#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্ব১৭
#নবনী_নীলা
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” Bye।”
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠেই তার সাথে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু আর টয়া দুজনেই ভুত দেখার মত চমকে আছে।
টয়া অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতেথাকতে ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে উঠে দাড়ালো। চলে যেতেই রিতুর হা হওয়া চেহারা দেখে দাড়িয়ে পড়ল।
” আমি কে তা বুঝতে পেরেছো?”, প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
রিতু ঘন ঘন হা সূচক মাথা নাড়ল। কিন্তু সে আসলে কিছুই বুঝতে পারে নি।
” গুড, এর পর থেকে আমার বউয়ের দিকে খেয়াল রাখবে।”, ভয় দেখানোর জন্য হুমকস্বরূপ বললো ইয়াদ।
রিতু আবার ঘন ঘন মাথা নাড়তে লাগলো। ইয়াদ একবার পিছনে ঘুরে টয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর পকেটে এক হাত ভরে বের হয়ে গেল। টয়া যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
রিতু এসে টয়ার পাশে বসে বললো,” কাহিনী কি কিছুই বুঝলাম না। কি সাংঘাতিক ছেলে। আর তোকে বউ বলে গেলে কেনো?”
টয়া চেঁচিয়ে বললো,” আজকের দিনটাই খারাপ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম?” বলতেই টয়ার চোখ গেলো রিতুর দিকে রিতু মলিন একটা হাসি দিলো।
” তুই… তোর চেহারা দেখছি আজকে। তাই এইসব হচ্ছে।”, চোখ রাঙিয়ে বলল টয়া।
” একদম ফালতু বকবি না।”, রিতুর কথায় টয়া গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। তারপর উঠে এসে নাস্তা করতে বলে চলে গেলো।
আর এই যন্ত্রণা ভালো লাগছে না। কোথায় পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদ কাছাকাছি আসলেই যেনো টয়া তার প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। ইয়াদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
হটাৎ এনজিওর কথা মাথায় এলো তার। আজ কি কোথাও ক্যাম্পিং নেই? থাকার তো কথা, সবসময় তারা তো কাজেই থাকে।টয়া সেখানে কল দিলো। আজ দুপুরের পর একটা বাস চড় এলাকার দিকে যাবে এবং ক্যাম্প শেষে কাল রাতে ফেরত আসবে। এটাই সুযোগ ইয়াদ ক্লিনিকে আছে এখন কেটে পড়লে আটকাতে পারবে না। সাড়ে দশটা বাজে টয়া গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলো। এক রাত এক দিনের জন্য জামা কাপড় তেমন কিছু নিতে হবে না তার শুধূ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস একটা ছোট ব্যাগ এ ভরে নিলো টয়া।
রিতু টয়ার ঘরে এসে হা করে থেকে বলল,”কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
” এনজিওর একটা কাজে যাচ্ছি।”, বলে ফোনের চার্জারটা ব্যাগের সাইড পকেটে রাখলো টয়া।
” তুই কি ওই ছেলের ভয়ে পালাচ্ছিস?”, রিতুর প্রশ্নে টয়া আমতা আমতা করে বলল,” ভয়! ভয়ের কি আছে। আর ওই ছেলেকে তুই ভুলেও বলবি না আমি কোথায় গেছি। না হলে তোকে অমি বৃন্দাবন পাঠিয়ে ছাড়বো বলে দিয়ে”, টয়ার কথা শুনে রিতু হাসতে লাগলো তারপর বললো,” আহারে !”
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আহারে বলার কি আছে?”
রিতু মাথা না সূচক নাড়িয়ে বললো,” গান গাইছিলাম। আহারে আহারে কোথায় পাবো তাহারে, যে ছিলো মনের…………” গাইতে গাইতে হাত পা ছুড়ে নেচে নেচে কিচেনে চলে গেলো।
টয়া ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। দুপুর তিনটায় বাস ছাড়লো বাস গিয়ে চড়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। টয়ার এবার শান্তি লাগছে, বুকের ধুকপুকানি একটু কম হয়েছে। এবারে স্টেশনের পাশে একটা টিনের ঘর থাকার জন্য ব্যাবস্থা করা গেছে। সাথে মাধবী অর তনম্ময় আছে দেখে ভালোই লাগছে। রাতে সবাই আড্ডা দিলো তারপর ঠিক করা হলো কি কি করবে কাল সকালে।
এবার এই এলাকায় খাদ্য বিতরণ করবে তারা কারণ এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বন্যা এসবে মানুষ বিপাকে পরে যায়।
এদিকে রিতু একা বাসায় রয়েছে রাত এগারোটায় হটাৎ কলিং বেল বাজালো কেউ। রিতু লাফিয়ে ওঠে দরজার দিকে গেলো। ভয়ে সে থর থর করে কাপছে তার মনে হচ্ছে ডাকাত এসেছে। রিতু আগে ফাঁক দিয়ে দেখে নিলো। ইয়াদকে দেখে রিতুর মরি মরি অবস্থা ওরে আল্লাহ এই লোকটা আবার আসছে কেন?
