_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব>>_০৭

0
191

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব>>_০৭

– বৃষ্টি বললো , এখন কি হবে ? জেলা কারাগারে নিয়ে গেলে তো সবাই সচারাচর যেতে পারবে না । আর সেখানে নিয়ে গেলে তো কোর্ট থেকে রিমান্ড মঞ্জুর করে নির্যাতন করবে । ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে আপনাকে দিয়ে স্বীকারোক্তি নিতে চাইবে ।

– আমি বললাম , যখন পুলিশ আমাকে নিয়ে থানায় রওনা দিয়েছে তখনই বুঝতে পেরেছি জীবনটা থেমে গেছে । তাই সামনের দিকে যা কিছু হোকনা কেন আর কোন আফসোস নেই । শুধু মাঝে মাঝে উপরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়বো ব্যাস এতটুকু ।

– রকি বললো , আঙ্কেল কে কি জবাব দেবো ?

– সেটাও ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম ।

– তিনি যদি দেখা করতে আসেন তখন কি বলবি ?

– জানিনা ।

– ভেবে রাখ ।

– আচ্ছা তুই তাহলে যা আমি বৃষ্টির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি , বাবা যদি আসতে চায় তবে নিয়ে আয় ।

– ঠিক আছে ।

★★

রকি পিছনে ফিরে হাঁটা শুরু করলো , সে চাইলেই এখানে আসতে পারে আবার চাইলেই চলে যেতে পারে । কিন্তু আমি পারি না , বাস্তবতার বেড়াজালে বন্দী আমি সজীব রাস্তার পাশের ঠিক সেই দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের মতো । ইচ্ছে করলেই কিন্তু সেই ল্যাম্পপোস্ট তার স্থান পরিবর্তন করতে পারে না । রেলস্টেশনের মাঝে ল্যাম্পপোস্টের বাতি গুলো শত বছর হয়ে গেছে । মাঝে মাঝে তার আলো ঘোলাটে হয়ে যায় , দিনের পর দিন সেই ঘোলাটে বাতি জ্বলে আর নেভে । হঠাৎ করে কেউ একজন দয়া করে বাতি পরিবর্তন করে দেয় । পরিষ্কার আলো দেয় , তখন সেই ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতি হয়ে যায় চকচকে ।

– কি ভাবছো তুমি ? (বৃষ্টি)

– বাহহ চমৎকার । (আমি)

– তুমি করে ডাকলাম তাই ?

– হ্যাঁ ।

– হঠাৎ করে ইচ্ছে করছে তাই তুমি করে ডাক দিলাম , তোমার কি খারাপ লাগে ?

– না , বরং ভালো লেগেছে !

– ভালো লাগল কেন ?

– এতগুলো চিন্তার মাঝে তোমার কাছ থেকে এই অপ্রত্যাশিত সুখ পাবার জন্য ভালো লাগলো ।

– আমি আমার পিছনের কষ্ট গুলো ভুল থাকতে চাই সজীব ।

– সেটাই ভালো হবে , কারণ অতীত বারবার মনে করে শুধু কষ্টই বৃদ্ধি পাবে । কিন্তু কখনো সেই অতীত জীবনের সুখের কারণ হবে না , তাই অতীত জীবন এর কথা ভুলে গিয়ে নতুন করে পৃথিবী তৈরি করো । দেখবে জীবনের পরমানন্দ অনুধ্যানের আকাশে বাতাসে উদাস হয়ে বেড়াবে ।

– চলার পথে হোঁচট খেয়ে যদি পরে যাই তখন কে আমার হাত ধরে উঠাবে ? আমি তো তোমার ওই হাতটাকে কল্পনা করতে চাই আমার পাশে কিন্তু প্রকৃতি সবসময় আমার পছন্দের জিনিস গুলো কেড়ে নেয় কেন ? বলতে পারো সজীব ?

