এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ১৯

0
416

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৯

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে প্রকৃতি জুড়ে। থমথমে চারপাশ। সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে গাড়ি জুড়ে। ফারিশ চুপচাপ ড্রাইভ করছে। পাশেই আদ্রিতা বসা। ফারিশ এক ঘন্টার মতো হবে গাড়ি চালাচ্ছে। আদ্রিতার পায়ে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। গাড়ির সব জানালা বন্ধ। শীত লাগছে খানিকটা। আদ্রিতা অনেকক্ষণ পর বললো,
“সামনে কোনো টংয়ের দোকান পেলে দাঁড়াবেন তো চা খাবো।”

ফারিশ সে কথার উত্তর দিলো না। উল্টো বললো,“আপনার কি খিদে পেয়েছে?”

আদ্রিতার দ্বিধাহীন উত্তর,
“খানিকটা।”
“ওহ।”
“তবে ভাতের খিদে নয়।”

ফারিশ বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
“মানে?”
“মানেটা হলো চায়ের খিদে।”

ফারিশ তার কপাল চুলকে বললো,
“দুপুরে খেয়েছিলেন?”
“হুম অল্পস্বল্প।”

ফারিশ আর কিছু বললো না। তার কল আসলো। ফারিশ কানে ব্লুটুথ দিলো। বললো,
“বলো আদিব।”
“আপনি কি বেরিয়ে পড়েছেন ভাই?”
“হুম এক ঘন্টা হবে বেরিয়েছি। কিছু কি বলবে?”

আদিব দোনামনা করলো। কিছু বলতে চাইছে ঠিকই তবে এখন বলবে কি না ভাবছে। ফারিশ বুঝি আদিবের দ্বিধাটা বুঝলো। সে বললো,
“কি হয়েছে আদিব?”
“আসলে ভাই,
“দ্বিধা না করে সরাসরি বলো কি হয়েছে?”
“ভাই বাড়িতে পুলিশ এসেছিল।”

সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে ব্রেক কষলো ফারিশ। আদ্রিতা চমকে উঠলো ফারিমের এহেন কান্ডে। হতভম্ব হয়ে তাকালো ফারিশের দিকে। কিছু বলার আগেই ফারিশ নিজের ঠোঁটের আঙুল দিয়ে বুঝালো চুপ থাকতে। আদ্রিতা চুপ থাকলো। ফারিশ গাড়ি থেকে নামলো কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বললো,
“কেন এসেছিল আদিব?”
“জানা নেই ভাই। আপনার খোঁজ নিলো শুধু। বললাম কক্সবাজার আছে ওমনি চলে গেল।”
“বাড়ি সার্চ করেছিল নাকি।”
“না ভাই তেমন কিছু করে নি। আর করলেও তো কিছু পেত না বাড়িতে তো কিছু থাকে না।”
“তা ঠিক কিন্তু এলো কেন?”
“জানি না ভাই আপনাকে দেখা করতে বলেছে।”

ফারিশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। নিজেকে পুরোপুরি ধাতস্ত করে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“তুমি ঘাবড়িও না আদিব আমি এসে দেখছি।”
“আচ্ছা ভাই। সাবধানে আসবেন।”
“ঠিক আছে তুমি চিন্তা নিও না। খেয়ে দেয়ে নিশ্চিতে ঘুমাও। ওখানে কার্যক্রম সব ঠিক আছে তো?”
“হুম আছে ভাই।”
“আচ্ছা।”

ফোন কাটলো ফারিশ। তবে ভাবনায় পড়লো একটু। পুলিশ কেন আসবে তাকে খুঁজতে!’
.
ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত আদ্রিতা। তার বন্ধুরা লাগাতার মেসেজ দিচ্ছে সে কোথায়? গাড়ি পৌঁছেছে কি না? কখন আসবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আদ্রিতা ছোট্ট করে লিখেছে হা পৌঁছেছে আমি ফিরছি। ব্যস সঙ্গে সঙ্গে সবার মেসেজ যাক ওকে, সাবধানে আসিস। আদ্রিতা মিষ্টি হাসলো। ফোন রেখে চোখ রাখলো ফারিশের দিকে। লোকটাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। আদ্রিতা আওয়াজ করলো। উচ্চস্বরে বললো,
“আমরা কি যাবো মিস্টার বখাটে?”

ফারিশের টনক নড়লো সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল তার সাথে আদ্রিতাও আছে। ফারিশ দ্রুত গিয়ে গাড়িতে বসলো। আর ভাবলো না বিষয়টা অতোটা গুরুতরও কিছু না। ফারিশ আবার গাড়ি ড্রাইভিং করা শুরু করলো। আদ্রিতা তার পানে তাকিয়ে। কিছুক্ষণের নীরবতা ছাড়িয়ে প্রশ্ন করলো,
“কিছু কি হয়েছে? আপনায় চিন্তিত লাগছে।”

ফারিশ নিরুত্তর। আদ্রিতা আবারও প্রশ্ন করলো,
“বলবেন না।”
“আপনাকে বলা প্রয়োজন মনে করছি না।”

আদ্রিতা আর কিছু বললো না। এ কথার পিঠে আর কোনো কথাই থাকতে পারে না। তবে মনে মনে দুটো গালি দিল। আদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে বসে। তার ফোন বাজলো। মা কল করেছে। মায়ের নাম্বার দেখলেই বিরক্তিতে চোখমুখ আরো শক্ত হয়ে আসে আদ্রিতার। রোজ ফোন করে একই প্রশ্ন করে,“কবে আসবি? আরাফাতকে কবে আসতে বলবো?”