ইয়াদ অনেক্ষন বেল বাজালো কিন্তু রিতু ভয়ে দরজা খুললো না।
ইয়াদ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তারপর ভাবলো সে এসেছে বুঝেই দরজা খুলছে না টয়া। শেষমেশ ইয়াদ নিজের রূমে চলে গেলো। এদিকে রিতু তো দরজা খুলবে না এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরাম করে বসে রইল। আজ বেল বাজাতে বাজাতে যদি বেল খুলে পড়ে যায় তাও সে দরজা খুলবে না। তার নাম ও রিতু রজনী।
⭐
আজ টয়ার ফিরবার দিন একটু পর সবাই বাসে উঠবে তার প্রস্তুতি চলছে। টয়া চুপ করে এক কোনে বসে আছে হিটলারটা কি করছে কে জানে ভালোই হয়েছে চলে এসেছে সে। এখানে লোকটা তাকে জ্বালাতে পারবে না। সবাই বাসে উঠে গেছে টয়া সেটা খেয়াল করেনি একটু পর মাধবী এসে ওকে ডাকলো।
” কি হলো যাবি না?”, মাধবীকে দেখে টয়া উঠে দাড়ালো।
” সবাই উঠে গেছে?”, ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল টয়া।
” হ্যা তোকেই খুজতে এসেছি। তাড়াতাড়ি চল বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।”
টয়া আকাশের দিকে একবার তাকালো। মেঘলা হয়ে গেছে আকাশটা। টয়া আর মাধবী বাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। হটাৎ টয়া থেমে যায়। মাধবী টয়াকে যাবার জন্য তাড়া দিয়ে বললো,” আবার দাড়িয়ে পড়লি যে তাড়াতাড়ি চল।”
টয়া স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি সামনে সে রেখে একটা ঢোক গিললো। এটা কি সত্যি নাকি সে ভুল দেখছে?কারণ সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে। ইয়াদ নিজের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে টয়াকে দেখছে। ইয়াদের চোখে মুখে গম্ভিরতার ছাপ দেখেই টয়া বুঝতে পেরেছে তার কপালে আজ শনি রবি সোম মঙ্গল সব ঘুরছে।
টয়া ইয়াদকে পাশ কাটিয়ে কোনোভাবে বাসে উঠে যাবার চেস্টা করলো কিন্তু ইয়াদ গম্ভীর মুখে টয়ার হাত ধরে মাধবীর উদ্দেশ্যে বললো,” ও আমার সাথে যাবে।”
এ কথা শুনেই টয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ওনার সাথে গেলে কি করে বসবে তার কোনো ঠিক নেই। মাধবী কিছুটা অবাক হল কিন্তু আর কথা না বাড়িয়ে বাসে উঠে পড়ল। টয়া বির বির করে বললো,রিতু বেয়াদপটা সব ফাঁস করেছে ওকে আমি হাতের কাছে পেলেই হয়। টয়া ক্রমাগত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে টেনে কাছে নিয়ে আসে।
টয়া ভয়ে ইয়াদের চোখের দিকেও তাকাচ্ছে না। ইয়াদের দৃষ্টি টয়ার দিকে স্থির। ইয়াদ হাত দিয়ে টয়ার চেহারা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,” ফোন ধরছিলে না কেনো? ফোনটা আবার বন্ধ করে রেখোছো তাই না? খুব সাহস বেড়ে গেছে তোমার!”
টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” এদিকে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে আমি কি করবো। আমাকে শাসাচ্ছেন কেনো?”
,” এসব যে করে বেড়াচ্ছো তোমার বাবা মা জানে?”,ইয়াদের কোথায় টয়া চমকে উঠলো।টয়ার বাবা মা কিছুই জানে না তাদের জানালে তারা কখনোই তাকে শহরে একা থাকতে দিতো না। এবং এই এনজিওর কথাও তারা জানে না। এই ছেলে যদি গিয়ে সব বলে দেয়। তাহলে যে লঙক্কা কান্ড লেগে যাবে। টয়া চোখ পিট পিট করে ইয়াদের দিকে তাকালো।
ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো,” এখন চুপ চাপ গিয়ে গাড়ীতে বসে। তোমাকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।”
টয়া অগ্নিশর্মা হয়ে তাকিয়ে রইল, সে কি নিজের ইচ্ছে মতন একটু ঘুরে বেড়াতে পারবে না?
