তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #নবনী_নীলা #পর্ব ২,৩

0
275

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#নবনী_নীলা
#পর্ব ২,৩

ইয়াদ কিছুদিন ধরে খেয়াল করছে সে পড়তে বসলে টয়াও একই সময় নিজের পড়ার টেবিলে বসে। কিন্তু বই মুখের সামনে থেকে সরিয়ে কিছুক্ষণ পর পর তার দিকে উকি মারে। টয়া পড়তে বসে নাকি ইয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকে সেটা তার জানা নেই। ইদানিং টয়া মেয়েটা তার মাথায় বসে গেছে কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না। ইয়াদের সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তাই সে জানালার থেকে মনোযোগ সরিয়ে বইয়ে মনযোগ দিলো।

এইদিকে টয়ার এভাবে বই নিয়ে বসে থাকা তার পরিবারে কাছে একটা বিস্ময়। কিছুক্ষণ পর পর টয়ার মা রাহেলা বেগম মেয়ের রুমে এসে উকি দিয়ে যায়। যেই মেয়ে পরীক্ষার আগে বই নিয়ে বসে না সে এখন সন্ধ্যা হলেই পড়ার টেবিলে বই মুখে নিয়ে বসে থাকে। রাতারাতি হটাৎ মেয়ের এমন পরিবর্তন ঠিক হজম হয় নি তার।

আজকাল সবাই টয়ার রুমে এসে তাকে দেখে। টয়ার বড়ো ভাই তুহিন টয়ার রুমে এসে টয়া কি বই পড়ছে তার দিকে তাকালো। টয়া ম্যাথ বই মুখের সামনে নিয়ে বসে আছে আর ঘাড় এদিক ওদিক করছে।

তুহিন একটা ভ্রু তুলে বললো,”কিরে তুই মাথ বই মুখের সামনে নিয়ে বসে আছিস কেনো? অঙ্ক কি মুখস্ত করবার জিনিস?”

হটাৎ আওয়াজ পেয়ে টয়া ভয় পেয়ে গেলো। এই শয়তানটা ওর রুমে এসেছে কেনো? টয়ার বিরক্ত লাগছে কাজের সময় সবার ডিস্টার্ব না করলে হয় না। টয়া বিরক্তি নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে বললো,” আমি অঙ্ক মুখস্ত করি বা চিবিয়ে খাই তাতে তোর সমস্যা কি? আমাকে একদম পড়ার সময় ডিস্টার্ব করবি না।” বলেই মুখ ঘুড়িয়ে নিলো টয়া।

” ওরে আমার পড়ুয়া এসেছে রে। বই নিয়ে বসে ভাব দেখাচ্ছে। বুঝি না ভেবেছিস।”, তুহিন টয়াকে উপহাস করে বললো।

” ভাইয়া তুই যাবি এইখান থেকে? নিজের রুমে গিয়ে নিজের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে থাক। বিরক্ত করিস না আমাকে।”, বলেই টয়া কলমের ক্যাপ টা খুলে হাতে নিলো। টয়ার আরো বিরক্ত লাগছে কখন যে বদমাইসটা যাবে ঘর থেকে।

তুহিন টয়াকে নাস্তা করতে আসতে বলে চলে গেলো, টয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো। টয়া জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে পড়ার টেবিলে ইয়াদ নেই। টয়া চিন্তায় পড়ে গেলো, কোথায় গেলো ইয়াদ? সেটা ভাবতে ভাবতে টয়া চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।

সামনেই এগুতে যাবে তখনই বেশ বড় সাইজের একটা তেলাপোকা দেখে টয়া লাফ মেরে খাটে উঠে পরে। এটা আবার কোথা থেকে এলো? এক বিপদের পর আরেক আপদ এসে হাজির। তেলাপোকাটাকে যে করেই হোক রুম থেকে বের করতে হবে নইলে এই রুমে আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হবে।

