#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৬
ঘড়িতে তখন সকাল দশটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। জানালা চুইয়ে রোদ্দুর আসছে খুব। আদ্রিতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করছিল। একটা সাদা রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। চুলগুলো বেনুনী করা। হাল্কা সাজ আর লাস্ট ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক লাগালো। দরজায় টোকা পড়লো তখনই। আদ্রিতা ওয়াশরুমে থাকা মুনমুনকে আওয়াজ করে বললো,
“মৃদুল ওরা বোধহয় চলে এসেছে মুন, দ্রুত বের হ।”
মুনমুনের কথার আর অপেক্ষা করলো না আদ্রিতা সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। আশরাফ, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী এসেছে একসাথে। আদ্রিতা মিষ্টি হেঁসে বললো,“ভিতরে আয় তোরা। মুন এখনো তৈরি হয় নি।”
মৃদুল বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে খাটে বসতে বসতে বললো,“এই মাইয়াডা সব জায়গায় দেরি করে।”
আশরাফ বললো,“প্যারা নাই। এগারোটায় বের হলেও হবে।”
রনি নিশ্বাস ফেলে বললো,“আজকের প্ল্যানটা কি?”
চাঁদনী রনির পাশে বসতে বসতে বললো,“সারাদিন ঘুরবো। ছবি তুলবো। মজা করবো। দেন রাতের বাসে ঢাকা।”
বাসের কথা শুনতেই আদ্রিতার মনে পড়লো কিছু। সে বললো,“আমার কিন্তু আজ যাওয়া হবে না।”
চোখ বড় বড় করে সবাই চাইলো আদ্রিতার দিকে। রনি বললো,
“কেন?”
“কাল আমার একটা সার্জারির কাজ আছে এখানেরই একটা হসপিটাল। তোরা আজ চলে যা। আমি কাল রাতেই ফিরে যাবো ইনশাআল্লাহ।”
সবাই বিস্মিত হয়ে গেল আদ্রিতার কথা শুনে। চাঁদনী শান্ত স্বরে বললো,“তাহলে তুই আমাদের সাথে ফিরছিস না?”
আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,“না।”
আশরাফ চিন্তিত স্বরে বললো,
“একা যাওয়ার দরকার নেই আমরাও না হয় থেকে যাবো।”
আদ্রিতা আশ্বাস দিয়ে বললো,
“আরে সমস্যা নেই আমি একা যেতে পারবো আর তেমন সমস্যা হলে আমি আমার ড্রাইভার আঙ্কেলকে আসতে বলবো। এমনিতেই এতজন একসাথে হসপিটাল বন্ধ দিয়েছি। আরো একদিন দরকার নেই। আমি কাজ সেরেই চলে আসবো। তোরা প্যারা নিস না।”
মৃদুলের কল আসলো হসপিটাল থেকে। মৃদুল এক মিনিট বলে বাহিরে বের হলো। মুনমুন তখন কেবল নিউ ড্রেস পরে বাহিরে বের হলো। চুল তার ভিজা বোঝাই যাচ্ছে সাওয়ার নিয়ে এসেছে। সবার মুড অফ দেখে মুনমুন তার মাথার চুল মুুছতে মুছতে বললো,“কি ব্যাপার তোরা সব চুপচাপ ক্যান?”
রনি তাকালো মুনমুনের দিকে। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে বললো,“তেমন কিছু না আদু আজ আমাদের সাথে ফিরবে না তাই সবার একটু মন খারাপ।”
মুনমুন অবাক হয় না এতে। কারণ আদ্রিতা তাকে কাল রাতে ঘুমানোর আগে এ বিষয়ে বলেছিল। মুনমুন বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বললো,“এতে মন খারাপ করার কি আছে? আমরা আজ রাতে যাবো ও কাল বাদে পরশু তো চলেই আসবে। প্যারা নিস না চিল। আর আদুর ড্রাইভার আঙ্কেল আছে না ওনায় ফোন দিয়ে ডেকে নিবে ব্যাস হয়ে গেল।”
তাও কেউ তেমন কিছু বললো না। আশরাফ টপিক পাল্টে বললো, “বুঝেছি এবার তুই দ্রুত তোর মেকাপ সার আমরা বের হবো। তোরা নাস্তা করেছিস?”
