_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ১৭

0
283

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১৭

” মিতু বললো , আপনার দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি গিয়ে সিটে বসুন আর নিজের যত্ন নিবেন । মামলার সবকিছু সঠিক ভাবে ভেবে ভেবে কাজ করবেন প্লিজ প্লিজ । ”

” সজীব বললো ঠিক আছে । ”

” আর সবসময় যদি একা ভ্রমণ করেন তাহলে টিকিট সংগ্রহ করার সময় বলবেন পাশের সিটে যেন মেয়ে না থাকে । ”

” কেন ? ”

” আমি চাইনা দ্বিতীয় কোন মিতুর সৃষ্টি হোক কারণ আপনি এমন একটা মানুষ যার সংস্পর্শে আসলে ভালবাসতে বাধ্য হতে হবে । ”

” হাহাহা হাহাহা হাহাহা , আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে আসি । ”

সজীব বাসে উঠে গেল , কিছুক্ষণ পরে বাস ছেড়ে দিয়ে পিরোজপুরের দিকে রওনা দিল । মিতু সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর তার ছোট বোনকে খুঁজতে লাগলো । সজীব বাসের ভিতরে বসে বৃষ্টির নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না । ৬ বার কল দিয়ে সে একটা মেসেজ লেখা শুরু করলো কারণ তাছাড়া উপায় নেই ।

বৃষ্টি ,

পাঁচ বছর আমি তোমার জন্য না দেখে না জেনে স্মৃতি নিয়ে অপেক্ষা করেছি । কখনো কোন মেয়ে সজীব এর মনের মধ্যে স্থান করতে পারে নাই আর হয়তো পারবেও না । আগামী পঞ্চাশ বছর পরও এই মনের মধ্যে তোমার যায়গা টা এখনকার মতোই থাকবে । আমাকে তুমি ভুল বুঝলে যেটা মারাত্মক কষ্ট দিয়েছে আমায় ।

বারবার ভুল বুঝে নিজে কষ্ট পাচ্ছো আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছ এটা কি ঠিক ? বিশ্বাস করতে পারো কারণ পৃথিবীতে আর যা কিছু করি না কেন ! তোমাকে রেখে দ্বিতীয় কাউকে ভালবেসে আপন করা কিংবা স্বপ্ন দেখা এ জীবনে আর সম্ভব না ।

কাব্যসজীব….

বৃষ্টি এতক্ষণ ইচ্ছে করে রিসিভ করে নাই , প্রথমত সে অফিসের মধ্যে তাই এখন কথা বলে শান্তি পাবে না । দ্বিতীয়ত সে আকাশ পরিমাণ অভিমান করে আছে সজীব এর সাথে । কিন্তু মেসেজ পড়ে হঠাৎ করে একটা হাসি এলো মুখে যেই হাসি সচারাচর বৃষ্টি নিজের মাঝে দেখতে পায় না । মোবাইলটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে লিখলো , ” দুপুর একটা বিশ মিনিটে কল দিও তখন কথা হবে , সাবধানে যেও আর বাড়ি পৌঁছে একটা কল দিও । ”

” সজীব শুধু লিখলো , আচ্ছা ঠিক আছে । ”

|
|

পিরোজপুর এসে বাসা পরিবর্তন করে সজীব অন্য একটা লোকাল বাসে উঠলো । এ বাসে উঠে যেতে হবে জিয়ানগর তারপর সেখান থেকে মোটরবাইক নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি । গাড়ি ছাড়তে এখনো ১০ মিনিট বাকি আছে ছোট্ট একটা ছেলে দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করছে । সজীব ১০ টাকা দিয়ে একটা “প্রথম আলো” পত্রিকা কিনল এরপর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো । হঠাৎ করে মোবাইল বেজে উঠলো , মোবাইল হাতেই ছিল তাই স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার । প্রথম বার কল বেজে কেটে গেল দ্বিতীয় বার আবার কল এলো ।

