কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ২৪|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
268

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

হঠাৎই ওদের দুজনের নজর কাড়লো একজন ব্যক্তি যে সদ্য আধভিকের কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিটিকে দেখতে পাওয়ার সাথে সাথেই সিয়ারা উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ব্যক্তিটিও সিয়ারাকে দেখছে, সিয়ারাকে দেখার পরেই তাঁর ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। আধভিকের চোখের সামনেই সব কিছু হওয়ায় আধভিকের চোয়াল শক্ত হওয়ার সাথে সাথে হাত মুঠ হয়ে যায় রাগে। আধভিক একপ্রকার গর্জে ওঠে……

আধভিক: অভ্র!!

আধভিকের চিৎকার শুনে অভ্র সাথে সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। কিন্তু সিয়ারার মুখ দেখলে বোঝা যাচ্ছে সে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত।

আধভিক: তুই এখানে কি করছিস?

অভ্র: কেন ব্রো? আমি আসতে পারি না নাকি?

আধভিক: তুই তো সব সময় ফোনেই যা বলার বলিস। হঠাৎ আজকে অফিসেই চলে এলি?

অভ্র: পাপা বললো তোকে একটু হেল্প করতে। তুই নাকি খুব চাপে আছিস। (সিয়ারার দিকে এগিয়ে) কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে অলরেডি তোকে হেল্প করার জন্য কেউ আছে।

অভ্র যেভাবে সিয়ারাকে মাথা থেকে পা এবং পা থেকে মাথা অবধি দেখছে তাতে সিয়ারা ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে। বার বার নিজের চুল ঠিক করার বাহানায় দু হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছে। অভ্র হঠাৎ করেই আরও এক পা সিয়ারার দিকে এগোতে গেলেই আধভিক পিছন থেকে অভ্রর কাঁধে হাত দেয়। এতে অভ্রের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলেও সেটা আধভিক দেখতে পায় না তবে সিয়ারা ঠিকই লক্ষ্য করে।

আধভিক: আমার কোনো হেল্পের প্রয়োজন নেই আর। তুই আসতে পারিস।

অভ্র: ওকেই দ্যান, তোর পার্টির কথা মনে আছে তো?

আধভিক পার্টির নাম শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললে অভ্র বলে,

অভ্র: আহ পাপা ওয়াজ রাইট। তুই ভুলে গেছিস। পাপা তোর জন্য একটা পার্টি অর্গানাইজ করেছে আগামীকাল। অফিসিয়ালি তোকে প্রোডাকশন হাউজের নিউ ওনার হিসেবে অ্যানাউন্সড করবে। মনে পরলো?

আধভিক: হম।

অভ্র: আর এটাও বলেছে, (সিয়ারার দিকে ফিরে) তুই যদি কাওকে চাস তো ইনভাইট করতে পারিস। ওকেই? আমি আসছি।

অভ্র যাওয়ার জন্য ঘুরতেই আধভিক সঙ্গে সঙ্গে সিয়ারার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে ঢেকে দেয়। এতে অভ্র বিব্রত হয়ে পরে কারণ সে ঠিক করেছিলো আরও একবার সিয়ারাকে দেখবে। কিন্তু আধভিক এভাবে সামনে এসে পড়ায় সে বুঝলো আধভিক বিষয়টা আঁচ করে ফেলেছে তাই চলে যাওয়াই মঙ্গল। সে দ্রুত বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।

অভ্র বেরিয়ে যেতেই আধভিক সিয়ারার দিকে ফেরে। সিয়ারা মাথা নীচু করে আছে। আধভিক ধীরে ওর নাম ধরে ডেকে ওঠে,

আধভিক: সিয়ারা?

