তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ১৩ #নবনী_নীলা

0
133

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ১৩
#নবনী_নীলা

“তোমরা এতো রাতে কি করছো ছাদে?” ইয়াদের মায়ের প্রশ্নে টয়া ঘাবড়ে গেলো।

টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আসলে আণ্টি, আমি একটু বাতাসে দাড়ানোর জন্যে এসেছিলাম।”

ইয়াদ নিজের মাকে দেখে কোনো মাথা ব্যাথা নেই, সে চুপ করে আছে।
মিলি আক্তার হাই তুলতে তুলতে বললো,” আচ্ছা, আমার ছেলেটাও কি হাওয়া খেতে এসেছে?” বলে ইয়াদের দিকে তাকাতেই ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তার মাকে ঈশারায় চুপ থাকতে বললো।

এটা দেখে মিলি আক্তার বললো,” ও আচ্ছা তোর রুমের এসি তো নষ্ট!”

ইয়াদ মলিন চোখে মায়ের কান্ড দেখছে। বানিয়ে আবার কি বলছে দেখো। টয়া অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আণ্টি আমি তাহলে যাই।”

মিলি আক্তার টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” আচ্ছা যাও, গুড নাইট।”

টয়া ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসলো এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে সেটা সে কল্পনাও করেনি।ইয়াদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই তার মা তাকে একটা মেয়ের সাথে তাকে এতো রাতে ছাদে দেখেছে এটা তার কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। সেটা তো হবেই যেখানে মিলি আক্তার নিজেই তুচ্ছ করেই ধরেছেন।

তিনি বললেন,” কিরে পছন্দ হয়েছে? তোর ঘড়িওয়ালি থেকে বেটার না? ইয়াদ ছাদে রেলিং এ হেলান দিয়ে ঠোঁট উল্টে না সূচক মাথা নাড়ল।

মিলি আক্তার আড় চোখে তাকিয়ে রইলেন। ইয়াদ হেসে উঠে বললো,” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার পছন্দ বেটার হবে কেনো আমারটা বেস্ট।”

” কি ভালোবাসা! হাওয়া খাওয়া শেষ হলে চলেন রোমিও স্যার ঘুমাতে যাই।”, ইয়াদ পৃথিবীতে দুজন নারীকে আজ পর্যন্ত বিস্ময় নিয়ে দেখেছে। কারণ এরা তার কাছে একদম আলাদা, একজন তার মা আরেকজন টয়া। ইয়াদের ইচ্ছে করে এদের আসে পাশে থাকতে, এই ভালোলাগা এই বিস্ময় সে আর কোথাও খুঁজে পায় নি।

_________

টয়ার আজ ঘুম ভেঙেছে দেরী করে। আজ তার এক ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল। সে হুড়োহুড়ি করে রেডি হয়ে দরজা খুলে বের হতেই দেখতে পেলো ইয়াদও বের হচ্ছে। এই ছেলেটা আর সময় পেলো না? আবার যদি একসাথে লিফটে উঠে তাহলে উপর নীচে উপর নীচে না এই ঝামেলায় টয়া আর পড়তে চায় না। ইয়াদ টয়াকে দেখার আগেই টয়া দৌড় দিয়ে লিফটে পৌঁছে যায়। কারোর দৌড়ানোর শব্দে ইয়াদ তাকিয়ে দেখলো টয়া লিফটের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। ইয়াদ কিছুই বুঝতে পারছেনা মেয়েটা কেনো যে তাকে দেখলেই পালাই পালাই করে আগেই ভালো ছিলো খোঁজার আগেই হাজির হয়ে যেতো।

ইয়াদ কিছুক্ষণ লিফটের জন্যে দাড়িয়ে অপেক্ষা করলো। কিন্তু অনেক্ষন হয়েগেছে লিফট উপরে আসছে না। বাটন টাও ঠিক মতন কাজ করছে না। ইয়াদ পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলো আজ বোধয় তার এই সিড়ি বেয়েই নিচে যেতে হবে। লিফটা কি নষ্ট হয়ে গেলো? এগারো তলা থেকে হেটে নিচে নামবে? কি অসহ্য ব্যাপার! ইয়াদ অবশেষে নীচে নামলো।ইয়াদের মাথা ভীষণ গরম হয়ে গেলো। লিফটে প্রবলেম থাকলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা উচিৎ ছিলো তো নাকি?

ইয়াদ রেগে গার্ডকে বলতে গেলো,” আপনাদের লিফট কেনো কাজ করছেনা? আমাদের জন্য না হয় ঠিক আছে যারা একটু মধ্যবয়সী তাদের জন্য তো বিশাল সমস্যা।”

“স্যার লিফটের দায়িত্বে তো আমি নেই। দাড়ান আমি এক্ষুনি পাশের রূমে জিজ্ঞেস করছি। তাই তো বলি কিছুক্ষণ আগে মনে হলো কেউ লিফটে নীচে নামছে কিন্তু এখনো আসেনি। দাড়ান আমি এক্ষুনি দেখছি।” লোকটার কথা শুনে ইয়াদের কেনো জানি খারাপ কিছু মনে হলো। টয়া ঠিক আছে তো? ঠিক মতো নীচে পৌঁছাতে পেরেছে কি? লোকটা পাশের রুমে যেতেই ইয়াদ লোকটাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলো,” আচ্ছা, টয়াকে দেখেছেন! একটু আগে নিচে নামলো? একটা মেয়ে সাদা ড্রেস গলায় নেভিব্লু স্কার্ফ?”