– জীবন কখনো কখনো সিনেমার চেয়ে আরো বেশি সিনেমাটিক হয়ে যায় ।

– জীবনের সাথে অভিনয় করতে করতে আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি । সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কালো পশমে ভর্তি একটা বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে বড্ড ইচ্ছে করছে আমার ।

– যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে অনেক রাত আমি ঘুমাতে পারিনি বৃষ্টি । তখন তো আমি তোমার নামটাও জানতাম না কিন্তু তবুও এক অদ্ভুত শীতলতা প্রতিনিয়ত ছুয়ে দিয়েছে আমাকে । বারবার তোমার ছবি গুলো ডিলিট করতে গিয়েও করতে পারি নাই , কতটা স্বপ্ন ছিল চোখে ।

– কাউকে একবার মন দিয়ে দিলে, সেটা আর ফেরত নেয়া যায় না সজীব । কারো জন্য মনের মধ্যে হঠাৎ একবার ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে গেলে , সেটা আর কখনো ধ্বংস করা যায়না । সবকিছুই সয়ে যেতে হয় শুধু নীরবে, কিছুই করার থাকে না !

– কিন্তু এখন সেই ভালবাসা অনেক ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে , আমার এই মামলার রায় কেমন হবে জানিনা । স্বপ্ন গুলো সব মৃত্যু বরণ করেছে , আসলে স্বপ্নহীন মানুষের কোন বর্ণ থাকে না , কিছু করার থাকে না । কিছু চাওয়ার থাকে না কোথাও যাবার থাকে না , কিছু দেবার থাকে না পাওয়ার থাকে না । কোন কষ্ট থাকে না , কোন স্বপ্ন থাকে না ।

– একটা কথা বলবো সজীব ?

– বলো !

– অতীতের ভালবাসা ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচা সত্যি সত্যি কি সম্ভব ?

– হয়তো সম্ভব আবার হয়তো না , তবুও আমরা মানুষ তাই সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে না হলে নিষ্ঠুর পৃথিবী তোমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে বৃষ্টি । তাই তুমি চাইলেই তাকে ভুলে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করো ।

– আমি মনে হয় পারবো না সজীব , আত্মীয় স্বজন সবকিছু ভুলেও কেউ একজনকে ভালোবেসেছিলাম মনের একান্তই গভীর থেকে । নিজের অনুভূতি না চাইতেই আমি পরেছিলাম তার কোমল কথা ও সেই অদ্ভুত চোখের মায়ায় । যা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় আমাকে স্বপ্নে জাগ্রত কিংবা কল্পনায় । কতদিন হয়ে গেলো প্রকৃতির নিয়মে তার সাথে যোগাযোগ নাই ! কই , ঘুম ছাড়া এমন একটা ঘন্টাও তো কাটেনি তার কথা না ভেবে ? হাজার চেষ্টা করেও তো তাকে জেগে থেকে কখনো চোখ থেকে সরাতে পারিনি । আজও ভালবাসি চুপিচুপি অসংখ্য দুখাকুল মনে , এর শেষ কোথায় তাও জানি না ।

– পৃথিবীতে মানুষের মাঝে অনেক ক্ষমতা আমরা পেয়েছি কিন্তু তবুও সৃষ্টিকর্তা আমাদের সব কিছু দেননি । এমন কিছু না কিছু তাঁর কাছে রেখেছেন কারণ তিনি যে জগৎ সংসারের সৃষ্টিকর্তা আমরা যেনো সেটা উপলবদ্ধী করতে পারি । নাহলে মানুষ যে তাকে ভুলে যাবে , তার কাছ থেকে দুরে গিয়ে বাঁচতে চাইবে ।

– কিন্তু নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে থাকলেই তো বাঁচা সম্ভব না , তোমাকে নিয়ে যদি বাঁচতে চাই তাহলে তুমি কি কাছে টেনে নেবে ? নাকি আমার পুরনো অতীত জীবনের গল্প নিয়ে তিরস্কার করে যাবে প্রতিনিয়ত ?

– আমার জীবনের অধ্যায়টা আপাতত বন্ধ করে রাখা হলো । চৈত্র মাসের ঝাঁঝাল রৌদ্রময় দিনগুলো ফিরে এসেছে তাই সেই খা খা জীবনে কোন শরতের বৃষ্টি নেই । আষাঢ়ের বাদল দিনের পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আড়ালে কদম ফুল আনা হবে না ।

– আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো ।

– কতদিন ?

