তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ১৪ #নবনী_নীলা

0
124

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ১৪
#নবনী_নীলা

” টয়া আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। এই সহজ কথাটা তুমি কেনো বুঝতে পারছো না মা?”

ছেলের এমন কথায় মিলি আক্তার বললেন,” চেস্টা না করে হাল ছাড়লে হবে?”

ইয়াদ কোমরে হাত দিতে দাড়িয়ে পড়ল,” মা তুমি আমার বিয়ে নিয়ে কেনো পড়েছ বলতো? আর তুমিই টয়ার বাবা মাকে ডেকেছো তাই না?”

“ধুর, আমি কেনো ডাকবো? মেয়ের এমন ঘটনা শুনে ওনারা চলে এসেছেন। আমি কি নিজে ফোন দিয়ে ডেকে এনেছি? টয়ার ফোন বাজছিল বেচারির ঘুম ভেঙে যেতো তাই কথা বলেছি একটু।” বলেই ইয়াদের দিকে তাকালেন।

” আচ্ছা, তাই? তাহলে বাবা কি করে একরাতের মধ্যে ঢাকায় চলে এলো? বলো আমাকে।”, বলে সন্দেহের চোখে তাকালো ইয়াদ।

মিলি আক্তার হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো,” তোর বাবার ফোন ধরিনি যে কয়দিন তাই কালকে এসেছে। বুড়োটাকে শিক্ষা দিতে হবে বুঝলি?”

ইয়াদ বললো,” তুমি বাবাকে বুড়ো বলছো!”

” এই শোন বেশী বাবা বাবা করিস না। বাবার উকিল হয়েছেন উনি। সর সামনে থেকে,আমি যাই ওনাদের নিয়ে আসি।”

মায়ের কথায় ইয়াদ চমকে উঠে বলে,” ওনাদের মানে কাদের?”

মিলি আক্তার যেতে যেতে বললো,” টয়া আর টয়ার বাবা- মা। আজকে ওনাদের রাতের দাওয়াত দিয়েছি তো।”

ইয়াদ নিজের মায়ের কাজকর্মে হতবাক হয়ে গেলো। ইয়াদের বাবা টিভিতে নেশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল এ ম্যান vs ওয়াইল্ড দেখছে। ইয়াদের বাবা একজন শান্তি প্রিয় মানুষ আর এদিকে তার মা অশান্তি প্রিয়।

তার মা যে হুটহাট কি করে বসে। টয়ার সাথে তার বিয়ে দিতে উঠে পড়েছে সে। কিন্তু এইসবের কোনো কিছুতেই কোনো লাভ হবে না সেটা সে জানে। যতদিন না টয়া তাকে মন থেকে ক্ষমা করবে ততদিন সে নিজেও শান্তিতে থাকতে পারবে না।

ইয়াদের মা সবাইকে নিয়ে ফ্লাটে ঢুকলেন। ইয়াদ নিজের রুমে ছিলো সে অনেক্ষন পর রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে সে আরো অবাক।

টয়ার বাবা তার বাবার সাথে কি বিষয়ে খুবই জোরালো এক আলোচনায় বসেছে। টয়ার বাবা একের পর এক কথা বলছে ইয়াদের বাবা চুপ করে শুনছেন এবং মাঝে মাঝে নিজের কিছু মন্তব্য জানাচ্ছেন।

এদিকে আরেক অবস্থা, ইয়াদের মা বক বক করছে আর টয়ার মা মনোযোগ দিয়ে তাশুনছে। ইয়াদের মা এমনভাবে কথা বলে যে সবাই আগ্রহ সহকারে শুনতে বাধ্য।

টয়া ডাইনিং টেবিলে বসে ম্যাঙ্গো জুস হাতে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। সবটা দেখে ইয়াদ টয়ার পাশের চেয়ারটা টেনে বসলো। টয়া একবার আড় চোখে তাকিয়ে আবার ফোনে দৃষ্টি স্থির করলো। ইয়াদ অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য একটু কেশে নিলো। আজকাল টয়া ইয়াদ নামক বিষয়টাকে ইগনোর করছে। তেজ দেখো মেয়ের ইয়াদের মেজাজ একটু বিগড়ে গেলো তার বাসায় এসে তাকেই ইগনোর করছে।

ইয়াদ টয়ার হাত থেকে হটাৎ করে জুসের গ্লাসটা নিয়ে নিলো। টয়া এবার বিরক্তি চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো তরপর বললো,” দেখুন ওটা আণ্টি আমার জন্য বানিয়েছে। আমাকে ফেরত দিন।”

ইয়াদ গ্লাসটা নাড়িয়ে চারিয়ে দেখে বললো,” আচ্ছা ” বলেই ইয়াদ গ্লাসটা একটা চুমুক দিতেই টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকালো।

ইয়াদ এমন কিছু করবে টয়া ভাবেনি। এক চুমুক দিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে গ্লাসটা টয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। টয়া ভ্রু কুচকে ফেললো। ইয়াদ জুসের গ্লাসটা টয়ার সামনে রাখতে গিয়ে বললো,” তুমি যে অনেক অকৃতজ্ঞ সেটা কি তুমি জানো?”

