#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১০
বিঃদ্রঃ- গল্পের কাহিনী নায়ক-নায়িকা উভয়ের দিক বর্ননা করার জন্য আমি গল্পকতক পরিবর্তন করতে চাই । সজীব এবং বৃষ্টির উভয়ের মনের কথা বাস্তব কথা আমি গল্পকতক হিসেবে বর্ননা করবো । তাতে করে আপনাদের কাছে পুরোপুরি বুঝতে সুবিধা হবে নাহলে শুধু সজীব এর কথাগুলো প্রকাশ পায় । আর বৃষ্টির কথা গুলো সজীব না জানা পর্যন্ত চাপা পরে থাকে তাই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো ।
#_নবম_পর্বের_পরে ।
– রকি বললো , সজীব আপাতত উপরে চল আবার পরে দেখা করতে পারবি । এটা ছিল তোর জন্য সারপ্রাইজ তাইতো গতকাল তুই জেল থেকে বের হয়েছিস শুনেই চট্টগ্রাম আসতে বলছি ।
– সজীব এর চোখ আনন্দে চিকচিক করছে , তার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না । বৃষ্টি একবার মুখ তুলে তাকায় আবার নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করে । বৃষ্টির চোখে মুখেও বিস্ময়কর চিন্হের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । চারিদিকে অসংখ্য মেশিনে বসা শ্রমিক আপন নিয়মে কাজ করছে আর এই দুটো মানুষের মন এই মুহূর্তে ধুকপুক শুরু করেছে ।
– রকি সজীব এর হাত ধরে টান দিয়ে বললো , চল সজীব তাড়াতাড়ি উপরে যেতে হবে । তোর চাকরি কনফার্ম করতে হবে নাহলে তো তুই বৃষ্টির কাছা কাছি থাকতে পারবি না । আগে অফিসে ঢোকার বিষয়টা পারমানেন্ট হয়ে যাক তারপর সবকিছু আস্তে আস্তে হবে ।
– সজীব মাথা নিচু করে বৃষ্টির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো , চাপ নিও না কারণ তুমি যেখানে আমি সেখানে । আরে ভালবাসার একটা বিশাল টান আছে জানোতো ? অপেক্ষা করো বালিকা ।
★★
রকি আর সজীব আরো এক তলা উপরে উঠে গেল কারণ রকি ষষ্ঠ তলায় ডিউটি করে । সেখানে গিয়ে রকি প্রথমে নিজের কাজের স্থান পরিষ্কার করে তার স্যারকে বললো , সে সজীবকে তার মামার কাছে দিয়ে আসবে ৷ তারপর সজীব কে নিয়ে আবারও পাঁচ তলায় নেমে আসলো আর দক্ষিণ কর্ণারে তার মামার নির্ধারিত চেম্বারে নিয়ে গেল । সজীব কে তার মামার কাছে দিয়ে রকি নিজের কাজে চলে গেল আর সজীব যেন ঘাবড়ে না যায় সেজন্য বারবার সাবধান করে দিল ।
সজীব দেখলো , রকির মামা একটা চেয়ারে বসে আছে তার সামনে বিশাল টেবিল । রুমের মধ্যে আরো পাঁচ জন লোক আছে এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে অনেক গুলো করে ফাইল পত্র । টেবিলের উপর আরো অনেক ফাইল জমা আছে , পিএম সাহেব সেই ফাইল একটা একটা করে সিগনেচার করে করে রাখছে । সজীব ভেবেছিল গার্মেন্টসে যারা চাকরি করে তারা মনে হয় পড়াশোনা করে নাই । কিন্তু এত এত ফাইল পত্র দেখে অবাক হলো সজীব কারণ সবকিছু ইংরেজিতে লেখা এবং পিএম সাহেব সেগুলো পড়ে পড়ে সিগনেচার করছে আর মাঝে মাঝে কত কি প্রডাকশন তা জিজ্ঞেস করছে ।
।
।
।
এদিকে বৃষ্টির কাছে সাজ সকালে দুটো ছেলে এসে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আবার চলে গেছে সেটা এই লাইনের অনেকে দেখলো । বৃষ্টিকে মোটামুটি সবাই অনেক পছন্দ করে কিন্তু খাদিজা আর শাহিদা এই দুইজনে বৃষ্টিকে সহ্য করতে পারে না । বৃষ্টি গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছে সাড়ে তিন মাস হয়ে গেছে , তবে এতদিন সে হেলপার ছিল তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুতা কাটতো । এরপর মরিয়ম নামের একটা মেয়ে ওকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেশিন চালানো শিখিয়ে দিয়েছে । বৃষ্টি এখন দু একটা সহজ মেশিন চালাতে পারে তাই ১৩ দিন হলো বৃষ্টি মেশিন চালায় । কিন্তু তার আগে যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুতা কাটতো তখন দুটো পা ব্যথার জন্য ফুলে ফেঁপে উঠতো । অসহ্য যন্ত্রণা হতো কিন্তু তবুও এটা গার্মেন্টস তাই সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে হবে ।
মরিয়ম এর সাথে বৃষ্টির সবচেয়ে ভালো বান্ধবী সৃষ্টি হয়ে গেছে । মরিয়ম চাকরি করে তিন বছর ধরে কিন্তু এখন বিয়ে হয়নি তার । বৃষ্টি আর মরিয়ম দুজন এতটাই মিশে গেছে যে নাস্তা আনলে দুজন ভাগ করে খাবে । দুপুরে খাবার খেতে ক্যানটিনে গেলে তখনও একজনের বাসা থেকে আনা তরকারি আরেকজন নিয়ে খায় । লাইনের মধ্যে দুটো সুপারভাইজার আছে একজন ইনপুটের দায়িত্বে আর আরেকজন হচ্ছে আউটপুট এর দায়িত্বে । বৃষ্টি হচ্ছে আউটপুটের প্রথম দিকের মধ্যে আর আউটপুটের দায়িত্বে আছে সুমন নামের সুপারভাইজার । সুমনের চোখের চাহনি বেশ একটা সুবিধা মনে হয় না বৃষ্টির । যেকোনো সময় কারনে অকারণে গাল ধরতে চায় আবার মাঝে মাঝে পিছনে এসে পিঠের পরে হাত লাগায় । বৃষ্টি চেষ্টা করে এসব থেকে এড়িয়ে চলার জন্য কিন্তু সফল হতে পারছে না ।
– মরিয়ম তার মেশিন থেকে উঠে বৃষ্টির কাছে এসে বললো , কিরে বৃষ্টি ছেলে দুটো কারা ? ভাব দেখে তো মনে হলো তোকে তারা চেনে আর তুইও তাদের চিনিস । কিন্তু তোর পরিচিত কোন ছেলে আছে তাতো জানতাম না আমি ।
– বৃষ্টি বললো , আমিও আজকে তাদের কে এ-ই অফিসে প্রথম দেখলাম । তারা দুজন আমাদের অফিসে কিভাবে আসলো বুঝতে পারছি না ।
– তুই চিনিস ?
– হ্যাঁ , কালো প্যান্ট , কালো শার্ট পরিহিত ছেলেটা সজীব । আর তার সাথে সাধা শার্ট পরিহিত ছেলের নাম রকি , সজীব এর বন্ধু ।
– বলিস কি ? এটা কি সেই সজীব যার কথা আমি জানতাম মানে তুই বলছিলি ?
– হ্যাঁ আমার জীবনে একটাই সজীব ।
– কিন্তু তিনি তো জেলের মধ্যে তাই না ?
– মনে হয় ছাড়া পেয়ে গেছে কিন্তু আমার ভাবনা হচ্ছে তারা আমাকে পেল কিভাবে ?