দুজনেই মাথা নাড়িয়ে বললো,“না।”
চাঁদনীও করেনি। অতঃপর সকালের নাস্তা রুমে করারই সিদ্ধান্ত নিলো সবাই। আশরাফ বের হলো সবার জন্য নাস্তা আনতে। চাঁদনীও গেল ওর সাথে। মৃদুল ঢুকলো তখন। মুনমুনকে রেডি হতে দেখে বললো,
“তাড়াতাড়ি কর মাইয়া।”
“হুম করছি। (মুনমুন)
মৃদুল বসলো রনির বসা সামনের বেডে। রনি মৃদুলের চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলো,“কি হয়েছে?”
মৃদুল নিশ্বাস নিয়ে বললো,
“আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য বলছে।”
“ওহ!’ (রনি)
“হুম। এই ডাক্তারি জীবন আর ভালো লাগে না। মেডিকেলের সেই ক্লাস করা দিনগুলোই ভালো ছিল কি সুন্দর সারাদিন আড্ডা। ক্যাফেতে হই হুল্লোড়। ধুর এখন খালি কাজ আর কাজ তাও মরা মানুষের পরিক্ষা নিরীক্ষা করা। দোস্ত বিয়া করমু?”
সবই ঠিক ছিল মৃদুলের শেষ কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। আদ্রিতা বললো,
“তোরে মাইয়া দিবো কেডা?”
মৃদুলের তড়িৎ উত্তর,
“তোর মামায়।”
আদ্রিতা চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। বললো,“হ বইসা আছে তো আমার মামায় তার মাইয়া তোরে দেয়ার জন্য।”
মৃদুল চিত হয়ে শুয়ে পড়লো খাটে। আফসোস নিয়ে বললো,“জীবনডাই বেদনার সিঙ্গেল থাকতে থাকতেই জীবন শেষ হইয়া যাইবো মনে হয়। রনি, তুই আর মুন কিন্তু বিয়েটা করে নিতে পারিস।”
মৃদুলের কথায় রনি মুনমুন একে অপরের দিকে চাইলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিতা তা দেখে মৃদু হাসলো।”
—-
ফোনে কল আসতেই কাঁচা ঘুম ভাঙলো ফারিশের। খানিকটা বিরক্ত নিয়ে ফোনটা তুললো। আদিব কল করেছে। ফারিশ ফোন তুলে বললো,
“কি হয়েছে আদিব?”
অপরপাশে থাকা আদিব বললো,
“ভাই আজ কি ঢাকায় ফিরবেন? নাকি আরো কিছুদিন থাকবেন।”
ফারিশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,
“তুমি আজ চলে যাও আদিব ওখানকার অবস্থা কেমন জানাও। আমি কাল বিকালে আসবো। আমার কিছু আজ আছে। আর হ্যা গাড়ি রেখে যেও। তুুমি ফ্লাইটে করে চলে যেও।”
“আচ্ছা ভাই। এখনই বের হবো নাকি বিকেলে যাবো।”
“সেটা তুমি ভেবে নেও। যদি এখন থাকতে ইচ্ছে করে। সমুদ্র ঘুরে দেখতে মন চায়। তাহলে থাকো, বিকেলে যেও। আমি জানি তোমার সমুদ্র পছন্দ। কাজের চক্করে এবার সমুদ্র দেখতে যেতে পারো নি। তাই সমুদ্র দেখে বিকেলে যাও। আমার কাল রাতে ঘুম হয় নি। তাই আর কল করো না কেমন। তবে যাওয়ার আগে মেসেজ দিয়ে যেও।”
আদিবও আর দ্বিধা না করে বললো,
“আচ্ছা ভাই।”
ফোন কাটলো ফারিশ। গায়ের কম্বলটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে সে ঘুমালো আবার।”
—-
