তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্ব_১৫ #নবনী_নীলা

0
133

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্ব_১৫
#নবনী_নীলা

আজ বিয়ে কথাটা শুনেই টয়ার পিলে চমকে উঠলো। মানে কি বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই বিয়ে? সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিচেনে গিয়ে ইয়াদের মায়ের সাথে তার মায়ের আলাপ কানে আসতেই টয়া যেনো আকাশ থেকে পড়লো। কাল রাতে যা শুনেছিল সব তাহলে সত্যি। কেউ কাল এই ব্যাপারে কোনো কথা বলে নি তাই টয়া ভেবেছিলো তার হয়তো বোঝার ভুল কিন্তু এবার তো স্পষ্ট শুনেছে সে।

টয়া স্ট্যাচুর মত সেখানে দাড়িয়ে রইলো। মিলি আক্তার আর টয়ার মা এই নিয়ে টয়ার সাথেই কথা বলবেন বলে যাচ্ছিল টয়াকে এখানে পেয়ে তাদের ভালোই হলো।

টয়া যা শুনেছে সেটা নিয়ে সে কল্পনাও করতে পারছেনা। টয়াকে এনে দুজনে সামনে বসালেন। টয়ার সামনে মিলি আক্তার আর তার মা। ।

টয়ার মা আর দেরী না করে বললেন,” শোন ইয়াদ ছেলেটাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।”

আরো বললেন যে ইয়াদের বাবার সাথের টয়ার বাবার পরিচয় অনেক আগের। এছাড়া একা একা এইভাবে তাকে রেখে যেতেও ভীষণ ভয় লাগছে তাদের। বিয়েটা হয়ে গেলে তারা চিন্তা মুক্ত হয়ে ফিরতে পারবেন।

” আর আমার ইচ্ছে? তার বুঝি কোনো মূল্য নেই? আমি এখণ এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না।” জোর গলায় বললো টয়া।

“তোমাকে এসবের মধ্যে এখন জড়াতে কেউ বলছেনা। আমাদের এখন বয়স হয়েছে এভাবে শহরে এসে থাকতে পারিনা। তোমরা একা একা থাকো কখন কার কি বিপদ হয়ে যায়। সে চিন্তায় চিন্তায় সারাদিন কাটাতে হয়। আমরা চাই শুধু তোমরা একে অপরের খেয়াল রাখো। তাহলে আমরা একটু চিন্তামুক্ত হই। এক্ষুণি সংসার করতে কেউ বলছেন না তোমায়। শুধু হাতে কলমে রেজিস্ট্রি করা হবে। তোমার ভাইয়েরা আছে তারা আসবে আমদের আত্মীয় স্বজন তারা আসবে ধুমধাম করে তখন বিয়ে হবে। এখন এ বিয়ের কথা কাউকে জানাবারও প্রয়োজন নেই।”মিলি আক্তারের কথাগুলোয় টয়া চুপ করে ছিলো। তার মাথায় একটাই কথা ইয়াদকে সে বিয়ে করবে না। হুট করেই কিভাবে এক রাতের মধ্যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তারা?

টয়ার মা উপায় না পেয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,” তোর কি পছন্দের কেউ আছে?”

এই প্রশ্নের উত্তরের ইয়াদের মা আগ্রহ নিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া মাথা নিচু করে না সূচক মাথা নাড়ল। মিলি আক্তার যেনো শান্তি পেলেন।

” কাউকে পছন্দ না করলে এই বিয়েতে সমস্যা কি তোর?” মায়ের প্রশ্নে টয়া চুপ করে আছে।

যে ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে সে ছেলেই আসল সমস্যা। সেই কথা এদের সে কিভাবে বুঝাবে?

টয়ার নিরবতা দেখে ইয়াদের মা বললো,” আমাদের বুঝি ভালো লাগেনি তোমার?”

টয়া ইয়াদের মাকে কষ্ট দিতে চায় না। উনি অনেক আলাদা একজন মানুষ যাকে বন্ধুর মতো সব বলা যায়। টয়া মাথা তুলে নিচু স্বরে বললো,” আণ্টি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি সেটা বলিনি।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টয়া আরো বললো,” ঠিক আছে তোমরা যা আমার জন্য ভালো মনে করেছো আমি সেটা মেনে নিচ্ছি তবে ওই ছেলের সাথে আমি একঘরে থাকবো না। আমাকে কোনো ব্যাপারে কেউ জোর করতে পারবে না। আর আমি যদি আলাদা হয়ে যেতে চাই তাতেও কেউ আমাকে বাঁধা দিতে পারবে না।”

টয়ার এমন আযুক্তিক কথা শুনে টয়ার মা ধমক দিতে যাবেন এমন সময় মিলি আক্তার তাকে থামিয়ে বললেন,” টয়া তো ঠিকই বলেছে এখন একসাথে থাকতে যাবে কেনো? সবে তো মাত্র রেজিস্ট্রি হবে। তোমরা আলাদা থেকো সমস্যা নেই।”

যাক একটা বিপদ থেকে বাঁচার অনুমতি পেয়েছে সে। ভেবেই বিয়ের ভয়টা একটু কমেছে টয়ার। তবে ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না।

এদিকে ইয়াদ এ ব্যাপারে কিছুই জানে না হঠাৎ তার মা এসে বললো,” তোর টয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে। দেখছিস আমি বলেছিলাম না?”