– যতদিন না পাই !

– আমি একবার এক বড় ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম , এক আপু নাকি প্রতিদিন চিঠি লিখে আবার তা ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিতো । একদিন ছেঁড়া চিঠি জোড়া লাগিয়ে পড়ে নাকি অন্তর ছিঁড়ে যাচ্ছিল । কারণ সেই চিঠিতে লেখা ছিল , যেদিন তার প্রিয় মানুষটির সাথে প্রথম দেখায় কথা বলার কথা সেদিন দেখা হয়েছিল ঠিক , কথা হয়নি । একসিডেন্টে সেই ছেলে ওপারে চলে যায় , আর আপুটি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখে যায় সেও জানেনা তার অপেক্ষার শেষ কোথায় ? প্রিয়জন হারানোর কষ্টে এরা হারাতে পারেনা , এরা বেঁচে থাকে তবে সেটা তোমার আমার চোখে । নিজেদের কাছে তো এরা সেই কবেই মারা গেছে , সে খবর কেউ রাখেনা ! কেউ না !

– আমি জানি সজীব , এই পৃথিবী শুধু সামনের দৃশ্যটা দেখে , আড়ালের দৃশ্য টা কখনো দেখেনা কখনো না । যেমন মেহেদি পাতা দেখতে অন্য সকল পাতার মতো সবুজ কিন্তু তার ভিতরটা অন্য সকল পাতার মতো নয় । তার ভিতরটা রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে জন্ম থেকে , এ বিষয় মেহেদি পাতার কোন অভিযোগ নেই ৷ কারণ সে জানে এটা প্রকৃতির নিয়ম , তাই সে অদ্ভুত প্রকৃতির নিয়ম মেনে নিয়েছে। শুধু আমরা মানুষ সেটা পারিনা , কারণ মায়া ।

– বললাম , অনেক সময় পার হয়ে গেছে বৃষ্টি তুমি এখন বাসায় চলে যাও ৷

– বৃষ্টি বললো হ্যাঁ যাবো, কিন্তু আগামীকাল তোমাকে জেলা কারাগারে নিয়ে গেলে আর কবে দেখা হবে তার নিশ্চয়তা নেই ।

– সমস্যা নেই আমি খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পেয়ে তোমার কাছে আসবো । তোমার সাথে ভালবেসে পাশাপাশি হাটার বড্ড ইচ্ছে আছে আমার ।

– আমি তাহলে গেলাম , ভালো থেকো আর সবসময় মনে সাহস রেখো ।

– ঠিক আছে তুমিও ভালো থেকো সবসময় ।

– আরেকটা কথা সজীব !

– হ্যাঁ বলো !

– গতকাল শেষ রাতের দিকে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলো আমার , মনটা খুব খারাপ লাগছিল । বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষন । রাতের জোনাকি গুলো টিপটপ করে জ্বলছিল মাঝে মাঝে দু একটা উড়ে আসছিল । রাফসানের কথা বড্ড মনে পরেছিল আমার , হঠাৎ করে রাস্তায় তাকিয়ে দেখি ল্যাম্পপোস্টের নতুন বাতির আলোটা আবারও ঘোলাটে দেখাচ্ছে ৷ চোখ মুছে আবারও ভালো করে দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু সেই একই রকম দেখলাম । আজকে রাতে আবারও দেখতে হবে সত্যি সত্যি কি আলোটা ঘোলাটে হয়ে গেছে ?