গার্ড কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলো তারপর বললো,” ও আচ্ছা বুঝেছি, ভার্সিটিতে যায় তো উনি প্রতিদিন। কিন্তু কই আজ তো দেখলাম না।”

গার্ডের কথায় ইয়াদের চোখ মুখ অস্থিরতায় ভরে গেলো। টয়া লিফটে আটকা পড়েনি তো? দশ মিনিটের মতো তো হয়েছে টয়া বেরিয়েছে। ইয়াদ গার্ডের সাথে পাশের লিফট কন্ট্রোল রূমে গেলো। সেখানে যে দায়িত্বে আছে সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে দেখেই ইয়াদের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো। গার্ড তাড়াহুড়ো করে সেই ছেলেকে ডেকে তুললো। ছেলেটা উঠার সাথে সাথে ইয়াদ কড়া গলায় বললো,” লিফটে কি হয়েছে?তোমাকে দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে আর তুমি পরে পরে ঘুমাচ্ছো।”

ইয়াদের কথায় ছেলেটা ভয় পেয়ে উঠে দাড়িয়ে গেলো তারপর বললো,” একটু সমস্যা হয়েছে কিছুক্ষনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”

ইয়াদের ভিতরটা চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। ইয়াদ রেগে গিয়ে বললো,” কিছুক্ষণ মানে? এক্ষুণি আমাকে লিফটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাও।” বলেই ইয়াদ কম্পিউটারের সামনে এসে দেখে সেটা বন্ধ হয়ে আছে।

“What the hell! তোমার কম্পিউটার বন্ধ কেনো?” বলে ইয়াদ জোরে টাবিলে একটা বাড়ি দিলো। ছেলেটা ভয় পেয়ে জলদি সিসিটিভি ফুটেজ অন করলো। ইয়াদ সিসিটিভি ফুটেজে স্পট টয়াকে দেখতে পাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

ইয়াদের মেজাজ হারিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলে,
” you bustard, তোমাকে এখানে রাখা হয়েছে পরে পরে ঘুমানোর জন্য? দুই মিনিটের মধ্যে লিফট খোলার ব্যবস্থা করো টয়ার যদি কিছু হয় না I swear আমি তোমাকে দেখে নিবো। তোমার চাকরি তো এমনেতেই শেষ।”

ইয়াদের ধমকে গার্ড আর ছেলেটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব লিফট খোলার ব্যবস্থা করে। ইয়াদ টয়াকে কোলে করে নিজের বাসায় নিয়ে আসে।

_________________

টয়ার জ্ঞান ফিরল অনেক পরে কিন্তু সে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার কারণে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। টয়ার এমন অবস্থায় মিলি আক্তার চিন্তায় পড়ে যায়। এদিকে ইয়াদ নিজের পরিচিত একজন ডক্টরকে বাসায় আনে। তিনি বলেছেন মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে । মণে হয় ছোট বেলার কোনো ভয় ভিতরে ঢুকে গেছে দেখে রাখতে হবে আর কাছাকাছি একজনকে সবসময় থাকতে বলেছেন। ইয়াদ নিজেও এটাই ধারণা করেছিলো তবে ছোটো বেলার কি এমন ভয় থাকতে পারে টয়ার ?

অনেক্ষন পর টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো ছোটবেলার সেই দুঃস্বপ্নে সে ঘুমের মাঝে ছোটফটিয়ে হালকা চোখ খুললো। সাড়া শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, চোখ খুলেই সামনে কাউকে না দেখে ভয়ে তটস্থ টয়া। এ জায়গায় সে আগে কখনো আসেনি। এটা কোথায়? টয়া উঠে বসতে বসতে মা মা করে চিৎকার করতে লাগলো।

ছোটোবেলায় ফুফুর বিয়েতে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে এক অন্ধকার স্টোর রুমে লুকিয়েছিলো টয়া। যাতে তাকে কেউ খুজে না পায়। কে জানি সেদিন দরজাটা বাহির দিয়ে আটকে দিয়েছিলো।
ভয় আর আতঙ্কের সেদিনের চিৎকার আর কান্না কেউ শুনেনি। যখন খুজতে খুজতে সবাই স্টোর রুমে আসে তখন নিস্তেজ হয়ে এসেছিলো সেই ছোট্ট শিশুটির দেহ।

আজ সেই জায়গায় আবার ফিরে গিয়েছিল টয়া। আজও তার কান্না কেউ শুনেনি। টয়া কাদতেঁ লাগলো, টয়ার ডাকে মিলি আক্তার রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন। ইয়াদ পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

