তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ৫ #নবনী_নীলা

0
123

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ৫
#নবনী_নীলা
সকালে কলেজে যাওয়ার সময় আজ ইয়াদ টয়াকে গেটের সামনে দেখলো না।প্রতিদিন টয়া তার জন্য এইখানে দাড়িয়ে থাকে। ইয়াদ কিছুদূর যাওয়ার পর আবার পিছনে তাকালো টয়া আজ আর তার আজ পিছু পিছুও আসছে না। ইয়াদ নিজের মতো করেই হাঁটছে তবে কেনো জানি আজ তার একা একা লাগছে এভাবে যেতেও ভালোলাগছে না। টয়া আজ আসেনি তাই বলে কি এমনটা লাগছে?
টয়া অসুস্থ নাতো? ভাবতে ভাবতেই ইয়াদের কাল রাতের ঘটনা মনে পড়লো। না! অসুস্থ হবে কেনো? কাল রাতে তো সেই বাঁদরের সাথে সুন্দর মতো নাচ্ছিলো। ভেবেই কেনো জানি ইয়াদের গা জ্বলে যাচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে ইয়াদ জানে না।

আজকের দিনটা ইয়াদের খুবই বাজে গেছে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। বাসায় এসে রুমের জানালার পর্দা সরালো টয়া নিজের রুমে টয়া নেই। মেয়েটার হটাৎ আজ কি হলো? এতোক্ষণে স্কুল শেষে বাসায় ফিরে আসার কথা। ইয়াদের চিন্তা হতে লাগলো।

বিকালে ইয়াদ নীচে নামলো। প্রায় সময় নীচে টয়াকে দেখা যায় আজ সেখানেও নেই। হটাৎ কোথায় উধাও হলো মেয়েটা।

ইয়াদ এমনেই হাঁটছিলো হটাৎ অপূর্বের সাথে দেখা। অপূর্ব ইয়াদের ক্লাসমেট। অপূর্ব ইয়াদকে দেখে প্রশ্ন করলো,” কিরে কোথায় যাচ্ছিস?”

–” এমনেই হাঁটতে বেরিয়েছি।”

–” চল সামনের মাঠে যাই। কোন স্কুলের নাকি অনুষ্ঠান হচ্ছে।”

ইয়াদ আসতে চাইলো না তবুও অপূর্ব জোড় করে তাকে নিয়ে আসলো। অন্য স্কুলের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না ইয়াদ। শুধু শুধু গিয়ে ভিড় বাড়বে। কিন্তু অপূর্ব নাছর বান্দা সে নিজেও যাবে ইয়াদকেও সঙ্গে নিবে।
সেখানে গিয়ে ইয়াদ একটা চেয়ার নিয়ে নিজের মতো বসে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রোল করছিলো। অপূর্ব পাশেই বসলো। সে বেশ আগ্রহ নিয়েই অনুষ্ঠান দেখছে আবার কিছুক্ষন পর পর হাতে তালি দিচ্ছে। প্রায় পনেরো বিশ মিনিট হলো ইয়াদ বসে আছে। এখানে অহেতুক বসে থাকবার কোনো কারন নেই। সে চলে যাবে বলে উঠে দাড়ালো এমন সময় একটা অ্যানাউন্সমেন্ট কানে এলো তার। অ্যানাউন্সমেন্ট শুনে সে দাড়িয়ে গেলো।

” এবার মঞ্চে একক নাচের জন্য আসবে আমাদের পরবর্তী প্রতিযোগী অর্নিহা তাবাসসুম টয়া।”

এতটুকু শুনেই ইয়াদ চেয়ারে বসে পড়লো। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে। ইয়াদ সেই দৃষ্টিকে তেমন গ্রাহ্য করলো না। অপূর্ব বললো,” কিরে তুই না চলে যাচ্ছিলি? হটাৎ বসে পড়লি যে?”

