কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ৩৮|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
268

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিকের কাঁধে চিবুক রেখে সামনের দিকে তাকাতেই সিয়ারা দেখলো দেবাংশু সিঁড়ি দিয়ে উঠছে তাই সাথে সরে গেলো আধভিকের থেকে। আধভিক একটু বিরক্ত হলেও সিয়ারা যখন চোখ দিয়ে ইশারা করলো পিছনে তাকানোর জন্য তখন পিছনে তাকাতেই দেখলো দেবাংশু আসছে।

আধভিক: এখনই আসতে হলো? ভুল সময়ে ভুল মানুষের এন্ট্রি। (বিড়বিড় করে)

সিয়ারা: ভুল সময়ে ভুল মানুষের এন্ট্রি না আভি, ভুল জায়গায় ভুল জিনিস করছিলাম আমরা। (মুচকি হেসে)

সিয়ারার সমর্থনে আধভিক রেগে সিয়ারার দিকে তাকালে সিয়ারা চোট জলদি দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

সিয়ারা: কিছু বলবি দেব?

দেবাংশু: আব, হ্যাঁ। আভাস আংকেল ভিকিকে ডাকছে।

আধভিক: ওহ শিট, আমি তো এসে ড্যাডের সাথে দেখা করতেই ভুলে গেছিলাম।

দেবাংশু: হ্যাঁ আমাদেরকে দিয়ারা জানালো যে তুই এসে গেছিস তাই আংকেল আমাকে বললো তোকে ডেকে দিতে। আংকেলও টেনশনে ছিলো তোর জন্য, দেখা করে আয়।

আধভিক: ইয়াহ সিওর। আমি ড্যাডের কাছেই যাচ্ছিলাম। তুই একটা হেল্প করতে পারবি আমায়?

দেবাংশু: মাইগ্রেনের ওষুধ তোর ঘরে রাখা আছে। আমি ভালো করেই বুঝে গেছি যে কাজের জন্য গেছিস সে কাজ তুই করে ফিরিসনি। ঘুরে চলে এসেছিস।

আধভিক হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিয়ারা দেবাংশুকে জিজ্ঞেস করলো,

সিয়ারা: এই এক মিনিট, এক মিনিট! তোরা একে অপরকে তুই করে কথা বলছিস কবে থেকে? আর কেনই বা বলছিস?

আধভিক কিছু বলতে গেলে দেবাংশু ইশারায় ওকে না করে দিলো আর তা দেখে আধভিক মুচকি হাসলো। দেবাংশুও হেসে আধভিককে চোখ মারলে সিয়ারা ভ্রূ কুঁচকে ফেলে।

দেবাংশু: এই তো এখন থেকেই বলছি। আমি ভাবলাম তোর সাথে ওর যখন সব মিটেই গেছে তখন আমিও বন্ধুত্ব করেনি। আর আধভিকও রাজি হয়ে গেল তাই আর কি!

সিয়ারা: একদম মিথ্যে বলবি না আমাকে। আভির সাথে তোর কথা কোথায় হয়েছে তেমন এই কয়েকদিনে? সত্যি করে বল বিষয় কি? তোরা কি একে অপরকে আগে থেকে চিনিস নাকি?

আধভিক জোরে হেসে ফেলে আর দেবাংশুও ওকে দেখে হেসে দেয়। বেচারি সিয়ারা কনফিউজড হয়ে ওদের দুজনের দিকে পালা করে তাকাতে থাকে।

আধভিক: দেব আর আমি একই জায়গায় পড়াশোনা করেছি ক্যালিফোর্নিয়াতে। পরে ও শিকাগো চলে যায় আর আমি ক্যালিফোর্নিয়াতেই থেকে যাই। ওর ইচ্ছা প্রথম থেকেই ফটোগ্রাফি নিয়ে ছিলো তুমি তো জানো নিশ্চয়?