মিলি আক্তার টয়াকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেস্টা করলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। টয়া থর থর করে কাঁপতে লাগলো। কিছুক্ষন পর টয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তবে তার ভয় কমে নি। ইয়াদ শান্ত ভঙ্গিতে একপাশে দাড়িয়ে ছিলো।

মিলি আক্তার ছেলেকে বললো,” একটু মেয়েটার পাশে এসে বস। আমি ওর জন্য সুপটা গরম করে আনি।”

ইয়াদ টয়ার পাশে এসে বসলো কিন্তু টয়া মিলি আক্তারের কাপড়ের এক অংশ ছোটো বাচ্চাদের মতো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে আছে। মিলি আক্তার বুঝিয়ে সুজিয়ে টয়াকে ইয়াদের কাছে রেখে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে কিছু একটা শক্ত করে ধরে রাখতে। ইয়াদ শান্ত চোখে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া হাতের কাছে কিছু না পেয়ে বিছানার চাদর ধরে আছে কিছুক্ষণ পর পর টয়ার সেই অন্ধকার ঘরের কথা মনে পড়তেই কেপে উঠে।

ইয়াদ টয়কে কীভাবে সামলাবে বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ টয়ার হাত ধরতে নিয়েছিলো টয়া হাত সরিয়ে নিয়েছে। ইয়াদ টয়াকে এই মূহুর্তে জোর করতে চাচ্ছে না। মেয়েটা যে বড্ডো জেদি সেটা ধীরে ধীরে ইয়াদ টের পাচ্ছে।

ইয়াদ নিজের শার্টের হাত ভাঁজ থেকে নামিয়ে সেই হাতটা টয়ার সামনে বাড়ালো। টয়া ক্লান্ত চোঁখে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ চোখে হাতের দিকে ইশারা করলো। টয়া কিছুক্ষণ ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ইয়াদের শার্টের হাতার কিছু অংশ মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।

ইয়াদ টয়ার কান্ড দেখে হাসলো, ভয়ে আছে তাও নিজের জেদ বজায় রাখবে। হাতটা ধরলে কি অসুবিধা হতো তার।
কিছুক্ষন পরেই ইয়াদের মা গরম সুপ এনে টয়াকে খাইয়ে দিলেন। ইয়াদ পাশেই বসে ছিলো। টয়া এখন অনেকটাই স্বাভাবিক তবে সে যে ইয়াদের বসায় ইয়াদের রূমে বসে আছে ব্যাপারটা টয়া এই মাত্র খেয়াল করলো। রুমটা অচেনা লাগছিলো তবে এটা যে ইয়াদের ফ্ল্যাট এটা এবার স্পষ্ট।

টয়া চোখ টিপ টিপ করে একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। এবার টয়ার নজর গেলো নিজের হাতের দিকে এতক্ষন ধরে ইয়াদের শার্টের হাতা ধরে বসে ছিল কেনো? এখন ইয়াদের মা সামনে আছে। উনি দেখেছেন নাকি? কালকে রাতে একবার!

কি শুরু হয়েছে এগুলো তার সাথে? ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদের শার্টের হাতা ছেরে দিয়ে হাতটা নিজের কম্বলের ভিতরে নিয়ে গেলো।

টয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়াকে আরেকটা ওষুধ খাইয়ে দিলো এরপর অনেকটাই ভালো হয়ে উঠবে টয়া। টয়ার শরীর ক্লান্ত হওয়ায় সে শুয়ে পড়তেই চোখ দুটো ঘুমে ঘিরে ধরে।

ইয়াদ একটা চেয়ার এনে টয়ার খাটের পাশে বসে টয়ার ব্যাগে থাকা কিছু ডিজাইন দেখছিলো। এমন সময়ে মিলি আক্তার এসে টয়ার মাথার কাছে বসলো। তিনি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে প্রশ্ন করলো,” আচ্ছা ইয়াদ?”

মায়ের ডাকে ইয়াদ মায়ের দিকে ফিরলো। “এই টয়া কি সে মেয়ে যার ঘড়িটা তুই এতো বছর আগলে রেখেছিস?”

মায়ের কথায় ইয়াদ হেসে বলল,” হটাৎ তোমার এমন মনে হলো কেনো, মা?”

” আমিতো মা, আমি বুঝি। তোর চেহারায় এতো টেনশন কেনো বলতো? আমাকে বল কি হয়েছে?” মায়ের প্রশ্নে ইয়াদ শব্দ করে একটা নিশ্বাস ফেললো।
তারপর টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা ভুল করেছিলাম।”

” অনেক শুনেছি তোর এসব কথা। এই টয়া কি সেই মেয়ে? আমাকে শুধু এই প্রশ্নের উত্তর দে।”, ইয়াদ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আর মিথ্যে বলতে পারলো না স্বীকার করে নিলো সবটা।

” আচ্ছা ঠিক আছে, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”, মায়ের এমন কথা শুনে ইয়াদ অবাক হয়ে বললো,” দেখে নিচ্ছ মানে কি? ”

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here