#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ২১
সজীব আর পিছনে ফিরে না তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছোট খালার বাসায় চলে গেল । খালার কাছে চাবি ছিল তাই তিনি বাসায় এসে রান্না শুরু করেছেন । সজীব রুমের মধ্যে প্রবেশ করে খাটের ওপর বসে রইলো । বৃষ্টির এমন কথা সে আশা করে নাই কারণ যে বৃষ্টি মিতুর কথা শুনে হিংসায় জর্জরিত হয়ে যায় সেই বৃষ্টি তাকে এমন কেন বলবে ? ভালবাসবে না আবার কারো সাথে কথা বলা সহ্য করতে পারবে না এটা কেমন কথা ? সজীব বুঝতে পারছে যে বৃষ্টি সজীবকে মনে মনে অনেক ভালবাসে , কিন্তু তবুও কেন অবহেলা করে সেটা একটা রহস্য ।
সজীব তো চাইলেই বৃষ্টিকে ভুলে থাকতে পারবে না কারণ বৃষ্টি তো একদিন দুদিন এর স্বপ্ন নয় । বরং তিল তিল করে জমানো ভালবাসার স্বপ্ন দিয়ে সাজানো একটা ভালবাসার রঙিন পাহাড় । সেই বৃষ্টিকে কেমন করে চোখের আড়াল করবে ? কিন্তু সত্যি সত্যি যদি বৃষ্টি সজীবকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে সজীব এর কি হবে সেটাই সজীব জানেনা । যে মানুষটি ছেড়ে যায় , সে ছেড়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে ঠিকই কিন্তু সব কিছু নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না । ভালোবাসা থেকে জীবনের বিমূর্ত সব ঘটনাবলীর সমগ্র ছেড়ে যাওয়া মানুষটির কাছেই রেখে যায় আর এজন্য কখনো ফিরে আসতে চাইলে এসবই দেওয়াল হয় দাঁড়ায় । বাকি জীবন টা দেওয়ালের ওপারের দীর্ঘ শ্বাসের ধ্বনি শুনেই কাটিয়ে দিতে হয় আর নিজস্ব আর্তনাদ “একদিন সে আমার ছিলো” । জ্বানালার কাচে বৃষ্টির ছাপের মতো পানি গড়িয়ে যায় জলচ্ছাপ রয়ে যায় যেন স্মৃতি হয়ে যায় ।
” খালা বললো , কিরে মন খারাপ ? ”
” নাহহ তেমন কিছু না , তুমি কখন আসলে বাসায় ?
” আধা ঘণ্টা হয়ে গেছে , তুই সকাল বেলা কখন পৌঁছাইছি ? ”
” তোমাকে যখন কল করেছিলাম তখন । ”
” মামলার কি হলো ? ”
” আছে আগের মতো , তবে মোটামুটি ভালো চলছে সবকিছুই । যদি আল্লাহ চান তাহলে আসল অপরাধী ধরা পরার সম্ভবনা আছে । ”
” যাক আলহামদুলিল্লাহ , তা বাড়িতে আর দু একটা দিন থেকে আসতি । ”
” গ্রামের অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে তাই মা-বাবা বললেন গ্রামের বাড়িতে না থাকাটা বেশি ভালো হবে । ”
” তা ঠিক বলেছে , তা এখন কি চাকরি করবি নাকি এভাবে থাকবি ? ”
” চাকরি নেবো তাহলে ব্যাস্ততায় সময় কাটবে । ”
” তাহলে আমি আমাদের অফিসে ব্যবস্থা করি ? ”
” নাহহ আপাতত আমার বন্ধু রকির সাথে ওদের অফিসে ঢুকতে পারি কিনা চেষ্টা করবো । নাহলে তো তোমার অফিসে গিয়ে চেষ্টা করবো । ”
” আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোর মন খারাপ , আচ্ছা আমাকে বলা যায় না কেন মন খারাপ ? ”
” হ্যাঁ যায় । ”
” বল তাহলে । ”
” তোমার মনে আছে , আমি ২০১১ সালে তোমার কাছে বেড়াতে এসে একটা মেয়ের প্রেমে পরেছি ? ”
” হ্যাঁ নীল শাড়ি পরে ছিল । ”
” ওর নাম নাজমা আক্তার বৃষ্টি , আমাদের কলেজ শিক্ষকের মেয়ে । ”
” বলিস কি ? কবে খুঁজে পেলি ?
