তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ৯ #নবনী_নীলা

0
130

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ৯
#নবনী_নীলা

“আমি কি এই সিটে বসতে পারি।” ইয়াদের কথায় টয়া হা করে তাকিয়ে রইলো তারপর কান থেকে হেডফোন খুলে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিয়ে আবার ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ আবার জিজ্ঞেস করতেই টয়া ইতস্তত বোধ করে হা সূচক মাথা নাড়ল। এইভাবে একজনকে না বলাও যায় না।

এনজিওর গ্রামে ফ্রী ট্রিটমেন্ট দেওয়ার কাজ আজ বিকেল পর্যন্ত গড়িয়েছে। সবাই খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় বাসে উঠলো। ইয়াদের গাড়ি করে যাবার কথা ছিলো কিন্তু সে ড্রাইভারকে ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে সেখানে চলে যেতে বললো। সে বাসে করে সবার সাথে যাবে।
ইয়াদ বাসে উঠেই টয়ার পাশের সিট খালি দেখে অন্য কোথাও বসার চিন্তা করলো না।

টয়া জানালার পাশে বসে গান শুনছিলো সে ইয়াদকে না করেনি কারন কাল রাতে লোকটা তাকে হেল্প করেছে। এভাবে একজন ছেলের সাথে পাশাপাশি বসে যেতে তার কেমন জানি লাগছে।

ইয়াদ পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করতে গেলে কিন্তু ফোনের সাথেই তার আইডি কার্ড ছিল সেটা নিচে পরে যায়। ইয়াদ তুলতে যাওয়ার আগেই টয়া সেটা তুলে নেয়।

টয়া কার্ডটা ইয়াদের দিকে বাড়িয়ে দিতেই নামটা চোখে পড়লো তার। ইয়াদ আরফিন। এই নামটা তার চেনা লাগছে কেনো এত। ইয়াদ thank you বলে কার্ডটা নিয়ে আবার পকেটে রাখলো। টয়া কিছু বললো না। সে কিছুক্ষণ পর পর ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। ভালোভাবে তাকানোর পর এবার তার চেহারাটা চেনা চেনা লাগছে। এটা কি করে সম্ভব? এতো বছর পর হটাৎ আজ..!

ইয়াদ কি জানে সে যে টয়া। নাহ্ জানবে কীভাবে নিশ্চয়ই ভুলে গেছে, ভুলে গেলেই ভালো।কিন্তু আসলে কি ভুলে গেছে? কাল রাতেই তো তার পুরো নামটা জিজ্ঞেসই করেছিলো। তাহলে কি ইয়াদ জানে এই সেই টয়া।
এইগুলো ভেবেই টয়ার অস্থির লাগছে, ইয়াদ আবার তার পাশেই বসে আছে । অনেক কষ্টে যেই দিনগুলো সে ভুলে থেকেছে এতো বছর আজ হটাৎ এক মুহুর্তে সবটা মনে পড়ল তার।

ইয়াদ কি কাজে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো টয়া উঠে দাঁড়ালো। ইয়াদ একটু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো, হটাৎ আবার কি হলো?
টয়া অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি বের হবো।” ইয়াদ
কিছু চিন্তা না করেই টয়াকে বের হবার জায়গা দিতেই টয়া বের হয়ে পিছনে দুই সিট পরে তানিমার পাশে গিয়ে বসলো।

ইয়াদ প্রথমে বুঝলোই না কি হলো? হটাৎ এভাবে উঠে চলে গেলো কেনো?

তখন তার আইডি কার্ডের কথাটা মনে পড়লো, তার মানে টয়া নামটা পড়ে বুঝতে পেরেছে সে যে ইয়াদ। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে সীটে মাথা রাখলো। এভাবে উঠে যাওয়ার মানে কি টয়া সেদিনের কথা গুলোর এখনো ভুলেনি। তা না হলে সে এভাবে উঠে যাবে কেনো?