“টয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে! হতেই পারে না”, ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো ইয়াদ।

” রাজি হয়েছে তবে বলেছে তোর সাথে একঘরে থাকবে না। যাক সেটা বিয়ের পর তোদের পার্সোনাল ব্যাপার। সেটা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই। তোর বউ তুই বুঝে নিস।”

ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে বললো,” আসলেই রাজি হয়েছে? কীভাবে সম্ভব?”

” তোর মা থাকতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এবার তোরা বিয়ের পর মারামারি কর কিংবা চুলোচুলি কর তোদের ব্যাপার কিন্তু একে অপরের হয়ে থাক। ”

ইয়াদের যেনো কোনো মতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। সে হা করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

রেজিস্ট্রি কাগজে ওরা সহজেই সাইন করে ফেললো। বিয়ে বিয়ে কোনো অনুভুতি কেউ পেলো না। টয়া সন্ধ্যে বেলা নিজের রুমে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় তার মা হাতে একটা শাড়ি হাতে ঘরে এলো। যা চেয়েছিল সব তো করেই দিয়েছে আবার এ কোন আপদ সঙ্গে করে নিয়ে আসছে তার মা। এবার কি শাড়ি পড়তে হবে? মায়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে টয়া।

টয়ার মা শাড়ি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বললো,”এভাবে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। শাড়ি পড়ে বাহিরে এসো।”

টয়া নানা অজুহাত দেখিয়ে বাঁচার চেস্টা করলো কিন্তু তাকে আজ শাড়ি পড়তেই হবে। সবার সামনে শাড়ি পড়ে যেতে হবে কতটা বিভ্রান্তিকর একটা কাজ। টয়া কোনো মতে শাড়িটা পরে বের হয়ে এলো।

বাহিরে এসেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ইয়াদ, ইয়াদের মা বাবা সবাই বসে আছে। টয়া এদের দেখে আবার রূমে চলে যেতে চাইলো টয়ার মা টয়াকে জোর করে এনে ইয়াদের পাশে বসিয়ে দিলো। ইয়াদ টয়ার থেকে চোখ সরাতে পারছে না। বেগুনি রঙের শাড়িটাতে টয়াকে অপরূপা লাগছে। চুল গুলো খোলা রাখার কারণে তাকে যেনো আরো সুন্দর লাগছে। ইয়াদ সোফার এক পাশের উপরিভাগে এক হাত মেলে বসে ছিলো।নেভিব্লু রঙের শার্ট আর জিন্স প্যান্ট তাকেও মানিয়েছে।

টয়ার মা টয়ার মাথায় শাড়ির আঁচলটা তুলে দিলেন। টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভীষণ বিরক্ত লাগছে এইসব। সবাই কথা বলছে। এইখানে তাকে বসিয়ে রাখার মানে কি?

হটাৎ তাদের একসাথে কিছুক্ষণ থাকার জন্য বড়রা ছাদে পাঠিয়ে দিল। টয়া আসতেই চাইছিলো না ইয়াদের সাথে টয়ার মা ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দিলেন। টয়া ইয়াদের থেকে দশ হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ইয়াদের এখনো টয়ার বিয়েতে রাজি হওয়াটা অস্বাভাবিক লাগছে। ইয়াদ এক দৃষ্টিতে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া সেটা ভালোই বুঝতে পারছে কিন্তু সে তাকাচ্ছে না। কতক্ষণ এইখানে থাকতে হবে কে জানে?

এই ছেলের সাথে আবার নাকি বিয়েও হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো,” গাল ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?”

টয়া আড় চোখে তাকালো কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কারণ কথা বললেই কথা বাড়ে। কথা বাড়ানোর মন মানসিকতা তার এখন নেই।

” বিয়ের শোকে কি কথা বন্ধ হয়েগেছে?”, ইয়াদ কাটা ঘায়ে একটু নুনের ছিটে দিয়ে দিলো আর কি!

” আপনার সমস্যা কি বলুন তো? আপনিই এইসব করেছেন তাই না। সব আপনার প্ল্যান, এবার আমি সব বুঝতে পারছি।”, কড়া গলায় বলল টয়া।

ইয়াদ তাচ্ছিল্য করে বললো,” তুমি নিজেকে কি ভাবো বলোতো ? তোমাকে বিয়ে করতে হলে এতো ঝামেলায় কেনো পড়তে যাবো আমি?”