আশেপাশে ঝাটা নেই না হলে এক বারিতে বৃন্দাবনে পাঠিয়ে দিতো টয়া। আশেপাশে কিছু না পেয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা পারফিউম হাতে নিলো টয়া। এইটা মারলে কেমন হয়? একসাথে অনেকবার স্প্রে করলে হয়তো কাজ হতে পারে। তেলাপোকার পারফিউম ভালো নাও লাগতে পারে । তেলাপোকা হয়তো রুম থেকে বেরিয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। টয়া পারফিউম তেলাপোকার উপর স্প্রে করে। মনে হয় তেলাপোকার পারফিউম পছন্দ নি সে পাখনা মেলে উড়া উড়ি শুরু করেছে।

উড়ন্ত তেলাপোকা মানে টয়ার চিরো শত্রু। সে খাটের উপর মা মা করে লাফাতে লাগলো। তেলাপোকা মনে হয় বেশি ক্ষেপেগেছে। টয়া একবার খাটে লাফাচ্ছে, চেয়ারে উঠছে, বই খাতা ছুড়ে মারছে তেলাপোকার দিকে। হটাৎ তেলাপোকাটা কোথাও নেই। টয়া শান্তির নিশ্বাস ছাড়ার সাথে আবার পর্দার ফাঁক থেকে শত্রু বেরিয়ে আসলো টয়া একটা চিৎকার দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো আর রুমের সাথের জানালাও বারান্দা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। তেলাপোকা টয়ার রুমের এদিকে ওদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে আর টয়া মা মা শুরু করেছে।

রাহেলা বেগম রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন। রুমে এসে মেয়েকে কোথাও দেখছেন না কোথায় মেয়ে? টয়া জানালার গ্লাস দিয়ে মাকে ডাকলো। রাহেলা বেগমের কাছে এটা নতুন না। এই মেয়েকে নিয়ে সে কি করবে মাঝে মাঝে সে ভেবেই পায় না।

অন্যদিকে ইয়াদ পানির ফ্লাক্স ভরে নিয়ে এসে মা মা চিৎকার শুনেই এদিক সেদিক তাকাতেই টয়ার রুমের দিকে নজর পড়লো। দুটি বাসার সামনে ছোটো রাস্তা। তেমন দূরত্ব নেই তাই সামনে তাকালেই টয়ার রুম দেখা যায়।

ইয়াদ পানির ফ্লাক্স হাতেই দাড়িয়ে টয়ার কান্ড কারখানা দেখছে। একবার টেবিলে উঠলো, আবার গিয়ে খাটে লাফাচ্ছে। হয়েছেটা কি এই মেয়ের? এবার বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিসব করছে।
মেয়েটা কি অসুস্থ? কিন্তু কথা বার্তা সবই তো স্বাভাবিক। এতদিনে এমন অস্বাভাবিক কিছু তো এর আগে দেখেনি সে।

কিছুক্ষন পর সব স্বাভাবিক হতে দেখে ইয়াদ নিজের পড়ায় মন দিলো। টয়া এদিকে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সাড়া বাড়ি মাথায় তুলে সে শান্ত হয়েছে। কিন্তু আতঙ্ক কমে নি তার মাঝে সে তাড়াতাড়ি নিজের বিছানায় মশারি খাটিয়ে ফেললো। তারপর মশারির ভেতরে বসে সে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করছে এবার বজ্জাত তেলাপোকা যতই উড়ে বেড়াক তাতে টয়ার কিছু এসে যায় না কারন তার গায়ে না পড়লেই হয়। তেলাপোকাটা পুরো রাতটাই নষ্ট করে দিলো টয়ার।
________________________

সকাল সাতটায় রাহি আর ছোঁয়া টয়াদের বাসার সামনে এসে দাড়ালো। টয়া কোনমতে দুধ দিয়ে একটা পাউরুটি গিলে ব্যাগটা নিয়ে নীচে চলে এলো।

রাহি এগিয়ে এসে টয়ার কানে ফিস ফিস করে বলল,”কিরে কাল কি হলো কিছুই তো বললি না।”

টয়া ব্যাগটা কাধে নিয়ে গেটের থেকে বের হয়ে বিজয়ের হাসি দিয়ে রাহি আর ছোঁয়ার দিকে তাকালো।

ছোঁয়া হাসি দেখেই বুঝেছে দারুন কিছু ঘটেছে। ছোঁয়া টয়াকে একটা বাড়ি দিয়ে বললো,” ঢং কম কর। আগে কি হয়েছে সেইটা বল।”

টয়া ভাব নিয়ে সবটা বললো আর শেষে বললো,” সে আমাকে সব সময় হাতে ঘড়ি পড়তে বলেছে জানিস!”

