কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ৩৯|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
252

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

দেবাংশু দিয়ারার কথা শুনে সামনের দিকেই তাকিয়ে থেকে নিজের হাতটা পিছনে নিয়ে গিয়ে দিয়ারার হাত থেকে জ্যাকেটটা ছাড়িয়ে নেয় তবে ওর হাতটা ছাড়ে না। ওর হাতের কব্জিটা ধরেই রাখে কিন্তু ইতিমধ্যে দিয়ারার চোখ জলে ভরে উঠেছে। কিন্তু এর কারণ সে জানে না।

দিয়ারা: স..স্যরি! (কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে)

দেবাংশুর কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো দিয়ারার গলার স্বর শুনে। ও তৎক্ষণাৎ দিয়ারার দিকে ফিরতেই দেখলো সে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেবাংশু ওর দিকে ফেরার কিছুক্ষণ পরেই দিয়ারা মাথা তুলে তাকায় আর দেবাংশু অবাক হয়ে যায় দিয়ারার চোখে জল দেখে।

দেবাংশু ওকে বকেছে দিয়ারা এইজন্য কাঁদছে? কীভাবে সম্ভব এটা? মাথায় আসছে না দেবাংশুর। যেই মেয়ে কে কি না হাজার বকলে, মারলেও তানর চোখ দিয়ে জল পরে না সহজে, আজ সেই মেয়ে দেবাংশুর সামান্য বকায় কেঁদে দিলো?

দেবাংশু: তুই, তুই কাঁদছিস কেন? দেখ, আমি তোকে হার্ট করতে চাইনি আমি শুধু…

দিয়ারা: আর হবে না! (চোখের জল মুছে)

দিয়ারা দেবাংশুর জ্যাকেট ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছে নিলো। কিন্তু কেমন একটা নার্ভাস ফীল হচ্ছে ওর তাই আঙুল মোচড়াতে লাগলো। দেবাংশু দিয়ারার লাল মুখটা দেখে একটা ঢোঁক গিলে নিজের গলাটা ভিজিয়ে নিলো। “কি মিষ্টি লাগছে মেয়েটার মুখটা!” মনে মনে দিয়ারার প্রশংসা করে সামান্য শব্দহীন হাসলো দেবাংশু।

দেবাংশু: (দিয়ারার দুই বাহুতে হাত রেখে) এসব খাওয়াটা ঠিক না দিয়া। ছেলে মেয়ে কাওর জন্যেই ঠিক না। আমিও তাই জন্য এসব ছেড়ে দিয়েছি। আমি চাই না তোর কোনো ক্ষতি হোক।

দিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে কথাটা শুনে দেবাংশুর দিকে তাকালে দেবাংশু হালকা হেসে ওকে চোখ দিয়ে ভরসা দিলো। দিয়ারাও তাই চোখ সরিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।

দেবাংশু: শীত বাড়ছে, যা ঘরে যা এখন।

দিয়ারা: তুমি ঘরে যাবে না?

দেবাংশু কিছু না বলে শুধু হাসলো আর দিয়ারার হাত ধরে এগিয়ে যেতে শুরু করল। দিয়ারা দেবাংশুর পিছনে হাঁটতে হাঁটতে অবাক হয়ে একবার ওদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার দেবাংশুর দিকে তাকাচ্ছে।

দেবাংশু: যা, গিয়ে রেস্ট নে।

দিয়ারা ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে দেবাংশু ওর দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ না দিয়ারা দরজা দিচ্ছে। ঠিক কিসের আশায় দেবাংশু তাকিয়ে আছে দিয়ারার দিকে সেটার উত্তর ওর কাছে নেই। দিয়ারা দরজাটা ধরে দাঁড়িয়ে, দরজা বন্ধ করার ঠিক আগের মুহুর্তে দেবাংশুকে বললো,

দিয়ারা: তুমিও রেস্ট নাও দেবদা। আমি ঠিক আছি আর তোমার কথা মনে থাকবে আমার।

দেবাংশুর মুখে জয়ের হাসি ফুটে ওঠে। সে হয়তো এটাই চাইছিলো যে দিয়ারা তাঁর সাথে কথা বলুক। ওর মনে হচ্ছিলো আজ ওর কথা গুলো বলায় দিয়ারা হয়তো ওর সাথে কথা বলবে না তাই তো সে এটা চাইছিলো। কিন্তু এমন কেন চাইছিলো সে? কি এমন হবে দিয়ারা কথা না বললে? দেবাংশুর জন্য উদাসীন হয়ে থাকলে?

