‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। আধভিকের অবস্থা প্রায় পাগল পাগল। সে উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক সিয়ারাকে খুঁজে চলেছে। পাহাড়ি এলাকায় সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ায় লোকজনও খুব একটা নেই কারণ ওরা জনবহুল অঞ্চল থেকে একটু দূরেই আছে।
আধভিক: সিয়ু কোথায় তুমি? তোমাকে এই মুহুর্তে একা রাখাটা আমারই উচিত হয়নি। আজকেই একবার সুযোগ ওরা মিস করেছে তোমাকে কিডন্যাপ করতে না পেরে। ওরা যে আবারও চেষ্টা করবে সেটা খুব ভালো ভাবেই জানি আমি। আর এটাই ত তোমাকেও জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো…
আধভিক এদিক ওদিক চোখ ঘোরাতে থাকে কথাগুলো বলতে বলতে। ঠিক সেই সময়ে ওর চোখ গেলো রাস্তার ধারে একটা বাড়ির নীচে। পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ের খাঁজ কেটে বাড়ি বানানোর ফলে সেখানে বাড়ির ছাদ রাস্তার উপরে থাকে এবং বাড়ি থাকে নীচের অংশে। হোটেলের ক্ষেত্রেও তাই। আধভিক একটু এগিয়ে যেতেই দেখলো ঠিক বাড়ি নয়, একটা ছোটো রেস্তোরা মতো যেটা বন্ধ আছে এবং সেটার শেডের নীচে নিভু আলোতে একটি মেয়ে বসে আছে।
অন্যদিকে,
সিয়ারা: আমি যখন ওর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম তখন আমি জানতে পেরেছিলাম ও বিয়ে করে ফেলেছে। আজ বোন বললো, আভিও সেটাই জেনেছে আমার সম্পর্কে। এইজন্যেই হয়তো আমার মিথ্যেটা আধভিক বিশ্বাস করে নেয় আমাদের প্রথম অফিসে যখন দেখা হয়। তাই হয়তো ও আরো দুরত্ব তৈরী করেছিলো। কিন্তু পার্টির দিন ও…এক মিনিট! ওই লোকটা বলেছিলো অভ্র ওকে এসব করতে বাধ্য করেছে। তাহলে কি সেই দৃশ্যটাই আভি দেখেছে আর তাই জন্যেই ওরকম কিছু বলেছে? নাকি আরও খারাপ কিছু তৈরি করেছিলো অভ্র যার জন্য আধভিক অমন বললো?
সিয়ারা টের পেলো বৃষ্টি নেমেছে। ধীরে ধীরে বৃষ্টির গতিবেগ বাড়তে থাকে। ও একমনে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। হঠাৎই ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো যখন অভ্র ওর ঘরে ঢুকেছিলো পার্টির দিন।
সিয়ারা: অভ্র ঘরে ঢুকে নিজের শার্টের বোতাম খুলেছিল ঠিকই কিন্তু আমাকে কোনরকম ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি। রহস্যজনক ভাবে হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলো আর তারপরেই আভি আসে। ওদিকে ওই লোকটার সাথে কথা বলার পরেই আভি ওভাবে ড্রিংক করছিলো। ওর চোখে আমাকে খারাপ করার জন্যেই এতো কিছু করা নাকি…সত্যি আমাদের আলাদা করার জন্য….