” সজীব রিসিভ করে বললো , হ্যালো আসসালামু আলাইকুম । ”

” ওপাশ থেকে বললো , ওয়া আলাইকুম আসসালাম আমি মিত বলছিলাম । ”

” মানে কি ? ”

” রাগ করবেন না প্লিজ , আসলে আমি ছোট বেলা থেকে ভাগ্য খারাপ নিয়ে বড় হয়েছি । আপনার সাথে দেখা এ জীবনে নিয়ে না ও হতে পারে তাই খুব ভয়ে থেকে আপনার নাম্বারটা নিলাম । ”

” ভাগ্যে যদি থাকে তাহলে নাম্বার থাকলেও দেখা হবে আর না থাকলেও দেখা হবে । ”

” আমি সেটাই পরীক্ষা করতে চাই । ”

” কোনটা ? ”

” নাম্বার রেখে দিলাম ঠিকই কিন্তু নাম্বারের সাহায্য নিয়ে আমি চট্টগ্রামে দেখা করবো না । মাঝে মাঝে কথা বলবো তবে আকস্মিক যদি দেখা হয়ে যায় সেই অপেক্ষায় থাকবো আমি । ”

” দেখো মিতু , আমাদের জীবনে কত বিচিত্র দৃশ্যের ঘটনা ঘটে চারিদিকে । তুমি তোমার স্মৃতির পাতা উল্টে দেখো , অনেক প্রিয় মানুষ তোমার জীবন থেকে অনেক দুরে চলে গেছে । একসময় যারা খুব আপনজন ছিল তারা আজকে যোগাযোগ না হবার জন্য কেমন অচেনা অপরিচিত হয়ে গেছে । ”

” তবুও কিছু কিছু মানুষের সাথে কথা বলে আনন্দ বেড়ে যায় , কথা বলা শেষ করে একা একা হাসি পায় এ এক অদ্ভুত অনুভূতি । ”

” পরে কথা হবে আমি বাসের ভিতরে । ”

“আচ্ছা ঠিক আছে বাসায় পৌঁছে একটা কল দিও ।”

” আচ্ছা । ”

|
|

সজীব যখন বাড়িতে পৌঁছেছে তখন সাড়ে বারোটার সামান্য বেশি বেজে গেছে । সজীব এর বাবা একটু আগে বাজার থেকে ফিরেছেন কারণ তিনি বড় বাজারে গেছিলেন ছেলে আসবে তাই ভালো কিছু বাজার করতে । নিজের বাড়িকে আজকে সজীব এর কাছে অপরিচিত মনে হয় কারণ এগারো মাস পরে বাড়িতে এসেছে সজীব । এর আগে একটানা এতদিন বাড়ি ছেড়ে থাকে নাই কিন্তু এবার তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে থাকতে হয়েছে । সজীবদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই তাই মাহি একটা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে আর সজীব তার মায়ের সঙ্গে কথা বলছে । সজীব এর মা কথা বলার মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে আবার একটু পরে চোখের পানি মুছে ফেলে । সজীব এর বাবা কিছু পাকা পেয়ারা কিনে এনেছে সেগুলো কাটছে ।

” সজীব এর মা বললো , তুই বসে বসে পেয়ারা খা আমি রান্না করতে যাচ্ছি এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে । কি করবো বল ? তোর বাবা বাজার থেকে মাত্র এসেছে তাই তো দেরি হয়ে গেল । ও মাহি তোর ভাইয়াকে বাতাস কর ভালো করে । ”

সজীব এর বাবা কাটা পেয়ারা ওদের দুই ভাইবোনের সামনে দিয়ে বড় একটা সিলভারের বালতি নিয়ে মাঠের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল । সজীবদের তিনটা গরু আছে এখন সেই গরু গুলোকে রোদের মধ্যে থেকে ছায়ায় আনতে হবে । পানি খাইয়ে তারপর ছায়ায় বেঁধে রেখে আসবেন তিনি পরে বিকেলে রোদ কমলে আবার মাঠে নিয়ে যাবেন ।