সিয়ারা: হ্যাঁ।

আধভিক: ওই জন্যেই ও শিকাগো গেছিল। ওর মনে হয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়ার থেকে শিকাগো বেস্ট তাই। এদিকে আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পরেছি। একই কলেজে ছিলাম আমরা তবে সাবজেক্ট আলাদা ছিলো। আমাদের দুজনেরই ইচ্ছা ছিলো এসব প্রডিউস বা অ্যাক্টিং এর চক্করে পড়বো না কিন্তু লাভ কিছু কি হয়েছে? সেই তো এসে অভিনয়ই করতে হচ্ছে ওকে আর আমাকে প্রডিউসিং।

দেবাংশু: তাও তুই এসে এটলিস্ট নিজের ফ্যাশন হাউজ চালাচ্ছিস। আমাকে দেখ? ড্যাড আমাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ডেবিউ করিয়েই ছাড়বে শপথ নিয়েছে মনে হচ্ছে।

আধভিক: আমি আছি তো নাকি? চিন্তা করছিস কেন তুই? আমি কথা বলে নেবো সুধাংশু স্যারের সাথে।

সিয়ারা: তুমি তার মানে আংকেল কেও চেনো আভি?

আধভিক: হ্যাঁ। আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, প্রডিউসিং সম্পর্কে যতটুকু জানি সেটা স্যারের জন্যেই। স্যার যতদিন ক্যালিফোর্নিয়াতে ছিলো আমাকে এসব বিষয়ে বুঝিয়েছে। আমার ড্যাডের তো আর আমার জন্য সময় ছিলো না।

দেবাংশু সঙ্গে সঙ্গে আধভিকের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে,

দেবাংশু: তাই জন্য তো পাপা আমার থেকে বেশি তোকেই ভালোবাসে।

সিয়ারা: আচ্ছা তোদের যখন এতই পিরিত তখন আগে এটা দেখা যায়নি কেন?

সিয়ারা আর দেবাংশু দুজনেই বিষয়টাকে ঘুরানোর জন্য প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করে।

দেবাংশু: তোর জন্য আবার কেন? তোদের মধ্যে এতো কেচাল জেনেই আমি আর পিরিত করিনি। তাছাড়া আমাদের নিজেদের মধ্যেও কিছু ঝামেলা হয়েছিলো।

সিয়ারা: ঝামেলা?

আধভিক: আব সেসব কথা পরে হবে। আমি ড্যাডের সাথে দেখা করে আসছি ওকে?

আধভিক হাসিমুখে সিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে আভাস বাবুর কাছে চলে গেলে দেবাংশু আধভিকের যাওয়ার পথ থেকে চোখ সরিয়ে সিয়ারার দিকে তাকায়। দেখে সিয়ারা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ওদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে।

দেবাংশু: ফাইনালি তোদের মধ্যে সব মিটেছে তাই তো?

সিয়ারা: হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে সবকিছু মিটেছে। কিন্তু এখনও অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর খুঁজে বার করতে হবে।

দেবাংশু: তোরা একসাথে থাকলে সব কিছুর সমাধান খুব সহজে হয়ে যাবে সিয়া। শুধু এটুকু বলবো একে অপরকে ভুল বুঝিস না কখনও আর ছেড়ে যাওয়ার কথা তো মাথাতেও আনিস না।

“ছেড়ে যাওয়ার কথা তো মাথাতেও আনিস না” এই কথার উপর দেবাংশুকে এতটা জোর দিতে দেখে সিয়ারা অবাক হলো।

সিয়ারা: তোদের মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো?

দেবাংশু: ভুল বোঝাবুঝি! এটুকু জেনে রাখ, এমন কেউ আছে যে আধভিককে নিঃস্ব করতে চায়। ওকে একা করে দিতে চায়, হয়তো প্রাণেও মারতে চায়।

সিয়ারা: দেব! কি বলছিস এসব? (আতঙ্ক নিয়ে)

দেবাংশু: আমি জাস্ট আমার ইনস্টিংসের উপর ভরসা করে বললাম। প্রমাণ আমার কাছেও নেই। এইজন্য বলছি, ওকে একা ছেড়ে দিস না কখনও।

সিয়ারা: তুই জানিস ও’কে তোর আর আমার ছবি দেখানো হয়েছিলো?