ইয়াদ আমতা আমতা করে বলল,” বসে পড়লাম কেনো ? আসলে ….. আমি ভাবলাম তোকে…. I mean তোর সাথেই যাই। তোকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।”

অপূর্ব কথাটা ঠিক বিশ্বাস করলো না তবে সে আর কোনো প্রশ্নও করলো না। টয়া বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পরে স্টেজে উঠলো। তার ছোট চুলগুলো খোঁপা করা। ইয়াদের মুখ হা হয়ে রইলো কারণ টয়াকে এতো মায়াবতী লাগছে যে তার দিকে ইয়াদ সারাদিন অপলকে তাকিয়ে থাকতে পারবে কিন্তু কোনো ক্লান্তি আসবে না। এর মাঝে অপূর্ব বলে উঠলো,” মেয়েটাকে দেখ কি মিষ্টি দেখতে। তাই না?”

ইয়াদ আড় চোখে অপূর্বের দিকে তাকালো। ইয়াদের তীক্ষ্ণ চোখ দেখে অপূর্ব ঘাবড়ে গিয়ে বলে,” এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? সুন্দরকে কি সুন্দর বলবো না।” অপূর্বর কথায় ইয়াদ কিছু বললো না।

ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার নাচ দেখছে, খুব সুন্দর নাচে মেয়েটা। নাচের তালে চোখের যে খেলা সব মিলে অসাধারণ। পুরো ভিড়টা এখণ শান্ত সবই মন দিয়ে টয়ার নাচ দেখছে। অপূর্বর মুখ তো পুরো হা হয়ে গেছে তা বন্ধের নাম নেই। ইয়াদ হাত দিয়ে অপূর্বের মুখ বন্ধ করে দিতেই অপুর্ব সন্দেহর চোখে তাকালো কিন্তু কিছু না বলে দৃষ্টি সামনে স্থির করে রাখলো।

নাচ শেষে টয়া স্টেজ থেকে নেমে গেলো। টয়ার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো কারন তার মনে হয়েছে ভিড়ের মাঝে ইয়াদকে দেখেছে সে। টয়া স্টেজ থেকে নেমে হাপাতে লাগলো। নিরব সেখানেই ছিলো, টয়ার অবস্থায় দেখে বললো,” কিরে এমন কৈ মাছের মত ছটফট করছিস যে।”

টয়া বিস্মিত চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না ওটা ইয়াদ ছিলো। নিরব টয়ার অবস্থা দেখে একটু অস্থির হয়ে গেলো। নিরব একটা পানির বোতল খুলে টয়ার হাতে দিলো। টয়া একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে পানি খেলো। নিরব টয়ার হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে বললো,” এমন করছিস কেনো এবার বল।”

টয়া একটা ঢোক গিলে বললো,” ইয়াদ এখানে এসেছে!”। টয়ার কথা শুনে নিরবের রাগ হলো। সে ভেবেছিল হয়তো নার্ভাস হয়ে গেছে মেয়েটা কিন্তু না এমন ভাব করছে এ মেয়ে যেনো কোনো হলিউড সিনেমার হিরো এসেছে।
নিরব বিরক্তি নিয়েই বললো,” তাতে হয়েছে টা কি?”

টয়া মাথা নাড়িয়ে বললো,” তুই বুঝতে পারছিস না।”
টয়া আর কিছু বলার আগেই নিরব ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,” আমার বুঝেও কোনো কাজ নেই। কি আছে ঐ ছেলের যে তাকে এতো প্রায়োরিটি দিতে হবে?”

টয়া নিরবের কথা শুনে চুপ করে গেলো। নিরব আবার প্রশ্ন করলো,” কিরে বল ওই ছেলের মাঝে কি পেয়েছিস তুই?”

টয়া কিছু বললো না কারন সে নিজেও জানে না ইয়াদকে কেনো তার এতো ভালোলাগে। ইয়াদের আশে পাশে থাকলে অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করে। সে অনুভুতি অনেক আলাদা।সব কিছু ম্যাজিকাল মনে হয়। এটা কি শুধুই ভালোলাগা?

টয়া সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। ইয়াদ পুরস্কার দেওয়া পর্যন্ত সেখানে বসে ছিল। এদিকে অপুর্ব ভেবেই পাচ্ছে না ইয়াদের মত ছেলে এতক্ষন ধরে একটা অনুষ্ঠানে কি করে বসে আছে। অপূর্ব অনেকবার যেতে চাইলো ইয়াদ নানা অজুহাত দেখিয়ে থেকে গেলো। টয়ার পুরস্কার পাওয়ার পর ইয়াদ উঠে দাড়ালো। অপূর্ব ঘাড় ঘুড়িয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদের মতিগতি সুবিদার লাগছে না তার। ইয়াদ অপূর্বকে বললো,” চল আর কত থাকবি?”

” এতক্ষন ধরে যে আমি যেতে বলেছিলাম তার বেলায়?এখন যাবি কেনো আরো বসে যা।”, ব্যাঙ্গ করে বলে উঠে দাড়ালো অপূর্ব।

এদিকে টয়া স্টেজ থেকে নেমে নাচতে নাচতে নিরবকে পুরস্কার দেখাচ্ছে। নিরব টয়াকে থামিয়ে বললো,” হয়েছে থাম এবার। বাসায় চল আজ সারাদিন বাসার বাহিরে। আর ভাল্লাগছে না।”

নিরবের কথায় টয়া বলল,” আমি জিতেছি তাই তোর হিংসে হচ্ছে তাই না?”

নিরব হাত জুড়ে বললো,” বইন আর কথা বলিস না। চল বাসায় চল।”

টয়া হাঁটতে লাগলো, তার ভীষণ খুশি খুশি লাগছে। শাড়ি পড়ে সে ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না। টয়া পরে যেতেই নিয়েছিলো তখনই নিরব টয়াকে ধরে ফেলে। ইয়াদ সেই সময় সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলো।পুরো ঘটনাটা ইয়াদের সামনেই ঘটে যদিও টয়া সেটা খেয়াল করেনি কিন্তু নিরব ইয়াদকে দেখে। দেখলেও তাকে পাত্তা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন সে মনে করেনি।

ইয়াদের সেদিনের কথা মনে পড়লো। সেদিনও তো টয়া পরে যেতে নিয়ে ইয়াদের শার্ট ধরেছিল। সবটা কি টয়ার নাটক ছিলো ? নাকি মজা ছিলো। না হলে একই ঘটনা আরেকজনের সাথে কি করে ঘটে। হতেই পারে সবটা মজা ছিলো, না হলে দিব্যি আজ ইয়াদকে ভুলে অন্য ছেলের সাথে ঘুরছে। সবটা ভেবে ইয়াদের রাগ বেড়েই চলেছে। মেয়েটার প্রতি তার দুর্বলতা তৈরি হয়েছে, সেটা ইয়াদ নিজেও বুঝতে পারছে। ইয়াদ মেয়েটাকে ঠিক বুঝতে পারছে না।

____________

সকালে গেট থেকে বের হয়ে ইয়াদ টয়াকে দেখলো। ইয়াদ আজ নিজের মতো হাঁটতে লাগলো। টয়া আজ পিছু পিছু হাটছে না ইয়াদের পাশাপাশি হাঁটছে। ইয়াদ কিছু বলছেনা কারন তার এ কয়েকদিনের রাগ জমে তার মাথা ব্যাথা হয়ে আছে।

টয়া হাঁটতে হাঁটতে বললো,” আপনি কি কালকে আমাকে দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন?”
টয়ার কথায় ইয়াদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সামলাতে চেস্টা করলো। লাভ হচ্ছে না এইসবের একটা শেষ হওয়া দরকার। ইয়াদ টয়া হাত ধরে টেনে ওকে প্রথম দিনের সেই জায়গায় নিয়ে এলো।

[ চলবে ]

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here