” তারপর তোর পড়াশোনা কেমন চলে মাহি ? ”

” জ্বি ভাইয়া ভালো , অনেক ভালো চলে । ”

” গ্রামের বাড়িতে অনেক দিন পরে এসে পরিবেশ টা কেমন যেন অচেনা অপরিচিত মনে হয় । ”

” গ্রামের মানুষ গুলো আরো বেশি অচেনা হয়ে গেছে ভাই , সবাই এখন আমাদের খারাপ চোখে দেখে । ”

” কেন ? ”

” তুমি মামলার প্রধান আসামি হয়ে জেলে ছিলে তাই নানান ধরনের মানুষ নানান ধরনের কথা বলে । আমি আর মা অনেক দিন কারো বাড়িতে যাইনা গেলে শুধু তোমার কথা নিয়ে কথা আসে । সেগুলো শুনতে ভালো লাগে না ভাইয়া তাই কারো কাছে যাইনা আর । ”

” সজীব মন খারাপ করে বললো , ওহহ আচ্ছা । ”

” জানিস ভাইয়া ? আমার বিয়ে ঠিক হইছিল । ”

” জানতাম না তো কবে ? কোথায় ? ”

” উপজেলার মধ্যে একটা ভালো পরিবার ছিল , আমি কলেজে যাবার সময় তারা দেখে পছন্দ করে তারপর বাবার সাথে যোগাযোগ করছিল । কিন্তু পরে যখন জানলো আমার ভাই খুনি হয়ে জেলের মধ্যে আছে তখন সবকিছু ভেঙে গেল । ”

” আমার জন্য এতকিছু হয়ে গেল ? খুব খারাপ লাগে আমার জন্য তাই না মাহি ? ”

” নাহহ ভাই তুমি থাকলে আমাদের কিছু দরকার নেই আচ্ছা ভাই তোমার মামলা শেষ হবে কবে ? ”

” মামলার জন্য আগামীকাল সকালে আবার খুলনা শহরে যাবো , সেখানে উকিল সাহেব আছে । তার কাছে বাবাকে যেই নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে সেই নাম্বার গুলো দেবো । ”

” আমি সব নাম্বার গুলো লিখে রেখেছি । ”

” আচ্ছা পরে নেবো এখন আমি একটু দক্ষিণ দিকের বাগান থেকে ঘুরে আসি । ”

” কেউ কিছু বললে মন খারাপ করো না কিন্তু । ”

” আরে ধুর না না তা করবো না । ”

|
|

একটা পনের মিনিট বেজে গেছে তখনই বৃষ্টি কল দিল সজীব কে , সজীব ভেবেছিল আর পাঁচ মিনিট পর কল দেবে কারণ দুপুরের খাবার খেতেও সময় লাগে । কিন্তু বৃষ্টি কল দিয়েছে তাই কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলো ।

” বৃষ্টি রিসিভ করেই বললো , কোই তুমি ? ”

” বাড়িতে আছি , কি করো তুমি ? ”

” লান্স করে বসে আছি , তোমাকে বলেছিলাম বাড়িতে গিয়ে একটা কল দিও কিন্তু তুমি আমাকে কল দিলে না কেন ? ”

” আসলে বাড়িতে আসার সাথে সাথে মা-বাবা আর বোনের সাথে কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেছে । ”

” কতক্ষণ আগে গেছো ? ”

” ঘন্টা খানিক হবে । ”

” রাতে ওই মেয়ের বাড়িতে ছিলে ? ”

” হ্যাঁ । ”

চলবে….

বেশি বড় করে লিখতে পারিনি । তবুও মোটামুটি ভাবে পোস্ট করতে পেরেছি এটাই আনন্দের অনুভূতি ।

ধন্যবাদ সবাইকে ।

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here