দেবাংশু: দরজাটা লক করেনে। চেনা পরিচিত লোক না হলে দরজা খুলবি না রাতে, মনে থাকবে?

দিয়ারা: (অবাক হয়ে) আব, হ্যাঁ ঠিক আছে।

দেবাংশু আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলে দিয়ারা দরজা দিয়ে দেয় আর ভাবতে থাকে হঠাৎ এমন ভাবে সাবধান করলো কেন দেবাংশু? এদিকে, দেবাংশু নিজের ঘরে যেতে যেতে মনে মনে ভাবতে থাকে কিছু কথা।

দেবাংশু: (মনে মনে — এই অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরটাকে একটু শিক্ষা দিতে হবে মনে হচ্ছে। প্রথম থেকেই দেখছি দিয়ার দিকে ওর নজর। এমন ভাবে তাকায় জানো…ওর ব্যবস্থা করতে হবে আমায়।)

দেবাংশু দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো ভেবে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু তখনই ওর মন আবার কিছু বলে উঠলো কিন্তু এবার সেটা মনের ভিতরে প্রকাশ পেলো না, প্রকাশ পেলো মনের বাইরে সজোরে।

দেবাংশু: হোয়াট দ্যা হেল! হোয়াট’স রং উইথ ইউ দেব? আমি কেন দিয়ারাকে নিয়ে এত ভাবছি? প্রোটেক্টিভ, পজেসিভ হয়ে যাচ্ছি ওকে নিয়ে? ড্যাম ইট! কি হচ্ছে আমার সাথে এসব। না না না, আমি আর ওকে নিয়ে ভাবতে চাইছি না। আজকেও জানি না কি হলো ওকে সিগারেট নিয়ে বোঝাতে, জ্ঞান দিতে চলে গেলাম। ও স্মোক করুক, ড্রিংক করুক তাতে আমার কি? ও একটা মডেল ও তো এসব করবেই তাছাড়া এমন অনেক সাধারণ মেয়ে আছে যারা স্মোক করে। তাহলে আমি ওকে নিয়ে কেন ভাবতে যাচ্ছি? আর যেহেতু ও মডেল তাই ওকে তো ডিরেক্টর, ফটোগ্রাফাররা দেখবেই, তাতেই বা আমার কি?

দেবাংশু দু হাত নিজের মাথার চুল পিছন দিকে টেনে ধরে মুখ সিলিংয়ের দিকে করে চোখ বন্ধ রাখলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ করেই ওর চোখের সামনে কিছু ভেসে উঠলো,

ফ্ল্যাশব্যাক……………………..

__হেই গর্জিয়াস! তুমি দিয়ারা রাইট?

দিয়ারা: (হেসে) ইয়াহ, দিয়ারা সান্যাল। আপনি, আপনি তো ফেমাস ফ্যাশন ডিজাইনার অর্জুন চ্যাটার্জী? ঠিক বলছি?

অর্জুন: একদম ঠিক বলেছো ডিয়ার! (হাস্কি সুরে)

অর্জুনের এরকম কণ্ঠস্বর ও চাহুনি দেখে দিয়ারা হালকা হেসে মুখ নামিয়ে চোখ অন্যদিকে ঘুরাতে লাগলো। নার্ভাস হওয়ার দরুন দিয়ারা দু হাতের আঙুল নিজেদের মধ্যে ঘসছে। এরপর হঠাৎই অর্জুন দিয়ারার বাহুতে হাত রাখলে দিয়ারা প্রথমে অর্জুনের হাতের দিকে তাকায় তারপর তাঁর চোখের দিকে। ওদের দুজনের নজর এক জায়গায় মিলিত হলেই অর্জুন নজর স্থির রেখেই দিয়ারার মুখের দিকে ঝুঁকে পরে। কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে, ধীরে ধীরে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কিছু বলে পিছনে সরে আসে। বদলে দিয়ারাও একভাবে অর্জুনকে কিছু বলে তারপর ওখান থেকে সরে যায় আর অগ্রসর হয় গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা হলের একটা রুমের দিকে। অর্জুনও কিছু মুহুর্ত পর দিয়ারা যেদিকে গেছে সেদিকে চলে যায়।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড…………………………..