” আমার জেলে যাবার আগের দিন । ”
” মেয়েটা জানে তোর মামলা ? ”
” হ্যাঁ , আরেকটা কথা হচ্ছে বৃষ্টি এখন চট্টগ্রামে আছে তার মা-বাবার সঙ্গে । সে আর তার মা জব করে গার্মেন্টসে আর স্যার স্টোক করে ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পরে থাকে । ”
” বাহহ ভালো তো , তাহলে আমার সাথে দেখা করিয়ে দেবি একদিন ? ”
” কিন্তু বৃষ্টি তো আমাকে ভালবাসতে চায় না । ”
” কেন ? অন্য কারো সাথে রিলেশন আছে ? ”
” ছিল কিন্তু এখন নেই , তবে আমাকে কেন পছন্দ করে না সেটা বুঝতে পারছি না । ”
” তোর মামলার বিষয় তাদের নিশ্চয়ই সমস্যা আছে তাই না ? ”
” নাহহ সে নিয়ে কোন সমস্যা নেই কিন্তু বৃষ্টি একটা অন্যরকম মানুষ তাই যতই তার কাছে যাবাে চেষ্টা করছি ততই দুরে সরে যাচ্ছে । পাহাড়ের নিচে দাড়িয়ে যেমন পাহাড় কে খুব কাছে মনে হয় আসলে পাহাড় তো ততটা কাছেই নেই । পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে আকাশকে আরো বেশি উপরে মনে হয় । বৃষ্টিও ঠিক ততটাই আমার কাছ থেকে দুরে , তাই ইচ্ছে থাকলেও তাকে ছুঁতে পারছি না । সবকিছুর মধ্যে থেকেও আমি আমার নিজের অনুভূতি তাকে বোঝাতে ব্যর্থ । ”
” এখন কি তাহলে বৃষ্টির অফিসে চাকরি নিবি ? ”
” হ্যাঁ সেইরকম ইচ্ছে আছে , তবে সেই ইচ্ছে পুরন করা একমাত্র আল্লাহর হাতে । তুমি কিছু মনে করিও না খালামনি , আসলে তোমার সাথে তো মন খুলে সবকিছু বলি তাই বললাম । ”
” সমস্যা নেই আমি কি কিছু বলছি নাকি ? ”
” ঠিক আছে দোয়া করো । ”
” তোর জীবনের সবকিছুর জন্য দোয়া করি সর্বদা সবসময়ই তাই একদিন দেখবি সকল দোয়া কবুল হবে । আর সেদিন তোর জীবনে কোন কষ্টের ছাপা থাকবে না , থাকবে শুধু আনন্দের অনুভূতি । ”
” অপেক্ষায় থাকবো সেদিনের । ”
” চলার মতো টাকা আছে ? নাকি লাগবে ? ”
” আছে কিছু টাকা , বাড়ি থেকে বাবার হতে আমি নিয়ে আসছি তবে খুলনা বেশি কাজে লাগে নাই তাই দিয়ে চলবে । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে আর লাগলে বাড়িতে জানানোর আগে সাথে সাথে আমাকে জানাবি , আমি না পারলে তখন বাড়িতে বলবি । ”
” ঠিক আছে । ”
|
|
রাতের ডিনার করে সজীব রকির বাসায় চলে গেল , সারারাত শুধু ভাবনার মাঝে কেটে গেল । মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল সাড়ে দশটার দিকে বৃষ্টি একবার কল করেছিল কিন্তু সজীব টের পায়নি । আর মাত্র একবার কল করার জন্য সজীব আর কলব্যাক করে নাই ৷ কারণ ওই একবার কল করা হয়তো ছিল তার লোক দেখানো সৌজন্য বজায় রাখা । যদি সত্যি সত্যি সজীব এর অভিমান ভাঙ্গানোর ইচ্ছে থাকতো তাহলে কলের পরে কল দিত । সজীব কে তখন বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করে কথা বলতে হতো , আে অপর প্রান্ত থেকে বৃষ্টি ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে সজীব কে বলতো ” অনেক ভালবাসি সজীব , তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না । ” কিন্তু তেমনটা হলো না তাই সজীব এর আর কল দিতে ইচ্ছে করছে না । সজীব ভাবছে সে হয়তো বৃষ্টির কাছে আগাছা হয়ে গেছে তাই তাকে পরিষ্কার করতে মিতুর প্রসঙ্গ টেনে আনে বৃষ্টি ৷ বৃষ্টিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে সজীব এর চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেল , তাই শত চেষ্টা করেও আর তাকে চোখে আনতে পারলো না । কিন্তু ছোটবেলা আমরা যেমন লুকিয়ে খেলা করতাম , তখন লুকিয়ে থেকে অপেক্ষা করতাম আমাকে খুঁজে বের করুক । যখন খুঁজে পেত না তখন কিন্তু অধৈর্য হয়ে হঠাৎ বেরিয়ে পরতাম আর অমনি ধরা পরতাম । ঠিক তেমন করে অপেক্ষা করতে করতে চোখে ঘুম চলে আসলো , আসার সাথে সাথে ক্লান্ত চোখ বন্ধ হয়ে গেল ।
এদিকে বৃষ্টি বাসায় এসে রান্না করলো মন খারাপ অবস্থায় কারণ যেই সজীবকে সজীবকে সে মনে মনে এতটা ভালবেসে ফেলেছে তাকে মন খুলে বলতে পারছে না । নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারার তীব্র বাসনা আর না বলা কথা বুকের মধ্যে জমা হয়ে গেছে । রাফসানের স্মৃতি হঠাৎ করে চোখে ভেসে আসে , সজীব এর চিন্তা তখন মাথা থেকে পালিয়ে যায় । শুধু এই একটা কারণে সজীবকে সে আপন করে কাছে টানতে চায় না । কারণ প্রকৃতি তার সাথে সবসময় অদ্ভুত বিচার করে , রাফসানকে এতটা ভালবাসার পরে যখন হারিয়ে গেছে । তখন সজীব এর বেলায় বৃষ্টি ঠিক একই ভয় পাচ্ছে কারণ ভালবাসা তার কাছে বড্ড পাঁজি ।
সুতরাং বৃষ্টি আর সজীব দুজনেই দুজনের প্রতি আলাদা অভিমান আর চিন্তা নিয়ে চুপচাপ রইল । কেউ কারো অভিমান ভাঙ্গার চেষ্টা করলো না তবে মনে মনে একে অপরের সাথে কথা বলার বাসনা নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রতিটি মুহূর্ত ৷ অপেক্ষা করছে হঠাৎ করে তাদের অপেক্ষা ভেঙ্গে যাবে , ভালবাসা দিয়ে ভরপুর হবে তাদের জীবন ।
পরেরদিনো সজীব বৃষ্টি কে কল দিল না আর বৃষ্টিল সজীব কে কল দিল না । কিন্তু দুজনেই মোবাইল বারবার চেক করে কারণ একটা মেসেজ যদি আসে কিংবা ছোট্ট করে একটা মিসড কল । নিষ্ঠুর প্রকৃতি দুটো অবুঝ মানুষের ভালবাসা বোঝে না , যদি বুঝতো তাহলে সে নিজেই একটা ব্যবস্থা করতো । মাত্র একটা মেসেজ কিংবা কল তাদের মিলিয়ে দিতে পারে কিন্তু সেটা আসছে না । ছোটবেলায় গল্পের বইয়ের মধ্যে পড়েছিলাম বিড়ালের হাত থেকে বাঁচতে তার গলায় ঘন্টা দিতে হবে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে “বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে ? ”
কথা ছিল বৃষ্টিদের অফিসে বেতন দেবে ৬/৭ তারিখে আর সজীব তখন চাকরিতে যোগ দেবে । কিন্তু সেদিন রকি আর সজীব এর বুঝতে সমস্যা হয়েছে কারণ সেই কোয়ালিটি ইনচার্জ বলেছেন যে ” একটা ছেলে রিজাইন দিয়েছে এবং সে ৩০ তারিখ থেকে আর আসবে না তাই সজীব ০১ তারিখ থেকে জয়েন করবে । ” অভিমানের এই দিনটা ছিল ৩০ তারিখ আর সেদিন বৃষ্টিদের লাইনের রিজাইন করা ছেলেটা বেতন নিয়ে চলে গেছে । রিজাইন দিয়ে চাকরি ছাগার প্রধান সুবিধা হচ্ছে ৬/৭ দিন অতিরিক্ত ডিউটি করা লাগে না । কিন্তু যারা রিজাইন না দিয়ে বেতন পাবার পরেরদিন থেকে আর আসে না তারা ৬/৭ দিন ফাও ডিউটি করে ।
বিকেলে অফিস ছুটির আগে কোয়ালিটি ইনচার্জ রকির কাছে কল দিয়ে বললো , “আগামীকাল যেন সজীব কে অফিসে নিয়ে যায় ।” রকি তো তখনই সজীব এর কাছে কল দিয়ে সবকিছু জানালো । সজীব কথাটা শুনে খুশী হয়েছে কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ।
গতকাল রাত থেকে সজীব এর সাথে রাগারাগি করার জন্য সারাদিন বৃষ্টি মন খারাপ করে ছিল । কোয়ালিটি ইনচার্জ মাঝে মাঝে এসে লক্ষ্য করেছেন কারণ তাদের আয়ত্তে যতগুলো মানুষ আছে তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক অপারেটর থাকে যারা বাস্তবিক আলাদা । তাই লাইনে আসলে দু একটা কথা বলে তারপর যেতেন , কিন্তু সারাদিন বায়ার আর উপর মহলের চাপের জন্য আর রসিকতা করার সময় থাকে না ৷
” তাই ছুটির ঘন্টা খানিক আগে যখন বৃষ্টির লাইনে এলো তখন বৃষ্টির সামনে গিয়ে বললো , সারাদিন ধরে দেখলাম মন খারাপ করে আছো । কারণ টা জানতে পারি ? ”
” বৃষ্টি বললো , তেমন কিছু না স্যার , এমনিতেই মন খারাপ লাগে কারণ পারিবারিক সমস্যা । ”
” দেখো বৃষ্টি , পারিবারিক সমস্যার জন্য তুমি আমি গার্মেন্টসের এত পরিশ্রম সহ্য করার পরেও চাকরি করি । খুব সখের বশে কিন্তু কেউ গার্মেন্টসে চাকরি করতে আসে না তাই না ? ”
” জ্বি স্যার । ”
” তোমার হিরো তো আগামীকাল সকাল থেকে শুরু করবে তার ডিউটি , তাও আবার তোমার লাইনে । ”
” মানে ? ”
” হাহাহা , সজীব নামের কাউকে চেনো ? ”
” জ্বি , কিন্তু আপনি ? ”
” সেটা সজীব এর কাছে জেনে নিও , আমি ভাবছি তোমরা দুজন একই লাইনে থাকলে ঠিক মতো কাজ করতে পারবে তো ? নাকি সারাদিন শুধু চোখে চোখে কথা বলতে বলতে পেরিয়ে যাবে ? ”
” তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই স্যার , তবে সে আমাকে পছন্দ করে । ”
” ওহহ আচ্ছা আমি তো সম্পুর্ন ঘটনা জানি না তাই বলে ফেলছি । ”
” সমস্যা নেই স্যার , আমি কিছু মনে করিনি । ”
” তাহলে সজীবকে অন্য লাইনে দিলে ভালো হবে ? ”
” সমস্যা নেই আমি তার সাথে যদি তেমন কিছু না বলি তাহলে সমস্যা হবে না মনে হয় । আর যদি সমস্যা হয় তাহলে আপনাকে আগে জানাবো স্যার ।
” ঠিক আছে তাই হবে , আসলে পিএম স্যারের ভাগ্নে রকির অনুরোধে এমনটা করা । ”
