_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_তৃতীয়_পর্ব ৷

0
256

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_তৃতীয়_পর্ব ৷

– আমি বললাম , তোমার নাম বৃষ্টি ?
– বৃষ্টি বললো , লোকে তো তাই বলে ডাকে ।
– মুখ বাধা তাই চিনতে পারিনি সরি , কিন্তু আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে ? পাঁচ বছর আগের সেই স্মরণীয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ঢেউ খেলানো গোধূলির আলোমাখা সন্ধ্যার কথা আজও মনে আছে নাকি ?

– মনে ছিল না কিন্তু গতকাল মনে করেছি ।

– মানে ?

– একজায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে চলুন হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি আমরা তাই না ?

– হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই ।

– চলুন তাহলে ।

সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছি । আমি বাম সাইডে , তারপর বৃষ্টি , তারপর তার ছোট বোন , আর শফিক , রকি পিছনে পিছনে আসছে । চরেরহাটের এই নদীর তীরে বিকেলে মানুষ এর আনাগোনা বেশি দেখা যায় । এইখানো দুটো নদীর সঙ্গমস্থল তাই দেখতে বেশ চমৎকার লাগে তবে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে ওই পাড়ে । নৌকা করে ওই পাড়ে গেলে ভাঙ্গা চরের উপর হাঁটা যায় কিন্তু সেটা নাহয় অন্যদিন হবে ।

– বৃষ্টি বললো , আপনি খুলনা শহরে ক’বছর ধরে আছেন ? কলেজে পড়েন সেটা বোঝা যাচ্ছে কিন্তু কোন কলেজে ?

– বললাম , আমি চার বছর ধরে আছি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলতি মাসে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার কথা ছিল । কিন্তু ২০১৩ সালের একটা পলিটেকনিক আন্দোলনের জন্য আমাদের ৫ মাস বন্ধ ছিল ।

– আপনি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ ?

– হ্যাঁ ।

– কোন পলিটেকনিক ?

– সিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ।

– বলেন কি ? ( আশ্চর্য হয়ে )

– হ্যাঁ , কিন্তু এতে আশ্চর্য হবার কি আছে ?

– না কিছু না পরে বলবো, আচ্ছা আপনার পরিবারে কে কে আছে ?

– মা-বাবা আর ছোট বোন ।

– বাবা কি করে ?

– আমাদের গ্রামের স্থানীয় বাজারে আমাদের একটা দোকান আছে । সেই দোকানের উপার্জন দিয়েই আমাদের দু’ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ আর আমাদের সংসার চলে ।

– ওহহ আচ্ছা , চট্টগ্রামে আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল , সেখানে কে থাকে আপনার ?

– আমার ছোট খালার বাসা ।

– ওহহ এখনো যান মাঝে মাঝে ?

– হ্যাঁ বছরে দুতিন বার , আচ্ছা আপনি কিভাবে চিনতে পেরেছেন বললেন না তো ?

– গতকাল সন্ধ্যা বেলা আপনি যখন মেসেজ করে হঠাৎ করে রিপ্লাই করলেন না তখন আমি আপনার বিষয় কৌতূহল বোধ করি । আপনার নাম্বারটা আমি ফেসবুকে নামের পরিবর্তে লিখে সার্চ করলাম । আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল তাই খুব সুন্দর করে লেখা আসলো ” কাব্য সজীব ” । প্রথমে প্রোফাইলের পিকচার দেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম কিন্তু মনে করতে পারলাম না । এরপর নিচে যেতে যেতে ২০১১ সালের পোস্ট করা পিকচারে গিয়ে চোখ আটকে গেল । কারণ তখনকার সময়ের সেই সমুদ্র সৈকতের কিছু পিকচার আপনার আইডিতে আছে । এমনকি যেদিন আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল সেদিন যে শার্ট পরিহিত ছিলেন সেই শার্ট পরিহিত কিছু ছবিও আছে । তখন আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি আপনি সেই হাজী মোহাম্মদ মুহসিন ।
( বিঃদ্রঃ- ২০১৬ সালের সেই সময়ে নাম্বার দিয়ে সার্চ করলে ফেসবুক আইডি আসতো ।)