ঝট করে দেবাংশু চোখটা খুলে ফেলে। বড়ো নিশ্বাস ছাড়তে শুরু করে দেবাংশু মুখ দিয়ে। এই বিষয়টা সে কিছুদিন পার্টির দিনই লক্ষ্য করেছে, ভেবেছিলো দিয়ারাকে বলবে কিন্তু সময় পায়নি একের পর এক ঘটনা ঘটে যাওয়া।

দেবাংশু: কবেকার বিষয় নিয়ে এখনও আমার কেন অস্বস্তি হচ্ছে? ওর লাইফ ও যাঁর সাথে যা ইচ্ছা করুক! আমার তাতে কি? উফ দেব, কি হয়ে গেছে তোর?

দেবাংশু মুখ ঢেঁকে বসে পরলো বেডের উপর। কিছুক্ষণ ওইভাবে বসে থেকে নিজেকে শান্ত করবে ভেবেছিলো কিন্তু সমানে ওই ঘটনা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো। দিয়ারা হাসি মুখে ছেলেটাকে সম্মতি জানালো, এটা যেনো সহ্য হচ্ছে না দেবাংশুর। যার দরুন ওর রাগটা আরো বাড়ছে। তাই সে চটজলদি নিজের চোখ খুলে নিজেকে বোঝাতে শুরু করলো।

দেবাংশু: দেখ দেব, ও’কে তুই অনেকদিন আগে থেকে চিনিস জানতে পেরেছিস তাই জন্যেই তোর এমন ফীল হচ্ছে। আর তার উপর তুই ও’কে এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারিসনি এই বিষয়ে, তাই হয়তো এমন লাগছে। দ্যাট’স ইট!

দেবাংশু আবারও চোয়াল শক্ত করে নিলো। সে বুঝে উঠতে পারছে না কেন সে নিজের মন কে মানিয়ে উঠতে পারছে না বিগত কয়েকদিন ধরে। সে দিয়ারা কে এইসব বিষয়ে প্রশ্ন করার কেউ হয় না, এটা কিছুতেই সে বোঝাতে পারছে না নিজেকে। বার বার এইসব চিন্তা ভাবনা ওকে পাগল করে তুলছে।

দেবাংশু: যখন বিষয়টা ঘটেছে আমার চোখের সামনে তখন থেকে আমার এতো রাগ কেন হচ্ছে? কই সিয়াকে অন্যকাওর সাথে দেখে তো আমার এমন ফীল হয় না। ও’কে তো আমি নিজের বোন মনে করি…

দেবাংশু নিজের করা উত্তরে নিজেই চুপ করে গেলো। সিয়ারাকে সে নিজের বোন মনে করে আর দিয়ারাকে…??

দেবাংশু: না না না! দিয়ারাকে আমি নিজের বন্ধু মনে করি। হ্যাঁ, বন্ধু মনে করি। সিয়ার সাথে বেশি ছোটোবেলায় আমার ওর সাথে বন্ডিং ছিলো তাই। ব্যাস, আর কিছুই না। বন্ধু অনুযায়ী আমার ওর সাথে এই নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে, তাই আমি কথা বলবো। ফাইন, ফাইন!

দেবাংশু কোনমতে নিজেকে বুঝিয়ে, সামলে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। যেদিন থেকে দিয়ারাকে দেখেছে সেদিন থেকেই কেন জানো ফাঁকা সময়ে চোখ বন্ধ করলেই তাঁর দিয়ারার কথা মনে পরছে সাথে ওই ঘটনা। কেন এমন হচ্ছে দেবাংশুর সাথে??

পরেরদিন,

সকাল বেলা রেডি হয়ে সিয়ারা নীচে নামতেই দেখলো সবাই রিসেপশনে দাঁড়িয়ে কথা বার্তা বলছে। সিয়ারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো পিছনে আর ওদের কথা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। দিয়ারাও ওদের মাঝে সেখানে উপস্থিত তাই ও তাঁকেও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দিয়ারা নিজের পিছনে কাওর উপস্থিতি টের পেলো এবং পিছন ফিরল। দেখলো, দেবাংশু দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও কিছু নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছে। অন্তত ওর মুখের অভিব্যক্তি এবং চাহুনি তো তাই বলছে।

দেবাংশু: (মনে মনে — এই মেয়েটাকে মনে হচ্ছে এইবার উচিৎ একটা শিক্ষা দিতে হবে। না মানে ওর দিকে কেউ খারাপ ভাবে তাকিয়ে আছে আর ও, তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াও! আনবিলিভবল!) (অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে আবার ওদের দিকে তাকালো)

সিয়ারা: (দেবের কাঁধে হাত রেখে) কি হয়েছে দেব? তোকে এমন বিরক্ত দেখাচ্ছে কেন? কোনো প্রবলেম হয়েছে?