রাহি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,” ইয়াদ ভাইয়ার কাজ নেই তোর সাথে কথা বলবে আসবে আবার তোকে ঘড়িও পড়তে বলবে। বেশি বেশি বলিস না।”

টয়া রেগে বলল,” বিশ্বাস হচ্ছে না তোদের ? তোরা তো পালিয়ে গেছিলি থাকলে দেখতি।”

এমন সময় ইয়াদ নিজের বাসার গেট থেকে কলেজের ড্রেস পরে ব্যাগ কাধে বের হলো। টয়াকে দেখে ইয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এই মেয়ে আজও তার পিছু নিবে। ইয়াদ নিজের মতো হাঁটা দিলো। টয়া পিছনে পিছনে যেতেই ছোঁয়া আর রাহি দুইজনেই টয়ার সাথে আসতে শুরু করলো। ছোঁয়া আর রাহির আসাটা টয়ার আজ ভালো লাগছে না।টয়া ওদের থামিয়ে বলে,” দেখ একদম পিছু পিছু আসবি না। তোরা দূরে দূরে থাক তোদের জন্যই কালকে ধরাটা খেলাম।একদম দূরে দুরে থাক।”

টয়ার কথায় রাহি আর ছোঁয়া দুইজনেই দূরে দূরে হাঁটতে লাগলো। ইয়াদ আজ আর পিছে তাকাবে না। আর টয়াকেও কিছু বলবে না , কাল রাতে সে যা দেখেছে তাতে এই মেয়ে অসুস্থ না হলেও যে সাংঘাতিক মেয়ে সেটা তার বোঝার বাকি নেই। কিছু বললে যদি রাস্তায় আবার লাফালাফি শুরু করে। আসুক পিছে পিছে কতদূর যেতে পারে ইয়াদও দেখতে চায়।

এদিকে অনেক্ষন ধরে টয়া হেঁটেই চলেছে ইয়াদের পিছনে তাকানোর নাম নেই। আজকে কেনো তাকাচ্ছে না। নাকি টয়া কি নিজে থেকে গিয়ে কথা বলবে সেটাও বুঝতে পারছে না।
নিজে থেকে কথা বললে যদি ইয়াদ ওকে গায়ে পরা ভাবে। কিন্তু কাল ইয়াদ যেহেতু নিজে থেকে কথা বলেছে, আজ টয়া গিয়ে কথা বলতেই পারে। এতে দোষের কিছু নেই বলে নিজেকে আশ্বস্ত করলো টয়া। ইয়াদ সামনে হাঁটছে টয়া দৌড়ে গিয়ে ইয়াদের সামনে দাড়ালো। হটাৎ টয়া এভাবে ইয়াদের সামনে এসে দাঁড়াবে ইয়াদ ভাবেনি। ইয়াদ এক হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ে কি চায় ইয়াদ কিছুতেই বুঝতে পারে না। আজকে পথ আবার আটকে দাড়িয়েছে।

টয়া হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদের সময় নেই। সে কালকে এই মেয়ের জন্যে বাস মিস করেছে আজ সেটা হোক তা সে চাচ্ছে না।

ইয়াদ চোঁখ মলিন কোরে প্রশ্ন করলো,” আজও কি কলম কিনতে এসেছো ?”

