তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্ব_১৬ #নবনী_নীলা

0
113

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্ব_১৬
#নবনী_নীলা

টয়া পালিয়ে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেললো। আবার সেই হিটলারের হাতে পড়তে হলো টয়ার। শাড়িটা এমনিতেই অনেক কষ্টে করে পরেছে সে। এবার যদি কোনো অঘটন ঘটে তখন। টয়া শাড়ির আঁচলটার অগ্রভাগ শক্ত করে ধরলো। ইয়াদ আস্তে আস্তে আঁচলটা নিজের হাতের মুঠোয় পেচিয়ে নিতেই টয়ার বাধ্য হয়েই কাছে আসতে হচ্ছে।

টয়া বিনয়ী ভঙ্গিতে বললো,” দেখুন আমি অনেক কস্ট করে এই শাড়িটা পড়েছি। ছাড়ুন আঁচলটা। নয়তো আমি এই শাড়ি সামলাতে পারবো না।”

ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা হেচকা টান দিতেই টয়া একদম ইয়াদের কাছে চলে এলো। ইয়াদ হাতে পেঁচিয়ে রাখা আঁচলটা খুলে সেটা দিয়ে টয়াকে জরিয়ে দিয়ে বললো,” তোমার শাড়ি আর তোমাকে সামলানোর জন্য আমি তো আছি।”

টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার পায়ের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসতেই টয়া হকচকিয়ে গেল।

ইয়াদ টয়ার শাড়ির কুচি গুলোর ভাজটা ঠিক করে দিচ্ছে। টয়া সরে যেতে নিলেই ইয়াদ টয়ার হাতটা ধরে দাড় করিয়ে রাখাল। টয়ার অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করছে। এইদিকে ইয়াদ মনোযোগ দিয়ে টয়ার শাড়ির কুচিগুলো ভাজ করছে।

সাত বছর পর আবার টয়া সেই অপলক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনের কোণে যেনো পুরনো সেই অনুভুতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠেছে। ইয়াদ কুচি ভাজ শেষে টয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,” এইভাবে বুঝি কেউ শাড়ি পড়ে?”

ইয়াদের কথায় টয়া ইয়াদের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদ উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো,” ভাবছি শাড়ি কীভাবে পড়ায় সেটা শিখে রাখবো। কি বলো?”

টয়া বিরক্ত সে অন্য দিকে তাকাতে তাকাতে বলল,” অনেক ভালো হবে। যখন বউ হবে বউকে পড়াবেন।”

টয়ার মনে যা আসে সে সেটাই বলে ফেলে কিন্তু সে নিজেই যে এখন ইয়াদের বউ, এ কথা কিছুক্ষনের জন্যে সেটা তার মাথায়ই ছিলো না। ইয়াদ ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া ভ্রু কুঁচকে পিছাতে গিয়ে রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ টয়ার এক পাশের রেলিং এ হাত রেখে বলল,” তা বউ যখন নিজেই চাইছে আমি যেনো তাকে শাড়ি পরিয়ে দি তাহলে তো আর দেরি করা যাচ্ছে না। তুমি একদম আমার মনের ইচ্ছাটা বলে দিয়েছো।”

টয়া কিছুক্ষন হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে রইলো ইয়াদের দিকে। তারপর হটাৎ টয়ার মনে পড়লো সে তার নিজেই এখন ইয়াদের বউ। টয়ার মুখ হা হয়ে গেলো।

ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এসো শাড়িটা পড়িয়ে দেই।” বলেই ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকালো।

চোখে চোখ পড়তেই টয়া লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। টয়া এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো তারপর নিচু স্বরে তেজী গলায় বলল,”এগুলো বলতে আপনার লজ্জা করছে না।”

ইয়াদ সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে বললো,” না, একদমই না। বউ আমার সেখানে লজ্জার কি আছে?আর নেক্সট টাইম থেকে আমি পড়িয়ে দিবো বুঝেছো?”

