#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ৬
#নবনী_নীলা
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে টয়াকে প্রথম দিনের সেই জায়গায় নিয়ে এলো। টয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ বেশ রেগেই বললো,” সমস্যা কি তোমার? আমার পিছু নিচ্ছর কেনো প্রতিদিন?”
হটাৎ ইয়াদের এমন আচরণে টয়া কিছু বুঝল না। টয়া রেগে বললো,”আপনার পিছু নিতে যাবো কেনো? রাস্তা কি আপনার একার?”
ইয়াদ রাগ মিশ্রিত একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” হুম, জিজ্ঞেস করলে এটাই তো বলবে। সৎ সাহস থাকতে হবে তো তাই না। নাকি এটা কোনো ট্রিক?”
টয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। ট্রিক বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছে ইয়াদ। হটাৎ এমন আচরণ করছে কেনো সে।
টয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,” ট্রিক! কিসের ট্রিক?”
” হ্যা এখন তো কিছুই বুঝবে না। ইনোসেন্ট সাজবে কিন্তু এইসবে আমাকে বোকা বানাতে পারবে না। বয়স কতো তোমার? এই বয়সেই উচ্ছন্নে চলে গেছো? রাস্তা ঘাটে এইসব করে বেড়াচ্ছো? চুল বেঁধে দিচ্ছে, হাত ধরে টেনে তুলছে।”, বলেই ইয়াদ থেমে গেলো। সে আর কিছু বলতে চায় না। রাগ হলে সে নিজেও জানে না সে কি বলে। তাই নিজেকে থামিয়ে নিলো সে।
টয়া চুপ হয়ে আছে।সে মাথা নিচু করে দুই হাত শক্ত করে ধরে দেওয়ালের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। তার সম্পর্কে কেউ এমন ধারণা রাখতে পারে সেটা সে কোনো দিন কল্পনাও করেনি। ইয়াদ তাকে এতো নোংরা ভাবে কেনো?টয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। তাও সে চোখ তুলে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনি ভুল করছেন।না জেনে কথা বলবেন না।”
” না জেনে বলছি না, নিজের চোখে তোমাদের দেখেছি। আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে সরল ভেবেছিলাম। আজকের পর থেকে আমি যেনো তোমার ছায়াও আমার আসে পাশে না দেখি, কথাটা যেনো মনে থাকে।”, বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াদ চলে যায়।
টয়া স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের চোখের পানি সে আটকাতে পারছে না। তার সম্পর্কে ইয়াদ এতো খারাপ ধারণা রাখে সেটা ভেবেই তার কষ্ট হচ্ছে। সে এতো খারাপ একটা মেয়ে, সেটা তার জানা ছিলো না। টয়া সেখানে হাটুতে মাথা রেখে বসে পড়লো, চোখের জল তার গাল বেয়ে নামছে।
______________________
ইয়াদ কিছুদূর গিয়ে বুঝতে পারলো সে কাজটা ঠিক করেনি। রাগের মাথায় হয়তো বেশি বলে ফেলেছে। মেয়েটার যা ইচ্ছা সে করবে তাকে ইয়াদের কি যায় আসে। কেনো সে এত রাগ করছে। ইয়াদের একবার ফিরে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো কিন্তু ইচ্ছাটাকে সে ইচ্ছা রেখেই কলেজের বাসে উঠে গেলো। কলেজ থেকে ফিরে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় সে কিছুক্ষণ শুয়ে ছিলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম বের হওয়ার সাথে সাথে তার মাকে বেশ চিন্তিত মনে হলো। ইয়াদ মুখ মুছতে মুছতে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে মা?”
ইয়াদের মা অস্থির হয়ে বললো,” আরে আমাদের এলাকার একটা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটু আগেই এলাকায় মাইকিং করে গেলো। আজকাল যা অবস্থা চারিদিকের আল্লাহ যেনো মেয়েটাকে সুস্থ ভাবে তার বাবা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।”
ইয়াদ গলা শুকিয়ে এলো। এলাকার একটা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? ইয়াদ ছুটে নিজের রুমে গেলো রুমের পর্দা সরিয়ে প্রথমেই টয়ার রুমের দিকে তাকালো। টয়া রুমে নেই। তাহলে যাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সে কি টয়া? ইয়াদ চিন্তায় পড়ে গেল। মেয়েটাকে বেশি বেশি বলে ফেলেছে ইয়াদ। সে কারণেই কি বাসায় ফিরে নি? ইয়াদ কোনোভাবেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। সে কোনো কিছু না ভেবেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।এমন হতে পারে মন খারাপ করে টয়া আগের জায়গায় বসে আছে, বাসায় যায় নি। সেখানে গেলেই তাকে পাওয়া যাবে।
ইয়াদ আর অপেক্ষা করল না দৌড়াতে শুরু করল। সেখানে পৌঁছে ইয়াদ আরেকটা ধাক্কা খেলো। টয়ার ব্যাগ পরে আছে কিন্তু টয়া কো থায়? ইয়াদ কিছু ভাবতেও পারছেনা ভাবতে গেলেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে। কোনো কিছু হয়নি তো! না সে কিছুই ভাবতে পারছে না। টয়াকে খুঁজতেই হবে।ইয়াদ অনেক চিন্তা করলো কোথায় থাকতে পারে টয়া। সেদিনের সেই কাশফুলের মাঠে যায় নি তো। এটাই শেষ আশা, ইয়াদ আর দাড়ালো না। কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা হবে তার আগেই মেয়েটাকে খুজে বের করতে হবে।
টয়া কাশ ফুলের সেই মাঠে মাথা নিচু করে বসে আছে। এক মুহুর্তে যেনো তার পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে। ষোলো বছরের একটা মেয়ের কাছে এই অনুভুতিগুলো অনেক বেশি মূল্যবান। ইয়াদ না বুঝেই সে অনুভূতিতে ছুরি দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করেছে। নিজেকে এতো বিচ্ছিরি এর আগে লাগেনি তার কাছে।
ঐদিকে টয়ার বাসার সবাই অস্থির। তার বাবা পুলিশে ফোন করে রাগারাগি করছে। তার মেয়েকে যেকোনো মূল্যে খুঁজে দিতে হবে নয়তো কারোর চাকরি থাকতে দিবে না। নিরবও টয়ার নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছে। খুঁজতে খুঁজতে নিরব টয়াকে দেখলো স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় এক কোণে বসে আছে। নিরবের মাথায় রক্ত ওঠে গেছে। এই মেয়েকে খুঁজতে খুজতে সে পাগল হয়ে গেছে আর দেখো সে এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে। নিরব টয়ার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। টয়া দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।
নিরব ভেবেছিলো ইচ্ছা মতন বকবে টয়াকে কিন্তু টয়ার অবস্থায় দেখে নিরব আর কিছু বলতে পারলো না। অনেক কেঁদেছে বুঝাই যাচ্ছে চোখ মুখ ফুলে আছে, নাক লাল হয়ে গেছে। টয়াকে এই অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলো সে।
নিরব বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে তোর? এমন লাগছে কেনো তোকে?”