দেবাংশু: যতদূর মনে হয় ওটা যখন তুই নার্সিংহোমে অ্যাডমিট ছিলিস তখনকার। এখন আর ওগুলো নিয়ে ভেবে মাথা খারাপ করিস না। শুধু এটুকু মাথায় রাখ, এতদিন ওদের সময় ছিলো। এইবার তোদের সময় এসেছে।

সিয়ারা বেশ আত্মবিশ্বাসী অনুভব করলো দেবাংশুর শেষ কথাটায়। দেবাংশু বিষয় পরিবর্তন করে বললো,

দেবাংশু: নাহ এবার যাই। আমার গার্লফ্রেন্ডরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

সিয়ারা: গার্লফ্রেন্ডরা? (জোর দিয়ে)

দেবাংশু: আরে কি আর বলবো তোকে, পার্টিতে গেছিলাম না ভিকির? ওখানেই অনেকগুলো মেয়ের সাথে কথা হয়েছে। ইভেন ওরা আমার নাম্বারও জোগাড় করে ফেলেছে। তুই তো জানিসই আমি কোনো মেয়ের কাছে যাইনা? (ভাও খেয়ে)

সিয়ারা: তাই বলে ওদের ফিলিংস নিয়ে খেলবি তুই দেব? তোকে কতবার বারণ করবো এরকম প্লে বয় হয়ে জীবন চলবে না তোর।

দেবাংশু: সিয়া এই মেয়েগুলো কেউ আমাকে ভালোবাসে না। ওরা জাস্ট আমার ফেম, আমার টাকাকে ভালোবাসে। যাতে ওরা আমার দ্বারা ইন্ডাস্ট্রিতে চান্স পেতে পারে। ইউজ করতে চায় আমাকে ঠিক যেমন ভাবে…

দেবাংশু চুপ করে যায় আর চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। সিয়ারা নরম হয়ে যায় দেবাংশুর কথা শুনে। আলতো করে দেবাংশুর কাঁধে হাত রাখলে দেবাংশু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেই নীচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,

দেবাংশু: আমার লাইফে আমি আর একস্ট্রা কাওকে চাই না সিয়া। ড্যাড, তুই আর ভিকিই যথেষ্ট। আর ট্রাস্ট মি, প্লে বয় হলে এট লিস্ট এতো কষ্ট পেতে হয় না যতটা ভালোবেসে কষ্ট পেতে হয়। ফিলিংস আসলেই, ভালোবাসলেই নয় মানুষ সেটার সাথে খেলে আর না হয় ভাগ্য। আমি এসবে জড়াতেই চাই না।

সিয়ারা: আচ্ছা? সত্যি কি তুই চাস না যে তোর জীবনে এমন কেউ থাকুক যে শুধু তোর হবে? যে শুধু তোকে নিয়ে ভাববে, তোকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসবে। বল?

দেবাংশু: চাইলেই কি সব পাওয়া যায় সিয়া? বরং আমরা যেটা চাই সেটাই আমরা কখনও পাইনা। (তাচ্ছিল্য হেসে)

সিয়ারা: (হাসিমুখে) এটা ভুল কথা দেব। আমরা বেশিরভাগ্য সময় এমন জিনিস চেয়ে ফেলি যেটা হয়তো আমাদের জন্য তৈরিই হয়নি। আর যেটা আমাদের জন্য তৈরি হয়েছে আমরা সেটাকে গ্রহণ করতে পারি না। নিষিদ্ধ জিনিসেই মানুষের আকর্ষণ, কৌতূহল থাকে।

দেবাংশু: কিন্তু বিশ্বাস কর! ফিলিংস জিনিসটাই আমার মধ্যে আর নেই। আমার মনে হয়না আমি কাওকে কোনদিন ভালোবাসতে পারবো বলে। তার মানে এই নয় যে আমার ফিলিংস নেই বলে আমি অন্যদের ফিলিংস নিয়ে খেলবো। আমি আগেই সবাইকে জানিয়ে দি আই অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড অ্যাবাউট লাভ, রিলেশনশিপস অ্যান্ড অল!

সিয়ারা: আই নৌ দ্যাট ভেরি ওয়েল! আমি জাস্ট দেখতে চেয়েছিলাম তোকে প্লে বয় বললে তোর গায়ে লাগে না কি তুই অ্যাকসেপ্ট করে নিস বিষয়টা। আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো সত্যি ধীরে ধীরে প্লে বয়ই হয়ে যাচ্ছিস বাট নো, আই অ্যাম রং।

দেবাংশু: যাক আমি আমার টেস্টে পাস করে তোকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছি তাহলে? (হেসে)

সিয়ারা: হ্যাঁ কিন্তু আমি এটা বলতে পারি যে এখানে আমি ভুল হলেও একটা বিষয়ে আমি ঠিক প্রমাণ হবোই। (আত্মবিশ্বাসী হয়ে)

দেবাংশু: আচ্ছা, আর সেটা কি বিষয়ে?

