_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ২২

0
152

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ২২

” সজীব বললো , আমার সাথে যদি কেউ কিছু বলে বা জানতে চায় তাহলে সেই কথার জবাব দেওয়া আমি বাধ্যতামূলক মনে করি । ”

” বৃষ্টি বললো , রকি ভাই আমিও কিন্তু ডিউটি করি সুতরাং আমাকে এসব ছেলে ভোলানো রূপকথা শেখানো চেষ্টা করতে নিষেধ করুন । ”

” সজীব বললো , আমার তো বয়েই যাচ্ছে কাউকে শিখাতে যাবো আমি হুহহহ । ”

” রকি বললো , তোমরা কথা বলো আমি উপরে চলে গেলাম , আর সজীব তুই ছুটির পরে অপেক্ষা করিস কিন্তু বন্ধু । এ কথা বলে রকি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল । ”

” এবার মিনিট দুই নীরব থেকে বৃষ্টি বললো , আমার সাথে মনে হয় কারো কিছু বলার নেই তাহলে আমি কি চলে যাবো ? ”

” যেতে পারো সমস্যা নেই । ”

” কথা বলবে না ? ”

” তোমার ইচ্ছে ! ”

” সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি , পা ব্যথা করছে মনে হয় তাই না ? ”

” সমস্যা নেই , আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে । ”

” মাঝে মাঝে একটু বসতেও তো পারো তাহলে তো সমস্যা হবে না । নিজের কাছে একটা চেয়ার রেখে দেবে আর সেখানে মাঝে মাঝে বসবে ।”

” সব তো আজকে নতুন , একটু পুরাতন হই তাহলে ঠিক হবে মনে হয় । ”

” মেডাম অনেক ভালো আছে , ডিউটি করে অনেক শান্তি পাবে তুমি । ”

” হুম সেটা বুঝতে পারছি । ”

” এখনো রাগ করে আছো ? ”

” রাগ করতে হলে আগে প্রিয় হতে হবে কিন্তু আমি কারো প্রিয় হতে পারি নাই সুতরাং রাগ অভিমান এসব করা অর্থহীন । ”

” আচ্ছা সরি আর হবে না , এবার হাসো প্লিজ ! ”

সজীব এর আর কিছু বলা হলো না তার আগেই লাইনে ঘন্টা বেজে গেছে । সবাই যার যার মেশিনে চলে যাচ্ছে তাই বৃষ্টিও ভিতরে চলে গেল । সজীব বেসিন থেকে হাত মুখ ধুয়ে লাইনের ভিতরে গিয়ে রাশেদের সামনে দাঁড়াল ।

” রাশেদ বললো , কি খবর সজীব ভাই ? লান্স করে কেমন লাগলো ? নতুন পরিবেশ । ”

” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই , তবে ক্যান্টিনের মধ্যে পরিবেশটা অনেক সুন্দর । ”

” হুম ভাই ঠিক বলেছেন , আসলে ভাই বায়ার প্রায় সময় চলে আসে হুটহাট করে তাই সবসময় এমন করে পরিষ্কার রাখে । তাছাড়া বিদেশি মালিক তো তাই তিনি নিজের ব্যাবসার পাশাপাশি শ্রমিকের সুবিধাও দেখেন । কিন্তু আমাদের বাঙালি কিছু লোক হচ্ছে খুব খারাপ , তারা মালিককে যা বোঝায় তিনি তাই বোঝে । নিজেদের বেতন বেশি বেশি করে নেয় আর আমাদের শুধু ফাঁকা নাহলে আমরা আজ অনেক ভালো থাকতাম । ”

” ওহহ আচ্ছা , হতে পারে । ”

” হতে পারে না , বরং এটাই বাস্তবতা সজীব ভাই । ”

|
|

বৃষ্টি নিজের যায়গায় বসে কাজ করছি তখন তার সুপারভাইজার এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো , ” আমি যে এতদিন ধরে একটু ভালো করে কথা বলতে চাই কখনো সময় দেওনা আর নতুন কোয়ালিটি আসার সাথে সাথে তার সাথে সিড়িতে গিয়ে কথা । ঘটনা কি ? নাকি স্মার্ট ছেলে দেখে মনের মধ্যে ঘন্টা বেজে গেছে ? ”