– বললাম , আমার সেদিন কি শার্ট ছিল সেটা তুমি মনে রেখেছো ? ওহহ সরি আপনি ।

– ইটস ওকে , আপনার শার্টের কালার মনে রাখিনি কিন্তু আপনি যখন আমাদের ছবি গুলো কপি করে আমার মেমোরি কার্ডে দিছিলেন তখন আপনার নিজের দুটো ছবি চলে এসেছিল । বাসায় এসে আমি ভেবেছিলাম আপনি ইচ্ছে করে দিয়েছেন , তবে আপনার সেই ছিল অনেকদিন ছিল আমার মেমোরি কার্ডে । হঠাৎ একদিন রাফসান সেই ছবি দেখার পরে আপনার পরিচয় জানতে চায় । তখন আমি আপনার সাথে পরিচয়ের ঘটনা তাকে খুলে বলি কিন্তু সেদিন সে আপনার ছবি ডিলিট করে দিল ।

– মনে মনে ভাবলাম রাফসান এর বিষয়টা তুলে ধরার এটাই সুযোগ । বৃষ্টিকে বললাম , রাফসান নামে এই ছেলেটা কে ? ( যদিও আমি আঙ্কেলের কাছে শুনেছি কিন্তু সেটা তো বৃষ্টির কাছে বলা যাবে না তাই নতুন করে জিজ্ঞেস করছি ।)

– রাফসান আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল , সে আমার বড় খালার ছেলে । অনেকদিনের সম্পর্ক ছিল আমার আর রাফসানের , পারিবারিক ভাবে বিয়েও ঠিক হয়েছিল কিন্তু …!

– কিন্তু কি ?

– একটা ঝড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল ।

– যেমন ?

– রাফসান সেনাবাহিনীতে চাকরি পেল , কথা ছিল ট্রেনিং শেষে সামান্য ডিউটি করে ছুটি নিয়ে এসে আমাদের বিয়ে হবে ৷ রাফসানের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে রাঙ্গামাটিতে একটা দস্যু দল দমনের জন্য কিছু সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয় । রাফসান ছুটি ক্যান্সেল করে তাদের সাথে সেই অপারেশনে যোগ দেয় । আমাকে কল দিয়ে বললো , বৃষ্টি তুমি চিন্তা করিওনা আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো ৷ কিন্তু ওর সেই খুব তাড়াতাড়িটা এ জীবনে কোনদিন ফুরাইবে কিনা জানিনা আমি । শেষ যখন তার সাথে আমার কথা হলো তখন বলেছিল যে , “” আজকেই আমাদের মিশন সম্পন্ন হবে , ক্যাপ্টেন নতুন প্ল্যান করেছে আশা করি সবাই ঠিক মতো ডিউটি করলে সফল হবো । আর সফল হয়ে আমি ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গিয়ে ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো । “” কিন্তু রাফসানকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই , সবার ধারণা রাফসান মারা গেছে । কারণ সমস্ত জঙ্গলের ভেতর অনেক খোঁজা হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায় নাই তাকে ।

– বললাম , এমন একটা সত্য ঘটনা মেনে নিতে কষ্ট হয় সেটা আমি জানি । কারণ খুব কাছের কেউ যখন অকালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে যাত্রা করে । তখন সেই মুহূর্তটা সহ্য করতে আর সেই বিপদের সময় গুলো পার করতে অনেকটা সংগ্রাম নিজের সাথে করা লাগে ।

– জীবন থেকে যখন রাফসান হারিয়ে গেছে তখন প্রথম প্রথম মনে হতো সবকিছু মিথ্যা । মনে হতো সে ফিরে আসবে , আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে যাবে আর নিয়ে কদম ফুলের তোড়া । কিন্তু দিন শেষ হয়ে রাত আসে , রাতটাও হা হুতাশ করতে করতে পার হয়ে যায় ৷ কিন্তু আমার অপেক্ষার অবসান ঘটে না কারণ প্রকৃতি যেটা চায়না সেটা কৃত্রিম ভাবে আমি কিভাবে পাবো ? আচ্ছা এসব কথা আপনার সাথে কেন বলছি জানেন ?

– কেন ?

– স্কুল জীবনে আমার কোন ছেলে বন্ধু ছিল না , আর কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম বয়রা মহিলা কলেজ তাই আমার কোন ছেলে বন্ধু নেই । আর আপনার সাথে ৫ বছর আগের দেখা হয়েছিল মাঝে হয়তো কোনদিন যোগাযোগ ছিল না তবুও মনে হয় যেন আপনার সাথে অনেক দিনের বন্ধুত্ব । আসলে পৃথিবী টা কেমন যেন অদ্ভুত , সারাজীবন পাশে থেকে কভু একজন আরেকজনকে চিনতে পারে না । আবার বহু বছর পরে এক দেখাতেই হঠাৎ করে দুজন দুজনকে চিনে ফেলে ।

– বললাম , জীবনে বন্ধু সবার আছে , প্রিয় মানুষও সবার আছে । কিন্তু সবার আপন মানুষ নাই , সব প্রিয় মানুষই আপন হতে পারে না , কিন্তু সব আপন মানুষ সবারই প্রিয় মানুষ হয় !