সিয়ারা: তোর লাইফে এমন কেউ একটা আসবে যাকে তুই ভালোবাসবি আর অফকোর্স সেটা নিজের অজান্তে।

দেবাংশু: লাইক সিরিয়াসলি? মজা করছিস তুই সিয়া? (হেসে)

সিয়ারা: নো আই অ্যাম সিরিয়াস। তুই কি জানিস আমরা যেই জিনিসটার থেকে দূরে পালাতে চাই সেই জিনিসটাই আমাদের সামনে চলে আসে? আমার আর আভির বিষয়টাই দেখে নে। আমি তো চেয়েছিলাম পালাতে পেরেছি কি?

দেবাংশু: না, তবে…

সিয়ারা: (থামিয়ে দিয়ে) তুইও পালাতে পারবি না দেব। সবার জীবনে এক না একবার ভালোবাসা আসে আর তোর জীবনেও আসবে। এখন যেহেতু তুই এসবের থেকে পালিয়ে বেরাস তাই হয়তো তোর বুঝতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু এটুকু আমি জানি যে তুই ভালোবাসবি! কারণ আমাদের মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকলেও, মনের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আর ভালোবাসা মন থেকেই হয় মস্তিষ্ক থেকে নয়। এইবার আমি জানি না সেই মানুষটা তোর জন্য সঠিক হবে কি না তবে আমরা কেউই কিন্তু সঠিক নয় কাওর জন্য। আমরা চাইলেই মানুষটাকে সঠিক করে নিতে পারি ভালোবাসার দ্বারা যদি সে ভালোবাসার অর্থ বোঝে তো!

দেবাংশুকে ভাবুক হয়ে যেতে দেখে সিয়ারা বুঝলো ওর কথাগুলো দেবাংশুকে ভাবতে বাধ্য করেছে। হঠাৎই ওরা দুজন দেখলো দিয়ারা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে হোটেলের ব্যালকনির দিকে যাচ্ছে। দেবাংশু সেদিকে তাকিয়ে সিয়ারার কাঁধে হাত রেখে ওকে ভরসা দিয়ে চলে যায় সেদিকে। বিষয়টা সিয়ারার খটকা লাগলেও কিছু না বলে, নিজের জায়গায় কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে আভাস বাবুর ঘরের দিকে এগিয়ে যায় সিয়ারা। বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে সিয়ারা দেখতে পায় আভাস বাবু আধভিককে বুকে টেনে নিলেন। হয়তো কথা কাটাকাটি চলছিলো কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সিয়ারা হালকা হেসে ওখান থেকে সরে নিজের ঘরে চলে যায়।

ব্যালকনিতে,

দিয়ারা নিজের মনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভীষণ খুশি নিজের দিদিকে খুশি দেখে। এতোগুলো দিন পর সে নিজের দিদিকে ফিরে পেয়েছে এবং তাঁর দিদিও অবশেষে নিজের ভালোবাসাকে ফিরে পেয়েছে। দিয়ারা অতীতে নিজের বোকামির কথা মনে করে হাসে, যখন সে ভেবেছিলো সে আধভিককে ভালোবাসে।

দিয়ারা: থ্যাংক গড, সময় থাকতে আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু… মা? তুমি কীভাবে এতো বড়ো একটা ভুলটা করলে? তুমি তো দি’কে ভীষণ ভালোবাসতে তাই না? আমি তোমাকে অনেক মিস করছি মা, অনেক।

দিয়ারার মনটা আবার বিষন্নতায় ছেয়ে যায়। সে মনে মনে আধভিক আর সিয়ারার সম্পর্কের কথা মনে করে যখন তাঁর একসাথে ছিলো। সেসব ভেবে আফসোস সুরে বলে ওঠে,

দিয়ারা: দি কত্ত লাকি যে ভিকিদার মতো একজনকে নিজের জীবনে পেয়েছে। জীবনে এরকম একটা মানুষের খুব প্রয়োজন যে কি না তোমাকে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসবে। তোমাকে আগলে রাখবে, চোখে হারাবে। সবথেকে বড় বিষয় তুমি ছাড়া সে অন্য কাওকে নিজের মনে জায়গা দেবে না আর তুমি ব্যতীত তাঁর জীবনে অন্য কেউ আসবেও না।

একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে হাসলো দিয়ারা। নিজের আত্ম উপলব্ধির কথা মনে করে আবারও বলে,

দিয়ারা: দেখ দি, আজ আমিও ভালোবাসার মানে বুঝতে শিখেছি। আর শিখবো নাই বা কেন বল তো? চোখের সামনে তোদের দুজনকে যে দেখেছি। জানিস দি? আমারও ইচ্ছা করে এমন কাওকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে কিন্তু এখন তো বেশিরভাগ সবাই’ই মাঝপথে ছেড়ে যায়। বিশ্বাস করাটাই যে বড়ো কঠিন। আমি কি পাবো না এমন একজন জীবনসঙ্গী যে আমাকে ভালোবাসবে, আগলে রাখবে?

দেবাংশু: দিয়াআ!

পিছন ফিরে হঠাৎ দেবাংশুর চিৎকারে দিয়ারা চমকে উঠলো। দেবাংশুকে দেখে মনে হচ্ছে সে রেগে আছে কোনো বিষয়ে। দিয়ারা ইতোমধ্যেই নিজের হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়েছে এবং নীচে পরে থাকা সিগারেটের ফিল্টারগুলো লুকানোর চেষ্টা করছে পা দিয়ে।

দিয়ারা: ক..কি হয়েছে দেবদা? তুমি রেগে আছো কিছু…

দেবাংশু: সিগারেট খাস তুই?

দিয়ারা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা না বলে। কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছে না।

দেবাংশু: কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি?

দিয়ারা: হ্যাঁ মানে যখন একটু ফ্রাস্টেটেড লাগে, বা টেনশন হয় কিছু নিয়ে তখনই আর কি একটু আধটু…

দিয়ারা দেবাংশুর চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে চুপ করে গেলো। মাথা নীচু করে সমানে আঙুল কচলাচ্ছে দিয়ারা। কেন জানি ছোটো থেকেই এই ছেলেটার মুখের উপর কথা বোকার সাহস হয়নি ওর কখনও। নিজের মা, দিদির উপরেও কিছু সময় কথা বলেছে কিন্তু দেবাংশু? কক্ষনো না! আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অন্য কেউ যদি থাকতো দেবাংশুর জায়গায় তাহলে এতক্ষণে দিয়ারা কথা শুনিয়ে দিতো।

দেবাংশু: এখনকার দিনে মেয়েরা কোনো কিছুতেই পিছিয়ে নেই। এখন মেয়েদের ড্রিংক, স্মোক করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তফাৎ একটাই কেউ লুকিয়ে করে আর কেউ প্রকাশ্যে, কেউ কম তো কেউ বেশি। আর সবথেকে বড়ো কথা আমি তোকে মানা করার কেউ হই না। শুধু এটুকুই বলবো, এই জিনিসটা তোর ক্ষতি করছে। তাই এমন কিছু করিস না যেটা তোর ক্ষতি করবে।

দিয়ারা: আমি বললাম তো মাঝে সাঝে…

দেবাংশু: মিথ্যে বলার চেষ্টা করিস না। পা দিয়ে যেটা লুকানোর চেষ্টা করছিস সেটা লুকাতে পারবি না তুই আমার থেকে। মিথ্যে বলাও শিখে গেছিস দেখছি। অনেক বড়ো হয়ে গেছিস বল? যাই হোক আমি আর কিছু বলবো না।

দেবাংশু পিছন ফিরে চলে যেতে নিলে দিয়ারা কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দেবাংশুর জ্যাকেটটা পিছন থেকে টেনে ধরে। দেবাংশু ফেরে না দিয়ারার দিকে, দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর দিয়ারা ধীর কণ্ঠে বলে,

দিয়ারা: স্যরি!

দেবাংশু দিয়ারার কথা শুনে সামনের দিকেই তাকিয়ে থেকে নিজের হাতটা পিছনে নিয়ে গিয়ে দিয়ারার হাত থেকে জ্যাকেটটা ছাড়িয়ে নেয় তবে ওর হাতটা ছাড়ে না। ওর হাতের কব্জিটা ধরেই রাখে কিন্তু ইতিমধ্যে দিয়ারার চোখ জলে ভরে উঠেছে। কিন্তু এর কারণ সে জানে না।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here