” বৃষ্টি বললো , দেখুন সে আমার পূর্ব পরিচিত তাই কথা বলতে গেছিলাম । আর নতুন বা পুরাতন তার সাথে কথা বলবো সেটা আমার ব্যাক্তিগত বা আমার পারসোনাল ব্যাপার । ”

” পারসোনাল হোক আর এজেন্ট হোক কোনো সমস্যা নেই কিন্তু তার সাথে বেশি কিছু করতে যদি দেখি তাহলে কিন্তু দুজনকে আলাদা করার দায়িত্ব আমার । ”

” কিন্তু আলাদা কেন করবেন ? ”

” তোমার সাথে যদি বেশি ভাব নেবার চেষ্টা করে ? ”

” তাতে আপনার সমস্যা কি ? ”

” আমারই তো সকল সমস্যা , কারণ তোমাকে বউ করার স্বপ্ন দেখি জানোনা তুমি ? ”

” আপনি দ্বিতীয় বার এমন প্রসঙ্গে কথা বললে কিন্তু আমি পিএম স্যারের কাছে বিচার দেবো । ”

” কোন লাভ নেই , বরং আরো ভালো হবে আমার কারণ সবাই তখন জেনে যাবে । সবার মুখে মুখে থাকবে যে আমি তোমাকে পছন্দ করি তাই আমার জন্য যথেষ্ট ভালো হবে । ”

” আপনি আসলে একটা বিরক্তিকর ভাই , প্লিজ আমার সামনে থেকে যান আপনি । আর আপনার তো প্রেম করার রেকর্ড অনেক ভালো তাই আগে নিজের চরিত্র ঠিক করেন । ”

” ঠিক আছে দেখা যাবে কে কার চরিত্র ঠিক করতে বলে , শুধু যদি বেশি ভাব নিতে দেখি তাহলে বুঝতে পারবে আমি কি জিনিস । ”

★★

সজীব আর বৃষ্টি দুজনেরই সাতটা বাজে ছুটি হয়ে গেল কিন্তু রকির আরো এক ঘন্টা পরে ছুটি হবে আর মরিয়ম আজকে আরেকটা মেয়ের সাথে নাকি আকমল আলী রোড যাবে ।

” বৃষ্টি বললো , চলো তাহলে আমরা চলে যাই । ”

” ঠিক আছে চলো । ”

” রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় সজীব একটু জোরে জোরে হাঁটছিল তখন বৃষ্টি বললো , বিমান ছেড়ে যাচ্ছে নাকি বিয়ের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ? এত দ্রুত হাঁটার কারণ টা জানতে পারি ? ”

” এমনি সবাই হাঁটছে তাই নিজেরও হাঁটতে ইচ্ছে করছে আর কোন কারণ নেই । ”

” ঠিক আছে যান আপনি । ”

” নাহহ যাবো না , আস্তে আস্তে তোমার সাথে হাঁটবো আশা করি খারাপ লাগবে না । ভালবাসার মানুষের সাথে সন্ধ্যার পরে এই ব্যাস্ত শহরের মাঝে ঘোলাটে বাতির নিচে হাঁটতে কার না ভালো লাগে ? ”

” কথা বলার ধরন সবসময় একধাপ এগিয়ে , তাই কথা বলে কেউ হারাতে পারবে না । ”

” তুমি কি শুধু ঝগড়া করবে ? ”

” আমার সবকিছু ঝগড়া মনে হয় এখন ? একদিন গার্মেন্টসে গিয়ে নানান ধরনের মেয়ে দেখেই বৃষ্টির কথা ঝগড়া মনে হচ্ছে ? ”

” উহ এমনটা বলছি নাকি ? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দাও এসব কথা , গত পরশু মিতুর বিষয় কথা বলার জন্য দুঃখিত । আর কখনো অমন করে তোমাকে কারো হতে বলবো না তবুও রাগ করে থাকবে না প্লিজ । ”

” চেষ্টা করবো তবে নিশ্চিত না । ”

” আচ্ছা বাবাহ বললাম তো আর বলবো না ভুল হয়ে গেছে আমার । তবে এর সাথে আরো একটা কথা আছে যেটা তোমাকে মানতে হবে । ”

” কি ? ”