টয়া হাসি থামিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল। ইয়াদ এবার দাত চেপে বললো,” তাহলে নিশ্চয়ই পেন্সিল কিনতে এসেছো? এদিকে হয়তো খুব ভালো পেনসিল পাওয়া যায়।”

টয়া ভ্রু কুঁচকে না সূচক মাথা নেড়ে বিরক্ত নিয়ে বললো,” জ্বি না। আমি কোনো কলম,পেনসিল এইসব কিছুই কিনতে আসিনি। আপনাকে একটা জিনিস দেখাতে এসেছি।”

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ে আবার তাকে কি দেখাবে? এই মেয়ের আচরণের কিছুই সে বুঝে না। ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” ওহ আচ্ছা!”

টয়া ইয়াদের সামনে নিজের ঘড়ি পরা হাতটা নাড়তে লাগলো। ইয়াদ এবার অবাক হয়ে এই মেয়ের কান্ড দেখছে। কি করছে এই মেয়ে? এইভাবে হাত নাড়াচ্ছে কেনো? আসলেই কি কোনো সমস্যা আছে? হাত নাড়ানো শেষে টয়া বললো,” দেখুন আপনার কথা মতো ঘড়ি পড়েছি।”

টয়ার কথায় ইয়াদের বিস্ময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো। এই মেয়ে একটা ঘড়ি দেখাতে বিশ মিনিট ধরে তার পিছু পিছু হাটছে। ইয়াদের নিজেকে নিজের চড় দিতে ইচ্ছে করছে, ঘড়ি পরতে বলাটাই তার ভুল ছিলো। ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,” ও আচ্ছা ভালো। আর কিছু বলবে?”

টয়া মুখ কালো করে না সূচক মাথা নাড়ল।টয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এতো কষ্ট করে খুজে ইয়াদের ঘড়ির সাথে মিলিয়ে ঘড়িটা কিনলো অথচ এই ছেলে শুধু ও আচ্ছা ভালো বলেই শেষ।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে বললো,” যাও স্কুলে যাও।”

ইয়াদের কথায় মন খারাপ করে টয়া পা বাড়াতেই টয়া বেখেয়ালে পড়ে যেতে নিলো। পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে টয়া না বুঝে ইয়াদের কাধের শার্টের কিছু অংশ খামচে ধরলো।

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ৩
#নবনী_নীলা

পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে টয়া না বুঝে ইয়াদের কাধের শার্টের কিছু অংশ খামচে ধরলো। ইয়াদ ব্যপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। সে টয়ার হাতের কব্জি ধরে ওকে দাড়াতে সাহায্য করলো। টয়া নিজের অন্য হাতের দিকে তাকালো যে হাতে সে ইয়াদের শার্ট ধরে ছিলো। মুহূর্তেই টয়া নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক হলো। হটাৎ এমন পরিস্থিতিতে টয়া বেশ ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। টয়ার নিজের হাত সরানোর পর ইয়াদ নিজের শাটের দিকে তাকালো ভাগ্যিস শার্টটা ঠিক আছে।

টয়া কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যা হলো সেটা ঠিক তার বোধগম্য হচ্ছে না। টয়া এক দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে কি হয়েছে সেটা মনে মনে করে দেখছে। ইয়াদ নিজের শার্টটা কাধ দিয়ে ঠিক করে টয়ার দিকে তাকালো মেয়েটা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার মাথায় আস্তে করে হাতের দুইটা আঙ্গুল দিয়ে একটা টোকা দিয়ে বললো,” দাড়িয়ে আছো কেনো এইভাবে? তোমার ঘড়ি দেখানো হয়েছে না? এবার স্কুলে যাও।”

ইয়াদের কথায় টয়ার হুশ ফিরল। সে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ তাকে কিছুই বললো না বকাবকি পর্যন্ত করলো না! টয়ার চোখে মুখে বিস্ময়। বরাবরের মতই ইয়াদ কিছু না বলে হাটা ধরলো।

টয়া এখনও ঘোরের মাঝেই আছে। এইদিকে ইয়াদকে চলে যেতে দেখে রাহি আর ছোঁয়া ছুটে টয়ার কাছে আসে। রাহি জোরে বলে উঠে,” এটা কি দেখলাম টয়া?”

