এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ১৮

0
812

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৮

‘কক্সবাজার সেন্ট্রাল হসপিটালের’ বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা। ঘড়িতে দুপুর দু’টোর কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। আদ্রিতার কাজ শেষ হয়েছে আধঘন্টা পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে সে অপেক্ষা করছে তার গাড়ি আর ড্রাইভারের। আদ্রিতা খানিকটা বিরক্ত নিয়ে ফোন করলো সোহেলকে। রিং হতেই সোহেল ফোন তুললো। খানিকটা ঘাবড়ানো নিয়ে বললো,“আপনার কি কাজ শেষ হয়ে গেছে ম্যাডাম?”

আদ্রিতা নিজেকে ধাতস্থ করলো। রাগটা দমিয়ে রেখে বললো,“তুমি কোথায় সোহেল? আমি আধঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছি। আমার কাজ আধ ঘন্টা আগেই শেষ হয়ে গেছে।”

সোহেল থরথর করে বললো,“ম্যাডাম একটু অপেক্ষা করুন। আসলে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকায় আটকে পড়েছি।”

আদ্রিতা নিজেকে সামলালো। কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই পিছন থেকে উঁচু লম্বাটে টাইপের একজন লোক এসে দাঁড়ালো। গলা খাগাড়ি বললো,“আপনি ডক্টর আদ্রিতা তো?”

আদ্রিতা তক্ষৎনাৎ পিছন ঘুরে চাইলো। অনাকাঙ্ক্ষিত লোকটিকে দেখতে পেয়ে বললো,“জি। আমি ডক্টর আদ্রিতা।”

লোকটি খানিকটা এগিয়ে এসে বললো,“আপনার সাথে কিছু কথা ছিল ম্যাডাম।”

আদ্রিতা কানের ফোনটা দেখলো। সোহেল তখনও লাইনে। আদ্রিতা সোহেলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তাড়াতাড়ি আসো সোহেল। আমি অপেক্ষা করছি কিন্তু।”

আদ্রিতার কথা শুনে সোহেলও থরথর করে বললো,
“আসছি ম্যাডাম।”

ফোন কাটলো আদ্রিতা এগিয়ে এসে সামনের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“জি বলুন। কি বলবেন?”
“আসলে ম্যাডাম আমার বাবার বিষয়ে কিছু কথা ছিল। ওনার একটা রোগ হয়েছে।”
“ওহ। কি হয়েছে ওনার?”
“জি ক্যান্সার।”
—-
দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন চারপাশ। আদ্রিতা হাঁটছে। বিরক্তিতে তার মস্তিষ্ক এলেমেলো। ঘড়িতে প্রায় তিনটে ছাড়িয়ে চারটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। অথচ সোহেলের গাড়ি নিয়ে এখনো আসার নামগন্ধ নেই। একস্থানে কারণ ছাড়া কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায় তাই আদ্রিতা হাঁটছে যদি হাঁটতে হাঁটতে সোহেলের দেখা পাওয়া যায়। আদ্রিতা একটু অধৈর্য্যশীল মানুষ। একস্থানে কারণ ছাড়া বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। তাই হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ এগিয়েছে। চারপাশ প্রায় নির্জীব। সবাই হয়তো লান্স সেরে ঘুমাতে ব্যস্ত। আদ্রিতা চারপাশ দেখছে আর হাঁটছে। আচমকাই পায়ের সাথে কিছু বাজতেই হোঁচট খেল আদ্রিতা। ব্যাথায় আহ্ জাতীয় শব্দ বের হলো আপনাআপনি। সে নিচে বসে পড়লো। একটা বড়সড় লোহা তার জুতোর ভিতর দিয়ে পুরো ঢুকে গিয়েছে। আদ্রিতা দ্রুত টান দিয়ে লোহাটা বের করলো। সঙ্গে সঙ্গে কলকলিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো পা দিয়ে। আদ্রিতা যথাসম্ভব নিজেকে সামলে ব্যাথাটা হজম করলো। আশেপাশে তেমন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। আদ্রিতা একটু জায়গা বুঝে একটা গাছের নিচে বসলো। ব্যাগ থেকে স্যাভলন, ব্যান্ডেজ বের করলো। আদ্রিতা সবসময়ই ছোটখাটো ডাক্তারি সরঞ্জাম ব্যাগে নিয়ে ঘোরে। আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে নিজের ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করতে লাগলো।’
.
ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে ফারিশ। নিরিবিলি শান্ত এক রাস্তা পেরোচ্ছে। মনটা এবার বেশ স্বাভাবিক। আশা রাখে ওই ডাক্তার ম্যাডামের সাথে তার আর দেখা হবে না। কথাটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎই রাস্তায় আদ্রিতাকে দেখে চরম অবাক হয়ে বিষম খায় ফারিশ। বিস্মিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
“যখনই ভাবি দেখা হবে না তখনই কোথা থেকে উদয় হয় এই মেয়েটা কে জানে?’

