#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_২৭
মে মাস। কাঠফাটা রোদ্দুরে সবকিছু পুড়ে যায়। ফ্যান ছাড়া এক মুহূর্তও টেকা দায়! অথচ বাসায় এখন বিদ্যুৎ নেই। বিনা নোটিশে সে লাপাত্তা। সেই কোন কাক ডাকা ভোরে চারুর ঘুম ভেঙেছিল, চোখ মেলে দেখে সিলিংয়ে চুপটি মেরে আছে ফ্যানটা। সারা শরীর ঘামে ভিজে চিপচিপে! কি অবস্থা!
আজকাল বিদ্যুত না থাকলে কি চলা যায়? একঘণ্টার জন্য হলেও একটা কথা ছিল, কোনোমতে ম্যানেজ করে নেয়া যেত। কিন্তু এ তো সারাদিনের ব্যাপার! বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষেরই মেজাজ এখন চড়া। একেকজন একেকটা কাজ করছেন আর বারেবারে গাল দিচ্ছেন বিদ্যুত অফিসের লোকদের। চারু বিরস মুখে সোফায় বসে। ওড়নার প্রান্ত নাচিয়ে বাতাস করতে ব্যস্ত নিজেকে। এমন সময় দরজায় ‘ঠকঠক’ শব্দ হলো।
একঝলক আশেপাশে চেয়ে নিলো চারু। এই গনগনে গরমওয়ালা ভর দুপুরে বাড়ির সক্কলে এখন ভাতঘুমে মগ্ন। দরজার ঠকঠকানি কি কারো কানে যাবে? ওকেই উঠতে হবে ভেবে এগোলো দরজা খুলতে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার অথচ আগন্তুকের যেন ধৈর্যের বড্ডো অভাব! নয় তো কাজের ভীষণ তাড়া! যেভাবে আওয়াজ করছে!
— “তুই?”
দরজা খুলতেই ছোট বোনের মুখখানি দেখে বিস্ময়ে প্রশ্ন করলো চারু। অনুর কি হলো কে জানে! কিছু না ভেবেই হঠাৎ জাপটে ধরলো ওকে। বহুদিন পর কোনো প্রিয় মানুষকে দেখে আমরা যেমন আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠি, উচ্ছ্বাসে জড়িয়ে ধরি একে-অপরকে; ঠিক তেমনি করে! চারু খুব অবাক হলো। অনু নিজেও! আচমকা এমনটা করবে সে হয় তো নিজেও ভাবে নি।
সম্বিৎ ফিরতেই ওকে চট করে ছেড়ে দিলো। খানিক তফাতে দাড়িয়ে অপ্রস্তুত কণ্ঠে শুধালো,
— “কেমন আছিস?”
— “আমি ভালো। তুই?”
চারু মিষ্টি হেসে জানতে চাইলো।
— “এইতো—”
লাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল অনু। দরজা আটকাতে গিয়ে চারুর প্রশ্ন,
— “একা যে? মাহাদ কই?”
— “আসে নি।”
— “সে-কি! কেন রে?”
বোনের সরল কথায় হুট করেই বিরক্ত লাগতে শুরু করলো অনুর। ত্যক্ত গলায় বললো,
— “কেন? আমি একা আসতে পারি না? তোর কোনো আপত্তি আছে? থাকলে বল?”
আকস্মিক এমন হওয়ায় চারু ভড়কালো। মাত্রই তো ভালো ছিল মেয়েটা, আবার রাগ করছে কেন? আশ্চর্য! ওর কি কোনদিন পরিবর্তন হবে না?
একদম হুট করেই বাপের বাড়িতে আসা হলো অনুর। ও যে আসবে আগে থেকে কেউ জানতো না। একটা কলও করে নি। মন চেয়েছে, চলে এসেছে। বোধ হয় মাহাদকেও জানায় নি। মেয়ের কাণ্ড দেখে বাড়ির সবাই যেমন খুশি তেমন দুশ্চিন্তাতেও পড়লেন। এমন করে কেউ? পথে কিছু একটা হয়ে গেলে?
আজমীর রাজা কড়া সুরেই ধমকালেন ওকে। আহাদ রাজাও নাতনির আচরণেও সন্তুষ্ট নন বোঝা গেল। অনু অবশ্য সেসব রাগের ধারে-কাছেও গেল না। সে তার মতো রইলো। মা-চাচিদের আদর আপ্যায়ন সাদরে গ্রহণ করলো। রিংকু – টিংকুর সঙ্গে ঝগড়া করলো। এবং খুব সুন্দর করে চারুকে এড়িয়ে গেল। সবসময়ই অবশ্য সে চারুকে এড়িয়ে চলে, তবে ক্ষেত্র বিশেষে সামনে পড়ে গেলে খোঁচা মারতে ভোলে না। এবার তা হলো না। বড় বোনের প্রতি মনে তীব্র বিদ্বেষ পোষণ করলেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো না!
