#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্ব_২
“তুমি,,”
“এমনভাবে তাকাচ্ছিস যেন আমি স্বয়ং ভুত তোর সামনে দাড়িয়ে আছি!”
মিথিলা মুখটা গোমড়া করে ফেলে।আস্তেধীরে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়।মিহু মিথিলার হাবভাব দেখে ভ্রু গুটায়। এ মেয়ে কি মতলবে আছে ধরতে পারছে না বেচারি!
মিহু বিছানার উপর গোল হয়ে বসে ছিল।মিথিলা গিয়ে মিহুর সামনে বসল।চোখ উঁচিয়ে তাকিয়ে ভ্রু গুটিয়ে অকম্মাৎ মিহুর চুল ধরে টান দেয়।চুল ধরে টান দেওয়ার সাথে কয়েকটা কিল,থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
মিহু মিথিলার হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করে।মিনিট খানেক বাদে সফলও হয়।এটুকুতেই হাফিয়ে ওঠে।মিথিলার হাত ধরে হাপাতে হাঁপাতে বলে,
“বেদ্দপ মেয়ে!এভাবে মারছিস কেন?”
মিথিলা কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বলে,”মারব না তো কি করব!আসার আগে আমাকে একবারও বলেছ তুমি আজকে আসবে!”
“আমি তো তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম মনা!” মিহু আদুরে কন্ঠে বলে।
মিথিলা মুখ ঘুরিয়ে বলে,”কিন্তু সারপ্রাইজ তো পারলে না দিতে?”
“আপনি যে চালাক কিভাবে দিব সারপ্রাইজ বলেন?ঠিকি তো লুকিয়ে লুকিয়ে মা আর আমার কথা শুনে ফেলেছেন!”
“শুনেছি বেশ করেছি!এবার বলো ভাইয়ার সাথে কেমন কাটালে এ কয়েকদিন?আর ভাইয়া কোথায় ভাইয়া আসেনি?”
“না তার নাকি অনেক কাজ আছে তাই আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে!”
“কিন্তু আপু তোমাদের তো আরো দুদিন পর আসার কথা ছিল?দুদিন আগে কেন আসলে হুমম!ওই বাড়িতে আবার কারো সাথে ঝগড়া করার জন্য বের করে দিয়েছে নাকি তোকে?যার দরুন আমার ভাইয়া সাথে তার পরিবারকেও তাড়িয়ে দিয়েছে!”
মিথিলা মিহুকে রাগানোর জন্য ফাজলামো করে বলে।
“মিথু আমাকে কি তোর ঝগড়াটে মনে হয়?”মিহু রাগ দেখিয়ে বলে।
“মনে হওয়ার কি আছে,তুই যে পরিমাণ আমার সাথে ঝগড়া করিস কি জানি ওখানে আমার সাথে ঝগড়া করতে পারিসনি বলে অন্য কারো সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছিলি!
ছি মিহু এভাবে আমার একমাত্র দুলাভাইয়ের মান সম্মান খোয়াতে পারলি তুই।ছি!”
“মিথুর বাচ্চা মিথু!”
মিহু চিল্লিয়ে মিথিলার দিকে এগিয়ে যায়।মিথিলা বিছানা থেকে নেমে মিহুর থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে জ্বিভ বের করে ভেঙিয়ে বলে,
“গরুর মতো চিল্লাস কেন?কম চিল্লাতে শেখ,না হয় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে এভাবে চিল্লালে তোর শ্বাশুড়ি ঝাড়ুপিটা করবে!”
কথাটা বলে মিথিলা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।মিহু ওর পিছনে দৌড় দেয়।মিথিলা দৌড়াতে দৌড়াতে ড্রইংরুমে চলে যায়।মিহুও ছুটছে মিথিলার পিছনে।দুজনের দৌড়াদৌড়ি দেখে তিতলি হোক ধমকে বলেন,
“এই থাম দুটোয়।দুটো শুধু তালগাছ হয়েছিস জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি এখনো।ঘরে কেউ দৌড়ায় এভাবে।এই থাম!”
মিথিলা তিতলি হোকের দিকে একবার তাকিয়ে মিহুকে আবার ভেঙ্গিয়ে সামনে দৌড় দেয়।ঠাসস করে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নেয় নিজেকে।মাথায় হাত দিয়ে সামনে তাকাতে ইয়াশের কুঁচকে যাওয়া মুখশ্রী নজরে পড়ে।
মিথিলা তাকাতে ইয়াশ ধমকে বলে ওঠে,
“সারাদিন এভাবে ব্যাঙের মতো লাফাস কেন?হাত পা স্থির থাকে না।বেয়াদব মেয়ে!”
মিথিলা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।সকালের থাপ্পড়ের কথা মনে পড়তেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়।ইয়াশ মিথিলা মুখ ঘুরানো দেখে ওকে সাইড কেটে চলে যায়।মিহুর কে দেখে ওর সামনে গিয়ে বলে,
“কখন আসলি?”
“এই তো কিছুক্ষণ আগেই!কোথায় গিয়েছিলি?”
“ওই ফ্রেন্ডদের সাথে একটু বাইরে,ভাইয়া আসেনি?”
“নাহ উনার নাকি কাজের চাপ অনেক তাই আসেনি?আমাকে রেখে গেছে।”
“ওহহ!”
তিতলি হোকের দিকে তাকিয়ে বলে,”বড় মা আমার খাবারটা রুমে দিয়ে দিতে বলো।নিচে নামবো না!”
কথাটা বলে ইয়াশ নিজ কক্ষে চলে যায়।মিথিলা সেদিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙায়।জমিদারের পুত্র যেন!হুহ্!