আদ্রিতা খানিকটা বিরক্ত নিয়েই ফোনটা তুলে বললো,
“কি হয়েছে মা?”

অপরপ্রান্তে থাকা আদ্রিতার মা বললো,
“রেগে যাচ্ছিস কেন?”
“রাগবো না তো কি করবো একই প্রশ্ন বার বার কেন করো। আমি ফিরলে তো বাড়িতেই ফিরবো।”
“তোর তো আজ আসার কথা?”

আদ্রিতা তপ্ত নিশ্বাস ফেললো। চোখ বন্ধ করে বললো,
“আমি আসছি মা। আমি গাড়িতে আছি এখন। কালকে সকালে বা রাতেই মধ্যেই আসছি।”

আদ্রিতার মা খুশি হলেন। উত্তেজিত হয়ে বললেন,
“তাহলে কাল বিকেলেই আরাফাতকে আসতে বলি?”

রাগে মাথা গজগজ করে উঠলো আদ্রিতার। যাও মাথা শান্ত রেখেছিল তাও গেল। সে ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,“কালকেই আসতে বলতে হবে তোমার। বিয়ে যখন করবো বলেছি তখন তো করবোই এত তাড়ার কি আছে। আজ আর ফোন দিবে না। রাখছি।”

মায়ের কিছু বলার আর অপেক্ষা করলো না আদ্রিতা। কল কাটলো। রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে লাগলো,“এই মা এত বাড়াবাড়ি কেন করছে। সারাদিন জার্নি করে বাড়ি ফিরে কালকেই দেখা করতে হবে ওই আরাফাতের সাথে। যত্তসব উল্টোপাল্টা কাহিনি। ইঞ্জিনিয়ার বলে কি এত তাড়াহুড়ো করতে হবে?”

রাগে ফুঁসতে লাগলো আদ্রিতা। সে এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল তার পাশে ফারিশ নামের এক যুবক আছে। আদ্রিতার রাগের মাঝেই গাড়িতে জোরে ব্রেক কষলো ফারিশ। সঙ্গে সঙ্গে হুস আসলো আদ্রিতার। সে চাইলো ফারিশের দিকে। ফারিশ ডানদিকটা দেখালো। আলোকিত একটা টংয়ের দোকান। ফারিশ বললো,“টংয়ের দোকান চলুন যাই।”

ফারিশ বের হলো। আদ্রিতা ঠায় বসে। ফারিশ গাড়ির দরজা খুললো। আদ্রিতাও ধীরে ধীরে বের হলো। ফারিশ এগিয়ে এসে বললো,
“পারবেন?”

আদ্রিতা চাইলো ফারিশের দিকে। শীতল স্বরে বললো,“আমার হাতটা একটু ধরুন ঠিক পারবো।”

আদ্রিতার কাজে ফারিশ ভড়কালো। প্রশ্ন করলো,
“আমি ধরবো?”
“হুম ধরুন।”

ফারিশ দ্বিধাহীন ধরলো। এর আগেও সে দু’বার হাত ধরেছিল আদ্রিতার। কিন্তু সম্মতিতে ধরছে বলে তার কেমন লাগছে! আবার সেই অজানা অনুভূতিদানা বাজছে। পাঁচ সেকেন্ডের রাস্তায় আদ্রিতা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে সময় নিলো দু’মিনিট। ফারিশ অধৈর্য্যশীল মানুষ তবুও ধৈর্য্য রাখলো আজ। আদ্রিতাকে বসালো টংয়ের দোকানের সামনে থাকা ছোট্ট বেঞ্চে। ফারিশ প্রশ্ন করলো,
“কি খাবেন?”
“এক কাপ দুধ চা আর টোস্ট বিস্কুট।”

ফারিশ তাই চাইলো। দোকানীও তাদের বসতে বলে বানাতে শুরু করলো। ফারিশ বসলো আদ্রিতার সামনের বেঞ্চে। মিনিট চার যেতেই চা আর বিস্কুট দিলো দোকানী। তারা খেল। কিছু ছেলেপেলে হেঁটে যেতে যেতে বললো,“বউ নিয়ে টংয়ের দোকানে চা খাচ্ছে বাহ ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ।”

কথাটা ফারিশ আদ্রিতা দুজনেই শুনলো। ফারিশ এখানে কোনো ঝামেলা চায় না। তাই চুপচাপ কথাগুলো হজম করে নিলো। আদ্রিতা মৃদু হাসলো। যেটা চোখ এড়ায় নি ফারিশের।’

পনের মিনিটের মতো সময় পার হলো। ফারিশ চায়ের বিল দিতে গেলে আদ্রিতা অর্ধেক দিতে চাইলো। ফারিশ বারণ করতে বললো,“প্রয়োজন নেই।”

আদ্রিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পায়ের জন্য বড্ড পীড়া হচ্ছে তার। ফারিশ আচমকাই কোলে তুলে নিলো আদ্রিতাকে। ফারিশের কাজে আদ্রিতা ঘাবড়ে গিয়ে ফারিশের শার্টের হাতা খামচে ধরলো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,“কি করছেন?”

