#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ৭
নতুন দিনের সূচনা।চারিপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন।দূরদুরন্তে কুয়াশা ঘেরা,কিছু দেখা যাচ্ছে না।ভোরে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ কানে সুমধুর স্বরে বাজল মিথিলার।সন্তর্পণে চোখ খুলে তাকালো সে।পাশে মিহু আর ইফা শুয়ে আছে।মিথিলা উঠে বসে,ওয়াশরুমের হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসে।মিহু আর ইফা এখনো ঘুমিয়ে আছে।মিথিলা একবার ভাবল দুজনকে জাগিয়ে তুলবে।পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে জাগালো না।শাল জড়িয়ে পা বাড়ালো ছাদের দিকে।ইয়াশ সবে ছাদে এসেছিল পিছনে শব্দ হতে ঘুরে পিছনে তাকালো।এত সকালে মিথিলাকে ছাদে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার সামনে ঘুরে যায়।মিথিলা ছোট ছোট পা ফেলে ইয়াশের পাশে গিয়ে দাড়ায়।দাড়িয়ে অদূরে তাকিয়ে থাকল কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের দিকে।বেশ কিছুক্ষণ যেতে ইয়াশ মিথিলার পাশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
“আমার মতো সুন্দরী রমণীর পাশে দাড়ালে বুঝি আজকাল কারো মনে প্রেমানুভূতি জাগে!”
মিথিলার কথাটা শুনে ইয়াশ থেমে যায়।পিছন ঘুরে তাকায়।ভ্রু উঁচিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।ইয়াশের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মিথিলা পুনরায় সামনে তাকায়।ইয়াশ এবার ধপধপ পা ফেলে মিথিলার পাশে এসে দাড়ায়।মিথিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
“মানে?তুই বলতে চাচ্ছিস তুই সুন্দরী!”
“মুচকি মুচকি হাসছিলে কেন আমায় দেখে?”
ইয়াশে প্রশ্নে মিথিলা পাল্টা প্রশ্ন করে।মিথিলার প্রশ্নটা শুনে ইয়াশ দু’বার কাশি দেয়।ইনিয়েবিনিয়ে বলে,
“কখন হাসছিলাম আমি?আর হাসলেও কি?এখন কি তোর জন্য আমি হাসতে পারব না।আজিব!”
মিথিলা এবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,,”হাসবে না কেন?হাসবে!তবে আমাকে দেখে কেন মুচকি মুচকি হাসছিলে হুমম!”
“তোকে দেখে কেন হাসব।আমি প্রকৃতি দেখে হাসছিলাম।এই মনে করিস না আমি তোকে পছন্দ করি!”
“মনে তো করছি না!আমার তো মনে হয় সত্যি তুমি আমাকে পছন্দ করে ফেলেছ।প্রেয়সীর আবদার তাহলে পূর্ণ করছ?”
মিথিলা কথাটা বলে পাশে ঘুরে ইয়াশের দিকে তাকায়।ইয়াশ কিছুক্ষণ মিথিলার দিকে তাকিয়ে, কিছু না বলে উল্টো ঘুরে পা বাড়ায়।ইয়াশ চলে যেতে মিথিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।এই ছেলে কি কখনো ওকে ভালোবাসবে?
—————————————
সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ইয়াশদের মামা বাড়ি এসেছে।সকালের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ইয়াশ-মিথিলারা সবাই আবার ও বাড়িতে চলে আসে।ইয়াশ ,মিথিলা, ইফা, মিহু,নীলা,নাবিল,রায়না সবাই গোল হয়ে ছাদে বসে আছে।সবাই বিকালে ঘোরাঘুরির প্লান করছে।অবশেষে সব ঠিক করে সবাই উঠে পড়ে।দুপুরে সবাই ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে একটু ব্রিশাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে গ্রাম ঘুরতে।আজকে মিহু,মিথিলা,ইফা সবাই নিজেদের শীতের কাপড় নিয়েছে।সেদিনের মতো বিপদে আর পড়তে চায় না।সাতজন একটা ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছে।ইয়াশ আর নাবিল সামনে তার পিছনে মেয়েরা হাঁটছে।ক্ষেতের আইল থেকে ওরা একটা রাস্তায় উঠল।রাস্তাটা একদম সোজা গিয়েছে।রাস্তার দুপাশে সাড়ি সাড়ি গাছ তার পাশে যতদূর দেখা যায় শুধু ক্ষেত আর ক্ষেত।সবাই মিলে কিছুদুর হাঁটতে ইফা চিল্লিয়ে ওঠে মিথিলাকে ধাক্কিয়ে বলে,
“এ মিথু দেখ সরিষা ক্ষেত চল ছবি তুলি!”