– পৃথিবীতে একে অপরের প্রতি মায়া যদি না থাকত তাহলে কত রঙিন হতো তাই না ?

– বললাম , পৃথিবীতে আমরা সবাই ক্ষনিকের জন্য এসেছি , সেই সামান্য সময়ের মাঝে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে । আর তার পাশাপাশি গড়তে হবে সংসার নামক মায়ার মোহজাল । হয়তো আপনার জীবন থেকে খুব প্রিয় একজন হারিয়ে যাবে আর সেই সময় আপনার মনে হবে পৃথিবী তুচ্ছ । মিথ্যা মনে হবে জগতের সকল সুখশান্তির চলমান গল্প গুলো । কিন্তু আস্তে আস্তে সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে , দুঃখে ক্লান্ত হওয়া মানুষটা হঠাৎ করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে । তার জীবনে নতুন করে হঠাৎই আবার কারো আগমন ঘটে , ব্যস্ত পৃথিবীতে সে তখন বাস্তবতা মেনে নিতে চেষ্টা করে ।

– বৃষ্টি বললো , মনের সেই শূন্যস্হানে নতুন মানুষ বসে যায় তবুও কিন্তু থেকে যায় নতুনের হাসিতে পুরাতনের অস্তিত্ব । পুরাতনের কথা মনে পরে যায় বর্ষার দিনে , বিরক্তিকর দুপুরে , সন্ধ্যার নালিশে পাশাপাশি বালিশে মন কেন তাকে খুজে যায় ? হঠাৎ করে হৃদয় হাহাকার করে ওঠে , সমস্ত জগৎ শূন্য মনে হয় সেদিন ।

– বললাম , আমাদেরকে দৈনন্দিন জীবন নাটকের প্রতিটা দৃশ্যে আমরা শুধু দর্শক । আর যারা এই দৃশ্য বদলে দিতে চায় তারা একের পর এক দৃশ্য পাল্টে । কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে এক সময় সে নাটকের শেষ দৃশ্যে এসে টের পায় নাটক দেখা শেষ । যা যা দেখার সবকিছু এই পাল্টে দেয়া দৃশ্য গুলোর মাঝেই তা ছিলো ! কিন্তু তখন যদি সঠিক সময়ে পাল্টে দিতে পারতাম নাটকটা মজা হতো ।

– আপনি খুব সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে সাহিত্যিকের মতো কথা বলেন তাই না ?

– নাহহ তবে যেটা চোখের সামনে পরিষ্কার সেটা আমি উম্মোচন করে দিলাম । জীবনকে এত জটিল না করে, জীবনকে জীবনের হাতে ছেড়ে দিয়ে আপনি নাটকের দর্শক হয়ে যান । দেখবেন নিজের কষ্ট গুলোকেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে এক ধরনের আনন্দ হবে ।

– যখন বহু বছর আগলে রাখা সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তখন , স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় তখন নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে থাকে না ।

– আমি জানি আপনার স্বপ্ন ভেঙে গেছে স্বপ্ন ভাঙলে ভাঙুক , ঝাপসা চোখে ভাঙা টুকরো গুলো যত্ন করে সাজিয়ে তুলুন । ভাঙা টুকরার ওপাশেও অন্য কেউ আপনার সেই আয়নায় চোখের জল শুকিয়ে ফেলেছে । হয়তো আপনাদের দুটো ভাঙা মন জোড়া লেগে হয়ত নতুনের চেয়ে আরো মজবুত হবে ।

– প্রথম দিনের পরিচয়ে আজকে অনেক কথা হয়ে গেল , কিন্তু আমাদের এখন যেতে হবে । বাসায় গিয়ে বেলা থাকতেই আসরের নামাজ পড়তে হবে । আমি সবাই সাড়ে চারটার দিকে আসি আর সাড়ে পাঁচটার দিকে চলে যাই । আপনার সাথে আবারও দেখা হবে আমি নিশ্চিত তাই আজকের মতো বিদায় নিতে হবে আমাদের । আপনারা নামাজ পড়ে নিবেন ।