সমুদ্র সৈকতে তুমুল বেগে ছোটাছুটি করছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি, চাঁদনী আর আদ্রিতা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মতো হৈ-হুল্লোড় করছে তারা। মাঝে মাঝে একসাথে ছবিও তুলছে। সমুদ্রের প্রবল স্রোতটা তাদের বুঝি টানছে। আশেপাশের মানুষও সমুদ্রে নাইবার জন্য লাফালাফি করছে। আশরাফ, মৃদুল আর রনি ছুটলো সমুদ্রে ভিজতে। ফাইনালি মৃদুল তার সমুদ্রের মাঝে চিত হইয়া সমুদ্র বিলাস করার সুযোগ পেল। মুনমুন, চাঁদনী আর আদ্রিতা দাড়িয়ে। তাদের ভেঁজার কথা নেই। পাবলিকলি এভাবে ছেলেমেয়ে গোসলটা করাটা তাদের পছন্দ হচ্ছে না তবে সমুদ্রে গোসল করার ইচ্ছে যে নেই এমনটা নয়। আদ্রিতা তার হাতে থাকা ক্যামেরা দিয়ে মৃদুল ওদের ছবি তুললো। মুনমুন আর চাঁদনীরও তুললো। তারা বাইকে উঠে দূর-দূরান্তে অল্পে ঘুরলো। বাতাসে তাদের চুল উড়ছিল, তবে মন হচ্ছিল শান্ত।’
সমুদ্রের ভিড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আদিব। সমুদ্র তার দারুণ পছন্দ। আদিব চোখ বন্ধ করলো। প্রবল স্রোত তাকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। আচমকাই পিছন থেকে কেউ এসে ধাক্কা দিতেই আদিব হুমড়ি খেয়ে পড়লো সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে। আচমকা এমন ঘটনায় মুনমুন, আদ্রিতা আর চাঁদনী তিনজনই চমকে উঠলো। কারণ ধাক্কাটা চাঁদনী দিয়ে ফেলেছে। তাও দৌড়ে এসে পিছলে গিয়ে। আদিবের শরীর ভিজে চৌচির। সে উঠে দাঁড়ালো। কলকলিয়ে মুখে যাওয়া পানিটুকু কুলি করে ফেললো। সামনেই তিনটে মেয়েকে দেখলো। চাঁদনীই নিচের দিকে তাকিয়ে আগে বললো,“আমি খুব দুঃখিত ভুল করে ধাক্কাটা লেগে গেছে।”
আদিব চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“ভুল করে। কানা মেয়ে কোথাকার?”
কণ্ঠটা যেন চেনা লাগলো এর আগেও শুনেছে বলে মনে হলো চাঁদনীর। চাঁদনী ছেলেটির দিকে তাকালো সেদিনের হসপিটালের বদমাশ ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,“আপনি?”
আদিব বিরক্ত নিয়ে বললো,
“সাবধানে চলাফেরা করতে পারেন না।”
“পারি তো কিন্তু আজ কেন যেন পারি নি।”
আদিবের রাগ লাগলো। তীক্ষ্ণ স্বরে আওড়ালো,
“মজা করছেন আমার সাথে।”
“এখানে মজার কি আছে?”
আদ্রিতা এগিয়ে আসলো। চাঁদনীর এমনিতেও মুখ বেশি চলে। আদ্রিতা বিনয়ের সঙ্গে বললো,
“ভুল করে হয়ে গেছে ভাইয়া আসলে ও পিছলে গিয়েছিল। দেখতে পেলেও উপায় ছিল না।”
আদিব কি বলবে বুঝতে পারে না। আদ্রিতাকে দেখলেই তার ভাবি ডাকতে মন চায়। আদিবকে চুপ থাকতে দেখে চাঁদনী বললো,
“আমরা কি চলে যাবো?”
আদিব একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“না আমাকে আরেকবার ধাক্কা দিয়ে যাবেন।”
চাঁদনী তাই করলো। সে তড়িৎ আরেকবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আদিবকে। আদিব হতভম্ব হয়ে গেল। চাঁদনী হাসতে হাসতে দৌড়ে পালালো। আদ্রিতা আর মুনমুনও পুরো ভীমড়ি খেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,“ব্যাপারটা কি হলো?”
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]
#TanjiL_Mim♥️.