টয়া কোনো কথা বললো না। নিরব বুঝতে পেরেছে কোনো কারনে টয়া অনেক কষ্ট পেয়েছে কিন্তু কি সেটাই বুঝতে পারছে না। নিরব গলা নরম করে বললো,” কি হয়েছে তোর আমাকে বল। কেউ খারাপ কিছু করেছে? টিজ করেছে? আমাকে বল, দেখ কি হাল করি।”
টয়া না সূচক মাথা নাড়ল তারপর আবার কাদতে লাগলো। নিরব কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা না টয়াকে এভাবে দেখতেও ভালো লাগছে না তার। নিরব একটা নিশ্বাস ছেড়ে টয়াকে হাত দিয়ে আগলে টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে লাগলো।
ইয়াদ খুঁজতে খুঁজতে টয়াকে পেয়েছিলো কিন্তু ইয়াদের পৌঁছানোর আগেই নিরব এসে টয়াকে টেনে তুলে তাই ইয়াদ আর আগায় না। টয়াকে নিরব সেখান থেকে নিয়ে যায়।
ইয়াদ পুরোটা দেখে চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফেললো।
রাত হয়ে গেছে কিন্তু ইয়াদের বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছে না। এই মাঠে কিছুক্ষণ বসতে ইচ্ছে করছে এমনিতেও আর হয়তো এই মাঠে আসা হবে না কোনোদিন।
ইয়াদ সেই জায়গায় চুপ করে দৃষ্টি সামনে স্থির করে বসে রইলো। কাল সে চলে যাচ্ছে, এই শহরে আর কোনোদিন আসা হবে কিনা সেটা সে জানে না।
টয়া মেয়েটির সাথে কি তার আর কোনোদিন দেখা হবে? যাকে চলে যাবার আগে একরাশ কষ্ট দিয়ে ফেললো। টয়া হয়তো এর পর আর ইয়াদকে মনে করবে না কোনোদিন।ভালোই হয়েছে ঐ ছেলেটা তার আগে এসেছে। ইয়াদ গেলে হয়তো টয়া তার সাথে ফিরতে চাইতো না। ইয়াদ ঘাস ভরা গা হেলিয়ে মাঠে শুয়ে পড়লো। এভাবে আকাশ দেখতে অনেক ভালো লাগে, কি সুন্দর তারা জ্বলছে। টয়া কি এভাবে ঘাসে শুয়ে কোনোদিন আকাশ দেখেছে? চোখ বন্ধ করে দুই হাত ঘাসে মেলে দিতেই ইয়াদের ডান হাতে কি যেন লাগলো। ইয়াদ ঘাড় উচু করে হাত বাড়িয়ে সেটা তুললো। কারোর ঘড়ি মনে হচ্ছে। ইয়াদ শুয়ে ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল। ঘড়িটা চেনা চেনা লাগছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে সে বুঝতে পারলো এই ঘড়িটা টয়ার। টয়া সেদিন তাকে এই ঘড়িটা দেখাতেই পিছু পিছু এলো।ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যে জিনিস আবিষ্কার করলো, তা হচ্ছে ইয়াদের হাতের ঘড়ির সাথে এই ঘড়িটার অনেক মিল।
খুজে খুজে মেয়েটা একই ঘড়ি কিনেছে। ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে ইয়াদের মুখে হাসির ঝিলিক এলো।
পরের দিন সকালে ইয়াদরা চলে গেলো। যাওয়ার আগে ইয়াদ অনেক চেস্টা করেছে টয়াকে দেখতে কিন্তু পারে নি কারণ টয়ার রুমের সব পর্দা দেওয়া ছিলো। একবার দেখে যেতে ইচ্ছা হয়েছিলো ইয়াদের। কিন্তু জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ করতে নেই। এই ইচ্ছাটা অপূর্নই থাকুক।
টয়া ইয়াদ গল্পটা কি এইটুকুই ছিলো? সব গল্পের শেষটা তো আর সুন্দর হয় না। টয়া ইয়াদকে ভুলবে কিনা জানা নেই তবে টয়া নামের এই মেয়েটিকে ইয়াদ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। কারন টয়া নামের মেয়েটি তার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেগেছে।
[ চলবে ]
#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc