#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ২৪
ঝড় হওয়ার পুর্ব মুহুর্তে ধরণী যেমন কালো আধারে ঢেকে যায়,কিশোরী মন কালো আধারে ঘুটঘুটে অন্ধার নেমেছে।তার মন মস্তিষ্ক কিছু ভাবতে পারছে না।প্রথমে বড় বোনকে বিদায়, বিদায় দেওয়ার পরই প্রিয়জনের দেওয়া কষ্ট মস্তিষ্ক যেন বহন করতে পারল না।লুটিয়ে পড়লো ছাদের উপর।কিঞ্চিত শব্দ হতে ছাদে খানিক দুরে দাড়িয়ে থাকা দুজন পিছু ফিরে তাকালো।মিথিলাকে এই অবস্থায় দেখে একজনের হৃদয়ে যেন রক্তক্ষরণ হলো।সে দৌড়ে এসে হাটু মুড়ে বসে পড়লো মিথিলার সামনে।মিথিলার মাথাটা ওর কোলে নিয়ে ডাকতে থাকল।কিন্তু মিথিলার কোনো সাড়া নেই!তার পাশেই একজন ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে দুজনকে দেখে যাচ্ছে!
———————————————–
মিথিলার রুমে ভির জমেছে।ডাক্তার ডাকা হয়েছে।ডাক্তার মিথিলাকে দেখে ঔষুধ দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ আগে চলে গেছে।মিথিলার এখনো জ্ঞান ফিরেনি।সবাই চিন্তিত মুখে মিথিলার রুমে দাড়িয়ে আছে।মিনহাজ হক মিথিলার একপাশে বসে আছেন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।অন্যপাশে তিতলি হক বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন।
বেশ খানিকক্ষণ যেতে মিথিলা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়।সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে তিতলি হকের দিকে চায়।তিতলি হক জ্ঞান ফিরতে দেখে মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বলে,,
“এখন কেমন লাগছে মা?”
মিথিলা ক্ষীণস্বরে বলে, “হুম একটু ভালো লাগছে!”
“ছাদে কেন গিয়েছিলে?”
মিনহাজ হকের কথা শুনে মিথিলা বামে মাথা ঘুরিয়ে মিনহাজ হকের দিকে তাকায়।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, “এমনি বাবা!হঠাৎ করে চলে গেছিলাম।যাওয়াটা ঠিক হয়নি বোধহয়!”
মিথিলা রুমে উপস্থিত থাকা সবার দিকে একবার চোখ বুলায়।নীলা এককোণে দাড়িয়ে ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল।মিথিলা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে পিছনে দাড়িয়ে থাকা ইয়াশের দিকে তাকায়।ইয়াশও মিথিলার দিকে তাকিয়ে ছিল।দুজনের দৃষ্টি এক হতে মিথিলা শক্ত কন্ঠে বলে ওঠল,
“ভালো লাগছেনা আমার।তোমরা সবাই একটু বাইরে যাও।আমি একা থাকতে চাই!”
তিতলি হক মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, “এই অবস্থায় তোকে একা রেখে সবাই চলে যাবো?”
“তোমরা এতজন এখানে থাকলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বো।তাই বলছি একটু একা থাকতে দাও।আর যাওয়ার সময় দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে যেও!”
মিনহাজ হক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,, “আচ্ছা ও যখন একা থাকতে চাচ্ছে থাকতে দাও!সবাই চলো এখন।”
সবাই একে একে বের হয়ে যায়।শেষে ইয়াশ,তিতলি হক থেকে যায়।ইয়াশকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিথিলা বলে ওঠে,
“মা আমি সবাইকে ঘর থেকে বের হতে বলেছি!কেউ যেন ঘরে না থাকে?”
মিথিলার কথা শুনে তিতলি হক ইয়াশের দিকে তাকায়।ইয়াশ তখনও স্থির দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে ছিল।তিতলি হক সেটা দেখে ইয়াশের কাছে যায়।ওর কাঁধে হাত রেখে ডাকে,, “ইয়াশ!”
ডাক না শুনে ইয়াশ তখনও মিথিলা পানে তাকিয়ে ছিল। মিথিলা এবার মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।তিতলি হক ইয়াশকে পুনরায় বলে,,
“ইয়াশ,চলে,,!
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে ইয়াশ হনহন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।তিতলি হক মেয়ের দিকে একবার তাকায় একবার ইয়াশের দিকে।সে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে দুজনের মধ্যে।
ইয়াশ যেতে তিতলি হক বেরিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে যান।মিথিলা মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়।ফের সামনে ফিরে উপরের দিকে তাকাতে ছাদের ঘটনাটা চোখের সামনে স্পষ্ট হয়।দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে দু চোখ বেয়ে।উপরের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে,
“তুমি আমাকে এভাবে কেন ঠকালে?ভালো যখন নাই বাসো তাহলে বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি কেন বললে?কেন বললে ভাইয়া?এভাবে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ?কেন?”
———–
এতক্ষণ কান্নার পর সবে চোখটা লেগে এসেছিল মিথিলার।মাথায় কারো হাতের অস্তিত্ব টের পেতেই মিথিলা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়।সামনে ইয়াশের মুখটা পরিষ্কার হতে ও লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।রাগী চোখে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
ইয়াশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে শান্ত কন্ঠে বলে,, “দেখ মিথিলা তুই তখন ছাদে যা দেখেছিস,,, ”
সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে মিথিলা রেগে বলে,, “ছাদে তোমরা যা ইচ্ছে তাই করছিলে এটা এখন আমাকে বলতে এসেছো কেন?আমি কি তোমাদের নিয়ে একটা কথা বলেছি নাকি এসব শুনতে চেয়েছি?”
“দেখ মিথিলা কোনো কিছু না জেনে উল্টাপাল্টা ভাববি না।আর অনেক সময় দেখায় অনেক ভুল থাকে।তুই যেটা দেখেছিস হয়ত সেটা ঘটেনি?”
“কি ঘটেনি?কি ঘটার কথা বলছো তুমি?আর আমি যা দেখেছি ঠিক দেখেছি।আমার দেখার মধ্যে কোনো ভুল নেই!”
“তুই এতটা শিওয় হয়ে কিভাবে বলছিস?”
“দেখো ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।প্লিজ এখান থেকে চলে যাও!নাহলে,,”
“নাহলে কি করবি তুই?”
“সবাইকে ডাকবো!”
“ডাক,ডেকে কি বলবি তুই?”।
“দেখো ভাইয়া যাও এখান থেকে আমি কোনো ঝামেলা করতে চাচ্ছি না!”
“কি ঝামেলা করবি তুই?”
“কিছুনা! তোমার সাথে নীলার বিয়ে ঠিক হইছে নীলাকে বিয়ে করে নেও।নীলাও তোমাকে ভালোবাসে আর তুমিও তো নীলাকে ভালোবাসো!”
মিথিলার কথা শুনে ইয়াশ কিছুক্ষণ নীরব থাকল।মিথিলার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি নীলাকে বিয়ে করলে তুই খুশি হবি?”
মিথিলা ইয়াশের থেকে চোখ ফিরিয়ে বলে,, “হবো!”
“কষ্ট পাবিনা?”
“কষ্ট পাবো কেন?যেখানে তুমি নীলাকে ভালোবাসো তোমার সাথে নীলার বিয়ে হবেই আগে হোক বা পরে।”
“আচ্ছা তুই কি চাস আমি নীলাকে বিয়ে করে নি?”
“একটা কথা আর কতবার বলবো?”
“আচ্ছা বুঝতে পারছি!”
ইয়াশ কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।মিথিলা ইয়াশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে চুপ করে।সে হয়তো ইয়াশকে হারিয়ে ফেলছে!
——————————————-
তিতলি হক দোটানায় ভুগছেন।ওদিকে মেয়ের ওমন হাল।এদিকে স্বামীর শরীরটাও খারাপ।সে যে ইয়াশ আর মিথিলার বিষয়টা মিনহাজ হককে বলবে সেটা আর বলতে পারছেন না।দেখা যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু শুনে মিনহাজ হক আরো অসুস্থ হয়ে পরবেন এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।কিন্তু তার মনও যে মানছে না।সবকিছু কেমন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে।এদিকে বড়দের মধ্যে সব কথা জানাজানি হয়ে গেছে মিথিলার বিয়ে নীলার সাথে ঠিক করা হয়েছে।বাড়ির সবাই ইয়াশ আর মিথিলার কথাটা জানলেও তুলকালাম বাধবে।রুকমাও নিশ্চিত মানবে না এ সম্পর্ক।সে তো তার ভাইয়ের মেয়ের সাথে তার চেখের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।তিতলি হক এসব ভাবছিলেন আর রুম জুড়ে পায়চারি করছিলেন।মিনহাজ হক এটা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছেন।এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলল,
“তুমি এভাবে রুম জুড়ে পায়চারি করছো কেন?মিথুর জন্য টেনশন করছো?”
স্বামীর কথা শুনে তিতলি হক সেদিকে তাকায়।কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।আস্তে আস্তে পা ফেলে স্বামীর পাশে গিয়ে বসে।কিছুক্ষণ নিরব থেকে মিনহাজ হকের হাত ধরে বলেন,,
“তোমাকে একটা কথা বলবো,রাগ করবে না।আর উত্তেজিত হবে না।এমনি তোমার শরীর ভালোনা।”
মিনহাজ হক স্ত্রী্র মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,, “আগে বলোতো!”
তিতলি হক এবার কিছুটা সময় নিয়ে বলে ওঠেন,, “ইয়াশ আর মিথিলা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।দেখো আজকে মিথিলার এই অবস্থা হয়ত দুজনের ভুল বুঝাবুঝির জন্যই।জানিনা দুজনের মধ্যে কি হয়েছে তবে এটুকু বলতে পারবো দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে।দেখেছি আমি!”
তিতলি হকের কথা শুনে মিনহাজ নির্বাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তিতি হকের দিকে।প্রশ্ন করে,,
“তুমি এসব কবে জানলে?”
“মিহুর বিয়ের কয়েকদিন আগে!”
“আমাকে বলোনি কেন তাহলে?”
তিতলি হক এবার আমতা আমতা করে বলেন,, “না মানে, বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবাই ব্যস্ত ছিল তাই আর বলা হয়নি!”
মিনহাজ হক কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন, “কিন্তু এখন এসব বলে লাভ কি?ইয়াশের বিয়ে তো,,”
সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগে তিতলি হক বলেন,, “তবুও তুমি একটু মেজো ভাইকে বলে দেখো না।যদি,দেখো ওরা দুজন দুজনকে ছাড়া ভালো থাকবে না।এখনি দেখেছো আমার মেয়েটার কি অবস্থা!”
“আচ্ছা আমি ভেবে দেখবো!”
তিতলি হক আর কথা বাড়ান না।স্বামী তার যেটা ভালো বুঝে সেটাই হবে।
————————————–
“মা-বাবা আমি কালকের মধ্যেই বিয়ে করতে চাই।”
রুকমা হক, ইকবাল হক দুজনে ইয়াশের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।কারকে বিয়ে করবে মানে কি?ইকবাল হক ইয়াশকে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই,,,
চলবে,, ইন শা আল্লাহ 🍁