অনুর পাঁচ মাসে পড়েছে। গর্ভধারণের লক্ষণ শরীরে স্পষ্ট হচ্ছে ধীরে ধীরে। ওর দিকে তাকালে প্রথমেই নজরে আসে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু উদর। সেই ফোলা পেটটা স্বগর্বে জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্বের কথা। বলছে,
‘দেখো আমার ভেতরে কি আছে! একটি ছোট্ট ভ্রূণ, একটি ছোট্ট প্রাণকে আমি সযত্নে আগলে রাখছি আমার ভেতরে!’
নিজে কখনো মা হতে পারবে না চারু। এই নির্মম সত্যতা মানতে কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছে সে। এমতাবস্থায় ছোট বোনের মাতৃত্বের সংবাদ শুনে তার ভেতরে কোনো খারাপ লাগা কাজ করে নি। বরং খুশি হয়েছে। সে নিজে যা পারবে না, অপারগ-অক্ষম, অন্য কেউ সেটা পারলে হিংসে করাটা ওর ধাঁতে নেই। এ যে ওর স্বভাব বিরুদ্ধ। তবে হ্যাঁ, অনু যখন তার ফোলা পেটটা নিয়ে হেঁটে বেড়ায় সারা বাড়িময়, ঘুরে-ফিরে ওর চোখের সামনে আসে তখন কেমন অদ্ভুৎ বিষাদের অনুভূতি জাগে ওর। কোনো দ্বেষ নেই, কোনো ঈর্ষা নেই। দুঃখী চারুর প্রবল দুঃখে ব্যথিত মনে শুধু একটা অব্যক্ত হাহাকার ভেসে বেড়ায়। না চাইতেও মাঝেমাঝে মনে হয়,
কেন এমন হলো? সৃষ্টিকর্তা কেন তাকে পূর্ণতা দিলেন না?
___
আনিকার জব পার্মানেন্ট হয়ে গেছে। ট্রেনিংয়ের জন্য এতদিন ধরে হেড অফিসেই ছিল তার ডেস্ক। আজ সকালে এমডি স্যার তাকে কেবিনে ডেকে পাঠালেন। ট্রান্সফার নোটিশটা হাতে দিয়ে জানালেন, তার বদলি হয়ে যাচ্ছে। সিলেটের মৌলবীবাজার জেলায়। লেটার হাতে নিয়ে আনিকা হতভম্ব!
অতো দূরে সে যাবে কি করে?
আনিকার বাড়ি ঢাকার কাছেই এক ছোট্ট মফস্বল শহরে। জন্ম-বেড়ে ওঠা — সবই সেখানে। কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ঢাকায় আসে। তারপর এই চাকরি। যদিও ওর পরিবার সায় দিচ্ছিল না তাতে। মেয়ে মানুষের চাকরী করবার দরকার কি? বিয়ে দিলেই তো সব শেষ। সংসার সামলাতে হবে না?
তবুও একপ্রকার জেদ করেই আনিকা এই চাকরিটা নিয়েছে। এতো কষ্ট করে করা লেখাপড়া, ডিগ্রি অর্জন — তার কি কোনো দাম থাকবে না? তাছাড়া স্বাবলম্বী হওয়া তো খারাপ না। ছেলে হোক বা মেয়ে স্বাবলম্বী সকলেরই হওয়া উচিৎ। ইত্যাদি ইত্যাদি বুঝিয়ে সে পরিবারকে রাজি করিয়েছে। কিন্তু এখন চাকরির জন্য যদি সুদূর পূর্ববঙ্গের মৌলভীবাজারে যেতে হয় তবে কি করে মানাবে তাদের? ওর আব্বা তো সাফ মানা করে দেবেন। বেশি কিছু বললে হয় তো ঘাড় ধরে বিয়ের পিরিতেও বসাতে দেরি করবেন না!
চিন্তিত মুখে ক্যান্টিনে বসে এসবই ভাবছিল মেয়েটা। হাতে ধরা কাপটায় কোন আমলে চা ঠাণ্ডায় পানি হয়ে গেছে ওর হুশ নেই। চটকা ভাঙলো সৌভিকের কথায়,
— “আপনি রোজ এই টেবিলটা দখল করেন কেন? আমার পছন্দের বসবার জায়গা — এটা ছাড়া অন্য কোথাও বসতে কি হয়?”