– আচ্ছা ঠিক আছে দেখে নিও ।

– বায় ।

– বায় ।

( আমি জেলখানায় ৭ মাস ছিলাম , তারমধ্যে বৃষ্টির সাথে আর মাত্র একবার দেখা হয়েছিল । আর সেই দেখা হওয়াটা মোটেই সুখের ছিল না , কারণ আমার জীবনের কষ্টের যতগুলো দিন আছে তারমধ্যে বৃষ্টির সাথে দেখা হওয়া সেই দিনটা অন্যতম । কি হয়েছিল সেই দিন ? আচ্ছা গল্প বলতে বলতে যখন সেই দিনটা সামনে আসবে তখন বলবো যদি ভুলে যাই তাহলে পাঠক/পাঠিকা আপনারা মনে করিয়ে দিবেন ঠিক আছে ? )

★★

বৃষ্টি চলে গেছে আর আমি মেঘের অপেক্ষা করি , এ জীবন টা সত্যি সত্যি বড় অদ্ভুত । আগামীকাল সকালে যদি জেলা কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে যায় তাহলে আমার জীবনের খাতায় আসামির নাম উঠে যাবে । দোষ না করে দোষী হয়ে এখন প্রতিটি মুহূর্ত না চাইতেই চিন্তার মাঝে থাকতে হচ্ছে । যতই চাই চিন্তা করবো না ততই চিন্তা এসে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে । ধৈর্যের পরীক্ষার মধ্যে আরেক পরীক্ষা চলে আসলো , মানে বাবা আমার সামনে উপস্থিত । আমার মাথার ছায়া আমার বাবা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । মুখটা শুকনো শুকনো লাগে , মনে হয় সকাল থেকে কিছু খায়নি আমার বাবা । নিজের সন্তান যদি এতটা বিপদের মধ্যে থাকে তাহলে গলা দিয়ে খাবার নামার কথাও না । বাবার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল মাস খানিক আগে , বাবা দোকানের অনেক মালামাল নেবার জন্য বড় গাড়ি নিয়ে খুলনা এসেছিলেন । তখন বাবার সাথে দেখা হয়েছিল , সেবার আমি বাবার সামনে থেকে চলে আসার সময় বাবা অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন । আমি ইজিবাইকে উঠে যতদূর এসেছি , যতক্ষণ দেখা গেছে ঠিক ততক্ষণই বাবা দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল । বাবার চোখে সেদিন পানি ছিল কিনা জানিনা , আমি চোখের আড়াল হবার পরে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল তাও জানিনা । শুধু জানি মা-বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে আমার প্রতি তাদের সেই অজস্র নিঃস্বার্থ ভালবাসা । ছোট বোন মাহি তাদের সাথে আছে নাহলে হয়তো মাসে দু তিনবার চলে আসতো তারা ।

– বললাম , কেমন আছো বাবা ?

– বাবা আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললো , এসব কেমন করে হয়ে গেল সজীব ? তোকে কখনো ১৪ শিকের জানালাটার ভিতর দেখবো সেটা তো কখনো কল্পনা করি নাই । হ্যা রে সজীব ! এই আঘাত আমি কিভাবে মেনে নেবো বাবা ?

– বললাম , বাবা আমার কোন দোষ নেই , আমি কিছু জানিনা ।

– তাহলে এরা তোকে ধরে এনেছে কেন বাবা ? তাদের বল তোর মা-বাবা খুব কষ্ট পাচ্ছে । সকালে তোর এই খবর শুনে আমি হতবাক কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না । সন্দেহ ছিল কম কারণ দুইদিন তোর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি । আর মনের মধ্যে সন্তানের সবকিছু বিপদ টের পাওয়া যায় । তাইতো ছুটে এসেছি বাবা , বাড়ি থেকে খুলনা পর্যন্ত ৮৭ কিঃমিঃ পথ শুধু আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি ” আল্লাহ ঘটনা যেন সত্যি না হয় । ” কিন্তু আল্লাহ আমার প্রার্থনা শোনেনি , এক অসহায় বাবার চোখের মূল্য আল্লাহ কেন দিল না ?

– বাবা শান্ত হও , মা কেমন আছে ?