টয়া তানিমার পাশে বসতেই তানিমা বলে উঠলো,” কিরে হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে রেখে আমার পাশে আসলি যে? কিছু কি করেছে?”

টয়া শুধু বললো,” ঘুম পাচ্ছে। একটু আমাদের লাইটা অফ করে দিতে বলবি?”

ইয়াদ সবটাই খেয়াল করলো এভাবে উঠে চলে যাওয়ায় ইয়াদের রাগ হচ্ছে। সে রাগটা সামলে নিয়ে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

রাত সাড়ে দশটার দিকে বিকট এক শব্দে টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো। গাড়ির টায়ারের হাওয়া শেষ হয়ে গেছে। এর থেকেও বিরক্তিকর কথা হচ্ছে ড্রাইভারের কাছে এক্সট্রা কোনো টায়ার নেই, টায়ার আনতে নাকি এক ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। কথা শুনে সিনিয়র কিছু মানুষ চেঁচামেচি করতে লাগলো। কিছুক্ষন পরে কোনো মতে পরিবেশ ঠাণ্ডা হলো। সবাই সিদ্ধান্ত নিলো তারা বাসের বাহিরে গিয়ে দাঁড়াবে এই কিছুক্ষণ। ইয়াদ নিজের সিটে বসে আছে টয়ার অপেক্ষায়,সে কখন নামবে। টয়া উদাস হয়ে বাস থেকে বের হতেই পিছু পিছু ইয়াদও বাস থেকে নেমে আসে।

টয়া অপন মনে ঘুরছে চারিপাশ। আশেপাশে জঙ্গলের মতন জায়গা আছে। বাসের বাকিরা উল্লাস করে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে চা খাচ্ছে। এদিকে টয়ার পিছু পিছু ইয়াদও হাঁটছে।

ইয়াদের মনে হচ্ছে সাত বছর আগের সাথে আজকের অনেক মিল পার্থক্য শুধু আগে টয়া পিছু পিছু আসতো, এখন ইয়াদ পিছু পিছু যাচ্ছে। টয়া নিজের মতো হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ তার কানে এলো,” ওদিকে জঙ্গল , ওদিকে যাওয়াটা সেফ না।”

হটাৎ আওয়াজেই টয়া লাফিয়ে ওঠে পিছনে তাকালো। পিছনে ইয়াদ দাড়িয়ে, এবার সে চারপাশে তাকাতেই ভয়ে নাজেহাল অবস্থা টয়ার। যেদিকে তাকাচ্ছে চারিদিকে শুধু গাছপালা। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে সে নিজেও জানে না। আর টয়ার পিছু পিছু ইয়াদ এসেছে কেনো সেটাও সে বুঝতে পারছেনা। টয়া বুঝতে পারছে না যে কোন বিষয় নিয়ে বেশি বিচলিত হবে এমন ঘন জঙ্গলের মাঝে হারিয়ে যাওয়া নাকি ইয়াদের তার পিছু পিছু আসা।

ইয়াদ এগিয়ে এসে বললো,” চলো এখান থেকে, জায়গাটা ভালো মনে হচ্ছে না।”

টয়ার হাত পা যেনো শীতল হয়ে গেছে। কেনো এমন হচ্ছে? সাত বছরেও কি টয়ার অনুভুতি পাল্টায় নি? সব কেনো আগের মত লাগছে। টয়া সেই দিনগুলোতে আর ফিরে যেতে চায় না অনেক কাদিয়েছে সেই দিনগুলো তাকে। ইয়াদ টয়াকে আবার বললো,” চলো।”

টয়া ভারী গলায় বললো,” আমি যাবো না আপনার সাথে। যেতে হলে একাই যেতে পারবো।”