সিয়ারা উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে উঠে যায় রাস্তার উপর। আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো অনুভব করতে করতে ঝুম বৃষ্টি ওকে ভিজিয়ে দিতে থাকে। ওর মাথাটা কেমন জানো ঠাণ্ডা হতে শুরু করছে। ধীরে ধীরে সব জটিলতার জটগুলো হয়তো সে ছাড়াতে পারছে। আধভিকের সাথে কথা বললে হয়তো সবটাই ক্লিয়ার হবে। সিয়ারা কথাটা ভেবে মুখটা দুহাতে ঢেকে নেয়। বৃষ্টি সবসময়ই তাঁকে আলাদাই একটা তৃপ্তি দেয়। তাই সে হয়তো এতটা ভালোবাসে বৃষ্টিকে, এই বৃষ্টিই তো ওর কাছে আধভিককে এনে দিয়েছিলো। হয়তো এই বৃষ্টিই আবার ওকে আধভিককে ফিরিয়ে দেবে…
কথাটা ভাবতে না ভাবতেই কেউ পিছন থেকে সিয়াতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানলে সিয়ারা টাল সামলাতে না পেরে মানুষটার হাতের উপর নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দেয়। সিয়ারা মানুষটার হাতের নাগালে আসতে না আসতেই একটা গাড়ি বেরিয়ে যায় শোঁ করে। সেই দৃশ্য উপেক্ষা করে মানুষটার বুকের উপর মাথা থাকায় তাঁর হৃদস্পন্দন শুনতে থাকে ও। ঘোড়ার গতিতে ছুটছে সেটা। সিয়ারা জানে যেই মানুষটার বুকের উপর সে আছে সেই মানুষটা কে। কিন্তু সে এখানে কি করছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সে মাথা তুলে তাঁর দিকে তাকায়।
সিয়ারা চোখ পিটপিট করে আধভিকের দিকে তাকালে নিমিষে আধভিকের রাগ হলে যায়। সিয়ারাকে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার উপর ভিজতে দেখে তাও আবার এই শরীর নিয়ে, মাথা গরম হয়ে গেছিলো আধভিকের। ভেবেছিলো খুব করে বকে দেবে কিন্তু এই মেয়েটার চোখের দিকে তাকালে যেটা সে বলতে চায় সেটা আর বলতে পারে না। সবকিছু গুলিয়ে যায় ওর, এই তো যেমন অনেক কিছু যে সিয়ারাকে জানাতে হবে সেটা সে ইতিমধ্যে ভুলে বসেছে।
সিয়ারা: তুমি এখানে কি করছ?
আধভিক: আমার এখানে আসার কারণ আছে। কিন্তু তোমার এখানে আসার কারণটা আমি বুঝতে পারছি না। আমাদের হোটেলের এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে না? শুধু এখানেই বৃষ্টি হচ্ছে? বৃষ্টিতে ভেজার হলে আমাদের হোটেলের ছাদে দাঁড়িয়ে ভিজতে, এতদূর আসার কি ছিলো?
সিয়ারা দূরে সরে যায় আধভিকের হাত ছাড়িয়ে। অনেকদিন পর অনেকটা কাছে ছিলো সে আধভিকের তাই হয়তো দূরে সরে যাওয়ায় এতদিনের শূন্যতাটা আরো বেশি করে নতুন ভাবে অনুভব হচ্ছে এখন আধভিকের।
সিয়ারা: হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি। তোমার আসার কি দরকার ছিল আমি চলে যেতাম। (নীচের দিকে তাকিয়ে)
আধভিক: সিয়ু…আই, আই মিন সিয়ারা আমার সত্যি তোমাকে অনেক কিছু জানানোর আছে।
সিয়ারা একটু অবাক হয় আধভিকের কথা শুনে। ও ভেবেছিলো হয়তো আধভিক আর কিছু বলতে চাইবে না কারণ কিছুক্ষণ আগেই সে রাগের বশে কয়েকটা খারাপ কথা তাঁকে শুনিয়েছে। যেগুলো হয়তো আধভিকের পুরোনো ক্ষততে নুনের ছিঁটে দেওয়ার মতো। এরপরেও যে আধভিক কথা বলতে আসবে সিয়ারা ভাবেনি। কিন্তু আধভিক যখন বলতে চায় তখন সে নিজের মনে থাকা প্রশ্নটা করেই ফেলে আধভিককে,
সিয়ারা: আজকে সকালে গুন্ডাগুলো বলার আগেই তুমি কীভাবে বললে ওদের আমি ভাড়া করেছিলাম? আমি গাড়িতে বসে গুন্ডাদের আমার নাম করতে শুনিনি একবারও।
আধভিক: কারণ আমি জানতাম ওখানে ওটাই হতে চলেছে। আমাদের যে আটক করা হবে এটা সম্পর্কে আমি খুব ভালো ভাবেই জানতাম। বলা ভালো, আমি চেয়েছি বলেই ওই ঘটনাটা ঘটেছে, আমি না চাইলে কিছুই হতো না।
সিয়ারা: মানে? কি বলছো এসব?