” সজীব সবকিছু থেকে অনেক ভালো একটা ছেলে স্যার , ওর মাঝে আপনি কখনো খারাপ কিছু পাবেন না আমি নিশ্চিত । ”
” তাহলে ভালবাসতে সমস্যা কোথায় ? ”
” পারিবারিক সমস্যার জন্য । ”
” আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা , কাজ করো । ”
” ঠিক আছে স্যার । ”
★★
★★
পরদিন সকালে সজীব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ রকির সাথে অফিসে গেল । আগে আরেকদিন এসেছিল আর কোয়ালিটি ইনচার্জ এর পরিচিত মোটামুটি তাই আধা ঘণ্টার মধ্যে সজীব কে ডিউটি করার জন্য লাইনে দিয়ে দিল । লাইন কোয়ালিটি হচ্ছে একজন মহিলা , তার নাম সালমা আক্তার । তিনি এই লাইনে ডিউটি করেন প্রায় ৪ বছর ধরে তবে মাঝে দুই মাস অন্য লাইনে ছিলো । সালমা আক্তার মানুষ হিসাবে খুব ভালো , কাজের ক্ষেত্রে ভুল হলে বেশি বকাবকি করে না । বরং আরো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন আর সেজন্য তার নিয়ন্ত্রণে থাকা কোয়ালিটি ও অপারেটর হেলপার সবাই তাকে পছন্দ করে । তবে তার এই ভালো মানুষির জন্য মাঝে মাঝে ম্যানেজার এর কাছে বকা শুনতে হয় । কারণ লাইনে কাজ খারাপ হলে তার দায় সর্বপ্রথম লাইন কন্ট্রোলার এর উপর পরে । সালমা আক্তারের বিয়ে হয়েছে ৭ বছর আগে , পাঁচ বছরের ছোট একটা মেয়ে আছে তার । মেয়ে বাসায় দাদির কাছে থাকে আর তিনি এবং তার স্বামী দুজনেই চাকরি করে ।
সালমা নিজের ফাইলপত্র ঠিক করে সজীবকে প্রায় ঘন্টা খানিক ধরে প্রাথমিক কাজ বুঝিয়ে দিল । আর তারপর সজীবকে লাইনের ভিতরে নিয়ে একজন সিনিয়র অপারেটর এর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দু তিনটা প্রসেস চেক করতে বললো । আর সিনিয়র অপারেটর রাশেদকে বললো আরো কিছু কাজ যেন আস্তে আস্তে বলে দেয় । সালমা সজীবকে বললো , নিজের মধ্যে কোন জড়তা না রেখে সবাইকে বন্ধু মনে করে কাজে মনোযোগী হও তাহলে দেখবে কখনো মন খারাপ হবে না আর কাজ করতে ভালো লাগবে সবসময় । এ কথা বলে তিনি ফিনিশিং এ চলে গেল কারণ সেখানে নাকি কিছু খারাপ বডি জমা আছে সেগুলো সারতে হবে ।
সজীব যেখানে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি সেখান থেকে আরো হাত বিশেক পিছনে তবে মরিয়ম কাছাকাছি আছে । নতুন কেউ অফিসে এলে সবাই প্রথম প্রথম তাকিয়ে থাকে আর সজীব তো মাশাল্লাহ মোটামুটি দেখতে অনেক ভালো । যেমন চেহারা তেমন উঁচা লম্বা আর তাছাড়া কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্টে সবাই একটু স্মার্ট থাকতে হয় ৷ কারন কোয়ালিটি শব্দের অর্থ হচ্ছে ” গুনগত মান ” তাই যে মানুষ গুনগত মান চেক করবে সে যদি গুনগত না হয় তাহলে ব্যাপারটা হাস্যকর ।