ইয়াদের কথায় টয়ার লজ্জায় এখান থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করছে । এতো সাবলীলভাবে এসব বলছে যেনো সবটাই পান্তা ভাত আর পিয়াজ।

টয়া লজ্জায় কথাও বলতে পারছেনা তাও মাথা নিচু রেখে শাসিয়ে বললো,” কোনদিন না। আমি আর জীবনে কোনোদিন শাড়ি পড়বো না। ”

“সে তোমার আর পড়তে হবে না। আমিই পড়িয়ে দিবো।”, ইয়াদ ইচ্ছে করেই টয়াকে রাগিয়ে দিচ্ছে।

টয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে যদি সত্যিই ইয়াদ এমন কিছু করে ফেলে। অসভ্যতার একটা সীমা থাকা দরকার, দিন দিন অধঃপতন হচ্ছে এই ছেলের। এই বিয়েটা করে কি যে বিপদে পড়েছে কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা সে। টয়া মনে মনে বির বির করছে আর রাগে ফুলছে।

ইয়াদ উপহাস করে বললো,” যা বলার বলে ফেলো। মনে মনে নিজেকে বলে তো কোনো লাভ নেই।”

টয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইল। টয়ার অবস্থা দেখে ইয়াদ হেসে ফেললো।

” আমি নীচে যাবো। সরুন তো। অসহ্য আপনি।”, বিরক্তি নিয়ে বললো টয়া।

” আচ্ছা ঠিক আছে।”, বলে ইয়াদ টয়ার হাত ধরলো।

” এতো দেখি মহা জ্বালা, আবার হাত ধরেছেন কেনো?”, বলে হাত ছড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে টয়া।

” একসাথে যাবো তাই।”,বলে টয়াকে নিয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলো।

” ছাড়ুন, ছাড়ুন।”, বলতে থাকলো টয়া। ইয়াদ সেটা কানে নিচ্ছে না। দরজার সামনে এসে টয়া আরো অস্থির হয়ে গেছে হাত ছাড়ানোর জন্য। ইয়াদ বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিলো বেশি জোর করতে গেলে টয়া ব্যাথা পেতো। টয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে নিজের রূমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পা তুলে খাটের উপর বসে পড়ল। সম্ভব হলে সে নিজেকে এই রুমেই বন্দি করে রাখতো কখনো বের হতো না আর।

_____________________

বাবা মা আজ চলে গেছে টয়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছিল সকাল সকাল কলিং বেলের আওয়াজে টয়ার ঘুম ভাঙলো। এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গার কারণে তার ভীষণ রাগ লাগছে। এতো সকালে নিশ্চই ইয়াদ বিরক্ত করতে এসে গেছে। আজ ভার্সিটি নেই তাই কোথায় ভেবেছে একটু শান্তিতে ঘুমাবে কিন্তু এই লোকটা সবকিছুতে পানি ঢেলে দিবে। টয়া উঠে যেতে চাইছে না তাই অন্য দিকে ফিরে শুয়ে রইলো। কিন্তু বার বার কলিং বেল বাজায় টয়া মেজাজ হারিয়ে উঠে বসলো।

অনেক জ্বালিয়েছে এই লোকটা আজ একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া দরকার। আজ এমন ভয় দেখাবো জীবনে তাকে আর বিরক্ত করার সাহস পাবে না এই ইয়াদ। টয়া রান্না ঘর থেকে ছুরি হাতে নিয়ে দরজা খুলেই বড় ছুরিটা ধরে দাড়ায়।
তবে মজার ব্যাপার হলো টয়ার সামনে রিতু দাড়িয়ে। রিতুকে দেখে টয়ার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। টয়া ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো,” এই বেয়াদব তোর কাছে ফ্ল্যাটের চাবি নেই? সকাল সকাল আমার ঘুম নষ্ট করলি কেন? ইচ্ছে করছে তোকে … অসভ্য।”

হটাৎ ছুরি হাতে টয়াকে দেখে রিতু হতবাক হয়ে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে রিতু বললো,” কিরে কি হয়েছে? ছুরি বটি নিয়ে কি করছিস এইসব।”

“তা না করে কি তোকে তো মিষ্টি খাইয়ে, ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগতম জানতাম নাকি? নিজেই একটা বাঁদর আবার গেছে বান্দরবন ট্রিপে। এসেছিস কেনো আর ঐখানেই সংসার পেতে ফেলতি।”, বলে গম গম করে হেটে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো টয়া।

” বাপরে! তোর মাথা দেখি ভীষণ গরম।”, বলে ভিতরে ঢুকলো রিতু তারপর বললো,” তুই কি আজকাল বিছানার পাশে ছুরি নিয়ে ঘুমাতে যাস?”