– তোর মাকে সকালে কিছু বলিনি , কিন্তু আমি চলে আসার পরে কে যেন বলে দিয়েছে । আমি তো সকালে বাজারে গিয়ে খবরটা পড়েই রওনা দিলাম । কিন্তু বাগেরহাট যখন আসলাম তখন মাহি কল দিয়ে বললো , তোর মা নাকি অসুস্থ হয়ে পরেছে । আমি অবশ্য বাজারের স্থানীয় ডাক্তার আজিম কে কল দিয়ে যেতে বলেছি ।

– তাহলে বাবা তুমি রাতের মধ্যে বাড়িতে চলে যাও , মাকে সময় দিতে হবে বাবা । আমার যা হোক একটা কিছু হবে বাবা , কিন্তু আমার জন্য মা যেন অসুস্থ হয়ে কিছু না হয়ে যায় । প্লিজ বাবা তুমি মা’কে সুস্থ রেখো ।

– তোর বন্ধু বললো তোকে নাকি কাল সকালে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ এসেছে ?

– হ্যাঁ বাবা , থানার মধ্যে তো দু দিনের বেশী রাখা ঠিক না তা তো জানো তুমি ।

– আমি কাল সকালে উকিল ধরে তোকে জামিনের ব্যবস্থা করবো ।

– লাভ নেই বাবা , হত্যা+ধর্ষন তাই মামলা বড় জোরালো । আর আমার প্রতি সকল দোষারোপ আছে এখনো তাই এত সহজে জামিন হবে না । তুমি এক কাজ করো , মেসের সেই খালার বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করো । তার মেয়ে তুলি যেন সুস্থ হয় ডাক্তারের কাছে সেই ধরনের চিকিৎসা করতে টাকা খরচ করো , এ ছাড়া উপায় নেই বাবা । তুলি যদি বেঁচে যায় তাহলে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমার মুক্তি পাবার সম্ভবনা আছে ।

– আচ্ছা ঠিক আছে আমরা তাহলে এখনই গিয়ে হাসপাতালে একটু যোগাযোগ করে আসি ।

– ভালো থেকো বাবা , বাড়িতে মায়ের খবর নিও, যদি পারো সম্ভব হলে বাড়ি চলে যাও ।

★★

পরদিন সকালে আমাকে সত্যি সত্যি তিনজন পুলিশ মিলে খুলনা জেলা কারাগারে নিয়ে এলো । এখানে অনেক বড় বড় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা আছে মনে হয়। পরিবেশ নতুন লাগছে , আর এই প্রথম কেন জানি ভয় ভয় কাজ করছে নিজের মধ্যে ।

প্রথম দিন পার হয়ে গেল কেউ দেখা করতে আসলো না । দ্বিতীয় দিনও পার হয়ে গেল কিন্তু তবুও আর কেউ আসলো না । কেন জানি একা একা খুব কান্না পেতে লাগলো আমার কিন্তু কান্না করতে পারি না ।

দ্বিতীয় দিন বিকেল আসরের খানিক পরে একজন পুলিশ আমার কাছে এলো । ব্যাচ লাগানো দেখে বুঝতে পারছি তিনি এস আই মিজানুর রহমান ।

– পুলিশ আমাকে বললেন , তোমার সহযোগী যারা যে যেখানে আছে সবার নাম ঠিকানা মনে করার চেষ্টা করো । আজ রাত ১০ টার পরে তোমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । ভালোয় ভালোয় যদি বলে দাও তাহলে তো সমস্যা নেই কিন্তু যদি মোড়ামুড়ি করো তাহলে রিমান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে বুঝতে পারছো ?

– বললাম , আমি কিছু করিনাই তাহলে আমার সাথে কেউ সহযোগী কিভাবে আসবে ?

– পুলিশ বললো , দোষ কেউ স্বীকার করে না তাই তো সরকার রিমান্ডের নিয়ম চালু করেছে ।

– আমাকে মেরে ফেললেও আমার বক্তব্য একই থাকবে , আর আমি আশা করি খালার মেয়ে তুলি সুস্থ হয়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে আমাকে মুক্ত করবে ।

– দুঃখিত মিঃ ?

– সজীব আমার নাম ।

– ওহহ আচ্ছা , দুঃখিত মিঃ সজীব , তুলি নামের সেই মেয়েটা আজকে সকালে হাসপাতালে মারা গেছে ।

( বিঃদ্রঃ- সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত , অকল্পনীয় , ভাবনার বাইরের পর্বটা আগামীকাল পাবেন ।)

চলবে….

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here