ফারিশ নিজেকে সামলালো এই মেয়েটার ধারে কাছেও ঘেঁষতে চায় না। ফারিশ আদ্রিতাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে চলে যেতে লাগলো নিজ গন্তব্যের দিকে। হঠাৎই লুকিং গ্লাসে দেখতে পেল আদ্রিতার পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে ব্রেক কষলো ফারিশ। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো আচমকা। ফারিশ আটপাঁচ কিছু না ভেবেই দ্রুত এগিয়ে গেল আদ্রিতার দিকে।’

এদিকে,
আদ্রিতা একরাশ বিরক্ত নিয়ে তুলোতে স্যাভলন লাগিয়ে ক্ষত স্থানে লাগাতেই কলিজা সমেত বুঝি কেঁপে উঠলো ব্যাথায়। দ্রুত নিচু হয়ে ফুঁ দিতে লাগলো পায়ে। সঙ্গে বললো,“পায়ে আঘাত পাওয়ার আর সময় পেলি না। আজই লাগতে হলো। ইস! কি যন্ত্রণা হচ্ছে। ফালতু লোহা। যে শালায় রেখেছিস না তোর কপালে বউ নাই। আবার বউ থাকলেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবো দেখিস। অভদ্র মানুষজন। রাস্তাঘাটে লোহা ফেলে রাখিস। ও মা কি পরিমান জ্বলছে।”

বলেই জোরে জোরে ফুঁ দিতে লাগলো আদ্রিতা। কারো কণ্ঠ শোনা গেল তখন। কেউ বললো,“আমি কি একটু সাহায্য করবো আপনার?”

আদ্রিতা চমকে উঠলো। কণ্ঠটা চেনা। আদ্রিতা দ্রুত চাইলো। সামনেই ফারিশকে দেখে দারুণ অবাক হয়ে বললো,“মিস্টার বখাটে আপনি এখানে?”

ফারিশ কথাটা গায়ে না মেখে দ্বিধাহীন বসলো আদ্রিতার সামনে। আদ্রিতার হাত থেকে স্যাভলন তুলা নিয়ে বললো,
“কি করে হলো?”

আদ্রিতা জবাব দিলো না। উল্টো প্রশ্ন করলো,
“আপনি এখানে কি করছেন?”

ফারিশ বিরক্ত ভরা চাহনি নিয়ে বললো,“আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন।”

আদ্রিতা দমে গেল। মাথা নিচু করে বললো,
“পায়ে লোহা বিঁধেছিল।”

ফারিশ আবার চাইলো আদ্রিতার দিকে। গম্ভীর এক চাহনি। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“কিভাবে বিঁধলো?”
“হাঁটতে গিয়ে।”
“চোখে কি দেখতে পান না?”
“পাই তো।”
“তাহলে কি করে ঘটলো?”
“অসাবধনতা।”
“চোখে দেখতে না পাওয়ার প্রথম অজুহাত।”
“অজুহাত কিসের আমি মটেও কানা নই।”
“কতটা কানা নন তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“আমি ইচ্ছে করে করি নি কিন্তু।”

ফারিশ কিছু বললো না। সে সাবধানতার সাথে ক্ষত পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দিলো। চোখে মুখে অশেষ বিরক্তির ছোঁয়া। সে বললো,
“যাচ্ছিলেন কোথায়?”
“ঢাকা ফিরছিলাম।”

ফারিশ অবাক স্বরে বললো,“হেঁটে হেঁটে।”
আদ্রিতার চোখে মুখে হতাশ। সে বললো,
“হেঁটে হেঁটে ঢাকা যাওয়া সম্ভব।”
“আপনি যে পাগল তাতে অসম্ভবের কিছু দেখি না।”
“দেখুন আপনি কিন্তু আমায় আবার অপমান করছেন।”
“সত্যি করেছি আমি ধরতে কেন পারছি না।”

আদ্রিতা রাগে ক্ষোভে চুপ হয়ে গেল। ফারিশ হাসলো। মনে মনে বললো,
“আপনি হুটহাট রাগবেন না ডাক্তার ম্যাডাম, আপনার রাগ দেখলে আমার নিজেকে কেমন মাতাল মাতাল লাগে।”