টয়া রহির চিৎকারে চমকে উঠে আসে পাশে তাকিয়ে রাহির মুখ চেপে ধরলো। একটা দোকানদার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া ইয়াদের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে রাহির মুখ চেপে ধরে স্কুলের দিকে নিয়ে এসে বলে,” গলা নাকি মাইক এইটা তোর? তোদের জন্য কোনদিন যে বাঁশ খাই। আস্তে কথা বলতে পারিস না।”

ছোঁয়া টয়াকে থামিয়ে বললো,” যা দেখলাম তারপর আসতে কথা বলি কিভাবে? আগে বল কি হলো এটা?”

টয়া মলিন চোখে অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” আমি নিজেও জানি না। হটাৎ করে সুন্দর কিছু ঘটলো আবার মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো।”

রাহি টয়ার কথার কিছু না বুঝেই বললো,” কি বললি কিছুই দেখি বুঝি না। এইসব বাদ দিয়ে বল ট্রিট দিবি কবে?”

টয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,”কিসের ট্রিট? আর জলদি চল ক্লাস শুরু হবে তো,দেরী হলে আবার আতিফ স্যার ক্লাসে ঢুকতেই দিবে না।”বলেই টয়া স্কুলের দিকে দৌড় দিলো। ছোঁয়া আর রাহিও দৌড়াচ্ছে টয়ার পিছনে।

স্কুল শেষে টয়া নাচতে নাচতে বাসায় ফিরলো। আজকের দিনটা তার অনেক ভালো গেছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবারে টয়া বিকালে হাঁটতে যেতে পারে, সপ্তাহের একদিন সে এমন সুযোগ পায়। তার অকারণে বাসার বাইরে যাওয়া বারণ। এই একটা দিন সে নানা আকুতি মিনতি করে চেয়ে নিয়েছে। সেদিন সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। টয়া একটা জিন্স প্যান্ট, হাঁটুর উপরে একটা কামিজ আর গলায় একটা স্কার্ফ আর কাধ পর্যন্ত চুলগুলো খোলা রেখে বের হয়েছে। ছোট চুলে তাকে বেশ ভালোই লাগে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আজ ইয়াদও হাঁটতে বের হয়েছে। ইয়াদের মন ভালো নেই কারণ তার বাবার কিছুদিনের মধ্যেই ট্রান্সফার হয়ে যেতে পারে। তার মা কার সাথে জানি এই ব্যাপারে কথা বলছিলো ইয়াদ সেটা শুনে ফেলেছে। শুনেই কেনো জানি তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। আবার কোনো এক নতুন শহরে যেতে হবে তাকে। ইয়াদ মন ভালো করার জন্য হাঁটতে বেরিয়েছে। সে হাঁটতে হাঁটতে রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাবে। তার বাবা কেনো যে পুলিশ বাদে আর কোনো পেশা বেছে নিলেন না। তার ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে প্রশ্নটা বাবাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে। তাহলেই এমন পরিবর্তন তার জীবনে আসতো না।

এদিকে টয়ার জ্যাকপট লেগে গেছে সে ইয়াদকে রাস্তায় পেয়েছে। কিন্তু টয়া ইয়াদের পিছু নেওয়ার আগে অজুহাত বানিয়ে নিলো। কখন আবার জিজ্ঞেস করে বসে কি কারণে এইদিকে এসেছো?

ইয়াদ পকেটে দুই হাত রেখে আপন মনে এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু পিছু হেটে যে কোনো লাভ নেই টয়া বুঝতে পারলো। টয়া দৌঁড়ে গিয়ে ইয়াদের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। টয়াকে দেখে ইয়াদের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। মেয়েটা তাকে ফলো করতে করতে এতদূর চলে এসেছে ভেবেই ইয়াদের বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ছে।

টয়া হাঁটতে হাঁটতে বললো,” আরেহ আপনি! কি করছেন এইদিকে?”

ইয়াদ আড় চোখে একবার শুধু টয়ার দিকে তাকালো কিছুই বললো না।

টয়া আবার বললো,” আমিও এইদিকে যাচ্ছিলাম। আপনাকে দেখে মনে পড়লো আপনাকে একটা জিনিস দেওয়া হয়নি।”

টয়ার কথা শুনে ইয়াদ থমকে গিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো। এইসব কি বলেছে মেয়েটা!

