মিশে_আছি_তোমাতে ❤ #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_9

0
132

#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_9

আবিরকে দেখে তিশা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না তারপরও তিশা শেষ চেষ্টা করে গলাটা চেইন্জ করে বলে, “স্যার আমার কাজ শেষ তাই এখন আমাকে বাড়ি যেতে হবে।”

“হে… হে যান আপনি। আপনাকে কে ধরে রেখেছে?”

“হুমমমম।”

তিশা পা বাড়াতেই আবির তিশার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে এনে তিশাকে ফেলে বলে, “কোথায় যাচ্ছেন মিসেস? আপনি তো ধরা খেয়ে গেছেন এবার তো আপনাকে আমার সাথেই থাকতে হবে চলেন ঘরে চলেন। আর এমন দুর্বল প্ল্যান না করলেও পারতেন। আমার স্ত্রী হয়ে এত দুর্বল প্ল্যান করলে হবে এর থেকে আরো শক্তিশালী প্ল্যান করা দরকার ছিল আপনার।”

“আমি যাবো না আমার হাত ছাড়ুন বলছি।”

আবির তিশার হাত ধরে টানতে টানতে সোজা ঘরে নিয়ে আসে। তিশা চিৎকার করে বলে, “কি করছেন? আমার হাত ছাড়ুন বলছি।”

“ছেড়ে তো দিয়েছিলাম জান কিন্তু তুমি তো আমাকে ছাড়তে পারলে না।”

“মানে।”

“মানেটা হলো গিয়ে তুমি আর এই বাড়ি থেকে চলে যেতে পারবে না। তোমার সময় শেষ হয়ে গেছে আর এখন তুমি তোমার কথা অনুযায়ী এই বাড়িতেই থাকবে আমার সাথে। আর তুমি কি ভেবেছিলে তোমাকে আমি চিনতে পারবো না তাহলে তুমি ভুল ভেবেছিলে। কি বলো তো এই বাড়িতেই যার কাজ করে তারা আমাকে স্যার বলে ডাকে না, সবাই আমাকে বড় সাহেব বলে ডাকে। আর যারা এই বাড়ির বাইরে কাজ করে তারা আমাকে স্যার বলে ডাকে। তোমার স্যার ডাকটা আর গলার স্বরটা শুনেই আমার মনে একটু সন্দেহ হয়েছিল আর যখন তুমি আমাকে কফিটা দিয়েছিলে তখন তোমার ওই ডান হাতের তিলটা দেখেই বুঝতে পেরেছি যে এটা তুমিই ছিলে। আর তোমার শরীরের ওই মাতাল করা ঘ্রাণটাই আমাকেই বলেই দিয়েছিল যে ওইটাই তুমি। আর তোমার হাতের ওই কালো তিল দেখে তোমাকে চেনার প্রয়োজন পড়বে না আমার তোমার অস্তিত্বই আমাকে বলে দেয় তুমি কোথায় আছো? কারন আমার সবটাই #মিশে_আছি_তোমাতে। তুমি আমাকে ভালো নাই বাসতে পড়ো কিন্তু আমি তোমাকে আমার সবটুকু দিয়ে ভালবেসেছি আর সারাজীবন ভালবেসে যাবো। হোক সেটা এক তরফা ভালবাসা।”

“আমি এখানে কিছুতেই থাকবো না কিছুতেই না।”

“তুমি কি নিজের কথা রাখবে না। তাহলে কি আমি ধরে নিবো যে তুমি কথায় দিয়ে কথা রাখতে জানো না।”

তিশা ধপ করে খাটে বসে পড়ে। আবির তিশার পাশে গিয়ে বসে তিশার বা হাতের অনামিকা আঙ্গুলে ডায়মন্ডের আংটি পড়িয়ে দিয়ে বলে, “এই আংটিটা খুলবে না। কারন আজ থেকে তুমি আমার হয়ে গেলে তাই এটা তোমার আঙ্গুলে যেন সবসময় থাকে।”

কথাটা বকেই আবির ঘর থেকে চলে যায়। তিশা রাগে বিছানা থেকে বালিশ গুলো নিচে ফেলে দেয়।

_______

এদিকে নিরব শুয়ে শুয়ে ভাবছে নিসাকে ফোন দিবে নাকি ফোন দিবে না। নিরব চিন্তিত হয়ে বলে, “কি যে করি আমি ফোন কি দিব ওকে নাকি দিব না। উফফ নিরব তুই পাগল হয়ে যাবি। আচ্ছা টস করি যদি হেট আসে তাহলে ফোন দিব না আর যদি টেল আসে তাহলে ফোন দিব।”

নিরব কথাটা বলে একটা কয়েন হাতে নিয়ে উপরে ছুড়ে মারে আর দু হাত দিয়ে ধরে নিরব চোখ বন্ধ করে বলে।