আধভিক: মানে এটাই যে, আমাদের গাড়ির ড্রাইভার এসবের সাথে যুক্ত ছিলো। ড্যাড যখন তোমার সাথে কথা বলছিলো তখনই আমি বুঝে ছিলাম ড্যাড তোমাকে আমার সাথে কথা বলার জন্যেই বোঝাচ্ছিল।
সিয়ারা: তুমি জানতে আংকেল আমার সাথে তোমার বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলো?
আধভিক: হ্যাঁ কারণ.. কারণ…
আধভিককে ইতস্তত করতে দেখে সিয়ারা ভ্রু কুঁচকে ফেলে। ওভাবেই জিজ্ঞেস করে,
সিয়ারা: কারণ?
আধভিক: (একটা ঢোঁক গিলে) আমি ড্যাডকে বলছিলাম যে আমার তোমার সাথে কথা বলার আছে কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। সুযোগ পেলে ভা..ভালো হতো।
আধভিক মাথা নীচু করে কথাগুলো বললে সিয়ারা রেগে একপ্রকার ওর দিকে তেড়ে যায় এক পা আর আধভিক ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায় এক পা।
সিয়ারা: (দাঁতে দাঁত চেপে) তাহলে প্লেনে ওইভাবে কথা বললে কেন আমার সাথে?
আধভিক: ইয়ে মানে..আসলে, রাতের বিষয়টা নিয়ে তখনও ঠিকভাবে ভাবতে পারিনি আমি কারণ মাথাটা ধরে ছিলো।
সিয়ারা: (দাঁতে দাঁত কষে) আর মাথাটা কেন ধরেছিলো?
আধভিক ছোটো বাচ্চার মত নিজের ভুলের জন্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো উত্তর না দিয়ে। সিয়ারা বরাবর আধভিকের এই বাচ্চা স্বভাবের দরুন ওকে কিছু বলতে পারে না। ভুল করে এমন ভাবে বাচ্চাদের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকবে যে কিছু বললে নিজেরই খারাপ লাগবে। আধভিক এক ঝলক সিয়ারার দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবার চোখ নীচে নামিয়ে বললো,
আধভিক: আমি গাড়ি থেকে নেমে ভাবতে থাকি যে ঠিক কীভাবে তোমাকে সবটা বলবো। কারণ আমি ভেবে দেখেছিলাম যে, হয়তো প্রথম থেকেই কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে আসছে যেটা কোনো না কোনো কারণে আমরা জানতে পারছি না। হয়তো ইচ্ছা করেই সেই কারণগুলো সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে আমরা জানতে না পারি।
সিয়ারা দু হাত ভাঁজ করে নীচের দিকে তাকিয়ে আধভিকের কথা শুনছিল। কিন্তু যেই না আধভিকের দেশের বাক্যটা শুনলো তৎক্ষণাৎ ওর দিকে তাকালো। দেখলো আধভিকও ওর দিকে তাকিয়েছে। আধভিক আবারও বলতে শুরু করলো,
আধভিক: ঠিক সেই সময় আমি দেখতে পাই আমাদের ড্রাইভার সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে কাওর সাথে একটা কথা বলছে আর বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমি লুকিয়ে ওদিকে যেতেই শুনতে পাই যে…
সিয়ারা: যে..??