টয়া চোখগুলো রসগোল্লার মতোন করে তাকালো। তারপর বলল,” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?”

” কালকে এতো কষ্ট করে তোমাকে বাঁচলাম তুমি একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলে না।” ইয়াদের কথায় টয়া এমন ভাবে তাকালো যেনো তার কাছ থেকে ইয়াদ তার একটা কিডনি চেয়েছে।

” আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন?” বলেই হা করে তাকিয়ে রইল।

টয়ার কথায় ইয়াদ বললো,” নাহ্ ভূত তোমাকে কোলে করে ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে।”

টয়া আরো বিস্ময় চোখ বড় বড় করে বললো,” কি! আপনি আমাকে কোলে করে এনেছে! আপনি! আপনি কোলে নিয়েছেন আমাকে? কেনো!”

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আসলে ভুল করেছি, তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাটিয়ে হাটিয়ে নিয়ে আসা উচিৎ ছিলো। তাই না?”

” তাই বলে আপনি এভাবে অনুমতি ছাড়াই যে কাউকে কোলে নিয়ে কোলে নিবেন?” উত্তেজিত হয়ে বললো টয়া।

ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে বলল,” ও আচ্ছা তোমার অনুমতি নিতে হতো। তাহলে সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় আগে তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিলো এক্সকিউজ মি! ম্যাডাম আমি আপনাকে কোলে করে বাসায় পৌছে দিবো? আপনি তো এখন অচেতন। তারপর অপেক্ষা করতাম কখন তোমার জ্ঞান ফিরবে তুমি অনুমতি দিবে। তারপর কোলে নিতাম, তাই না? হুম,বুঝতে পেরেছি।”

ইয়াদের উপহাসে টয়ার রাগ হলো। রাগের মাথায় সে কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পরলো না। লোকটা এমন ভাবে কথা বলে যে আর কিছু বলাই যায় না। এইসব ভাবতে ভাবতেই সে সামনে থাকা জুসের গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোক পুরোটা শেষ করে ফেললো।

ইয়াদ সেটা দেখে হেসে ফেললো, রাগের মাথায় টয়া কি করেছে সে সেটা নিজেও বুঝতে পারছেনা। টয়া অবাক হয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকতেই তার মনে পড়লো ইয়াদ এই গ্লাসটায় চুমুক দিয়েছিলো।

এটা কি করে ফেলল সে? টয়া অনেক অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। টয়া আর ইয়াদের চেয়ারের মাঝে অনেকটাই দূরত্ব ছিলো। ইয়াদ টয়ার চেয়ারের মাথা ধরে নিজের দিকে টেনে আনতেই টয়া হকচকিয়ে উঠলো। সে বিচলিত হয়ে আশেপাশে দেখলো কেউ দেখেছে কিনা? এমন সময়ে ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” কি দেখছো? কেউ দেখেনি। ”

ইয়াদের কাছাকাছি থাকলেই টয়ার বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে। টয়া অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আপনি কি শুরু করেছেন? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।” বলে টয়া উঠে যেতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে ফেললো। টয়া দাড়ানোর আগেই বসে পড়লো। টয়া হাত ছড়ানোর জন্য নানা চেস্টা করছে আর এইদিকে ভয়ও লাগছে কেউ না জানি দেখে ফেলে।

টয়া আওয়াজ নিচু করে বললো,” আমার হাতটা ছাড়ুন।”
ইয়াদ টয়ার হাতটা নিজের কাছে টেনে নিতেই টয়া হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।

ইয়াদ টেবিলের নিচে হাতটা আবার শক্ত করে ধরে বললো,
” তুমি যদি এই চেয়ার ছেড়ে উঠে অন্য চেয়ারে বসো তাহলে কি হবে জানো? তারপর আমিও পিছু পিছু গিয়ে তোমার পাশের চেয়ারে বসে পরবো। তখন কেমন হবে ব্যাপারটা? যদি সেটা না চাও চুপ চাপ আমার পাশে বসে থাকো।”

ইয়াদের উপর টয়ার বিশ্বাস নেই এই ছেলে সব পারে। উপায় না পেয়ে টয়া বসেই রইলো। এই ছেলেটা এতো কথা শিখেছে কবে কে জানে? টয়া মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে আর নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। টয়ার এবার রাগ লাগছে, হাতটা এভাবে ধরে বসে আছে কেনো? সে কি তার প্রেমিকা নাকি? আশ্চর্য!

