সূচনা_পর্ব #তোকেই_ভালোবাসি #লেখনীতে_Amana_Akhi

0
566

১.
“ইয়াশ ভাই তুমি আমাকে ভালো কেন বাসো নাহ..?”

কাজে ব্যস্ত থাকা ইয়াশ কন্ঠ শুনে ভ্র কুঁচকে চোখ তুলে সামনে তাকায়।গোমড়া মুখে দাড়িয়ে আছে সবে সতেরোতে পা দেওয়া কিশোরী মেয়েটি।ইয়াশের চোখে চোখ পরতে কিশোরী তার চোখ নামিয়ে নেয়।ইয়াশ কিছুক্ষণ কিশোরীর দিকে তাকিয়ে থেকে চোয়াল শক্ত করে তার সামনে যায়।শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে,

“বয়স কত তোর?প্রেম-ভালোবাসার কি বুঝিস তুই?যাহ বের হ আমার ঘর থেকে!”

শেষ কথাটি বেশ জোরে ধমকের সুরে বলে।ধমক শুনে হালকা চমকে ওঠে মিথিলা।কিন্তু ভয় পায়না।কারণ এটাতে সে অভ্যস্ত।সে যতবার ইয়াশকে ভালোবাসার কথা বলেছে ততবার এই কথাগুলো শুনেছে।তবুও বেহায়ার মতো বারবার ভালোবাসি বলতে আসে!
মিথিলা চোখ তুলে এবার ইয়াশের দিকে তাকায়।তেজ দেখিয়ে বলে,

“শোনো এখন নাহ বারো বছরের ওই পুচকিরাও যানে ভালোবাসা কি?আর আমার তো সতেরো।আমি বুঝব না প্রেম-ভালোবাসা কি?তুমি আমাকে ভালোবাসবে কিনা সেটা বলো!”

ইয়াশ মিথিলার কথা শুনে ওর দিকে আগায়।ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় গালে।আকম্মাৎ থাপ্পরে মিথিলা কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।গালে হাত দিয়ে ইয়াশের দিকে তাকায়।আঁখি অশ্রুতে টুইটম্বুর।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইয়াশের পানে।এতদিন ইয়াশ ধমকাধমকি করলেও কখনো গায়ে হাত তোলেনি।

“বেশি পেকে গেছিস তাইনা।বড় বাবাকে বলতে হবে তোর বিয়ের কথা।বেয়াদ্দপ মেয়ে বের হ আমার রুম থেকে।তোর এই মুখ নিয়ে আর যেন আমার সামনে আসিস না।যত্তসব!”

উচ্চস্বরে ধমকে কথাগুলো বলে ইয়াশ নিজেই স্থান ত্যাগ করে।সে বসেছিল অফিসের কিছু কাজ করতে।কিন্তু এই গঁধার জ্বালায় কি সেসবও শান্তি মতো করা যায়।দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।বড় ভাইকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মাথা খাচ্ছে।এর ব্যবস্থা করতে হবে।মেজাজ টাই খারাপ করে দিল গাঁধাটা।ইয়াশ বাইরে বেরিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

এদিকে মিথিলা নাক টানতে টানতে ইয়াশের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে বসে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ কান্না করে ভাবতে থাকে।সে আর ইয়াশকে ভালোবাসার কথা বলবে না।এত বেহায়া কেন হবে সে?কই কতবার বললো সে ইয়াশকে ভালোবাসে,ইয়াশ তো একবার শান্তনা দিয়েও বলতে পারত।মিথু আমিও তোকে ভালোবাসি।বলেনি তো!যাব না আমিও আর তার সামনে!বলবোনা আর ভালোবাসার কথা।মনকে এসব বলে শান্তনা দিয়ে চোখ মুছে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে।
তার তো আবার আজকে মেলা কাজ বড় বোন আসছে বলে কথা।মিথিলা দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায়।রান্নাঘরে তার মা,মেজো মা রান্না করছে।মিথিলা গিয়ে দুজনের মাঝে দাড়ায়।দুজনকে ধরে সাইডে সরিয়ে দেয়।নিজে চুলোর কাছে এসে দাড়ায়।মেয়ের কর্মকাণ্ড দেখে তিতলি হক মেকি রাগ নিয়ে বলেন,