কথাটা মনে মনে ভাবলেও মুখে আর বলা হলো না। আদ্রিতা তুমুল বেগে রাগ নিয়ে সোহেলকে কল করলো। ফারিশ তার পানে তাকিয়ে। সোহেল ফোন তুলতেই ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো আদ্রিতা,
“তুমি কি আজ আসবে সোহেল? নাকি আমি একা একাই চলে যাবো।”

সোহেলের চোখে মুখে বিস্ময়। সে নরম হলো। ভীতু স্বরে বললো,“আমায় ক্ষমা করে দিন ম্যাডাম। আমার ভুল হয়ে গেছে। কথাটা আপনায় আগেই বলা উচিত ছিল কিন্তু বলি নি ভেবেছিলাম পারবো কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকায় পারি নি ম্যাডাম। আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”

সোহেলের কথা শুনে আদ্রিতার চোখ মুখ কেমন একটা হয়ে গেল। সে চিন্তিত স্বরে বললো,
“কি হয়েছে সোহেল? বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?”

সোহেল গাড়ি থামিয়ে নীরবে বললো,
“সবাই ঠিক আছে ম্যাডাম। আসলে হয়েছে কি এতদিন বন্ধ থাকার কারণে সকালে দেরিতে ঘুমানোর একটা অভ্যাস হয়ে গেছিল। কাল আচমকা আপনার কল আসায় আমি বুঝতে পারি নি। রাতে এলার্ম দিয়েই ঘুমিয়েছিল কিন্তু আমার ঘুম ভাঙে ন’টায়। আমি তখনই বেরিয়ে পড়ি ভেবেছিলাম রাস্তায় জ্যাম থাকবে না দ্রুত স্পিড বারিয়ে চলে আসবো। কিন্তু রাস্তায় আমি আটকা পড়ি। আমার সন্ধ্যা হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। আমি কি করবো বুঝচ্ছি না ম্যাডাম?”

আদ্রিতা চুপ করে রইলো। কিছু ভাবলো। নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,“তোমায় আর আসতে হবে না সোহেল আমি এখান থেকেই বাসে টাসে করে চলে আসবো। তুমি বরং ব্যাক করো।”

সোহেল অপরাধীস্বরে বললো,
“আমায় ক্ষমা করে দিন ম্যাডাম। আমি বুঝতে পারি নি।”
“ইট’স ওকে। আর ক্ষমার চাওয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি ব্যাক করো।”
“আচ্ছা ম্যাডাম।”

ফোন কেটে গেল। আদ্রিতা চুপচাপ বসে। কি করবে ভাবছে। ফারিশ প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে?”
“আমার গাড়ি আসবে না।”
“কেন?”
“লেট হবে অনেক।”
“আপনি কি এখানে একা এসেছিলেন?”
“না বন্ধুদের সাথে।”
“তাহলে তারা কোথায়?”

আদ্রিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুরু থেকেই বললো আবার,
“আসলে বন্ধুদের সাথে দু’দিনের ট্যুরে এসেছিলাম। কিন্তু এখানের একটা হসপিটালে আমার কাজ পড়ে যাওয়ায় আমি থেকে যাই। ওরা কাল রাতে চলে যায়। আমার গাড়িটাকে আসতে বলেছিলাম কিন্তু রাস্তায় জ্যাম পড়ায় ড্রাইভার আটকা পড়ে। ওর এখানে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই ওকে আসতে বারণ করেছি ভাবছি বাসেটাসে চলে যাবো।”

ফারিশ মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ওহ আচ্ছা বুঝেছি বুঝেছি।”
“জি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমায় সাহায্য করার জন্য। তবে এবার আমায় যেতে হবে।”

কথাটা বলে নিচে পড়ে থাকা সরঞ্জামগুলো উঠিয়ে আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিতা। পায়ে যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু কি করার তাকে তো যেতেই হবে। আদ্রিতা ফারিশকে ছাড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে যেতে যাবে তার আগেই তার হাত ধরে বসলো ফারিশ। আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়লো। জিজ্ঞেসাসূচক চাইলো ফারিশের পানে। ফারিশ উল্টোদিকে ঘুরেই বললো,“বাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই আমার সাথে চলুন। আমিও ঢাকায় যাচ্ছি।”

আদ্রিতা অবাক হলো। দ্বিধাহীন স্বরে বললো,
“আপনার অসুবিধা হবে না?”

ফারিশ ঘুরে তাকালো। আদ্রিতার চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে শুধালো,
“আপনার পায়ের যন্ত্রণার চেয়ে কম।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here