” আমি কিন্তু তোমার ভালবাসা গ্রহণ করতে পারছি না আর সে জন্য আমাকে জোরও করতে পারবে না তুমি , রাজি ? ”

” আমি কি আগে কখনো জোর করেছি ? ”

” নাহহ তবে মনে করিয়ে দিলাম কারণ হঠাৎ করে যদি আমার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তখন আবার তুমি আমাকে বেঈমান বলতে পারবে না । ”

” নাহহ সে অপবাদ দেবার ক্ষমতা বা ইচ্ছে অভিপ্রায় কোন টা-ই নেই আমার তাই সে বিষয় তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো ।

” কিন্তু আমার চোখের সামনে আমি যে তোমাকে অন্য কারো সাথে কথা বলতে দেখতে পারিনা । ”

” বিশ্বাস করতে পারো যে আমি কখনো এমন কোন কাজ করবো না । কোন মেয়ের সংস্পর্শে গিয়ে কিছু করার মতো ইচ্ছে নেই কখনো । ”

” সেটা সময় বলে দেবে । ”

” আচ্ছা তুমি যখন আমাকে কারো সাথে সহ্য করতে পারবে না তাহলে মিতুর সাথে বিয়ে করার কথা কি করে বললে ? ”

” পরীক্ষা করছিলাম তুমি কি বলো ? ”

” হায়রে কপাল । ”

” কপালের ঘাম গোপাল । ”

এমন সময় সজীব এর মোবাইল বেজে উঠলো তাই সজীব পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে বাড়ি থেকে মাহি কল করেছে ।

” রিসিভ করে বললো , কেমন আছো মাহি ? ”

” ভালো আছি ভাইযা , তুমি কেমন আছো ? কি করো তুমি ? ”

” আমিও ভালো , আজকে অফিসে গেছিলাম তাই ছুটি শেষে বাসায় যাচ্ছি তুই কি করিস ? ”

” বসে আছি ভাইয়া , একটা ভালো খবর আছে তাই উত্তেজিত হয়ে কল দিলাম । ”

” কি খবর ? ”

” বাবার মোবাইলে অনেক আগে থেকে অটো কল রেকর্ড চালু ছিল কিন্তু আমরা কেউ জানতাম না । আর বাবা তো সবসময় মোবাইল নিয়ে পরে থাকে না তাই জানা ছিল না । একটু আগে বাবার মোবাইলর মেমোরি কার্ড ফুল দেখাচ্ছে দেখে অবাক হলাম । তাই কি দিয়ে এতকিছু লোড হয়ে গেছে সেটা চেক করতে গিয়ে দেখি প্রায় অনেক দিন থেকে বাবার যাদের সাথে কথা বলে সবকিছুর রেকর্ড আছে । তাই আমি সাথে সাথে খুঁজতে খুঁজতে খুলনার যিনি বাবাকে কল দিয়ে ভয় দিতো তার রেকর্ড পাইছি ৭/৮ টা । আমার বিশ্বাস এগুলো দিয়ে তোমার মামলাটা আরো সহজ হতে পারে ভাইয়া । ”

” হুম খুবই ভালো কথা বলেছিস আর সত্যিই এটা একটা ভালো খবর । আমি বাসায় গিয়ে উকিলের সঙ্গে কথা বলে তারপর জানাবো । তুই রেকর্ড গুলো কপি করে আরো একটা মেমোরি কার্ডে রেখে দিস । একটা থেকে হারিয়ে গেলে যেন আবার পাওয়া যায় বুঝতে পারছো ? ”

” বুঝতে পারছি ভাই । ”

” হুম ঠিক আছে , আর আমি ফরিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে তাকে বলবো রেকর্ড নিয়ে উকিলের সঙ্গে দেখা করতে । বাবাকে যেতে হবে না তাহলে ভয়ে আবার সমস্যা হবে । ”

” ঠিক আছে তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে এখন মায়ের সঙ্গে কথা বলবে ? ”

” বাসায় গিয়ে আমি আবার কল দেবো , এখন সাথে বৃষ্টি আছে আর আমি তো রাস্তায় । ”

” ঠিক আছে ভাই , আল্লাহ হাফেজ । ”

|
|

একাকি রাজপথে নিঃসঙ্গ পথচলা পথের অন্তরালে নিস্তব্ধ দ্রোহের মায়াজালে শূন্যতার প্রতিশ্রুতি ।