“মিথু কি করছিস!যা বের হ রান্না করছি তো আমরা।”

মিথিলা ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকায়।একবার চুলায় বসানো মাংসের পাতিলের দিকে।ফের মেজোমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“মেজো মা তোমার জা কে নিয়ে যাও তো।আমি এখন রান্না করব।আর এই মাংসও রান্না করে নিব। আর মাংস তো হয়েই গেছে।এখন আমি আপুর ফেভারিট আমার হাতের পায়ের রান্না করব।যাও যাও বের হও।”

মেয়ের কথা শুনে তিতলি চোখ মুখ কুঁচকায়।এই মেয়ে রান্না তো পারে কিন্তু রান্না করতে গেলে রান্নাঘরের বারোটা বাজে।যা তিতলি হোক এখন একদমই চাচ্ছেন না।তাই মেয়ের হাত ধরে তার কাছে নিয়ে এসে বলেন,,

“এখন করতে হবে নাহ।আগে মেহু আসুক তারপর পায়েস রান্না করে খাওয়াস।এখন না!”

“নাহ মা আমি এখনি করব।আপু কতদিন পর আসছে বলো।সরো এখন মেজো মা যাও না।”

মিথিলার কথায় সায় দিয়ে রুমকা হোক বলেন,

“আপা করুক না রান্না।ইচ্ছে করেছে বোনকে নিজের হাতের পায়েস খাওয়াতে খাওয়াক।তুমি চলো আমার সাথে।”

তিতলি হোক মেয়ের দিকে তাকায়।তিতলি হোককে তাকাতে দেখে মিথিলা ঠোট উল্টায়।মেয়ের এমন ফেস দেখে তিতলি হোক আর কিছু বলেন নাহ বেরিয়ে যান রান্না ঘর থেকে।মিথিলা ওদের যেতে দেখে খুশি হয়।
আগে থেকে বের করে রাখা দুধের বোতলটা নিয়ে দুধ একটা পাত্রে ঢেলে নেয়।চুলো জ্বালিয়ে বসিয়ে দেয় দুধের পাত্রটা।বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে তৈরি করে ফেলে পায়েস।পায়েস আলাদা একটা বাটিতে ঢেলে ড্রাইনিং টেবিলে নিয়ে রেখে দেয়।তারপর নিজের ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

এদিকে মিথিলাকে রান্নাঘর থেকে বের হতে দেখে তিতলি হোক দৌড়ে রান্নাঘরে যায়।সাথে রুকমা হোক ও যায়।রান্নাঘরের কাছে আসতে তিতলি রুকমার দিকে তাকায়।রুকমাও সেসময় তিতলির দিকে তাকায়।তাকিয়ে হেসে দেয়।তিতলি রান্নাঘর একবার পরখ করে,নিচে লবণ,চিনির মিশ্রণ পড়ে আছে।দুধও ফেলেছে অনেকটা।এসব দেখে তিতলি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে,,

“রুকমা হেসো নাহ।দোখেছো কি করেছে রান্নাঘরের হাল।সামান্য পায়ের রান্না করতে এরকম হাল করেছে রান্নাঘরের।”

“ছেড়ে দাও আপা ছোট মানুষ।ইচ্ছা করে তো আর ফেলেনি।”

“ছেড়ে দিতে বলছ রুকমা।এই মেয়ে কোনোকিছু ঠিকমতো করতে পারে না।সবকিছুতে গোলমাল করবেই।সামান্য পায়েস রান্না করতে এই হাল।না জানি শ্বশুর বাড়ি গেলে কি হবে এই মেয়ের।তখন তো সব দোষ এই আমার হবে।বলবে মা কিছু শেখাই নি, এই সেই!”

তিতলির বকবক করতে দেখে রুকমা আর কিছু বলে না।নিত্যদিন শুনতে হয় এসব।ছোট মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।
.

‘ টিপ টিপ বারসা পানি,
পানিমে আগ লাগাদি,
আগ লাগি দিলমে মে তো ‘

গুনগুন করতে করতে মিথিলা ওয়াশরুম থেকে বের হয়।চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বেলকনিতে চলে যায়।বেলকনি থেকে নেচে নেচে বের হতেই।চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে,

“তুমি,,,”

চলবে, ইন শা আল্লাহ🍁

#সূচনা_পর্ব
#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_Amana_Akhi

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here