অভিযোগ নয়, নেহাৎ ঠাট্টা। আনিকা সেসব বুঝলো না। কাপ হাতে তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলো,
— “স্যরি, স্যার। আপনি এই জায়গা পছন্দ আমি জানতাম না। আসলে—”
হড়বড় করে আরও কিছু বলবে, ওকে থামিয়ে দিলো সৌভিক। অপর পাশের চেয়ার টেনে বসলো দ্রুত। ওকেও ইশারা করলো বসতে,
— “বসুন। সবসময় এমন অদ্ভুৎ আচরণ করেন কেন আপনি?”
ধপ করে বসে পড়লো আনিকা। সিনিয়রের দিকে চেয়ে মিনমিন করে বললো,
— “কি করেছি আমি, স্যার?”
সেই সুর এতটাই নিম্নগামী যে সৌভিকের কান পর্যন্ত পৌঁছলো না। সে নিজের মতো বললো,
— “আমার দেখা সবচেয়ে অদ্ভুৎ মেয়ে আপনি। প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি খুব খামখেয়ালী, উদাস, উড়নচণ্ডী। ব্যাপারটা একদমই তেমন নয় বটে, কিন্তু খুব ব্যতিক্রমও নেই। আপনার কাণ্ড কীর্তি দেখে আমি অবাক হতে বাধ্য! এমন কেন আপনি?”
আনিকার মন ভার হলো। সে আসলে এমন কেন সে তো নিজেও জানে না। চরিত্রে একটু উদাসীন, খামখেয়ালী বলে কতো মানুষই তাকে রোজ এ প্রশ্ন করে। সে উত্তর দেয় না, কিংবা দিতে পারে না।
আজও মুখ নামিয়ে চুপ করে বসে রইলো সে।
সৌভিক কিন্তু চুপ করলো না। প্রসঙ্গ পাল্টালো। আজ তার মনটা বেশ ফুরফুরে। তাই কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব। বন্ধুবর নিখিল নেই। অফিসিয়াল কাজে বরিশাল গিয়েছে দু’দিন হলো। কথা বলতে তাই আনিকার কাছেই এলো সে!
— “শুনলাম, পার্মানেন্ট হয়েছেন? ট্রিট দেবেন না?”
হাসি মুখে জানতে চাইলো। আনিকার মুখটা মলিন হয়ে গেল আরো,
— “চাকরীটা বোধ হয় ছাড়তেই হবে, স্যার। সেটার ট্রিট নেবেন?”
— “মানে? বুঝলাম না ঠিক—”
— “ট্রান্সফার হয়েছে আমার। সকালে লেটার পেলাম।”
— “ভালো তো। কোথায় সেটা?”
— “মৌলভীবাজার।”
বিরস শোনালো কণ্ঠটা। সৌভিক ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
— “ট্রান্সফার হওয়া তো ভালো। হেড অফিসে চাপ বেশি। অন্য ব্রাঞ্চে কাজ কম। কিন্তু এর সঙ্গে চাকরি ছাড়বার কথা আসছে কেন?”
— “আপনি বুঝবেন না, স্যার। মেয়ে হয়ে জন্মানোর অনেক জ্বালা। স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাওয়া এখানে অপরাধ। আমাকে তো চাকরিই করতে দিতে চায় নি, ঢাকায় বলে তাও মেনেছিল। মৌলভীবাজার, অতোদূর যেতে দিবে কেন?”
রোদন রুদ্ধ কণ্ঠে কোনোমতে বললো মেয়েটা। সৌভিক অবাক চোখে তাকালো ওর দিকে। নির্নিমেষ চেয়ে রইলো মুহূর্তখানেক। একটু কি মনটা খারাপ হলো? কি জানি!
____
সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায় শামিল সবাই। অনেকদিন পর শ্বশুরবাড়ি থেকে এলো অনু, সে খাতিরেই আসর জমজমাট। মুড়ি মাখায় চানাচুর কম পড়েছে চারু ভেতরে চলে গেল তাই আনতে।
সেকেন্ড ত্রিশের মাথায় চারুর ফোনে বিপ্ শব্দে স্ক্রিনের আলো জ্বলে উঠলো। অনু পাশেই বসে ছিল। না চাইতেও আড়চোখে তাকালো সেদিকে। কল আসছে একটা। স্ক্রিনে ভাসা ‘আম্মি’ নামটা দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল আপনাআপনিই। আম্মি আবার কে? ভালো করে আশেপাশে চেয়ে দেখল ওর মা আছে কি-না। ওই তো ছোট চাচীর পাশেই ওদের মা বসে। উনি কীভাবে কল করবেন চারুকে? আশ্চর্য!