দেবাংশু: ঠিক আছি আমি। (দিয়ারার দিকে তাকিয়ে থেকেই)

সিয়ারা দেবাংশুর গম্ভীর গলার স্বর শুনে আর কিছু না বলে সামনের দিকে তাকালো। অন্যদিকে, দিয়ারা অনুভব করলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দিয়ারা চোখ ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো সিয়ারা আর দেবাংশু দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ারাকে দেখে ও হাসলেও দেবাংশুকে দেখে ওর মুখের হাসি উবে গেলো।

দিয়ারা: (মনে মনে — একি? এরমভাবে তাকিয়ে আছে কেন আমার দিকে? গত রাতে তো সব ঠিকই ছিলো তাহলে এখন আবার কি হলো? যাহ বাবা! এক কাজ করি, এই সুযোগে এখান থেকে সরে যাই। এই অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরের নজর থেকে এটলিস্ট বাঁচবো দেবদার কাছে গেলে।)

কথাটা ভাবার পর পরই দিয়ারা নিজে প্রতি একটু অবাক হয়ে গেলো। লাজুক হেসে আধভিককে বললো,

দিয়ারা: আমি দি’য়ের কাছে যাচ্ছি।

আধভিক দিয়ারার কথা শুনে পিছন ফিরে একবার সিয়ারাকে দেখে নিয়ে দিয়ারাকে ইশারা করলো যাওয়ার জন্য। দিয়ারা গুটি গুটি পায়ে সিয়ারার সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটু হাসলো তারপর দেবাংশুর দিকে তাকালো যে এখনও ওর দিকে একইরকম কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দিয়ারা কিছু বলবে তার আগেই দেবাংশু নিজের জায়গা থেকে সরে দিয়ারার পিছনে চলে গেলো। দিয়ারা দেবাংশুর দিকে ঘুরলে দেবাংশু স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো,

দেবাংশু: কি কথা হচ্ছিলো ওখানে?

দেবাংশু একবার পিছন ফিরে অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরের দিকে তাকালো তার কিছুক্ষণ পর দিয়ারার দিকে তাকালে দেখে দিয়ারাও ওর দিকে তাকালো ওনার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে। দেবাংশু এইবার দিয়ারার দিকে এগিয়ে একটু বাম দিকে চেপে এমন ভেবে দাঁড়ালো যাতে দিয়ারা আর কোনোভাবে ওদিকে দেখতে পাচ্ছে না। অর্থাৎ ওদিকে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিও ওকে দেখতে পাবে না, দেবাংশু দিয়ারাকে পুরোপুরি গার্ড করে দিয়েছে। দিয়ারা ঠোঁটে সামান্য হাসির ছোঁয়া রেখে দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে আছে।

দেবাংশু: কি হলো? বললি না তো?

দিয়ারা: আব, তুমি আর দি এই সিরিয়ালটায় কাজ করবে না।

সিয়ারা: কি? মানে কেন?

দিয়ারা: তুই আর দেবদা দুজনেই চাস না অভিনয় জগতে আসতে তাই ভিকিদা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভিকি দা তো বলেই দিয়েছিল যে, ও চাইলে সিরিয়ালের চরিত্র বদলে দিতে পারে তাই সেটাই করছে ও।

সিয়ারা: কিন্তু দেব! আংকেল? আংকেল তো চেয়েছিলো আমরা ডেবিউ করি অভিনয় জগতে।

দেবাংশু: আমার মনে হয় না পাপা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করতে আমাদের জোর করবে বলে। পাপা কে একটু বুঝিয়ে বলতে হবে। দেখ, পাপা বলার সাথে সাথেই আমরা রাজি হয়ে গেছিলাম পাপার মন রাখতে। এখন যদি পাপা কে একটু বুঝিয়ে বলি পাপা আপত্তি করবে না যা মনে হয়। তাছাড়া, ভিকি তো আছেই। ও ঠিক সামলে নেবে ওই দিকটাও।

আধভিক: সামলে নিয়েছি অলরেডি!