আধভিক: ও কার সাথে কথা বলছিলো সেটা তো আমি জানি না আর তাঁর কথাও শুনতে পাইনি। তবে ওর উত্তরগুলো শুনে বুঝতে পেরেছিলাম যে, যদি ও গাড়িতে কোনো ভাবে বুঝতে পারে আমার আর তোমার মধ্যে সবটা ঠিক হয়ে যাচ্ছে বা আমরা ভালো ভাবে কথা বলছি তাহলে গাড়িটার অ্যাকসিডেন্ট করাতে। এমনভাবে যাতে বাঁচার কোনো সুযোগ না থাকে।
সিয়ারা: কি? এমন কিছু মানে তো খাদে…(চমকে উঠে)
আধভিক: হ্যাঁ।
সিয়ারা: কিন্তু এতে তো ও নিজেও মরে যাবে।
আধভিক: তার জন্য ওর পরিবার অনেক টাকা পাবে। ও বলছিলো যাতে এমন কিছু হলে জানো সঠিকভাবে টাকাটা ওর পরিবারে পৌঁছে যায় নাহলে ও ফাঁসিয়ে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা করেই যাচ্ছে।
সিয়ারা নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলে আধভিক সেটা দেখে একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,
আধভিক: আর যদি আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয় বা আমরা কোনো কথা না বলি তাহলে সেটার সুযোগ বুঝে আমাদের উপর অ্যাটাক করা হবে। তোমাকে তুলে নিয়ে যাবে আর আমাকে ওখানেই…
সিয়ারা: নাহ…
সিয়ারা হঠাৎ করেই আধভিকের দিকে এগিয়ে ওর বাহু চেপে ধরলে আধভিক সিয়ারার চোখের দিকে তাকায়। সাথে সাথে সিয়ারা মাথা নীচু করে আবার সরে গিয়ে একটা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,
সিয়ারা: তু..তুমি সেইজন্যেই…
আধভিক: অনেক কারণ ছিলো। প্রথমত আমি শুনেছিলাম যে কাজটা অর্ডার দিচ্ছে সে আসবে তোমাকে তুলে নিয়ে গেলে। মানে ওদের ডেরায় তোমাকে নিয়ে গেলে ওখানে সে উপস্থিত থাকতো আর এটা করলেই আমি জেনে যেতাম যে সেটা কে? দ্বিতীয়ত, এর ফলে ড্রাইভারটার প্রাণও বেঁচে গেলো। টাকার অভাবে, নিজের পরিবারের জন্যেই হয়তো সে এতো বাজে একটা কাজ করতে রাজি হয়েছিলো। জানি সে অন্যায় করেছে তবে আমি চাইনি ওর পরিবার একা হয়ে যাক। মানুষটাই যদি না থাকে তাহলে টাকা দিয়ে কি হবে?
সিয়ারা অমায়িক ভাবে আধভিকের দিকে তাকায়। পুরনো কথা মনে পরে ওর, আধভিক বলেছিল সে নিজেকে কতোটা একা মনে করতো সবসময়। টাকা পয়সা থাকায় কোনো কিছুর অভাব ছিলো না কিন্তু ভালোবাসা? সময়? এসবের জন্য একটা কাছের মানুষের বড্ড অভাব ছিল তাঁর জীবনে।
সিয়ারা: ওই মানুষটার কথা শুনে তুমি এত বড়ো রিস্ক…
আধভিক: নাহ। এতে আমাদের জীবনও বাঁচলো আর ওর জীবনও। সাথে আমি এটাও জেনে যেতাম যে কে আছে এসবের পিছনে।
সিয়ারা: হম।
আধভিক: যখন তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন আমি যেই শুনলাম যে ওদের বস আসবে না। তখনই নিজের প্ল্যান চেঞ্জ করে নিলাম নাহলে ওরা তোমাকে গাড়িতে তোলার পর আমাকেও ওদের ডেরায় নিয়ে গিয়েই শেষ করতো। কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে এইভাবে প্ল্যান চেঞ্জ কেন করলো…
সিয়ারা: প্ল্যান চেঞ্জ করেনি।
আধভিক: মানে?
সিয়ারা: আমার মনে হয় ওরা জেনে গেছিলো তুমি বিষয়টা জেনে গেছো। তাই ওরা প্ল্যান বি রেডি করেই রেখেছিলো। এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে ওদের মেইন এজেন্ডা আমাদের কে আলাদা করা, সেটা যেভাবেই হোক। তুমি যখন সবটা জেনে গেছো ওরা বুঝতে পেরেছিল তখনই ইচ্ছা করে আর সামনে যায়নি।
আধভিক: যাক ফাইনালি তুমি বুঝলে আমাদেরকে কেউ আলাদা করার চেষ্টা করছে।
সিয়ারা আধভিকের কথায় তৎক্ষণাৎ চোখ মুখ শক্ত করে উত্তর দেয়,
সিয়ারা: আমি হয়তো অনেক আগেই বুঝেছিলাম আধভিক। তুমি বুঝতে চাওনি!