এরমধ্যেই চারু ফিরে এলো, মুড়ির বাটিটা সবার সম্মুখে রেখে নিজের স্থানে ফিরলো। ফোনের দিকে চোখ পড়তেই খানিক অপ্রস্তুত হলো। নিখিলের মা কল করেছেন। এই অবেলায়! আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। ঋতু কি একটা বিষয়ে আলাপ তুলেছে, তাই নিয়ে তর্কাতর্কি চলছে!
সবার অগোচরে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে, আসর ছেড়ে উঠে গেল চারু। দোতলায় সিঁড়ির কাছে নিরিবিলিতে এসে আলাপে মত্ত হলো। লক্ষ্য করলো না পেছন পেছন এসে কেউ লুকিয়ে কথা শুনছে তার!
চলবে___
#মৌরিন_আহমেদ
[পর্ব না দেয়ার পেছনে লম্বা ইতিহাস আছে। বলতে ইচ্ছে করছে না। বকা দেওয়ার থাকলে দিতে পারেন, আমি কিছু মনে করবো না। গল্প দ্রুত শেষ করার তাড়ায় আছি।]
[সারাজীবন শুনে এসেছে, স্যারেরা বৌয়ের সাথে ঝগড়া করে, ছাত্রের খাতায় নম্বর কম দেয়। এই প্রথম দেখলো, ছাত্রের খাতায় নম্বর কম এসেছে বলে কোনো স্যার বৌয়ের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলো! ব্যাপারটা বুঝে আসতেই তাজ্জব হয়ে গেল ফোটন।
আশ্চর্য কণ্ঠে বললো,
–আপনার ছাত্র কম পেয়েছে এটা আমার দোষ না-কি? আমি কি তাদের বলে এসেছি, তোমরা পড়ো না?
জাফর ভয়ঙ্কর রেগে ওর দিকে তাকালো। অসম্ভব ক্রোধে চোখ-মুখ রlক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সেই লালচে চেহারা, আর ফোলা নাক দেখে ফোটন আরেকবার প্রেমে পড়ল। ইচ্ছে করলো নাকের ডগায় টুপ করে চুমু এঁকে দিতে। কিন্তু বেচারীর সমস্ত সুখ সুখ ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে চেঁচিয়ে উঠলো জাফর,
–সবসময় আজেবাজে কথা। যাও বলছি, আমার সামনে থেকে। এক্ষুনি যাও!
ব্যস্! ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল মেয়েটা। মনে মনে ভেংচি কাটলো,
–বৌয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন? ঠিক আছে, অভিশাপ দিচ্ছি। আপনার ছাত্র আরও ফেল করবে। একটা না, পুরো ব্যাচ ফেল করবে। ফেল করতে করতে ওদের জনম যাবে! আর আপনার প্রেস্টিজ জলে ভাসবে! হুহ্!
বলেই খেয়াল হলো, একজনের দোষে অন্যজনকে শাস্তি দেয়া কেন? ছি ছি। এসব কি কথা? ধমক দিয়েছে গম্ভীরমুখো মাস্টার আর অভিশাপ দিচ্ছে ভোলাভালা ছাত্রদের? ওদের ফেল করিয়ে দিতে? এ-তো মহা অন্যায়। তৎক্ষণাৎ ফোটনের মনে পড়লো, সেও একবার ফেল করেছিল। কলেজের সান্মাষিক পরীক্ষায় ফেল এসেছিল, তাও তার বাপের সাবজেক্ট ফিজিক্সে! সেই রেজাল্ট শুনে, বাড়ি এসে কি বেদম মারটাই না মেরেছিলেন ফারুক আহমেদ। ভাবলেও গায়ে কাটা দেয়!
ভয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের অভিশাপ ফিরিয়ে নিলো ফোটন। আপনমনে বিড়বিড় করলো,
–ইসস! এক্ষুনি এই খাটাশ লোকের জন্য কতোবড় একটা পাপ করতে যাচ্ছিলাম! তওবা , তওবা। বদখত লোক একটা!
———
ই-বই “কোন গোপনে মন পুড়েছে”-র অংশবিশেষ! 🩷
দাম মাত্র ৩৫৳]