– আচ্ছা ঠিক আছে , তাহলে চলে যান । রাতের নিস্তব্ধতায় আজকে দেখা হবে আপনার বাসার সামনে “ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতি” নিচে ।

– গতকালই বলেছি , ওই ল্যাম্পপোস্টের বাতি পরিষ্কার আলো দেয় এখন ।

– আমি নাহয় চশমা পরে যাবো আর চশমার গ্লাস জোড়া পানি দিয়ে ঘোলা করে নেবো ।

– হিহিহিহি আচ্ছা ঠিক আছে । আমার মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন আছে কিন্তু সেটা আজকে করলাম না তবে পরবর্তীতে করবো ।

– এখন বলেন প্লিজ ।

– আপনি আমার সন্ধান কিভাবে পেলেন ? সেটাই জানার দরকার আছে কিন্তু আজকে শুনবো না তাই উত্তর টা সাজিয়ে রাখুন পরে জেনে নেবো ।

– আচ্ছা ঠিক আছে ।

– একটা খালি ডাক দিয়ে তাদের উঠিয়ে দিলাম আর বললাম , সাবধানে যেও আর বাসায় পৌঁছে একটা ফোন দিও ।

– আচ্ছা ঠিক আছে , আর শেষ সময়ের বলা এই তুমি করে ভাষাটা যেন বহাল থাকে । এই ডাকটা পরিবর্তন করার দরকার নেই কারণ বন্ধুদের মাঝে আপনি শব্দটা বিশাল পাহাড় ।

– ধন্যবাদ তাই হবে ।

★★

কিছুক্ষণ চলন্ত রিক্সার দিকে তাকিয়ে রইলাম , যখন মোড় পেরিয়ে রিক্সা আড়াল হয়ে গেল তখন তিনজন মিলে নদীর দিকে যাচ্ছি আবার । এই নদীর তীরে মাঝে মাঝে অনেক এসেছি আমরা তিনজনে কিন্তু কখনো তো তার সাথে দেখা হয়নি । তবে শেষ তিনমাসের মধ্যে হয়তো দুবার এসেছিলাম তাই হয়তো দেখা হয়নি । পড়ন্ত সূর্যের লাল আলোক শিখা নদীর ঢেউয়ের দোলায় চিকচিক করে । পাখির দল উড়ে উড়ে নীড়ে ফিরে যায় । হঠাৎ করে আঁধার ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে , আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে যায় নদীর তীর । শুধু স্থীর দাঁড়িয়ে থাকে সবুজ ঘাসের ডগা আর বৃক্ষের সারি সারি ।

– শফিক বললো , কিরে প্রপোজ করেছিস ?

– বললাম , না রে সে সুযোগ এখনো তৈরী হয়নি ।

– ধুর শালা , তুই তাকে বলবিনা যে ” এতবছর ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি ওগো স্বপ্নের রাজকন্যা । আজকের এই প্রথম দর্শনে তোমাকে মনের কথা জানিয়ে দিতে চাই । কারণ আবার যদি তুমি হারিয়ে যাও তাহলে আমি যে নিঃশ্ব হয়ে যাবো ।

– বললাম , আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অসুক ।

আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছি তখনই শফিকের মোবাইল বেজে ওঠলো । শফিক রিসিভ করে হ্যাঁ , হা সত্যি ? কখন ? তাড়াতাড়ি আসেন , সজীব আছে , ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে লাগলো । কল কেটে দেবার পরে বললো , ” জাফর ভাই খুলনা এসেছে তার একটা অফিসের কাজে । তিনি আমাদের মেসে আসতেছেন তাই চল তাড়াতাড়ি মেসে ফিরে যেতে হবে । ভাইয়ের জন্য আলাদা করে কিছু রান্নার ব্যবস্থা করতে হবে ।

তিনজনই পিছনে ফিরে জোরে জোরে হাঁটতে হাঁটতে রিক্সার কাছে এসে চেপে বসলাম । জাফর ভাই আগে আমাদের মেসে থাকতো কিন্তু অনেক সিনিয়র সে । আমরা যে বছর ভর্তি হলাম তার এক বছর পরে সে বিএল কলেজ থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে বেরিয়েছে । জীবন সায়ান্হে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে খুলনা শহরের এই সব মানুষের কথা যখন মনে করবো তখন জাফর ভাইয়ের মুখটাও ভেসে উঠবে ।
বৃষ্টিকে আমি ভালবাসি সেটা জাফর ভাই জানতো , তিনি বারবার বলতেন যে , ” সজীব চিন্তা করিওনা তুমি , মন থেকে যে জিনিসটা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয় সেটা আল্লাহ অবশ্যই পুরন করে । হয়তো কিছু সময় পেরিয়ে যায় কিন্তু সেই কিছু সময় টা হচ্ছে তোমার ধৈর্যের পরীক্ষা । ”