” কি হলো?”, বলে তাড়া দিয়ে হাত ছেড়ে দিল ইয়াদ। টয়া মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে টয়া আর ইয়াদ পাশাপাশি। গাড়ীতে উঠে বসতেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। কি সুন্দর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গাড়ির জানালা দিয়ে এসে টয়ার গাল বেয়ে পড়ছে। টয়ার বেশ ভালো লাগছিলো কিন্তু কিছুক্ষন পরেই ইয়াদ জানালার গ্লাস বন্ধ করে দেয়। টয়ার আনন্দ কি তার সহ্য হয় না?। টয়ার অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে ইয়াদকে কিন্তু সে চুপ হয়ে বসে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। বৃষ্টি দেখতে দেখতে টয়ার চোখ গুলো ঘুমে এলিয়ে এলো। টয়া একপাশে মাথা ফেলে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল সারা রাত মশার যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারেনি সে।
ইয়াদ টয়া ঘুমিয়ে পড়ায় টয়ার কাছে এসে বসে টয়ার মাথাটা আস্তে করে নিজের কাঁধে সাথে রাখলো। টয়ার গভীর ঘুমে ইয়াদের হাতের বাহু জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদ গাড়িতে থাকা একটা পাতলা চাদর টয়ার গায়ে দিয়ে দিলো। ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাঁকিয়ে থেকে নিজের মাথাটাও গাড়ীতে হেলিয়ে দিলো। টয়াকে এই জায়গায় খুঁজে বের করতে গিয়ে অনেক ঘুরতে হয়েছে তাকে, ক্লান্ত লাগছে।
হটাৎ গাড়ির ব্রেক কষতেই ইয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো। টয়া একটু নড়ে চড়ে ইয়াদ কাধ থেকে ঘুম ঘুম চোখে মাথা তুলে চারপাশ দেখে আবার গাড়ির সীটে মাথা হেলিয়ে রাখলো। ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে গেলো ইয়াদও নেমে এলো।
বৃষ্টির মধ্যের গাড়ী থেকে নামতেই ইয়াদ ভিজে গেলো। ড্রাইভার ছাতাটা ইয়াদের দিকে এগিয়ে নিয়ে বললো,” স্যার, সামনে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আশেপাশে প্রচুর গাছ আছে এই ঝড় বাতাসে যেকোনো সময় গাছ পড়তে পারে। আর এমনিতেও সামনে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।”
” তাহলে?”, চিন্তিত গলায় বলল ইয়াদ।
” স্যার আপনি এখানে দাড়ান আমি দেখছি আশেপাশে কোনো থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা।”, বলে ছাতাটা ইয়াদকে দিয়ে সে এগিয়ে গেলো।
ইয়াদ ছাতা হাতে গাড়ির সামনে এগিয়ে গিয়ে পড়ে থাকা গাছটা দেখে। গাড়ির কাছে এসে দেখে টয়া গাড়ী থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজছে। এই মেয়ের কোথা থেকে যে এমন ইচ্ছা জাগ্রত হয় ইয়াদ ভেবে পায় না। ভালো কোনো কাজ এই মেয়ে করবে না। সব আজগুবি কাজ করে বেড়ায়।
ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে টয়াকে টেনে ছাতার নিচে নিয়ে এলো। টয়া নাছর বান্দা সে হাত সরিয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজছে।
” আচ্ছা আপনি কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছেন?”, টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমার কি তোমার মতো মাথার জয়েন্ট ছেড়া নাকি ?”
ইয়াদের কথায় টয়া রেগে গিয়ে ইয়াদের হাতে থাকা ছাতা নিয়ে সরিয়ে ফেললো তারপর বৃষ্টির পানি ইয়াদের মুখে ছিটিয়ে দিতেই ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। টয়া নেচে নেচে বললো,” হুহ, আপনার জয়েন্ট এ সমস্যা বুঝলেন?”
ইয়াদ হাত দিয়ে মুখের পানি সরিয়ে বললো,” you have to pay for this. I’m telling you.”টয়া ইয়াদের কথা কানে নিলো না।
[ চলবে ]
🎊🌻নতুন বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।🌻🎊