সিয়ারা মাথা তুলে আধভিকের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে নেয়। বলে,

সিয়ারা: আমি বাড়ি চলে যেতে চাই। আপনার প্রয়োজনীয় ডিজাইনস গুলো সময়ের মধ্যে করে আপনাকে পাঠিয়ে দেবো আমি।

আধভিক: হঠাৎ করে এমন একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবে আমি ভাবিনি। আ’ম স্যরি ফর দ্যাট।

সিয়ারা: ইট’জ ওকে। আপনি আমাকে যাওয়ার পারমিশন দিন। আমার, আমার ভালো লাগছে না।

আধভিক চুপ করে থাকলে সিয়ারা ওর দিকে তাকায়। দেখে আধভিক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ফলে দুজনের নজর একে অপরের উপর আবদ্ধ হয়।

আধভিক: একদমই কি থাকা যাবে না এখানে?

আধভিকের গলায় অনুরোধের সুর শুনে সিয়ারা মাথা নামিয়ে নেয়। ওর চোখ জলে ভরে উঠেছে। আধভিকের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় অভ্রের কথা মনে করে। তাঁর ইচ্ছা করছে এখনই সিয়ারাকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে নিতে। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে বাঁধা দিচ্ছে। তবুও সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, নিজের সীমা অতিক্রম করে সিয়ারার দিকে এগিয়ে গেলো। নিজের দু হাত সিয়ারার বাহুর উপর রাখতেই সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকালো।

আধভিক: আমি আছি তো? কথা দিচ্ছি এমন পরিস্থিতির শিকার আর হতে হবে না।

সিয়ারা আধভিকের “কথা দিচ্ছি” শব্দটা শোনার সাথে সাথে আধভিকের চোখের ভাষাতেও আশ্বাস খুঁজে পেলো। বুঝতে পারলো আধভিক চাইছে সে জানো এখানেই থাকে। তাই কথা না বাড়িয়ে সম্মতি জানালো মাথা নেড়ে এবং এগিয়ে গেলো নিজের জায়গায়।

আধভিক: (মনে মনে — আবারও আমাকে অভ্রের কাছ থেকে সিয়ারাকে দূরে রাখতে হবে। আর যাই হোক, অভ্রের খারাপ নজর সিয়ারার উপর পরবে আর আমি সেটা মেনে নেবো এটা হতে পারে না। ড্যাডের সাথে কথা বলতে হবে আমাকে।)

আধভিক আভাস বাবুকে ফোন করে জানায় যাতে অভ্র আর কখনও ওর অফিসে না আসে। কারণ জিজ্ঞেস করলে আধভিক জানায় যে, সে পরে সবটা জানাবে। তারপর ফিরে এসে নিজের জায়গায় না বসে সিয়ারার সামনে থাকা সোফায় বসে। কোনরকম রাক ঢাক না করেই সে সিয়ারাকে দেখতে থাকে।

আধভিক: (মনে মনে — এরকম দোটানায় আমাকে কেন ফেলেছো তুমি? তুমি দূরে থাকলে আমার মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে। অন্য কোনো ছেলের সাথে তোমাকে দেখলে আমার সারা শরীর জ্বলে উঠছে। তাই তোমাকে নিজের চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করছি। এদিকে তুমি চোখের সামনে থাকলে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু যখন মেনে নিতে যাচ্ছি তখন সেই বিষহ অতীত আমাকে আটকে দিচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন আমার সাথে? কেন?)

আধভিক মুখ উপরে করে মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করে। সিয়ারা সেটা আড় চোখে লক্ষ্য করে। ও এতক্ষণের সব কিছুই লক্ষ্য করেছে। আধভিককে চোখ বন্ধ করতে দেখে সিয়ারা এবার সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,