————————–
ড্রাইনিং টেবিল জুড়ে বসে আছে মিহু,ইফা,ইকবাল হোক(ইয়াশের বাবা)।শুধু মিথিলা আর ইয়াশের অনুপস্থিতি।
মিথিলাকে না দেখে ইকবাল হোক মিহুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“মিথি মা কোথায় মিহু?”
“ও শাওয়ার নিচ্ছে চাচ্চু একটু পরে চলে আসবে!”
সামনে পায়েসের বাটি দেখে মিহু খুশি হয়ে বলে,” ওয়াও মা পায়েস মিথু রান্না করেছে নাকি?”
মিহু কথাটা বলতে তিতলি হোক খাবার পরিবেশন করতে করতে হতাশ হয়ে বলেন,
“হ্যাঁ ওই করল, আর এই মেয়েটা যে দিনে দিনে কি হচ্ছে কে জানে?সবকিছুতে ঢিলেমি!শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কি করবে কে জানে?”
“মা আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে এত টেনশন করো না তো?দেখো আমার শ্বশুরবাড়ি এমন কোথাও হবে যেখান থেকে তুমি প্রতিদিন উঠতে বসতে আমাকে দেখতে পারবে!শুধু একটু দোয়া করো!”
চেয়ার টেনে বসতে বসতে মিথিলা বলে ওঠে।মিথিলার কথা শুনে অবস্থানরত প্রত্যেকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে।তিতলি হোক ধমকে বলেন,
“কি সব বলছিস?মাথা গেছে নাকি?”
“মাথা যাবে কেন?আমি কি বলছি তুমি বুঝোনাই?সমস্যা নাই যেদিন হবে সেদিন বুঝে যাবা!”
মিথালার এই কথাটাতে সবার কুচকানো ভ্রুযুগল আরো খানিকটা কুঁচকে যায়।তিতলি হোক আলাদা একটা প্লেটে খাবার বেড়ে মিথিলার কাছে দিয়ে বলে,
“যা এই খাবারটা ইয়াশকে দিয়ে আয়।”
মিথিলা একবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে একবার তিতলি হক এর দিকে তাকায়।ক্ষীণ রাগ নিয়ে বলে,
“পারবোনা আমি তোমাদের ছেলে তোমরা গিয়ে দিয়ে আসো।”
তিলতি হক মিথিলার কথা শুনে রাগ নিয়ে বলে,”তোকে পারা না পারার কথা বলা হয়নি।এটা দিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে, যা দিয়ে আয়।”
ইকবাল হক মিথিলার গোমড়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”থাক না ভাবি ও যখন যেতে চাচ্ছে না।আর ইয়াশ বা নিচে নামে নি কেনো।ছেলেটাও নাহ!”
“সেটাই তো সবসময় আমাকেই কেন,,”
মিথিলাকে মাঝপথে থামিয়ে তিতলি হক বলে,”আর একটা কথা বলবি তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না মিথিলা।বড্ড অবাধ্য হচ্ছিস আজকাল।”
মিথিলা পানসুটে মুখ বানিয়ে খাবার প্লেটটা হাতে নিয়ে রাজাকারের কক্ষের দিকে হাঁটা ধরে।দরজার সামনে আসতে থেমে যায়।কোনো সময় তো পারমিশন নিয়ে ঢুকে না আজকে নিবে।মিথিলা কথা না বলে দু’বার দরজায় টোকা দেয়।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া আসে না।আরো কয়েকবার দেয়।তবুও কোনো সাড়াশব্দ নেই।মিথিলা এবার অনিচ্ছা সত্বেও আস্তে করে ডাক দেয়,
“ইয়াশ ভাইয়া তুমি কি ভিতরে?”
এবারও সাড়াশব্দ নেই।মিথিলা এবার ঢুকে পড়ে রুমে।রুমের চারদিকে একবার তাকিয়ে খাবার প্লেটটা রেখে দেয়।ঘুরে ফিরে আসতে নিয়েও আবার পিছনে তাকিয়ে পুনরায় চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলে,,
“ইয়াশ ভাইয়া তুমি কি রুমে নেই?তোমার খাবার রেখে গেলাম খেয়ে নিও?”
লাস্টের লাইনটা মিনমিন করে বলে।ফের ঘুরে বের হতে নিতেই চমকে ওঠে।ইয়াশ তার সামনে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।মাত্র মনে হয় রুমে এসেছে।
“এখানে কি?তোকে বলেছিলাম না আমার রুমে না আসতে?আবার এসেছিস কোন সাহসে?”
ইয়াশের কথা শুনে মিথিলার বেশ রাগ হয়।সে তো ইচ্ছা করে আসেনি।জোরাজুরিতে এসেছে তাও খাবার দিতে।মিথিলা কথাটা বলতে গিয়েও বলে না।নিচের দিকে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসে।
পাশ কাটাতে পিছন থেকে হাত ধরে ফেলে ইয়াশ।টান দিয়ে সামনে এনে দাড় করায়।ভ্রুযুগল উঁচু করে বলে,
“সমস্যা কি কথা বলছিস না কেন?”
মিথিলা ইয়াশের থেকে নিজ হাতটা টান দিয়ে ছুটিয়ে নেয়।কয়েক কদম সামনে গিয়ে বলে,”বলছিনা কারণ আমি তোমার সামনে কথা বললে শুধু ভালোবাসার কথাই বের হবে!”
“আর একটা কথা শুনো এই মিথিলা হক আর কারো সামনে ভালোবাসার কথা বলতে আসবে না।তাই চুপচাপ হয়ে গেছে।আশাকরি তুমিও অনেক খুশি এতে।”
কথাগুলো বলে মিথিলা বের হয়ে যায় রুম থেকে।ইয়াশ সেদিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলে ওঠে,”গাঁধা কোথাকার!”
চলবে, ইন শা আল্লাহ🍁
অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।
#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc