তোমার_খোঁজে_এ_শহরে #পর্ব_৪ #নবনী_নীলা

0
111

#তোমার_খোঁজে_এ_শহরে
#পর্ব_৪
#নবনী_নীলা
” আপনি আমার চুলগুলো একটু বেধে দিতে পারবেন?”, টয়ার কথায় ইয়াদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো সে।এতো সহজে টয়া একটা ছেলেকে নিজের চুল বেঁধে দিতে বলছে। এতোটা সরল হওয়া ভালো নয়।

ইয়াদ টয়াকে বললো,” শোনো তুমি এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছো নিজের চুল নিজে বাঁধাটা তোমার শিখা উচিৎ। আর এভাবে যাকে তাকে নিজের চুল বাঁধতে বলবে না।”

টয়া মুখ কালো করে রাবার ব্যান্ডটা আবার হাতে পরে নিয়ে বললো,” আমি সবাইকে আমার চুল বেঁধে দিতে বলি না এতটুকু জ্ঞান আমার আছে। আমি কি বাচ্চা নাকি?”

” তাহলে আমাকে বললে কেনো?”, প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
টয়া কি বলবে বুঝতে না পেরে বলল,” আপনি পারেন কিনা সেটাই দেখতে চাইলাম।”

বাহ্ টয়া কি সুন্দর করে গুছিয়ে ব্যাপারটা স্বাভাবিক করে ফেললো। যতটা বোকা তাকে ভাবা হয়েছে মেয়েটা এতো বোকা না। ইয়াদ উঠে দাড়ালো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এখনে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। আর ইয়াদ না গেলে হয়তো এই মেয়েও এখানেই বসে থাকবে।

ইয়াদকে উঠে দাড়াতে দেখে টয়াও উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হলো? উঠে দাড়ালেন যে?”

“বাসায় ফিরবো।”, বলে ইয়াদ হাঁটতে শুরু করলো। টয়ার আরো কিছুক্ষন থাকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে কিছু না বলে ইয়াদের পিছু পিছু হাটছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। এই দিকে চায়ের দোকানে সব সময় কয়েকটা বখাটে ছেলেকে সিগারেট হাতে বসে থাকতে দেখে। আজও তারা সেখানেই বসে আছে। ইয়াদ হেঁটে চলে গিয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকালো। টয়া দ্রুত পায়ে হাঁটছে তবে একটা ছেলে উঠে এসে তার পাশে পাশে আসছে।

ইয়াদ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। টয়াকে চোখের ইশারায় তাড়াতাড়ি আসতে বললো। টয়া তো মহা খুশী একা একা হাঁটতে তার খুবই বিরক্তি লাগে। যতটা আহম্মক ভেবেছিল ইয়াদ ততটাও না। টয়া তাড়াতাড়ি পা ফেলে ইয়াদের কাছে গেলো দুজনে একসাথে হাঁটবে বলে।

ইয়াদ টয়ার ভাবনায় জল ঢেলে বললো,” যাও হাটো। আমার আগে আগে যাও।”
টয়া মুখ গম্ভীর করে বললো,” একসাথে হাটি।”
ইয়াদ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,” যেটা করতে বলেছি সেটা করো।”

টয়া আর কথা না বাড়িয়ে আগে আগে হাঁটতে লাগলো। এই ছেলে সুযোগ পেলে আগে জ্ঞান দেয় এবার অর্ডার দিতে শুরু করেছে।

ইয়াদ টয়ার পিছনে হাঁটছে, সে বুঝেছে টয়া যেই মেয়ে পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেলেও হুশ পাবে না। এর চেয়ে আগে আগে হাঁটুক খেয়াল রাখা যাবে।

টয়া ভেবেই পাচ্ছে না ইয়াদ কেনো টয়ার পিছে পিছে হাঁটছে। টয়া অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটছিলো হটাৎ তার চুলে এক টান অনুভব করে। কেও যেনো তার চুল ধরে এক টান মেরেছে। টয়া হাত দিয়ে চুল ধরে পাশ ফিরতেই দেখলো নিরব মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। নিরবকে দেখে টয়া হকচকিয়ে উঠলো। নিরব টয়ার খালাতো ভাই, টয়ার চেয়ে দশ মাসের বড়ো। টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” তুই এখানে কি করছিস?”

” তোকে খুঁজতে বের হচ্ছিলাম। সন্ধ্যা বেলায় কোথায় ঘুরে বেড়াস?” বলেই টয়ার মাথায় একটা বাড়ি দিলো।

টয়া নিরবের পিঠে আরো জোরে দুটো দিয়ে বলে,” আমাকে মারবি না বেয়াদব।”

ইয়াদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদের কাণ্ড দেখলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে মারামারি শুরু করেছে। ছেলেটাই বা কে? দেখে তো মনে হচ্ছে টয়া চিনে একে। ইয়াদ নিজের মতো হাঁটতে লাগলো সামনেই বাসা। এইটুকু টয়া নিজেই চলে যেতে পারবে।

এদিকে নিরব হ্যান্ডস আপ করে বললো,” হয়েছে হয়েছে আর মারিস না।। ছেরে দে মা কেঁদে বাঁচি।”

টয়া বিজয় ভরা হাসি দিয়ে বললো,” আমাকে মারার আগে এরপর থেকে দশবার চিন্তা করবি।” বলতে বলতে টয়া থেমে গিয়ে পিছে তাকালো ইয়াদ কোথায়? এতোক্ষণে ইয়াদের কথা তার মাথায় ছিলো না। পিছনে না দেখে টয়া সামনে তাকালো ইয়াদ সামনেই আছে। টয়া রেগে গিয়ে বললো,” তুই আর কোনো সময় পেলি না? দিলি তো সব ব্লান্ডার করে।”

নিরব সামনে হেঁটে যাওয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” এই কি সেই তোর প্রেমিক পুরুষ?”

নিরবের কথা শুনে টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। প্রেমিক পুরুষ আবার কেমন কথা? টয়ার রাগ মিশ্রিত চেহারা দেখে নিরব বললো,” আচ্ছা সরি, বাবা। তোর ক্রাশ হয়েছে এবার?”

টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল। নিরব টয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘামিয়ে গেছে। নিরব টয়ার চুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে বললো,” দে আমাকে রাবার ব্যান্ডটা। আমি বেধে দিচ্ছি। তুই তো আবার রাজকন্যা চুল বাঁধতে পারিস না।”

টয়া আড় চোখে তাকিয়ে ব্যান্ডটা নিরবের হতে দিলো। ইয়াদ হাঁটতে হাঁটতে কি মনে করে একবার পিছনে ফিরলো। পিছনে তাকাতেই তার কপালে ভাঁজ পড়ল। ছেলেটা টয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছে। ইয়াদ এক পলক তাকিয়ে গেটের ভিতরে চলে যায়।

ছেলেটা কি হয় টয়ার? বয়ফ্রেন্ড? নাকি অন্য কেউ? যদি বয়ফ্রেন্ড হয় তাহলে টয়া তার পিছনে পিছনে প্রতিদিন যায় কেনো? আর যদি বয়ফ্রেন্ড না হয় তাহলে কি এমন চেনা মানুষ যে কিনা এতো যত্নে টয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছে। ইয়াদের রাগ হচ্ছে। টয়া নিজে বলেনি তো ছেলেটিকে নিজের চুল বেঁধে দিতে? একটু আগেই তো ইয়াদকে বলেছিলো। ইয়াদের মাথায় অনেক কিছু চলছে সে চুপ করে নিজের বাসার সিড়ি বেয়ে উঠে পড়লো।

নিরব টয়ার চুল বেঁধে দিয়ে বললো,” তোর লজ্জা হয় না আমি ছেলে হয়ে পরলাম আর তুই? অকর্মের ঢেঁকি একটা। চল বাসায় চল।” রাস্তা বলে টয়া আর কথা বাড়ালো না।

ইয়াদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো। তখনই তার মা তাকে বললো,” ইয়াদ তোমার বাবার খুলনায় ট্রান্সফার হয়েছে। দুদিনের মধ্যেই আমাদের সেখানে যেতে হবে। তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখো।”

ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” মা আমার ইয়ার ফাইনালের কি হবে?”

” সেই দশ বারো দিন তুমি হোস্টেলে এসে থেকো। আমাদের কাছে যে আর কোনো উপায় নেই। তোমার বাবাকে তো একা সেখানে পাঠাতে পারি না।”, ইয়াদ বাকি কথা না শুনেই নাস্তা না করে উঠে গেলো। তার এই শহর ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কোনো শহর ছেড়ে যেতেই তার ভালো লাগে না।

এদিকে টয়া আর নিরব গল্প করছে। নিরব দেখতে সুন্দর একদম ফর্সা তবে এই ফর্সা রঙটা নিরবকে মানিয়েছে। কিন্তু এতো ফর্সা হওয়ার কারণে টয়া নিরবকে সাদা চামড়া বলে ডাকে। এই বয়সে নিরবের গার্ল ফ্রেন্ডের অভাব নেই। আর মেয়েরা ওকে দেখে গলে পরে। রাহি পর্যন্ত নিরব নিরব করে টয়ার মাথা খায়। নিরব তাদের বাসায় আসলেই উল্টা পাল্টা কথা বলে টয়ার মাথা খারাপ করে দেয়।

টয়া কপালে হাত দিয়ে নিরবের বক বক সহ্য করছে। এই ছেলে এতো কথা কেনো বলে?

টয়া ধৈর্য্য হারিয়ে বললো,” একটু থাম। আমার কান দুইটার রেস্ট প্রয়োজন।”

কে শুনে কার কথা? নিরব বলে উঠলো,” কাল না তোর কিসের নৃত্য প্রতিযোগিতা আছে? ভাবছি আজকে থেকেই যাই বুঝলি তোর প্রতিযোগিতা দেখে যাবো কেমন?”

নিরবের কথা শুনে টয়ার হুশ হলো সে স্কুলের অনুষ্ঠানে একক নাচে নাম দিয়েছিল অথচ টয়া কিছুই প্রিপারেশন নেয় নি। টয়া অস্থির হয়ে গেলো,” অ্যাহায় এবার কি হবে? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”

নিরব উঠে দাঁড়িয়ে বললো,” আরে চিন্তা করিস না আমি তো আছি। আমি তোকে নাচ শিখাবো।” বলে টয়ার হাত ধরে টেনে তুলে উল্টা পাল্টা নাচতে লাগলো।

ইয়াদের অসহ্য লাগছিলো তাই সে বারান্দায় এসেছিলো। এসে টয়া আর নিরবকে একসাথে দেখে মাথা আরো গরম হয়ে যায়। বিষয়টা একদমই ভালোভাবে নেয়নি ইয়াদ। টয়াকে সে যেমনটা ভেবেছিল মেয়েটা তেমন না। সে দ্রুত বারান্দা লাগিয়ে জানালায় পর্দা দিয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলো।

এদিকে টয়া নিরবকে ঘর থেকে বের করে বিছানায় শুয়ে পড়লো কালকে সে কি করবে সেটা নিয়েই তার চিন্তা। টয়া ঘাড় ঘুড়িয়ে ইয়াদের রুমের দিকে তাকালো। সব দরজা জানালা বন্ধ আর পর্দাও টেনে দেওয়া। ওরা কি কোথায় বাইরে গেছে? একটু আগে না বাসায় ফিরলো। এতো অন্ধকার কেনো রুমটা?

[ চলবে ]

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here