সিয়ারা: (মনে মনে — তুমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছো তাই না আভি? আমি জানি সেটা, কারণ আমিও যে ভীষণ ক্লান্ত। আর আমি এটাও ভালো ভাবে জানি, আমরা দুজনই শুধুমাত্র দুজনের এই ক্লান্তি দুর করতে পারবো। কিন্তু তার জন্য তো তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে? তুমি তো কিছুই শুনতে চাইছো না। আমারও ইচ্ছা নেই তোমাকে আবার পুরোনো কথা মনে করিয়ে কষ্ট দেওয়ার কিন্তু কি করবো বলো? ওগুলো না বললে যে তুমি আর আমি কষ্ট পেতেই থাকবো।)

সিয়ারা আধভিক কে নড়তে দেখে আবারও নিজের কাজে মন দেয়। দুপুর হতেই আধভিক খাবার আনায় ওদের দুজনের জন্য। সিয়ারা খেতে না চাইলেও আধভিকের কথার বাইরে যেতে পারে না। খাওয়া শেষ হতেই সিয়ারা আবার কাজ শুরু করতে গেলে আধভিক বাঁধা দিয়ে বলে,

আধভিক: চলুন, আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। আপনি বাড়ি গিয়ে এখন একটু রেস্ট নিন তারপর আবার কাজ শুরু করবেন।

সিয়ারা: কিন্তু বেশি তো বাকি নেই? আর দু তিন ঘন্টার মধ্যে কমপ্লিট করে দিতে পারবো।

আধভিক: আমি এক কথা বার বার বলিনা জানেন নিশ্চই?

সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। আধভিক উঠে নিজের গাড়ির চাবিটা নিয়ে সিয়ারাকে বললো,

আধভিক: সব গুছিয়ে নিয়েছেন?

সিয়ারা: হ্যাঁ। যেগুলো কমপ্লিট হয়ে গেছে সেগুলো রেখে গেলাম এখানে। একবার চেক করে নেবেন।

আধভিক: ওকে, আসুন।

সিয়ারা: বলছি, আমি চলে যেতে পারবো। আপনি আবার কষ্ট করে…

আধভিক: নিয়ে যখন এসেছি আমি, তখন ঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার কর্তব্য আমার। আসুন।

সিয়ারা আধভিকের সাথে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় দুজনে কথা বলে না চুপ করেই থাকে। যদিও আধভিক কথা বলার চেষ্টা করেছিল তবে সিয়ারার চিন্তিত মুখ দেখে আধভিক আর কিছু বলেনি। আধভিক তাঁর সৎ ভাইকে খুব ভালো ভাবেই চেনে। তাই সে আজ ঠিক কি দৃষ্টিতে সিয়ারার দিকে তাকিয়েছে সেটাও ভালো ভাবেই সে বুঝতে পেরেছে। এইটা নিয়ে কথা না বাড়িয়ে সিয়ারাকে একা ছেড়ে দেওয়াটাই ঠিক মনে করলো আধভিক।

কিছুক্ষণ পর,

সিয়ারার বাড়ি এসে পরতেই সিয়ারা নেমে যায়। আধভিক তাড়া হুরো করে নামে হঠাৎ কিছু মনে পরায়।

আধভিক: সিয়ারা!

সিয়ারা: (আধভিকের দিকে ফিরে) কিছু বলবেন?

আধভিক: আমার মাথা থেকে পার্টির কথাটা বেরিয়ে গেছিলো একদম। আমি চাই আপনি সুধাংশু স্যার আর দেবাংশু আমাদের পার্টি অ্যাটেন্ড করুন। আমি বাড়ি পৌঁছে স্যারকে জানিয়ে দেবো বিষয়টা।

সিয়ারা: আঙ্কেল চাইলে নিশ্চয় যাবো। আসছি।

সিয়ারা বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। আধভিকও গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হয়। বাড়ি পৌঁছতেই আভাস বাবু ওকে জানান যে, উনি সুধাংশু বাবুকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন পার্টির জন্য। এতে আধভিক খুশি হয় দেখে আভাস বাবু বুঝতে পারেন উনি ঠিক কাজই করেছেন।