খুলনা শহরে যখন তিনি ছিলেন তখন তার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল ৷ ২০১৩ সালের সেই সময়ে তাদের সম্পর্কের বয়স ছিল ৬ বছর । জাফর ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ নেই বছর দেড়েক হয়ে গেছে । হঠাৎ করে তার কন্টাক্ট নাম্বার বন্ধ পেলাম , ফেসবুকে আর তার নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলে না । এতদিন ধরে সেই কারনটা রহস্য হয়ে ছিল কিন্তু আজকে সেটা জিজ্ঞেস করতে হবে ।

,

আলমনগর বাজার থেকে মুরগী কিনলাম , মেসের রান্না করা খালাকে ফোন দিলাম । সে বললো , সে নাকি মেসে চলে এসেছে রাতের রান্না করার জন্য তাই আমরা মেসে রওনা দিলাম ।

মেসের মধ্যে আমরা পৌছানোর আগেই জাফর ভাই চলে এসেছে । ভিতরে জলিল ভাইয়ের সাথে তার রুমে বসে কথা বলছেন । আমরা গেলাম , আমাকে জড়িয়ে ধরলেন সবার সামনে বসে । অনেকদিন পরে তার সাথে দেখা হয়ে গেল তাই আজকে গল্প হবে প্রচুর ৷ জাফর ভাইকে গোসল করতে বলে আমরা মাগরিবের নামাজ পড়তে গেলাম ।

★★

জাফর ভাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে এলো , আমি শফিক আর রকি এবং জাফর চারজনে মিলে তাস খেলতে বসে গেলাম ৷ গল্প করার জন্য তাসের আড্ডা হচ্ছে অনেক ভালো একটা পদ্ধতি । মনে হচ্ছে সেই পুরনো দিন ফিরে এসেছে , জাফর ভাই যে এক বছর আমাদের সাথে ছিল সেই এক বছর আমরা চারজন এই রুমে থাকতাম । চারজনে মিলে সবসময় তাস খেলতাম আমরা , কিন্তু ভাই চলে যাবার পরে এ রুমে আর নতুন কাউকে তুলিনি আমরা । কারণ আমাদের নিজেদের মত কাউকে পাইনি আর তাই চারজনের রুম ভাড়া আমরা তিনজনে পরিশোধ করি ।

বৃষ্টির সন্ধান পাওয়া গেছে সেই কথা শুনে ভাই অনেক খুশি হয়েছে । আড্ডা দিতে দিতে রাত সাড়ে নয়টা বেজে গেছে তার মধ্যে রান্না করা শেষ হয়ে গেছে । আমাদের চারজনের খাবার রুমের মধ্যে দিয়ে খালা বাসায় চলে গেছে । আড্ডা বন্ধ করে আমরা খাবারের জন্য উঠে পরলাম । হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি বৃষ্টির নাম্বার থেকে ৬ টা মিস কল । মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল যেটা বুঝতেই পারিনি । নাম্বার ডায়াল করে কল দেবার আগেই স্যারের নাম্বার থেকে কল আসলো ৷

– রিসিভ করে বললাম , আসসালামু আলাইকুম ।

– ওয়া আলাইকুম আসসালাম , সজীব তুমি কোথায় আছো এখন ?

– এইতো স্যার মেসের মধ্যে ।

– ডিনার করছো ?

– না স্যার করবো এখন , আপনার কন্ঠে রাগের প্রকাশ পাচ্ছে , কি হইছে স্যার ?

– বিকেলে বৃষ্টিকে তুমি কি বলছো ?

– অনেক কিছু তো বলেছি কিন্তু আপনি কিসের কথা বলছেন বুঝতে পারছি না ।

– এই মুহূর্তে তুমি আমার বাসায় আসো , ঝামেলা তৈরী করে দিছো তুমি ।

– মানে কি স্যার ?

– তোমাকে অনেক ভালো ছেলে হিসাবে জানতাম আমি সেটা জানো তুমি ?

চলবে….

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here