#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৪৭)
কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“সকলকে একত্র করার পিছনের কারণ হলো সন্ধ্যার বিয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত করা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সকলকে অবগত করা।”
হুট করে সন্ধ্যার বিয়ের বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কুশল চূড়ান্ত করেছে জানার উপর উপস্থিত সকলেই অনেক অবাক হয়ে যায়। সন্ধ্যা আর তরুনিমা একে-অপরকে একপলক দেখে একবার লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে। কুশল কি বলবে না বলবে তা ভেবে উত্তেজনায় ওদের কা*বু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো। রাজবীর একপার্শে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে রাগে নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। সায়মন বললেন….
—“বাড়িতে এতোগুলো গুরুজন থাকা সত্ত্বেও সন্ধ্যার বিয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তুমি চূড়ান্ত করতে পারো না কুশল।”
কুশল স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো….
—“সন্ধ্যা আমার ছোট বোন। ওর বিষয়ে ভালো-মন্দ বিচার করে যেকোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। আর রইলো গুরুজনদের সাথে আলোচনা করার বিষয়! যেই গুরুজনরা মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ব আছে কি না তা যাচাই না করে তাদের কতো অর্থ-সম্পত্তি আছে তা যাচাই করে একটা সম্বন্ধ পাঁকা করার মতো নিচ পদক্ষেপ গ্রহন করতে চায় সেই গুরুজনদের সাথে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করার প্রয়োজন আমি মনে করি না।”
কুশলের এমন অ*প*মান মূলক জবাব শুনে রাগে সায়মনের সর্বশরীর থর থর কাঁপছে। তিনি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন….
—“কুশল…বিগত বছরগুলো থেকে তোমার সব বাড়াবাড়ি চুপচাপ সহ্য করে এসেছি বলে এর মানে এই নয় যে তুমি আমাদের সাথে যা নয় তাই ব্যবহার করে যাবে। ভুলে যেও না সম্পর্কে আমি তোমার বাবা হই। আর এখানে উপস্থিত সকলের সাথেই তোমার র*ক্তে*র সম্পর্ক আছে। তুমি আমাদের এভাবে অ*প*মান করতে পারো না।”
কুশল সায়মনের উপর দৃষ্টি স্থির করে শান্ত স্বরে বললো….
—“আমি কখন বললাম যে আপনি আমার বাবা হন, আর এই পরিবারের সকলের সাথে আমার র*ক্তে*র সম্পর্ক তা আমি ভুলে গিয়েছে! বিগত বছর গুলোতে আমি কারোর লাইফ নিয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করি নি যে আমার নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে তাকে চরম ভো*গা*ন্তি*র সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি যখনই কোনো বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা সে সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে গিয়েছি তখনই প্রতিবারই একমাত্র আপনি আমার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িছিলেন। যেখানে একজন বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো যখন তার সন্তানরা কোনো বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তখন সেই সিদ্ধান্তের পিছনে আসল কারণ কি, কারণটা তার জীবনের সাথে জড়িত, কতোটা গুরুত্ব রাখে সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তাকে সাপোর্ট করা। আপনি চিন্তা করে বলতে পারবেন যে আপনি একজন বাবা হয়ে এই দায়িত্বটা একবারের জন্যও পালন করেছিলেন কি না!”
কুশলের বলা কথাগুলো শুনে সায়মন সহ উপস্থিত সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পরক্ষণেই সায়মন আর কোনো প্রতিত্তুর না করে স্থান ত্যগ করেন। কুশল আবারও শান্ত স্বরে বললো….
—“যদি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে উপস্থিত আর কারোর বিন্দুমাত্র স*ম*স্যা থেকে থাকে তাহলে সে এখান থেকে চলে যেতে পারে। কিন্তু আমার এই কথাটা মাথায় ভালো ভাবে ঢুকিয়ে নাও সবাই যে, সন্ধ্যার বিয়ে নিয়ে আমি যেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি দুনিয়া উলোট-পালোট হয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্তের কোনো নড়চড় হবে না।”
কুশলের এরূপ কথা শুনে উপস্থিত আর কেও কোনো প্রতিবাদ মূলক কথা বলে না। সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে বললেন….
—“দাদুভাই…জানিস ই তো তোর বাবা কেমন র*গ-চ*টা স্বভাবের মানুষ। কোনো বিষয় নিয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করেই রিয়েক্ট করে বসেন। আমি চাই না কোনো বিষয় নিয়ে তোদের বাবা-ছেলের মাঝে মনোমালিন্য হোক। আমি এটা খুব ভালোভাবে জানি যে তুই আমাদের পরিবারের যেকোনো সদস্যের বিষয় নিয়ে যেই সিদ্ধান্তই নিস না কেনো তা তাদের জীবনে ভালো দিকটাই বয়ে আনবে। তোর সিদ্ধান্তের উপর আমাদের সবারই পুরো আস্থা আর বিশ্বাস আছে দাদু ভাই।”
সাগরিকার কথাগুলো শুনে কুশল, তরু, সন্ধ্যার ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। কামিনী নিজের দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করে রেখে দ্রুততার সাথে নিজোর বিনুনী নাড়ছে। সাবরিনা বললেন….