“আল্লাহ তুমি যেটা চাইবে সেটাই সদরে গ্রহণ করব।”

নিরব চোখ খুলে তাকিয়ে দেয় টেল এসেছে। নিরব চোখ বড় বড় করে বলে, “তার মানে ফোন করতে হবে ঠিক আছে তাহলে ফোন করি। কিন্তু ফোন করে কি বলব,,, আচ্ছা আগে তো ফোন করি।”

নিরব নিসাকে ফোন করে কিন্তু নিসা ফোনটা রিসিভ করে না।

“এটা কি হলো ফোনটা ধরল না। ধ্যাত।”

নিরব আবার ফোন করতেই নিসা ফোন রিসিভ করে বলে, ” হ্যালো!! কে বলছেন?”

নিরব শুকনো কাশি দিয়ে বলে, “আমি।”

“আমি! আমি কে?”

“আরে ওই‌ যে যার সাথে তোমার দেখা হলেই একজন আরেক জনকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে পড়ে আমি হলাম সেই জন।”

নিসা চোখ বড় বড় করে বলে, “আপনি! আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?”

নিরব মুচকি হেসে বলে, “মন থেকে চাইলে আর একটু চেষ্টা করলে ঠিক পাওয়া সব কিছু পাওয়া যায় সেখানে নাম্বার তো এক্কেবারে তুচ্ছ একটা জিনিস।”

“শুনুন মিস্টার আপনার এই সাহিত্যিক কথাবার্তা অন্য কাউকে গিয়ে বলুন আমাকে নয়। আর আপনি আমাকে আর ফোন দিবেন না ওকে।”

“আরে আরে ফোন কেটে দিও না,,, যা কেটে দিলো। কি মেয়েরে বাবা। সবাই যেখানে আমার জন্য পাগল আর এই মেয়ে তো দেখছি আমার সাথে কথাই বলতে চায় না। নিরব তোকে অনেক কাঠ কয়লা পুড়াতে হবে রে এই ধানি লঙ্গাকে পেতে হলে। আবার ট্রাই করে দেখি।”

নিরব আবার ফোন করে কিন্তু নিসা ফোন রিসিভ করে না। নিরব মন খারাপ করে বলে, “যাহ ফোনটা ধরলো না। আবার কি ফোন করব কিন্তু যদি আমাকে ছেচরা ভাবে তার যে ফোন না করাটাই ভাল। আজকে জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।

________

এদিকে তিশা শুয়ে আছে মন খারাপ করে না খেয়ে। এমন সময় আবির ঘরে আসে হাতে খাবার নিয়ে। আবির খাবারটা টেবিলের উপরে‌ রেখে তিশাকে ডাক দেয়।

“তিশা খাবারটা খেয়ে নাও।”

তিশা কোনো কথা বলছে না। আবির এবার চেঁচিয়ে বলে, “তিশা আমি তোমাকে কিছু বলছি উঠে খাবারটা খেয়ে নাও।”

তিশা থমথম গলায় বলে, “আমি খাবো না।”

আবির ভ্রু কুচকে বলে, “কেন খাবে না?”

“আমার ইচ্ছে তাই আমি খাবো না আর আমি না খেলে আপনার কি?”

আবির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তিশার কাছে এসে তিশাকে আকস্মিক পাজাকোলে তুলে‌ নেয়। হঠাৎ করে এমনটা হওয়াতে তিশা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আর মৃদু চেঁচিয়ে উঠে। আবির মুচকি হেসে বলে।

“আমারেই তো সব যদি তুমি না খাও জান।”

“কোল থেকে নামান বলছি।”

আবির তিশার কোনো কথা না শুনে তিশাকে সোফাতে বসিয়ে বলে, “চুপচাপ খাও।”

তিশা নাক ফুলিয়ে বলে, “বলছি তো আমি খাব না।”

কথাটা বলে তিশা উঠে চলে যেতে যাবে সাথে সাথে আবির তিশার হাত ধরে সোফাতে ফেলে দিয়ে আবির তিশার দুহাত ধরে তিশার দিকে নিচু হয়ে যায়। তিশা চোখ দুটো বড় বড় করে বলে।

“কি করছেন এসব আপনি?”