আধভিক ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শরীর এলিয়ে দিতেই হঠাৎ করে ওর চোখের সামনে সিয়ারা এবং দেবাংশুর হাসি ঠাট্টার কথা মনে পরে যায়। চোখ খুলে ফেলে আধভিক।

আধভিক: সিয়ারা কি সত্যি বিবাহিত? যদি তাই হয় তাহলে কেন আমাকে মানানোর চেষ্টা করছে? নাকি প্রথমবারের মত এইবারও সিয়ারা আমাকে মিথ্যে বলেছে। হাহ! প্রথম থেকে সবকিছুই তো মিথ্যেই ছিলো। এখন কেন ফিরে আসতে চাইছে ও? আবারও কষ্ট দেওয়ার জন্য? ছেড়ে যাওয়ার জন্য?

আধভিকের পুরনো কথাগুলো মনে পরতে শুরু করে। সে ঘর থেকে বেরিয়ে হুইস্কি আনতে চলে যায়। সিয়ারা চলে যাওয়ার পর থেকে সারাদিন সব ভুলে থাকলেও রাতে পারে না। সব স্মৃতিগুলো এসে ঘিরে ধরে আধভিককে। তাই তো মাঝে মধ্যে অফিসে কাজের মধ্যে ডুবেই সেই সময় কাটাতো কিন্তু তাও নিস্তার মেলেনি। সে সবাইকে এই জন্যেই বলে পুরনো কথা মনে না করাতে, তাহলে অন্তত দিনটা তো ভালো যাবে।

পরের দিন পার্টিতে,

আধভিক: সিরিয়াসলি সিয়ারা? এখন তুমি মনে করছো তুমি নিজের শরীর দেখিয়ে আমাকে মানাবে? মাই গড, এতোটা নীচে কবে নামলে?

সিয়ারা: আধভিক এসব তুমি..

আধভিক: জাস্ট শাট আপ! তোমার প্রতারণার পর আমার মন তো উঠেই গেছিলো। যা বেঁচে ছিলো আজকের পর সেটাও উঠে গেলো। এতক্ষণ পার্টিতে আমি বাদে অন্যান্যদের নিজের দিকে আকর্ষিত করছিলে, নাচ করছিলে আর এখন আমাকে শরীর দেখিয়ে নিজের জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছো ওয়াহ!

সিয়ারা: আধভিক!!

আধভিক: একদম আওয়াজ উঁচু করে কথা বলবে না। তুমি ঠিক কি ধরনের মেয়ে আজকে আমি বুঝতে পারছি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার মতো নোংরা মানসিকতার একটা মেয়েকে ভালোবাসা। আমি তো বুঝে পাচ্ছি না কেন এমন করছো তুমি? সুধাংশু স্যারের জন্যেই তুমি অনেক চান্স পেয়ে যাবে তাহলে কেন প্রোডিউসারদের এভাবে শরীর দেখিয়ে…

সিয়ারা: ব্যাস!! অনেক বলে ফেলেছেন আপনি মিস্টার রায় চৌধুরী। অনেক বলে ফেলেছেন।

আধভিক: ভাগ্যিস আটকালে। নাহলে এর থেকেও খারাপ কথা বলে ফেলতাম আমি। যাই হোক, নিজের রূপ, যৌবন দেখিয়ে অন্যান্য যেকোনো প্রোডিসারকে তুমি মানিয়ে নিতে পারো তবে আমাকে নয়। ভুলেও আমার সাথে এই জিনিসটা ট্রাই করো না।

আধভিক বেরিয়ে গেলে সিয়ারা ধীরে ধীরে কান্নায় ভেঙে পরে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

বি: দ্র: কি হলো বলুন তো? আধভিকের এইসব কথা বলার কারণ কি? কি মনে হচ্ছে আপনাদের সিয়ারা সত্যি এমন কিছু করেছে? নাকি আধভিক একটু বেশিই বলে ফেললো? মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না জানো। শুভ রাত্রি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here