টয়া ইয়াদের চোখের ভাষা বুঝতে পারছে। নিশ্চয় সে জানতে চাচ্ছে কোন জিনসটা তাকে দেওয়া হয়নি।

টয়া একটু হেসে বললো,” আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয় নি।”

ইয়াদ এতেও কিছু বললো শুধু বিরক্তি নিয়ে একবার তাকিয়ে আবার হাটতে লাগলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলে লাভ নেই। যত কথা বলবে তত সে পিছু নিবে। ইয়াদও দেখতে চায় মেয়েটা তার পিছন পিছন কতদূর আসতে পারে।

ইয়াদের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কিছু হয়েছে। সে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে। টয়া আবার দৌড়ে ইয়াদের পিছু গেলো তারপর টয়া ভয়ে ভয়ে ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,” আপনার কি কিছু হয়েছে?”

ইয়াদ দৃষ্টি সামনে রেখেই হেঁটে চলেছে সে টয়ার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবে না আজ। আর টয়া সে কি হাল ছাড়বার পাত্র নাকি? টয়া বলতে লাগলো মন খারাপ হলে কি করতে হয় জানেন? আরেকটা মন খারাপের কাজ করতে হয়। এতে মন খারাপে মন খারাপে কাটাকাটি হয়ে যায়। যদিও এটা আমার কথা না আমি একটা বইয়ে পড়েছিলাম কিন্তু এখন বইটার নাম মনে পড়ছে না।

ইয়াদের টয়ার কথায় একটু হাসি পেলো কিন্তু সে হাসলো না খালি একবার টয়ার দিকে তাকালো। টয়া বললো,” আরে আমি গল্পের বইয়ে পরেছি। সত্যি কিনা জানি না কখনো এক্সপেরিমেন্ট করা হয়নি।” বলতে বলতেই টয়া দেখলো হটাৎ ইয়াদ টয়ার দুই বাহু ধরে তাকে অন্য পাশে নিয়ে এলো।

টয়া অবাক হয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। টয়ার কিছু বলার আগেই ইয়াদ বললো,” এই ভাবে কেউ রাস্তায় হাটে?আরেকটু হলেই তো গাড়িটা তোমাকে উড়িয়ে দিয়ে চলে যেতো। তারপর তোমার ফ্যামিলি আমাকে ধরে জেলে দিয়ে বলবে আমি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি।”

ইয়াদের কথায় টয়া নিজের হাসি থামাতে পারলো না। টয়া মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। এই ছেলেটা মজার কথাও জানে সেটা টয়ার জানা ছিলো না।

ইয়াদ হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ থেমে গিয়ে টয়ার দিকে মুখ করে দাড়ালো মেয়েটা এখনো হেসেই যাচ্ছে। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে বলে টয়া হাসি থামলো। ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো,” হাসি থামাও। থামিয়ে আমাকে থ্যাঙ্কস দেও।”

টয়া ইয়াদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে চেয়ে চেয়ে এই ছেলে ধন্যবাদ নিচ্ছে কেনো? টয়াকে অবাক করে দিয়ে ইয়াদ বললো,” এখুনি বলো নয়তো কাল সকালে আবার আমার পিছু পিছু হাটবে থ্যাঙ্কস বলার জন্যে।”

টয়া ইয়াদকে ব্যাঙ্গ করে বললো,” কালকে শুক্রবার বুঝলেন।”

ইয়াদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তারপর আবার দৃষ্টি সামনে রেখে হাঁটতে লাগলো। টয়া ইয়াদের পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে বললো,” আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো যাবেন?” ইয়াদ কিছু বললো না।
টয়া আরো বললো,”আপনার ভালো লাগবে চলুন না।”

