বলেছি‌ যখন কেউ আসবে না মানে কেউ আসবে না।”

সোহেল ভয় পেয়ে যায় আবির এমন ভাবে কথা বলতে‌ দেখে। আবিরের চোখ গুলো রাগে লাল‌ রক্তবর্ণ ধারন করে ফেলছে। কপালের নীল রগটা ফুলে গেছে রাগে। নিরব আবিরের চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি বাড়ির বাইরে বের হয়ে নিজেও আবিরকে আটকাতে যাবে সাথে সাথে আবির গাড়ি স্টার্ট করে জোরে ড্রাইভ করে গেইটের বাইরে চলে যায়। নিরব চিৎকার করে বলে।

“ভাইয়া আমার কথাটা তো শুনো একটু প্লিজ।

নিরব তাড়াতাড়ি অন্য একটা গাড়িতে উঠে আবিরের গাড়ির পেছন পেছন যাওয়া শুরু করে। নিরবের গাড়ির পেছন পেছন গার্ডরাও যায়। আবির এতটাই জোরে গাড়ি চালাচ্ছে যে নিরব আবিরের গাড়ি এক সময় হারিয়ে ফেলে। নিরব গাড়ি ব্রেক করে চিন্তিত গলায় বলে।

“এখন কি করব আমি? ভাইয়ার গাড়ি তো হারিয়ে ফেলছি ভাই‌য়া এত হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে কেন? যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কি হবে?”

নিরব আবিরের ফোনে ফোন করে কিন্তু আবির ফোন রিসিভ করে না।

________

প্রায় দু ঘন্টা হয়ে গেছে আবিরের কোনো খুজ নেই। কেউ‌ যদি নিজে থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে তাহলে খুজে পাওয়া টা সত্যিই মুশকিল হয়ে যায়। সবাই আবিরকে খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর এদিকে তিশার কাছে একটা ফোন আসে তিশা ফোনটা রিসিভ করে বলে।

“হ্যালো! কে বলছেন?”

“এত তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে তুমি! আমি কিন্তু এটা একদম আশা করে নি তোমার কাছ থেকে।”

“রবিন শিকদার।”

“এইতো আমাকে তুমি চিনতে পেরেছো।”

“আমাকে কোন ফোন দিয়েছেন আপনি?”

“ফোন যখন দিয়েছি তার মানে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে তাই না।”

“কারন! কি কারন?”

“আসলে! ওই তোমার স্বামী মানে আবির রহমান আমার গায়ে হাতে তুলেছে তোমার জন্য তাই আমি ভাবলাম কি জানো?”

“কি ভেবছেন আপনি?”

“এই গায়ে হাত তুলার প্রতি শোধটা একটু অন্যরকম ভাবে নেওয়ার কথা। তবে সেই‌ প্রতি শোধটা আবিরের উপরে নিবো না। নিবো তোমার বাবার উপরে।”

“কিহ? কিহ যাথা বলছেন আপনি এসব? আমার বাবা আপনার কি ক্ষতি করেছেন?”

“তোমার বাবা কোনো ক্ষতি করেন নি করেছে তো তোমার স্বামী। তাই এই ক্ষতিপূরন তোমার বাবাকে দিতে হবে এই মুহূর্তে।”

“একদম আমার বাবার কোনো ক্ষতি করবেন না। তাহলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না।”

“নিজের বাবাকে যদি বাঁচাতে চাও তাহলে যেই ঠিকানাটা মেসেজ করে পাঠাছি। ওই‌ ঠিকানাতে চলে আসো যদি নিজের বাবাকে বাঁচাতে পারো।”

রবিন সাথে সাথে ফোনটা কেটে দেয়। তিশা বলতে থাকে, “হ্যালো‌! হ্যালো! না আমি আমার বাবার কিছু হতে দিবো না কিছু না। আজকে ওই‌ আবির রহমানের জন্য আমার বাবাকে এই‌ বিপদে পড়তে‌ হয়েছে। ওকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করবো না কোনো দিন না।”

তিশা তাড়াতাড়ি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে বাড়িতে কোনো গাড়ি নেই তিশা কিছু না ভেবেই নিরবকে ফোন করে।

“হ্যাঁ! ভাবি বলো‌?”

“নিরব কোথায় তুমি?”

“কোনো ভাবি কি হয়েছে?”

“নিরব আমি তোমাকে পরে সব কিছু বলবো আগে তুমি তাড়াতাড়ি তোমার গাড়িটা নিয়ে বাড়িতে আসো প্লিজ।”

“ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি।”

তিশার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। বাবাকে তিশা বারবার কল করছে কিন্তু কল ধরছেই না।

“বাবা প্লিজ ফোনটা ধরো প্লিজ।”

একটু পরেই নিরব গাড়ি নিয়ে বাড়ির সামনে আসে। তিশা তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বসতেল নিরব বলে, “ভাবি কি হয়েছে?”

“নিরব তুমি প্লিজ এই‌ ঠিকানাতে তাড়াতাড়ি চল না হলে আমার বাবাকে বাঁচাতে পারবো না।”

নিরব হতভম্ব হয়ে বলে, “কি বলছো এসব তুমি ভাবি? আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না।”

“নিরব তুমি আগে গাড়ি স্টার্ট করো তারপর তোমাকে সব খুলে বলছি।”

নিরব আর তিশার পেছনে গার্ডরাও যায়। রবিনের দেওয়া ঠিকানাতে নিরব আর তিশা পৌঁছায়। তিশা গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা রেস্টুরেন্ট। তিশা তাড়াতাড়ি করে রেস্টুরেন্ট ঢুকে সাথে নিরবও। তিশা ওর বাবাকে দেখে কিছু লোকের‌ সাথে বসে‌ আলাপ করছে। তিশা নিজের বাবাকে দেখে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু তিশা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে বাবার পিঠের উপর লাল‌ টার্গেট লাইটের মত আলো পড়ছে। তিশার বুঝতে আর বাকি রইল না এটা কিসের আলো? তিশা চিৎকার করে বাবাকে ডাক দেওয়াতে ইকবাল আহমেদ দাঁড়িয়ে তিশার দিকে ফিরে তাকাতেই একটা গুলির শব্দ হয়। তিশা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেস্টুরেটের সবাই দৌঁড়া দৌঁড়ি শুরু করে দিয়েছে। তিশা ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে যা দেখে তাতে তিশার সারা শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। তিশা ভাবতেই পারি নি এমন একটা ঘটনা ঘটবে।

#চলবে

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here