ইয়াদ কিছুটা চমকালো কিন্তু বুঝতে পারলো যে রাগে কিংবা অভিমানের জন্যই বলছে এসব। ইয়াদ এক হাত পকেটে ভরে বললো,” কেনো আমার সাথে গেলে কি আমি তোমাকে গিলে ফেলবো? আর আমার সাথে না যেতে চাইলে থাকো, একটু পর সিঙ্গেল ভূতেরা পেত্নী খুঁজতে বের হলে তাদের সুবিধাই হবে, হাতের কাছে একটা পেত্নী পেয়ে যাবে।”

ভুত পেত্নীর কথা টয়া সহ্য করতে পারে না। টয়া একটা চিৎকার দিয়ে ইয়াদের আশেপাশে এসে দাড়ালো তারপর মেজাজ দেখিয়ে বললো,” আপনি আমাকে পেত্নী বললেন কেনো?”
ইয়াদ দুই হাত পকেটে ভরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,”এতো কথার উত্তর আমি দিতে পারবো না, ইচ্ছে হলে আমার সাথে এসো না হলে ভূতেদের জন্য অপেক্ষা করো।”

টয়া ইয়াদের পিছু পিছু হাটছে তার কাছে আর কোনো উপায়ও নেই। কি ধরনের কথা বলছে, সিঙ্গেল ভুত আবার কি? ভূতেরা কি আবার প্রেম করে নাকি? আজই শেষ দেখা এরপর টয়া আর কোনোদিন ইয়াদের মুখোমুখি হতে চায় না।
ইয়াদের পিছু পিছু টয়া রাস্তার পাশের খালি জায়গা যেখানে সবাই আছে সেখানে এলো।

কিছুক্ষণ পর টায়ার নিয়ে লোকটা এসে যায়। টায়ার বদলাতে লোকটার আরো কিছুক্ষণ সময় লাগে এর মাঝে টয়া এক কাপ চা খেয়ে নেয়। টায়ার বদলানো শেষে ড্রাইভার সবাইকে তাড়া দেয় টয়া চায়ের টাকা দিয়ে বাসে উঠবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার সামনে এসে বলে,” এখন গিয়ে চুপচাপ আমার পাশের সিটে বসবে।”

টয়ার যেনো মাথার উপরে ভারী কিছু দিয়ে কেউ বাড়ি দিচ্ছে ইয়াদের কথা শুনে তার এমন লাগছে। টয়া কেনো তার পাশে বসতে যাবে, আর এমন হুমকি বা দিচ্ছে কেনো? টয়া আরো রেগে বললো,” আমি কেনো আপনার সাথে বসতে যাবো? জীবনেও বসবো না।”

এমন সময়ে গাড়ির কন্ডাক্টার এসে বললো,” গাড়িতে উইঠ্যা কথা বইলেন। অহন চলেন, উডেন।”

ইয়াদ মুখ শক্ত করে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, টয়া সেটা গ্রাহ্য না করে বাসে উঠে পড়ল। বাসে উঠে টয়া থ। যে যার সিটে না বসে সবাই ইচ্ছে মতন উল্টা পাল্টা করে বসেছে নিজের মতন। টয়া দেখলো শেষের দুইটা সিট বাদে সবগুলো ভরাট। টয়া ফ্রেন্ডদের উঠে পিছে যেতে বললে তারা বলেছে,” তুই দেরী করে উঠেছিস কেনো? যা এবার, পিছনে যা। বাকি রাস্তা এইভাবে যাবি।”

টয়া ভালোই বুঝতে পড়ছে এই বেয়াদবগুলো ওকে বসতে দিবে না। এর মাঝে ইয়াদ শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে পিছের সিটে এসে বসে পড়লো। টয়া বাধ্য হয়ে ইয়াদের পাশের সীটে গাল ফুলিয়ে বসলো। ইয়াদ বাকা হাসি দিয়ে বললো,” আমি যা চাইলাম হলো তো সেটাই।”
ইয়াদের কথায় টয়া রাগ আরো বেড়ে গেছে তার ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু সেটা সম্ভব না, বাধ্য হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তাকে।

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here