আবির বাঁকা হেসে বলে, “জান তুমি যদি ডিনার না করো তাহলে আমি যে কি করবো তুমি কল্পনাও করতে পারছো না। আগের দিন রাতে যেটা করার কথা ছিল সেটা কিন্তু আমি এখন করতে পারি।”

“কি অসভ্যতামি করছেন আপনি। ছাড়ুন আমাকে‌ আর আমি বলছি তো আমি খাব না।”

“ঠিক আছে তাহলে আমি গত কালকে রাতে যেটা করি নি সেটা করি।”

আবির তিশার গোলাপি ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তিশা চোখ বন্ধ করে বলে ওঠে, “প্লিজ এমন করবেন না আমি খাব।”

“গুড।”

আবির তিশার কাছ থেকে সরে আসে। তিশা তাড়াতাড়ি করে উঠে খাবার খেতে থাকে। আবির তিশার তাড়াহুড়ো করে খেতে দেখে বলে, “আরে আস্তে আস্তে খাও না হলে গলাতে আটকে যাবে তো।”

তিশা কোনো কথা না বলে ডিনার করে গিয়ে শুয়ে পড়ে। আবিরও আর কথা না বাড়িয়ে অফিসের কিছু কাজ করতে বসে।

_______

সকালে তিশা ঘুম থেকে উঠে দেখে আবির ঘুমাচ্ছে। আবিরের ঘুমন্ত‌ চেহারা দেখে তিশা বলে, “এই লোকটা কি করে এসব করতে পারে কি করে? যে কিনা ঘুমালে এত সুন্দর আর নিষ্পাপ লাগে। তিশা এসব তুই কি ভাবছিস ও তোর শুত্রু ওর জন্যই আজকে তোর বাবা মা তোকে ত্যাগ করেছে।”

তিশার বিড়বিড়ানোর শব্দ শুনে আবিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তিশা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আবির দু ভ্রু নাচিয়ে বলে, “কি দেখছো এভাবে?”

তিশা কিছু না বলেই ওয়াসরুমে চলে যায়। আবির বসে বসে চিন্তা করছে‌ কি করে তিশাকে ওর প্রেমের জালে ফাঁসানো যায়।

তিশা ওয়াসরুম থেকে ভেজা চুল মুজতে মুজতে বের হয়। আবির তো তিশার এমন স্নিগ্ধ রুপ দেখে‌ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই আবিরের ফোনটা বেজে ওঠে ফোনের শব্দে‌ আবির নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে ফোনটা রিসিভ করে বলে, “ঠিক আছে আমি সময় মতো চলে আসবো মিটিংয়ে।”

আবির তিশার দিকে এক পালক তাকিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। আবির শাওয়ার নিয়ে‌ ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হয়। তিশা আবিরকে দেখা মাত্রই অন্য দিকে‌ মুখ ঘুরিয়ে চিৎকার করে বলে, “একি আপনার এই‌ অবস্থা কেন?”

আবির থতমত খেয়ে নিজেকে একবার দেখে বলে, “কেন কি হয়েছে?”

“আরে আপনি শুধু টাওয়াল পড়ে আছেন কেন?”

“ও! এই ব্যাপার। টাওয়াল পড়ে আছি তো কি হয়েছে?”

“কি হয়েছে মানে? আপনি জানেন না এই ঘরে আপনি ছাড়াও আরেকজন মানুষ আছে।”

“তো কি হয়েছে তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ। তাহলে তুমিই তো আমার সব কিছু দেখবে তাই না।”

তিশা নাক ফুলিয়ে বলে, “শুনুন একদম আজে বাজে কথা বলবেন না আপনি তাড়াতাড়ি চেইন্জ করুন।”

“করব না।”

“মানে আপনি কি সারাদিন এভাবে থাকবেন?”

“হ্যাঁ থাকব! ভালোই লাগছে এভাবে থাকতে মন্দ লাগছে না ব্যাপারটা।”

ত”ঠিক আছে তাহলে আপনি এভাবে থাকুন আমি বরং এই ঘর থেকে চলে যাই।”

“এই না না একদম না, এই‌ ঘর থেকে বের হবে না তুমি। যদি এই ঘর থেকে চলে যাও তাহলে আমি এই অবস্থায় কিন্তু এই ঘর থেকে বের হয়ে যাব। তখন তোমাকেই সবাই বলবে যে তুমি তোমার বরকে দুইদিনেই‌ এমন বেহাল অবস্থা করে ফেলেছো যে জামা কাপড় পড়ার সময় টুকু পায় না।”

তিশা চোখ চোখ বড় বড় করে‌‌ বলে, “মানে টা কি আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?”

“হ্যাঁ। এবার তুমি আমার দিকে ফিরো।”

“পারব না। আমি গেলাম আপনার যা মন চায় তাই করুন।”

“তাহলে কিন্তু আমি এভাবে বের হয়ে যাব।”

তিশা অনুনয় করে বলে, “এই না না এমন করবেন না প্লিজ।”

“ঠিক আছে তাহলে তুমি আমার দিকে ঘুরো। কি‌ হলো ঘুরো?”

তিশা আস্তে‌ আস্তে‌ আবিরের দিকে ঘুরে যা দেখে তাতে বড্ড অবাক হয়ে যায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here