টয়া বির বির করে বললো,” হাত ধরে আছেন কেনো? ছাড়ুন।”

“ভালো লাগছে, তাই।” বলে ইয়াদ অন্য হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে টেবিলে রাখলো।

টয়া তেজী গলায় বললো,” আমার ভালো লাগছে না।” ইয়াদ ফোনর স্ক্রীন স্ক্রোল করতে করতে বলল,” সে তোমার কিছুই ভালো লাগে না। তাই বলে কি সব কিছু তোমার ইচ্ছে মতো হবে?”

” মানে? আপনি আমার হাত ধরে আছেন কেনো আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি কি আপনার প্রেমিকা লাগি? হাত ছাড়ুন।” জোর দিয়ে বললো টয়া।বলে সে বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

ইয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,” You’re my wishing Star।”

ইয়াদ কথাটা নিজের মনে মনে বলে হাসলো। টয়া কিছু না বুঝে আড় চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” আরেহ আপনি হাসছেন কেনো?

” তুমি এতো ঝগড়ুটে হয়েছে কেনো, বলতো?”ইয়াদের কথায় টয়া রাগে গজগজ করতে লাগলো। তাকে ঝগড়ুটে বলা কতো বড় সাহস! সব সময় ঝগড়া করে কে? লোকটা নিজেই ঝগড়া শুরু করে আবার তাকে ঝগড়ুটে বলা।

টয়া রেগে গিয়ে টেবিল থেকে অন্য হাত দিয়ে একটা কাটা চামচ তুলে ইয়াদের মুখের সামনে হুমকি স্বরূপ দেখাতেই ইয়াদ হেসে উঠে বললো,” সিরিয়াসলি টয়া!”

টয়া কিছু বলতে যাবে এমন সময় মিলি আক্তারের কণ্ঠ,” কি ব্যাপার কাটা চামচ হাতে কি করছো তোমরা?” শুনেই টয়া সাথে সাথে চামচটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।

ইয়াদের মা ট্রেতে খাবার এনে টেবিল সাজালেন। ইয়াদ এখনো হাতটা ধরে আছে। টয়া ভীষণ অসস্থিতে পরেছে কেউ দেখে ফেললে কি যে ভাববে। টয়া আড় চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো ইয়াদ এমন ভাব করছে যেনো কিছু হয়নি।

টয়া একটু চালাকি করে নিচু স্বরে বললো,” হাতটা ব্যাথা করছে ছাড়ুন।” ইয়াদ যদিও টয়ার কথা বিশ্বাস করেনি তাও সে ছেড়ে দিলো হাতটা। একটু পর এমনেই ছেড়ে দিতে হতো।

অন্য হাতে ধরে রাখা যেত কিন্তু একটু আগে কাটা চামচ হাতে নিয়েছে কিছুক্ষণ পর হয়তো ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে যেতো।

টয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো ছাড়া পেয়ে,হাতটা গুটিয়ে রাখলো। খাবার টেবিলে সবাই গল্প করছিল টয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়ে নিয়ে উঠে পড়ল। কখন আবার হুট করে হাত ধরে বসে এই চিন্তায় সে তাড়াতাড়ি খেয়ে একপাশের সোফায় বসে রইলো।

এখন হুট করে বাসায় যাবার কথা বলতেও পারছেনা, সবাই খাবার টেবিলে আড্ডা দিচ্ছে। কখন যে শেষ হবে এদের আড্ডা বাসায় গেলেই টয়া বাঁচে। টয়ার বাবা ইয়াদের সাথে তখন থেকে কি যে গল্প শুরু করেছে থামার নাম নেই। এই ছেলের সাথে এতো কথা বলার দরকার কি তার বাবার। খাওয়া শেষ উঠে পড়লেই তো হয়।

ইয়াদের হটাৎ মা কি যেনো একটা বললেন সেটা কানে আসতেই টয়া চমকে উঠলো।

” আপনার মেয়েটাকে আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে ভাবি। ওদের দুজনকে মানবে ভালো।” এতটুকু শুনেই টয়া হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে গেলো।

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here