কথাটুকু বলেই সিয়ারা শেড থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তায় ওঠে। বৃষ্টি তখনও থামেনি। আধভিক সিয়ারার পিছু পিছু গিয়ে সিয়ারার হাত ধরে ওকে বাঁধা দেয়। সিয়ারা ফেরেনা আধভিকের দিকে তবে আধভিক সিয়ারার হাত ছেড়ে দেয়।
আধভিক: আমি জানি আমি ভুল করেছি অনেক। আর সেই জন্য কোনো মিথ্যে অজুহাত বা সাফাই দেবো না। শুধু অনুরোধ করতে চাই যে, আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না? দুরত্বটা কি দুর করা যায় না? কোথাও না কোথাও গিয়ে আমরা তো পরিস্থিতির শিকার, এটা তুমি ভালো ভাবেই জানো?
সিয়ারা আধভিকের কথা শুনে ওর দিকে ফিরলে দেখে আধভিক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দুজনেরই অসুবিধা হচ্ছে। সিয়ারা ওইভাবে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দেয়,
সিয়ারা: দুরত্বটা কিছুদিনের জন্য তৈরী হয়নি আধভিক। দুরত্ব প্রথম থেকেই ছিলো তাই জন্যেই তো আমাদের ভালোবাসায় বিশ্বাসের অভাব ছিলো। যেই সম্পর্কটা কোনোদিন গড়েই ওঠেনি সেটা আর কি ভাঙবে?
আধভিক: তাহলে নতুন করে গড়ে নেওয়া যায় না? আমরা দুজনেই হয়তো অনেক কিছুর শিক্ষা পেয়েছি। একজন সঠিক মানুষের থেকে একজন শুধরানো মানুষ কিন্তু অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয় সিয়ারা।
সিয়ারা: (মনে মনে — আমি কীভাবে বোঝাই তোমায় আভি যে, যেই আমি ভালোবাসা নিয়ে এত কিছু বলতাম সেই আমিই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারিনি? তুমি যা যা করেছো তাই তাই ফেরত দিয়েছি আমি তোমায়। প্রতিশোধ নিয়েছি তুলনা করে। আজ যদি দিয়া না বলতো এসে তাহলে হয়তো আমি আর ভাবতামই না এইসব বিষয়ে। কিন্তু হ্যাঁ, তোমাকে ওভাবে বলার পর আমি অপরাধ বোধে ভুগছি। হয়তো সেই জন্যেই আমি পারছি না তোমার কাছে যেতে।) যেই দুরত্বটা তৈরী হয়েছে সেটা সহজে…
সিয়ারা কিছু বলার আগেই আধভিক সিয়ারা দিকে এগিয়ে একটু ঝুঁকে ওর ঠোঁটের উপর ঠোঁট রাখলো। বিষয়টা বুঝতে পেরে সিয়ারা চোখ বড় বড় করে আধভিকের দিকে তাকায় কিন্তু আধভিকের সেদিকে খেয়াল নেই। হতবাক হওয়ায় সিয়ারার দুই ঠোঁটের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হয় আর আধভিক সেই সুযোগে সিয়ারার নীচের ঠোঁটটা আকড়ে ধীরে নিজের ঠোঁটের ভাঁজে।
সিয়ারার হাত পা কেমন জানো জমে গেছে নিজের জায়গায়। সে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর জায়গায় নিয়ে কারণ এই ঘটনা ওর জীবনে প্রথমবার। এমন ভাবে কোনো ছেলে তো দুর আধভিক কখনওই সে কাছে আসেনি। সিয়ারার এসব ভাবনার মাঝেই আধভিক ওর কোমরে এক হাত রেখে এবং অন্য হাত চোয়ালে রেখে সিয়ারাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
হুঁশ আসে সিয়ারার তবে সে দূরে সরে যেতে চায়নি। সে কাছেই থাকতে চেয়েছে আধভিকের। আধভিক ওকে কাছে টেনে নিলে সিয়ারা নিজের এক হাত আধভিকের যেই হাত ওর কোমরে আছে সেই হাত বেয়ে উঠে কাঁধে রাখে চেপে ধরে এবং অন্য হাত আধভিকের কোমরের কাছে জ্যাকেটটা আকড়ে ধরে। এছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া সিয়ারা জানায় না। আধভিক নিজের মতো করে ভালোবাসে সিয়ারাকে, স্বাদ পায় নিজের এতদিনের ভালোবাসার মানুষের।