” বৃষ্টি বললো , কি হইছে ? ”

” তখন সজীব সবকিছু বৃষ্টির কাছে বলতে বলতে হাঁটছে । ”

” সবকিছু শুনে বৃষ্টি বললো , আলহামদুলিল্লাহ আস্তে আস্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে মনে হয় । আমি জানতাম তুমি একদিন ঠিকই নির্দোষ প্রমানিত হবে । তোমার ঘাড় থেকে মিথ্যা মামলার বোঝা একদিন নেমে যাবে । ”

” সজীব কিছু না বলে চুপ করে রইলো । তাই বৃষ্টি আবার বললো , আজকে বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি একটু ঘুমিয়ে নেবো । গত দুই রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি তাই আজকে একটু টেনশন মুক্ত থেকে ঘুমাবো । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রিক্সা ডেকে দেবো ? ”

” আরে ধুর তা লাগবে না , তুমিও বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করো । সারাদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিউটি করে পা ব্যথা করবে অনেক । ”

” তোমার রান্না করতে হবে না ? ”

” নাহহ মা এই সপ্তাহে সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ডিউটি করে তাই বিকেলে মা রান্না করে রাখে । ”

” ওহহ আচ্ছা তাহলে বাসায় গিয়ে ঘুম থেকে উঠে কল দিও আমাকে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো আগামীকাল সকালে আবার দেখা হবে । ”

” বায় । ”

★★
★★

সজীব রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় ভাবছে বৃষ্টির ব্যবহার সত্যি সত্যি অদ্ভুত । একেকজনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তো একেক রকম । কারওটা সফট , কারও বেলায় খুবই অ্যাংরি , কারওটা কখনও কখনও স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়েও পরে । সে অধিকার খাটায় । ভালোবাসার সাথে প্রত্যাশার কোনো সম্পর্ক নাই । সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে সুখী করতে চায় , তার থেকে কোনো প্রতিদান আশা করে না । প্রত্যাশার চাপ আস্তে আস্তে ভালোবাসাকে মেরে ফেলে । মুখে মুখে সবসময় ভালোবাসি ভালোবাসি বলার চেয়ে আমার মনে হয় ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে পারা অনেক বড় ব্যাপার ।

” সজীব তার খালার কাছে কল দিল রিসিভ করে সে বললো , আমি তোকে এখনই কল দিতাম । কিন্তু তুই দিলি তাই ভালোই হলো , এখন কোই তুই ? ”

” ফ্রি পোর্ট মোড় থেকে সামনে আসতেছি । ”

” আচ্ছা বাসায় আয় তো বাপ , আমার মোবাইলে রিয়েস্টার দিছি তাই মোবাইল কেমন হয়ে গেছে । তুই একটু এসে সবকিছু ঠিক করে দিয়ে যা । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে আসছি তবে । ”

সিড়ি বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে সজীব দেখলো রুম ভিতর থেকে বন্ধ করা আর রুমের সামনে নতুন তিন জোড়া জুতা । মনে হয় সজীব এর খালার পরিচিত কেউ এসেছে রুমের মধ্যে । তাই মিনিট খানিক দাঁড়িয়ে থেকে দরজা টোকা দিল ।

একটু পরে দরজা খুলে গেল , কিন্তু দরজার সামনে তাকিয়ে সজীব এর মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল । কারণ যে দরজা খুলেছে সে হচ্ছে মিতু , মিতু দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।

” সজীব খুব আস্তে করে বললো , মিতু তুমি এখানে কি করে এলে ? ”

চলবে…

বিঃদ্রঃ– গল্প টা কেমন হয়েছে ? সবাই সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন । সেরা কমেন্ট কারীর নাম আগামী পর্বে প্রকাশ করা হবে ।

ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।

গত পর্বের সেরা কমেন্ট কারি ;-

(১) Ab Chaya
(২) Monira Khatun Munny
(৩) তানভীর আহমেদ আবির
(৪) mon pakhi mon pakhi
(৫) Khadiza Akhter mitu
(৬) angel moyna nishat
(৭) humayra Islam
(৮) Mohammad saikat
(৯) akib taqi
(১০) khobaid Hasan m.m

অভিনন্দন সবাই কে , আমাকে উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here