মরিয়ম মেশিন বন্ধ করে একবার এসে কিছুক্ষণ কথা বলে গেল , ভাব দেখে মনে হয় যেন সজীব আসাতে বৃষ্টির চেয়ে সে বেশি খুশি হয়েছে । বৃষ্টি সজীব কে দেখেছে কিন্তু সেই অভিমান মনের মধ্যে রেখে মাঝে তাকিয়ে থাকে ঠিকই কিন্তু কাছে গিয়ে কথা বলার ইচ্ছে নেই ৷
সজীব এর পাশে সিনিয়র অপারেটর রাশেদ ও অপজিটে একটা মেয়ে তার নাম মৌসুমি । মৌসুমি কিছুক্ষণ দু একটা কথা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে আবার মাঝে মাঝে বডির ভুল দেখিয়ে দেয় । রাশেদ কে আর তার বাড়তি দায়িত্ব পালন করা লাগলো না কারণ সালমা আক্তার সজীব কে দেখানোর যে দায়িত্ব দিছে সেটা মৌসুমি পালন করছে । আশ্চর্য ।
বৃষ্টি লক্ষ্য করলো যে আস্তে আস্তে ওই মেয়ের সাথে কথা বেড়েই চলেছে । রাগে গজগজ করতে করতে ভাবলো যে আর ওদিকে তাকাবে না কিন্তু নিজের চোখ সংযত রাখতে পারলো না । আবার নিজের স্থান ছেড়ে কাছে গিয়ে কথা বলার ও সুযোগ নেই তাই মনে মনে একরাশ বকাঝকা সাজিয়ে রাখলো । লান্সের সময় কাছে গিয়ে সবগুলো তাকে বলবে , শক্ত করে জানিয়ে দেওয়া হবে যে অফিসের মধ্যে থাকতে হলে এসব করা চলবে না ।
বেলা বারোটার দিকে সজীব কে এডমিন রুমে নিয়ে গেল কাগজপত্র সবকিছু ঠিক করার জন্য । তখন বৃষ্টি একটু শান্ত হয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারলো । আর সজীব এডমিন রুমের কাজ শেষ করতে করতে লান্সের সময় হয়ে গেল । তারপর রকির সাথে ক্যান্টিনে গিয়ে অফিসের তরফ থেকে লান্স করে আসলো ।
লান্স করা শেষ করে ওরা দুই বন্ধু সজীব এর ফ্লোর এর দক্ষিণের সিড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল । বৃষ্টি ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে লাইনে এসে আগে সজীব কে খুঁজলো তারপর কোন যায়গা না পেয়ে যখন সিঁড়ির সামনে গেল তখন ওদের দেখতে পেল ।
” সামনে গিয়ে বললো , রকি ভাই আপনি উপরে যান সজীব এর সাথে আমার জরুরি কথা আছে । ”
” সজীব বললো , না রকি তুই থাক কারণ এমন কোন গোপনীয় কথা নেই যে তোর সামনে বলা যাবে না । ”
” রকি বললো , কি হইছে ? রাগারাগি চলে নাকি ? ”
” সজীব বললো , যে মানুষ রাগের মূল্য বোঝে না তার সাথে রাগ করা অর্থহীন । ”
” বৃষ্টি বললো , রকি ভাই তাকে বলে দেন যে তার রাগ ভাঙ্গাতে বৃষ্টি এখানে আসেনি । ”
” রকি বললো , তাহলে কেন ? ”
” বৃষ্টি বললো , তাকে বলে দিবেন যে আমার লাইনে ডিউটি করতে হলে মেয়েদের সাথে দাঁত বের করে হেসে হেঁসে কথা বলা যাবে না । ”
(মামলা খাওয়ার ভয়ে হার্ট অ্যাটাক এর পর্ব দিচ্ছি না)
চলবে….
বিঃদ্রঃ– গল্প টা কেমন হয়েছে ? সবাই সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন । সেরা কমেন্ট কারীর নাম আগামী পর্বে প্রকাশ করা হবে ।
ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।
অভিনন্দন সবাই কে, আমাকে উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)