” তাহলে এ বিয়েতে রাজি হলেন কীভাবে? আপনার যাকে পছন্দ আমার থেকে ভালো তাকেই বিয়ে করতেন।” তেজ দেখিয়ে বললো টয়া।

” হুম, ইচ্ছে তো এমনটাই ছিলো। কিন্তু কি করার বলো মা বাবার কথা তো ফেলতে পারি না।”, বলে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো। টয়ার রাগী মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কথাটা তার ভালো লাগেনি বোঝাই যাচ্ছে, মুখে তো এতো কথা বলে তাহলে এখন অন্য মেয়ের কথা শুনে মুখ ফ্যাকাশে করেছে কেনো?

” ও আচ্ছা, বাবা মার চাপে বিয়েটা করেছেন!”, শান্ত গলায় বলল টয়া। টয়ার ভিতরটা কেমন জানি করে উঠলো ইয়াদের কথায়। তাহলে কি তার অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ ইয়াদের।

” হুম , কেনো তুমি কি ভেবেছিলে?”, বলেই ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া মুখ সরিয়ে সামনের রেলিং ধরে দাড়িয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললো,” কিছু ভাবিনি”।

” তা তুমি কেনো রাজি হয়েছো? তুমিও কি বাবা মার চাপে?” ইয়াদের এমন প্রশ্নে টয়া শুধু হা সূচক মাথা নাড়ল কিন্তু তার দৃষ্টি সামনে স্থির।

বাতাসে টয়ার চুলগুলো উড়ছে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা ঘোরের মধ্যে চলেগেছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বললো,” তোমার পছন্দের কেউ নেই?”

” নিজের পছন্দের উপর থেকে আস্থা অনেক আগেই উঠে গেছে আমার।”, ইয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো টয়া।

কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে টয়া। ইয়াদ নিজেকে সামলে নিলো।টয়ার আর থাকতে ভালো লাগছে না। টয়া চলে যেতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে ফেললো। টয়া জোর গলায় বললো,” আমার হাত ছাড়ুন। আপনাকে আমি বারণ করেছি না আমার হাত ধরবেন না।”

টয়ার কথায় ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো। টয়া ইয়াদের এভাবে তাকে কাছে নিয়ে আসায় চমকে গেলো।

টয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” আমাকে কি জানি বলছিলে একটু আগে? যেনো তোমার হাত না ধরি? যদি না শুনি তোমার কথা। কি করবে তুমি ?”

ইয়াদের হটাৎ এমন আচরণে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। কি বলছে এইসব! টয়া নিজেকে সামলে বললো,” আমি চিৎকার করবো। ”

বাতাসে টয়ার সামনের চুল গুলো চোখে এসে পড়ছে। ইয়াদ চুল গুলো টয়ার কানের কাছে গুঁজে দিয়ে ঠোঁটে বাকা হাসি রেখে বললো,” তাই বুঝি। সব কিছুর সলিউশন আমার কাছে আছে।”

টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” মানে?”

ইয়াদ টয়ার কথায় ঝুকে এসে টয়ার ঠোটের দিকে তাকাতেই টয়ার কাছে কথাটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।

টয়া সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাগে বলে উঠলো,” আপনি…” বলেই থেমে গেলো।

” কি হলো থেমে গেলে যে? কি বলবে? আপনি আমার বর?”, টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো ইয়াদ।

টয়া তেজ দেখিয়ে বললো,” বলবো না। ছাড়ুন আমাকে।”

ইয়াদ টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” তাহলে আমিও ছাড়ছি না।”

টয়া ইয়াদকে সরানোর চেষ্টা করলো কিন্ত কোনো লাভ হলো না। ইয়াদ বললো,” আচ্ছা তুমি যদি তিনবার জোরে জোরে বলো ইয়াদ আরফিন আমার বর তাহলে ছেড়ে দিবো।”

” জীবনেও বলবো না।”, কড়া গলায় বলল টয়া।

” আমিও ছাড়বো না।”, কথার পিঠে কথা বললো ইয়াদ।

এ কেমন বিপদে পড়লো সে। আগে জানলে কখনই এই বিয়েতে সে রাজি হতো না। কেনো যে রাজি হতে গেলো।
ইয়াদের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে টয়া। এতে তার বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। এভাবে আর থাকা যাবে না, কোনো না কোনো বুদ্ধি বের করতেই হবে টয়াকে।

টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” একটু এদিকে আসুন একটা কথা বলবো।”

ইয়াদ একটু ঝুকে এলো তারপর বলল,” বলো শুনছি।”
টয়া বললো,” একটু কাছে আসুন।কানে কানে বলি।”

টয়ার কথা শুনে ইয়াদের মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাবার উপক্রম হলো। টয়া ইয়াদের বুকে হাত রেখে কানের কাছে গিয়ে বলল,” ইয়াদ আরফিন ” খুব সুন্দর করে এতটুকু তো বললো তারপরে যা হলো সেটার জন্য ইয়াদ প্রস্তুত ছিলো না।

টয়া সজোরে ইয়াদের কানের কাছে হিটলার বলে চিৎকার করেই ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সফল ভাবে পালিয়ে যাবে। এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেলে।

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here