দেবাংশুর কথা শেষ হতেই ওর পাশে আধভিক এসে দাঁড়ালো। সিয়ারা আধভিককে জিজ্ঞেস করলো,

সিয়ারা: তুমি আংকেলের সাথে কথা বলেছো?

আধভিক: হ্যাঁ। কথা বলে নিয়েছি কালকে রাতেই। আংকেলের কোনো প্রবলেম নেই। দেবাংশু যেটা চায় ও সেটাই করতে পারে আর তুমিও।

দেবাংশু: বলেছিলাম না? আমার পাপা আমার কথা শোনার আগে অলয়েজ ভিকির কথাই শোনে। (অসহায় ভাব করে)

আধভিক: (মুচকি হেসে) হিংসাটা কম কর তুই। যাই হোক, দিয়া! তোর জন্য একটা কাজের অফার এসেছে।

দিয়ারা: ফটোশুট নাকি অ্যাডভারটাইজমেন্ট?

আধভিক: আব, আগে ফটোশুট হবে একটা ম্যাগাজিনের জন্য। দ্যান একটা অ্যাডভারটাইজমেন্ট শুট করবি তারপর সিরিয়াল। সমরেশ বাবুর সাথে যে অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর আছে, সেই অফারটা দিয়েছে।

দেবাংশু: ও করবে না কাজ টা।

দিয়ারা কিছু বলার আগেই দেবাংশু কথাটা ঝট করে বলে দিলে ওরা তিনজনই অবাক হয়ে যায়। কিন্তু দেবাংশুর কোনো পরিবর্তন নেই।

আধভিক: দিয়া, তুই…

দেবাংশু: দিয়া তুই কাজটা করবি? (তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে, শাসিয়ে)

দিয়ারা: না না। আমি, আমি এই কাজটা করতে চাই না। মা..মানে পারবো না আর কি কাজটা করতে।

আধভিক: আর সেটা কেন? তুই কি অর্জুন চ্যাটার্জীর প্রপোজাল অ্যাকসেপ্ট করেছিস?

দিয়ারার লাজুক হাসি দেখেই সবাই উত্তর পেয়ে গেলো কিন্তু দেবাংশুর চোখের সামনে আবারও ওই ঘটনার প্রতিফলন হতে লাগলো। ওর বুকের ভিতরটা কেমন একটা করছে আধভিকের কথা শুনে দিয়ারার রিয়্যাকশনে।

দেবাংশু: কিসের, কিসের প্রপোজাল?

আধভিক: তুই জানিস নিশ্চয় উনি একজন নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনার। উনি নিজে দিয়ারাকে ওনার ফ্যাশন হাউজের মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছেন তো আবার শো’জ টপার। (হেসে) ইউ নো দিয়া? উনি আমাকে জাস্ট পাগল করে দিচ্ছেন তোর উত্তর জানার জন্য, ব্যাপারটা কি বল তো?

সিয়ারা: তুইও তো দেখছি ওনার নাম শুনে একবারে লাল টমেটো হয়ে গেলি, কি ব্যাপার হম?

দিয়ারা: উফ ভিকি দা! দি! তোমরা টিজ করা বন্ধ করো প্লিজ। এমন কিছুই না। ওনাকে আমি জাস্ট পছন্দ করি, ওনার ফ্যাশন হাউজের হয়ে মডেলিং করাটা অনেক মডেলারের স্বপ্ন। আমারও সেটাই আর কিছুই না। যেখানে সবাই এতো চেষ্টা করে এই সুযোগটা পাওয়ার জন্য সেখানে আমি কোনো চেষ্টা না করেই সুযোগটা পেয়ে গেলাম এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।

আধভিক: এটাকে সুযোগ না, সুবর্ণ সুযোগ বলে দিয়া। তুই…

দেবাংশু ওখান থেকে চলে গেলে আধভিক থেমে যায়। ওর তিনজনই দেবাংশুর এমন হঠাৎ চলে যাওয়ায় অবাক হয়ে যায়।

আধভিক: ও এভাবে চলে গেলো কেন?

সিয়ারা: সকাল থেকে দেখছি ওর কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কিছুই তো বলছে না।

আধভিক আর সিয়ারার কথা শুনে দিয়ারা নিজেও চিন্তিত হয়ে পরলো দেবাংশুকে নিয়ে। মনে মনে ঠিক করলো দেবাংশুর সাথে কথা বলতে হবে এই নিয়ে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here