টয়া একপ্রকার জোর করেই ইয়াদকে কাশফুল ভরা এক জায়গায় নিয়ে এলো। ইয়াদ নিজেও বুঝতে পারছে না যে টয়ার কথায় সে কিভাবে রাজি হলো। এসব ভাবতে ভাবতে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো। অন্য মেয়েদের থেকে এই মেয়েটা কেনো জানি আলাদা। ভাবতে ভাবতে ইয়াদ নিজেই নিজেকে বুঝলো ও একটা বাচ্চা মেয়ে। না বুঝে এইসব করছে হয়তো ওর মজা লাগছে তাই।

ইয়াদের এই জায়গায় এসে ভালোই লাগছে অপূর্ব এক পরিবেশ। আশে পাশে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে ইয়াদের জানা ছিলো না। ইয়াদ একটা পরিষ্কার জায়গা দেখে একটা হাঁটু উচুঁ কোরে তার উপর হাত রেখে বসলো। ইয়াদের দেখাদেখি টয়াও ইয়াদের পাশাপাশি বসলো। টয়া দুই হাঁটুতে হাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ তার দিকে তাকানোর সাথে সাথে টয়া মাথা তুলে তার দৃষ্টি সামনের আকাশে দিকে স্থির করলো।

ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর এইটা ভেবে হাসলো যে এই মেয়েটা একদিন বড় হবে। তখন নিশ্চয়ই ইয়াদকে তার আর ভাল্লাগবে না। এই বয়সটাই ভালোলাগার বয়স বয়সটা পার হয়ে আসা মানে বুঝতে শেখা। তখন এই মেয়ে এইসব পাগলামি আর করবে না।

বাতাসে টয়ার চুল উড়ছে তাই সে কপালে দুই হাত দিয়ে বসে আছে। ইয়াদের বিষয়টা বিরক্তিকর লাগছে টয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় ভুগছে। ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে বললো,” কি সমস্যা তোমার? এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?”

টয়া ইয়াদের দিকে মুখ করে বললো,” চুলগুলোর জন্যে এভাবে বসে আছি। অনেক রাগ লাগছে কখনো মুখের সামনে আবার কখনো চোখের সামনে চলে আসে।”

ইয়াদ অবাক হয়ে তাকালো মেয়েটার হাতে রাবারব্যান্ড পড়ে আছে অথচ চুল বাধছে না। ” চুল বাঁধছো না কেনো?”,

ইয়াদের কথার উত্তরে টয়া বললো,” আমি চুল বাঁধতে পারি না”

টয়ার কথা সত্য কারন তার চুল কাধ পর্যন্ত বাসায় সে চুল ছেড়েই রাখে আর স্কুলে যাবার সময় প্রতিদিন হয় তার মা নয়তো বাবা তার চুল বেধে দেয়। দুই ছেলের পরে এই মেয়ে ফরিদুর সাহেবের তাই খুব আদরেই তাকে বড়ো করেছেন তিনি। টয়ার নিজে নিজে চুল বাঁধাটাও অতন্ত্য অপছন্দ করে তাই চুল বেধে দেওয়ার কেউ না থাকলে সে তাদের দোতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ে তমা আপুর কাছে যায়। সে অনেক সুন্দর করে চুল বেধে দেয় টয়াকে। কাউকে না পেলে তখন থাকুক চুল খোলা।

ইয়াদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” তাহলে স্কুলে?”

উত্তরে টয়া বলে,”মা করে দেয় বেনী।”

ইয়াদ আরো বিস্মিত হলো কারন তার জানামতে নিজের চুল বাঁধতে পারে না এমন কোনো মেয়ে এ পৃথিবিতে নেই। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,” তাহলে হাতে রাবার ব্যান্ড নিয়ে ঘুরছো যে?”

” ও আচ্ছা, আমি ভেবেছিলাম রাস্তায় রাহিকে পাবো। রাহিকে বললে ও বেধে দিতো তাই হাতে নিয়ে ঘুরছি।”, টয়ার কথায় ইয়াদ কিছু বললো না সে সামনে তাকিয়ে রইল।

টয়া হাত থেকে ব্যান্ডটা খুলে ইয়াদের দিকে এগিয়ে বললো,” আপনি আমার চুলটা একটু বেধে দিতে পারবেন?”

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here