মিথিলা একবার সরিষা ক্ষেত টা দেখে।পিছনের ক্ষেত গুলোতে শুধু ধান ছিল।আর এদিকে সরিষা আর সরিষা।চারিপাশ হলুদে ভরা।মিথিলা কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।ইফা হাত টান দিতে ওর দিকে ঘুরে,মুখ ভেঙিয়ে বলে,
“তুই আমাকে ‘তুই’ করে বলছিস কেন?ভুলে যাসনা আমি তোর এক বছরের সিনিয়র।আগে সুন্দর করে বল তারপর ছবি তুলে দিব?!”
“এ্যাঁ আসছে, মিহু আপু আছে,নীলা আপু আছে রায়না আছে ওরা আমারে ছবি তুলে দিব তোরে লাগত না যা ভাগ!কি তোমরা দিবা না ছবি তুলে?”
শেষের কথাটা মিহু,নীলা আর রায়নার দিকে তাকিয়ে বলে।তখন নীলা আগে আগে বলে,,
“ইফা চলো আমি তোমাকে ছবি তুলে দিব।চলো!”
নীলার কথা শুনে মিথিলা ফোঁস করে উঠে।ইফাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দুজন নেমে চলে যায়।পিছনে মিহু আর রায়নাও যায়।মিথিলাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে নাবিল বলে, “তুমি যাবানা!”
কথাটা কে বলেছে মিথিলা না দেখেই চিল্লিয়ে বলে, “না যাবনা যাও তোমরা!”
ইয়াশ এবার মিথিলাকে ধমকিয়ে উঠে, “এই বেয়াদব মেয়ে!ভদ্রতা শিখিস নি। কার সাথে কিভাবে কথা বলছিস।”
মিথিলা ঘুরে ইয়াশের দিকে তাকায়।এমনিতেও মাথা গরম এই নীলার ন্যাকামো দেখে তার উপর ইয়াশের ধমক যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান।মিথিলা এবার ইয়াশের কাছে গিয়ে দ্বিগুন চিল্লিয়ে বলে,
“আমি তো অভদ্ররই জানো না।সব ভদ্র তো ওই নীলা মুলা।ওকে নিয়েই থাকো!”
কথাটা বলে মিথিলা উল্টো হাটা শুরু করে। নাবিল একবার মিথিলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইয়াশের দিকে তাকায়।কিছু বুঝার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়।পরক্ষণেই ইয়াশকে বলে,
“ভাই ও কি একা যেতে পারবে?নিয়ে আসো তুমি?আর এভাবে রেগেই বা গেল কেন?”
“বাদ দে,মাথায় গ্যাসটিক আছে।আবার একাই চলে আসবে। চলে আমরা নিচে যাই।”
ইয়াশ নিচে যেতে নাবিল ও নিচে নেমে যায়।সবাই সরিষা ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলে।হঠাৎ মিহুর খেয়াল হয় অনেক্ক্ষণ দরে মিথিলাকে দেখছে না ও।সবার মাঝে, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মিথিলা নেই কোথাও।মিহু একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করে কেও নাকি জানেনা।মিহু ভয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে।ইয়াশের কথা মাথায় আসতে ইয়াশের কাছে যায়।ইয়াশ ওদের থেকে বেশ কিছুটা দুরে ছিল মিহু দৌড়ে সেখানে গিয়ে ইয়াশকে মিথিলার কথা জিজ্ঞেস করে।ইয়াশ অবাক হয়ে বলে ওঠে,
“মিথিলা তোদের সাথে নেই?”
মিহু ভীতস্বরে বলে,, “না। ওকে তো আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি ন।ভাবলাম তোদের সাথে আছে।”
মিহুর কথা শুনে ইয়াশ নাবিলের দিকে একবার তাকায়।
“চল আমার সাথে!”
নাবিলকে কথাটা বলতে দুজন ছুটে যায়।মিহু দুজনের যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।সামনে কি ওদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে?
মিহু হেটে ইফাদের কাছে যায়।ইফা মিহুর অবস্থা দেখে বলে,,
“মিহু আপু কি হয়েছে?মিথিলা আপু কোথায়?”