রিতুর প্রশ্নে টয়া কটমট করে তাকাতেই রিতু বললো,” আচ্ছা তুই ঘুমা। আমি আর ডিস্টার্ব করছি না।”

সকাল দশটা টয়া এখনও ঘুমাচ্ছে টয়া।এদিকে রিতু গোসল সেরে বেরিয়ে এসে পাউরুটি টোস্ট করছিলো। এমন সময় আবার কলিং বেল বাজলো। কলিংবেেল বাজার সাথে সাথে রিতু আতকে উঠলো। মানুষ হুট করে এভাবে কলিংবেল বাজায় কেনো? ভাগ্যিস টয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় নি। রিতু গিয়ে দরজা খুলে হা করে রইলো রিতুর সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে। ইয়াদকে মেরুন রঙের শার্টটায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

রিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,” কাকে চাই?”

এই মেয়েটা কে।ইয়াদ বুঝতে পারছেনা।ইয়াদ বুকের কাছে দুই হাত গুজে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কে?”

” আরে মশাই আপনি কি চান?”, চেঁচিয়ে বললো রিতু।

” টয়া কোথায়?”, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।

“, আপনি টয়াকে চিনেন কি করে? আপনি কে বলুন তো?”, একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো রিতু।

ইয়াদের এতো প্রশ্ন শুনতে বিরক্ত লাগছে তাই সে রিতুকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে এলো। এভাবে ভিতরে চলে আসায় রিতু চমকে উঠলো।

” আরে আরে! যাচ্ছেন কোথায়?”রিতু বলতে বলতে ইয়াদের পিছু পিছু গেলো।

ইয়াদ টয়াকে সোফায় শুইয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রিতুর দিকে তাকালো তারপর রিতুকে বললো,” টয়া সোফায় ঘুমাচ্ছে কেনো?”

” ঘুমালে আপনার সমস্যা কি? আপনি ভিতরে চলে এলেন কেনো? এইভাবে কেউ কারোর বাসায় ঢুকে?”, রিতু রাগ দেখিয়ে বললো।

ইয়াদ রিতুর কথায় কান না দিয়ে টয়ার পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। টয়া হাত একপাশে রেখে পা আরেকপাশে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার অবস্থা দেখে একটা নিশ্বাস ছেড়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। এটা দেখে রিতু আরো হতবাক হয়ে গেলো। বলা নেই কওয়া নেই কই থেকে একটা লোক ঘরে ঢুকে টয়াকে কোলে তুলে নিলো।

” আপনি নিশ্চই নারী পাচারকারি তাই না। দাড়ান আমি এক্ষুনি পুলিশ এ কল দিচ্ছি।”, বলেই রিতু চিৎকার করে লাফালাফি করতে লাগলো।

ইয়াদ রিতুর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই রিতু ভয় পেয়ে গেল। এদিকে রিতুর লাফালাফিতে টয়ার ঘুম অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে।

ইয়াদ টয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিতেই টয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে ইয়াদকে দেখতেই টয়া লাফ দিয়ে উঠে বসে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই ইয়াদের চেহারা দেখতে হবে এটা কল্পনাও করেনি।

” আ~আপনি এ~ খানে?”, কাপা কাপা গলায় বলল টয়া।
” হুম, তুমি সোফায় ঘুমাচ্ছিলে কেনো?”, ইয়াদ নরম গলায় বলল।

” আপনি এখানে কেনো?” টয়ার আবার এক প্রশ্ন।

রিতু একপাশে দাড়িয়ে হা করে ওদের দেখছে।

ইয়াদ টয়ার সামনে বসে বললো,” আমি ক্লিনিকে যাচ্ছি।”

টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” তো! আমি কি করবো?”

ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” Bye।”

টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠেই তার সাথে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু আর টয়া দুজনেই ভুত দেখার মত চমকে আছে।

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here