কিছুক্ষণ পর,
আধভিক সিয়ারার ঠোঁট ছেড়ে সিয়ারার কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখে। একটু সময় নিয়ে বলে,
আধভিক: আমরা যতদিন সাথে থেকেছি তার থেকে বেশি দূরে থেকেছি। আমরা যতদিন আনন্দে কাটিয়েছি তার থেকে বহুগুণে বেশি কষ্টে কাটিয়েছি। হ্যাঁ মানছি এরমধ্যে সবথেকে অবুঝের মতো কাজ আমি করেছি কিন্তু তুমি তো জানো? তুমি তো জানো আমি কখনোই তোমাকে অন্যকাওর সঙ্গে মেনে নিতে পারি না সেখানে পর পর দুইবার…আমি সেইসব জিনিসগুলো ভুলে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা কতদিন একসাথে থেকেছি যে একে অপরকে চোখ বুজে বিশ্বাস করবো? ভালোবাসতে সময় না লাগলেও বিশ্বাস করতে সময় লাগে সিয়ারা।
আধভিক কিছুক্ষণ থেমে সিয়ারার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় তারপর সিয়ারার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,
আধভিক: আমি জানি তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো তার কারণ তোমার মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছো। যেটা করার দরকারই ছিলো না সেটা প্রতিশোধের বশে করেছো। যেখানে তুমি ভালোবাসায় প্রতিশোধ জিনিসটা সহ্যই করতে পারো না। কিন্তু এগুলোর উপর তোমার নিয়ন্ত্রণ ছিলো না, তুমি ইচ্ছা করে যদি করতে তাহলে সেটা প্রতিশোধ হতো। তুমি করার পর এটা মনে পরেছে তোমার। যা করেছে, সময় করেছে। আজ যদি এটা না হতো আমি হয়তো ফীল করতাম না আমি তোমাকে কতোটা আঘাত করেছি। তুমি প্রতিশোধ নিতে না চাইলেও সময় কাওকে ছাড়ে না সিয়ারা। তুমি, আমি দুজনেই সময়কে বিশ্বাস করি। উই বোথ আর বিলিভ ইন, “রিভেঞ্জ অফ নেচার।” আমি যদি এতো ভুলের পরেও একটা সুযোগ আশা করতে পারি দ্যান হোয়াই নট ইউ? তুমি তো তেমন ভুলও করনি। আমি তোমার কাছে সুযোগ চাইছি সিয়ারা, সবটা ঠিক করার জন্য সুযোগ চাইছি। জাস্ট একটা সুযোগ! দেবে?
সিয়ারা আধভিকের প্রত্যেকটা কথা শুনেছে যা ওর হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। প্রথম থেকেই ছেলেটা নিজের ভুলগুলো নিজে জানার চেষ্টা করতো আর তার জন্য ক্ষমাও চাইতো। নত হতে দুইবার ভাবতো না, নিজের দোষ হলে তো না’ই। অন্যের দোষ হলেও নিজেই নত হতো। আধভিকের আত্ম উপলব্ধি সিয়ারার বরাবর প্রিয়। এখন তো সে ভালোবাসার অর্থও বুঝতে শিখেছে। মনে মনে হেসে সিয়ারা আধভিককে কিছু বলতে যায়,
সিয়ারা: আমি…
কিন্তু তার আগেই মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করে ওঠে সিয়ারার। নিজের শরীরে ভারসাম্য হারিয়ে টলে যায়। আধভিকের সেটা চোখে পরতেই সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে।
আধভিক: সিয়ারা ঠিক আছো তুমি? সিয়ারা?
সিয়ারা আধভিকের বুকে ঢলে পরে। আধভিক বুঝতে পারে এতক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার ফলাফল এটা তার উপর মাথায় চোট তো আছেই। আধভিক আর দেরী না করে কোলে তুলে নেয় সিয়ারাকে। সিয়ারার হুঁশ আসে, একটু নাকটা ঘষে দেয় আধভিকের ঘাড়ে তারপর আবারও নিস্তেজ হয়ে যায়। আধভিক হালকা হাসে এবং এগিয়ে যায় হোটেলের দিকে।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
খুশি?😒 রোজ দিতে পারছি না দেখে বড়ো করে পার্ট দিচ্ছি কিন্তু!😏