ফারিশ জবাব দিলো না। দ্রুত গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আদ্রিতার চোখে চোখ রেখে বললো,“কিছুই না।”

তব্দা খেয়ে বসে রইলো আদ্রিতা। আর কিছু বলতেই পারলো না। অথচ বলার মতো অনেককিছু ছিল।”

ফারিশ গাড়ি চালাতে শুরু করলো আবার। তার মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই। যেন একটা মেয়েকে কোলে তুলে নেয়া কোনো বিশেষ ব্যাপারই না।’

ধীরে ধীরে সময় গড়ালো। শীত যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে। আদ্রিতা তার ব্যাগ থেকে চাদরটা বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলো। ফারিশের গায়ে তখনও শুধু শার্ট জড়ানো। হঠাৎ ফারিশ প্রশ্ন করলো,
“আরাফাত কে?”

আদ্রিতা থতমত খেল। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,“আমায় বলছেন?”
ফারিশ বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“এখানে আপনি ছাড়া আর কি কেউ আছে?”

আদ্রিতা কিছু সময় চুপ থেকে বললো,
“তাও ঠিক।”
“তাহলে বলুন আরাফাত কে?”
“আপনায় বলা প্রয়োজন মনে করছি না।”

ফারিশ বিনিময়ে কিছু বললো না। আচানক হেঁসে উঠলো। শব্দ করে হাসলো। অদ্ভুত সুন্দর দেখালো সেই হাসি। আদ্রিতা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো ফারিশের হাসির পানে। ছেলেটা হাসলে এত চমৎকার কেন দেখায় কে জানে! আদ্রিতা আনমনা বলে উঠল,
“এখানের হাসার মতো কি কিছু ছিল?”
“সত্যি কি কিছুই ছিল না। আমার কেন যেন মনে হলো এখানে হাসার মতো অনেক কিছুই ছিল।”

আদ্রিতা আর কিছু বললো না। সে পর্যবেক্ষণ করতে রাখলো ফারিশকে। উজ্জ্বল শ্যামবর্নের এই পুরুষটির সাথে তার কতবার দেখা হয়েছে। গোনা হয় নি তবে হিসেব করলে অনেকবারই হয়েছে। যা কাঙ্ক্ষিতের চেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতই বেশি। ছেলেটার চোখের পাশে থাকা কাটা দাগটা অদ্ভুত সুন্দর দেখতে। গায়ের গঠন। উচ্চতা, কথার ধরন, রাগ সব মিলিয়ে পারফেক্ট এক সুদর্শন যুবক। আদ্রিতার কাছে ফর্সা ছেলেদের চেয়ে শ্যামবর্নের পুরুষদের বেশি সুন্দর লাগে। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে আশরাফ। যেমন ফর্সা তেমন শারীরিক গঠন। অথচ আদ্রিতা কখনোই আকৃষ্ট হয় নি তাতে, মৃদুল রনিও যথেষ্ট সুদর্শন। তাদেরকেও বন্ধু ব্যাতিত অন্য কোনো নজরে কখনো দেখে নি আদ্রিতা। ছোট বেলা থেকেই পুরুষ মানুষদের ওপর আদ্রিতার আকৃষ্টতা কম। কিন্তু এই প্রথম যেন ফারিশের ওপর সে আকৃষ্ট হয়েছে তাও দারুণভাবে।”

আদ্রিতার টনক নড়লো এগুলো কি ভাবছে! ছিঃ! আদ্রিতা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে ঘুরে চাইলো। তার লজ্জা লাগছে হঠাৎ। ভাগ্যিস ফারিশ বুঝতে পারে নি সে তাকে দেখছিল। এ দেখা তো যেনতেন দেখা নয়। গভীরভাবে দেখা।

আদ্রিতা চোখ বুঝে নিলো। একটু ঘুমানোর দরকার। মিনিট পনের পার হতেই আদ্রিতা ঘুমিয়ে পড়লো। এতক্ষণ পর ফারিশ তার পানে চাইলো। মৃদু এক স্বরে আওড়ালো,
“হৃদয় বুঝি ধীরে ধীরে প্রেমারোগে আসক্ত হচ্ছে ডাক্তার ম্যাডাম। আপনিও মরছেন, আমিও মরছি অথচ প্রকাশ করতে দুজনেই নারাজ।”

ফারিশ চুপ হয়ে গেল। ভাবনাগুলো বিষাক্ত লাগছে। কথাগুলো তার চেয়েও তেঁতো। ফারিশ ডাইভিংয়ে নজর দেয়ার চেষ্টা চালালো। মনে মনে বলে উঠলো আবার,“যে প্রেম প্রকৃতির বুকে শোভা পায় না তাকে কি আধও প্রেম বলে?”

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here