– আচ্ছা কাজ কর এখন দেখা যখন হয়ে গেছে তখন আবারও কথা হবে চিন্তা করে লাভ নেই । বডি জমা করিস না তাহলে সুপারভাইজার গালাগালি করবে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।
★★
কাজ করতে চাইলেই তো কাজ করা যায় না , বৃষ্টির চোখের সামনে এখন শুধু সজীব এর স্মৃতি গুলো নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে । সারাটি দিন এমন করে ভাবতে ভাবতে কেটে গেল কিন্তু সারাদিনের মধ্যে আর দেখা হলো না । বিকেলে পাঁচটা বাজে ছুটি হলো বৃষ্টির , প্রতিদিন পাঁচটার দিকে ৮/১০ জনের ছুটি হয় । যে সকল প্রসেসে কাজের চাপ কম থাকে সেই সেই অপারেটরকে ছুটি দেয়া হচ্ছে ।
হাজিরা কার্ড পাঞ্চ করে বোরকা পরে বৃষ্টি যখন গেট দিয়ে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে ঠিক তখনই সজীব এর সাথে দেখা হয়ে গেল । পান খাওয়া রিক্সাওয়ালা যেমন করে দাঁত বের করে ফিক করে হেঁসে ফেলে ঠিক তেমন করে হাসি দিল । দুজনেই পাশাপাশি সিড়ি বেয়ে নামছে , সাথে আরো অনেকে আছে যে যার ব্যাস্ততা নিয়ে নামছে ৷
– নিচে নেমে বৃষ্টি বললো , কি হলো দাঁড়িয়ে গেলেন কেন ? আমার সাথে আসুন আপনার সাথে জরুরি কথা আছে আমার ।
– সজীব বললো , রকি আসার কথা বলছে ওরও ছুটি হয়েছে তাই তার জন্য দাঁড়িয়ে আছি ।
– তাকে কল দিয়ে বলুন চৌধুরী মার্কেটের নিচে “বনফুল মিষ্টিমুখ” রেস্টুরেন্টে যেন আসে । আমরা সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করবো আপনি চলুন আমার সাথে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে ।
★★
ফ্রী পোর্ট মোড়ে এসে রাস্তা পার হতে গিয়ে অসংখ্য গাড়ির সম্মুখীন হতে হয় । প্রতিদিন বৃষ্টি তার অফিসের দু একজনের সাথে আসে অথবা সবাই যখন পার হয় তখন তাদের সাথে পার হয় । কিন্তু আজকে সজীব সাথে আছে তাই সজীব এদিক সেদিক না তাকিয়ে বৃষ্টি ডান হাত ধর নিজেই হাত দিয়ে ইশারা করে করে রাস্তা পার হলো । এটাই সজীব এর প্রথম স্পর্শ , রাস্তা পার হবার উদ্দেশ্য নিয়ে সজীব বৃষ্টির হাত ধরেছে কিন্তু সে কি জানে যে এটাই তার প্রথম হাত ধরা ? হয়তো জানে আবার হয়তো না । দুজনেই বনফুল মিষ্টিমুখ রেস্টুরেন্টে বসে আছে , নামে মিষ্টির দোকান হলেও এখানে ঝাল জাতীয় অনেক কিছু পাওয়া যায় । ওরা দুটো বড় বার্গার স্যান্ডউইচ ওর্ডার করে এক কর্ণারের টেবিলে গিয়ে বসলো ।
– বৃষ্টি বললো , জেল থেকে বের হইছো কবে ?
– সজীব বললো , গতকাল দুপুরের কিছুক্ষণ আগে বের হইছি । জেল থেকে বেরিয়ে মেসে গিয়ে সবকিছু নিয়ে রকি চট্টগ্রামে আসতে বলছে তাই চলে আসলাম । সকালে এসে নেমেই রকি বললো আজকে নাকি আমাকে গার্মেন্টসে যেতে হবে । প্রথম খারাপ লাগছিল কিন্তু পরে যখন গিয়ে তোমার সাথে দেখা হলো তখন সব কষ্ট ভুলে গেলাম ।
– রকি ভাই আমাকে কিভাবে দেখছে ?
– আমি তো জানিনা , কেন তুমি কি তাকে আগে অফিসের মধ্যে দেখনি ?
– নাহহহ আজকেই প্রথম তোমার সাথে দেখলাম ।
– তুমি গার্মেন্টসে কেন ?
– কপাল খারাপ তাই ।
– মানে কি ?
– ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না আর গার্মেন্টসে চাকরি হয়তো কপালে ছিল ।
– রাফসান ভাই কোথায় ? কেমন আছে সে ?
– হয়তো ভালো আছে ।
– তোমার সাথে যোগাযোগ নেই ?
– নাহহহ ।
– কেন ?
– সে অনেক কথা সজীব ! আচ্ছা তোমার মা-বাবা কেমন আছেন ? তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে ?
– নাহহ তবে ভাবছি আমার ছোট খালা তো চট্টগ্রামে থাকে , সন্ধ্যা বেলা খালার বাসায় গিয়ে সবকিছু জিজ্ঞেস করবো ।
– তোমার মামলা কি ডিসমিস হয়েছে ?
– নাহহ জামিনে বের হয়ে আসছি , তুমি আগে বলো রাফসানের সাথে কি তোমার বিয়ে হয়নি ?
– নাহহহ ।
– কেন ?
চলবে….
( আমার চাচাতো বোনের বিয়ের জন্য আজকে সারাদিন বিজি ছিলাম । তবুও একটু অবসরে আপনাদের জন্য সামান্য লেখার চেষ্টা করছি । জানি ছোট হয়ে গেছে তাই সবার কাছে আন্তরিক দুঃখিত আমি ।)
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)