—“কুশল…বল এখন বাবা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই।”
কুশল একপলক সন্ধ্যা আর তরুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“কিছুদিন আগে বড় ভাইয়া-বড় ভাবীর জীবনে নতুন সদস্য আসার উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো সেখানে শেষ মূহূর্তে যে দূ*র্ঘ*ট*না হয়েছিলো সেই বিষয়ে তোমাদের খেয়াল আছে নিশ্চয়ই! আমাকে বাঁচাতে গিয়ে যেই ছেলেটা গু*লি-বি*দ্ধ হয়েছিলো ওর নাম হলো মি.তওকির তালুকদার তাহির। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মি.তমিজ তালুকদারের বড় ছেলে তাহির। ওকে আমরা যেই হাসপাতালে সু চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভর্তি করিয়েছিলাম সেই হাসপাতালে ওর ছোট ভাই ডা.সৌহার্দ্য তালুকদারের সাথে পরিচয় হয়। সে সন্ধ্যাকে দেখামাত্রই পছন্দ করে ফেলেছে। সন্ধ্যার জন্য বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো সৌহার্দ্য আমায়। আমি ওর আর ওর পুরো পরিবারের ব্যকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ওনারা সবাই অনেক ভালো মানসিকতার মানুষ। তাই সৌহার্দ্যের সাথেই সন্ধ্যার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি আমি। খুব তাড়াতাড়ি সৌহার্দ্য ওর পরিবারকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবেন। এরপর বিয়ের জন্য একটা ভালো দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। আমি চাই খুব ধুমধামের সাথে সৌহার্দ্য আর সন্ধ্যার বিবাহকার্য সম্পন্ন হোক।”
তরু আর সন্ধ্যা কুশলের মুখে সৌহার্দ্যকে তাহিরের ছোট ভাই বলে সম্বোধন করতে শুনে অনেক অবাক হয়ে যায়। তরু মনে মনে বললো….
—“এখনও পর্যন্ত তাহিরের সাথে এই বিষয়ে কথা বলা হলো না আর উনি নিলাদ্র ভাইয়াকে তাহিরের ছোট ভাই বলে সম্বোধন করলেন! এখন পুরো বিষয়টা উনি ম্যনেজ করবেন কি করে! যদি তাহির এসবের মাঝে আসতে রাজি না হয় তখনই বা কি করবেন! আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। জানি না আগামীতে কি হতে চলেছে।”
সন্ধ্যার কথার তরুর চিন্তার ঘোর কাটে। সন্ধ্যা সকলের সামনেই বললো….
—“মেজো ভাবী..তুমি না সকাল বেলা বললে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আঙ্কেল আন্টি তোমাকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছেন! অলরেডি অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। মেজো ভাইয়া আর তুমি রেডি হয়ে নাও যাও। আমিও রেডি হয়ে নিচ্ছি।”
সাবরিনা বললেন….
—“তুইও যাবি ওদের সাথে!”
সন্ধ্যা বললো….
—“হুম…সারাদিন রাত বাড়ির ভিতর থাকতে থাকতে কেমন বোর ফিল করছি। তাই ভাবলাম ওদের সাথে যাই।”
—“ওহহ..আচ্ছা।”
অতঃপর একে একে সবাই ড্রয়িংরুম ত্যগ করে নিজ নিজ রুমে চলে যায়। রাজবীর ওর রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের পাশে থাকা ছোট্ট ফুলদানীটা হাতে নিয়ে আয়নার উপর ছুঁড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ আয়না কয়েক শত টুকরো হয়ে মেঝের উপর পরে। রাজবীর সেখান থেকে একটা টুকরো বাম হাত দিয়ে উঠিয়ে তা মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে। রাজবীর হাত কে*টে গিয়ে টপটপ করে র*ক্ত মেঝের উপর পড়তে শুরু করে। রাজবীর দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো…..
—“আমার আগে ২য় কোনো পুরুষ তোর সংস্পর্শে আসতে পারবে না সন্ধ্যা। এমনটা আমি হতে দিবো না। খুব তাড়াতাড়ি আমার প্রতি*শো*ধ নিবো আমি। তৈরি হয়ে নে তুই।”
(১৪৮)
তরু আর কুশল নিজেদের রুমে আসতেই তরু ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে কুশলের হাত ধরে বিছানায় গিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে বললো….
—“আমাদের পরিকল্পনা ছিলো আমরা তাহিরের সাহায্য নিতে ওর সাথে আগে কথা বলবো ও যদি রাজি হয় তবেই আমরা এই স্টেপ গ্রহন করবো। কিন্তু ও যে আমাদের সাহায্য করতে রাজি হবে এ বিষয়ে ওর সাথে কথা না বলেই আপনি আগেই নিশ্চিত হয়ে এই পদক্ষেপ গ্রহন কেনো করলেন? এখন যদি তাহির রা…!”
তরুকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই কুশল ওর ওষ্ঠদ্বয়ের উপর নিজের শাহাদত আঙুল ঠেকিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো….
—“শুউউউ….শান্ত হও তরুনিমা। আমি এমন একটা সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে পুরোপুরি ভাবে শিওর না হয়ে সকলকে জানানোর মতো বোকামি কেনো করবো বলো! আমার বউ সাহেবা আপনার স্বামী সাহেব এতোটাও বোকা না।”
এই বলে কুশল তরুর ওষ্ঠদ্বয়ের উপর থেকে নিজের আঙুল সরিয়ে নেয়। তরু থ হয়ে বসে আছে। কুশল বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো….
—“রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি। অনেকদিন পর জামাই আদর পেতে শ্বশুড় বাড়িতে যাবো।”
তরু অবাক স্বরে বললো…
—“আপনি তাহিরের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বললেন কখন!”
—“সকাল বেলা তুমি যখন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গিয়েছিলে তখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাহিরের সাথে কলে এই বিষয় নিয়ে ডিসকাস করেছিলাম। সবটা শোনার পর তাহির বলেছে, সে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে যথাসম্ভব সহযোগীতা করবে। আর সে নিজেই ওর পরিবারকে রাজি করাবে সৌহার্দ্যকে তাদের ছোট ছেলে হিসেবে আমাদের পরিবারের সামনে পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে।”
এই বলে কুশল বেলকনিতে চলে যায়। তরুও আর চিন্তা না করে ওয়ারড্রব থেকে একসেট জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……..