মিথিলার নাম শুনতে মিহু ইফাকে জড়িয়ে ধরে অশ্রু ছেড়ে দেয়।ফুপিয়ে বলে ওঠে, “ইফু,মিথু কোথায় গেছে।ওকে খুজে পাচ্ছিনা।”
মিহুর কথা শুনে ইফা চমকে ওঠে।মিহুকে ওর থেকে ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,,
“কি বলছ আপু?দেখো মিথু আপু এদিকেই আছে খুঁজলে পেয়ে যাব কান্না করোনা।চলো।”
ইফা, নীলা আর রায়না কে আসতে বলে, ও মিহুর হাত ধরে উপরে উঠে পড়ে।চারপাশে দেখে নিয়ে সামনে হাটা শুরু করে।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে চারজন।ইফা মাঝে মাঝে মিথিলার নাম ধরে ডাকছে।কিন্তু কোনো সারাশব্দ নেই।
——————————–
“মিথিলা কোথায় তুই?মিথিলা শুনতে পাচ্ছিস?”
ইয়াশ অনেকক্ষণ ধরে চিল্লিয়ে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু না কোথাও থেকে সারা আসছে না।ইয়াশ এবার হতাশ দৃষ্টিতে নাবিলের দিকে তাকায়।ক্লান্তস্বরে জিজ্ঞেস করে,
“মিথিলা কোথায় গেল রে?তখন আমার ওকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি তাইনা?আমারই দোষ।এখন ওকে কোথায় খুঁজব?”
নাবিল আশ্বাস দিয়ে বলে, “চিন্তা করোনা ভাই,পেয়ে যাব।আচ্ছা ও তো বাড়িতেও যেতে পারে।তুমি বাড়িতে কারো কাছে ফোন দিয়ে একটু জিজ্ঞেস করো।”
নাবিলের কথাটা শুনে ইয়াশ নাবিলের দিকে তাকায়।ফোন বের করে তিতলি হককে ফোন করে।তিতলি হক ধরতে ইয়াশ ঝটপট জিজ্ঞেস করে,
“বড় মা,তিতলি কি বাড়িতে?”
তিতলি ওপাশে কিছু বলে ফোনটা কেটে দেয়।নাবিল ইয়াশের পানে তাকিয়ে আছে,ইয়াশ কি বলে এটা শোনার জন্য।ইয়াশ তাকাতে নাবিল কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়াশ বলে,,
“মিহুদের ডেকে নিয়ে আসি চল।ও বাড়িতে আছে।”
নাবিল স্বস্থির শ্বাস নেয়।পিছনে ঘুরে হাটা শুরু করে।কিছুপথ যেতে মিহুদের দেখা পেল।মিহু দৌড়ে ইয়াশের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,, “ইয়াশ মিথিলা কোথায়?”
“বাড়িতে আছে চল তুই!এখন কোনো প্রশ্ন করিস না।বাড়িতে গিয়ে চল।”
মিহু কিছু বলেনা। ছয়জন হাটা শুরু করে বাড়ির উদ্দেশ্যে।কয়েকমিনিটে বাড়িতে পৌঁছে যায়।বাড়িতে গিয়ে দেখল ইয়াশের দুই মামী তিতলি হক, রুকমা হক পিঠা বানাচ্ছেন।ইয়াশ গিয়ে তিতলি হককে জিজ্ঞেস করে,
“বড় মা মিথিলা কোথায়?”
“আছে দেখ এদিকে কোথাও?”
ইয়াশ ভ্রু কুঁচকে ওখান থেকে চলে আসে।বাড়িটা ঘুরে দেখে কিন্তু পায়না মিথিলাকে।না পেয়ে বেরিয়ে আসে।মিহু,ইফা,নীলা,রায়না,নাবিল সবাই রান্নাঘরে বসে ছিল।বসে পিঠা খাচ্ছিল সবাই।ইয়াশ গিয়ে পুনরায় মিথিলার কথা জিজ্ঞেস করবে তিতলি হককে তখন নীলা কেশে উঠে।সবাই ওর দিকে তাকায়।বেচারির খেতে গিয়ে গলায় আটকে গেছে।ইয়াশ নীলার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।ইফা পানি এনে নীলার হাতে দেয়।নীলা পানি খেতে ইয়াশ বলে ওঠে,
“দেখে খাবে না!”
মিথিলা মাত্র এদিকে আসতে নিয়েছিল।নীলা আর ইয়াশকে একসাথে দেখে আবার ঘরে ঢুকে যায়।এদিকে রুকমা হক ইয়াশ আর নীলার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে!
চলবে, ইন শা আল্লাহ💖
#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc