কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ৪৬|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
250

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

রাত হয়ে গেছে। সিয়ারা নিজের ঘরে বসে রাজ গজগজ করছে। বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আর নিজের মনে মনে বলছে,

সিয়ারা: সাহস কত বড়! একে তো ভুল করলো। তার উপর এখন একটা কলও করছে না। কল দূরের কথা একটা টেক্সট অবধি করলো না? সরি বলার কোনো প্রয়োজনই মনে করে না তাই না? ঠিক আছে। থাকুক ওভাবে। আমি না কথা বলবো আর না দেখা করবো। দেখি কত দিন থাকতে পারে। হুহ!!

সিয়ারা রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে। কিছুতেই স্থির হতে পারছে না ও। যতই মনে মনে নিজেকে বলছে, যে না ও আর ভাববে না এই নিয়ে। তত বেশি ওর মনে পরে যাচ্ছে এই বিষয়ে। পায়চারি করতে শুরু করে একটা সময় সিয়ারা। এমন সময় দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ পেলে সিয়ারা বলে,

সিয়ারা: দরজা খোলা আছে দেব। আসতে পার…তুমি… উমম..??

সিয়ারা দরজার দিকে পিছন ফিরে ছিলো। ও ভেবে ছিলো দেবাংশু এসেছে তাই না দেখেই আসতে বলেছিল। কিন্তু কিছু একটা ভেবেই ও যখন সামনে ফেরে তখন অবাক হয়ে যায় আধভিককে দরজা বন্ধ করতে দেখে। সিয়ারা এগিয়ে গিয়ে আধভিককে আটকাতে গেলে আধভিক সিয়ারাকে কাছে টেনে ওর কথা বন্ধ করে দেয় নিজের ঠোঁটজোড়ার দ্বারা। সিয়ারা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আধভিককে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। সিয়ারা যখন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করে শান্ত হয়ে যায় তখন আধভিক সিয়ারাকে ভালোবাসতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর তেষ্টা মিটিয়ে আধভিক যখন সরে আসে তখন সিয়ারা ধীরে ধীরে চোখ খোলে। আধভিক কিছু বলতে যায় তার আগেই সিয়ারা আধভিককে হালকা ঠেলে দিয়ে নিজে পিছনে সরে গিয়ে বলে,

সিয়ারা: সাহস কি করে হয় তোমার ড্রিংক করে আমার কাছে আসার? কেন এসেছ এখানে? এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। কোনো কথা বলতে চাইনা আমি তোমার সাথে।

আধভিক: সিয়ু আমার কথাটা একবার শোনো। আমি জানি আমার ভুল হয়েছে কিন্তু…

সিয়ারা: আচ্ছা? তোমার বলা উচিত তুমি জেনে বুঝে ভুল করেছো। আমাকে ওখানে ডাকার কি দরকার ছিলো যখন তুমি তোমার বান্ধবীর সাথে ড্রিংক করবে, গল্প করবে বলে ঠিক করেছিলে? আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ইগনোর করেছো তুমি।

সিয়ারা আর কিছু বলতে পারলো না পিছন ঘুরে গেলো। ওর কথাগুলো কান্নার সাথে মিলে গিয়ে জড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। এতক্ষণ যেই মানুষটার উপর রাগ ছিলো তা মানুষটা সামনে আসায় অভিমানে বদলে যেতে শুরু করেছে। হয়তো ও জানে, এই মানুষটা ঠিক ওর অভিমান ভাঙাবে। একমাত্র ওরই অধিকার আছে এই মানুষটার উপর অভিমান করার। ছোটো ছোটো বিষয়ে অভিমান করার। ওর বিশ্বাস যতই ছোটো বিষয়ে অভিমান করুক ও, এই মানুষটা ঠিক সেটার পরোয়া করবে এবং ওকে মানাতে আসবে।

সিয়ারা নিজের কান্নাটা ঠোঁট কামড়ে আটকে ফেলে। তখনই অনুভব করে আধভিকের একটা হাত ওর কোমর পেঁচিয়ে নিচ্ছে। সাথেই সাথেই সিয়ারা ধাক্কা খায় আধভিকের বুকে। আধভিক একটু ঝুঁকে সিয়ারার ঘাড়ে মুখ গুঁজে নাক ঘষে দিল সিয়ারা একটু মাথাটা সরিয়ে নেয় বিপরীত দিকে।

আধভিক: আই অ্যাম সরি মাই লাভ! আমার একদম উচিত হয়নি ওরকম ভাবে তোমার বসিয়ে রাখা। আমার সত্যি ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি জেনে বুঝে কোনো ভুল করিনি, বিশ্বাস করো আমায়।

সিয়ারা: তুমি..তুমি এখনও ড্রাংক আভি? সিরিয়াসলি? তুমি..

সিয়ারা ভীষণ রেগে গিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আধভিকের থেকে। আধভিকের থেকে বেশ অনেকটা দূরে সরে গিয়ে বলে,

সিয়ারা: আমি আর তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা। আমি তোমাকে বলেছিলাম ড্রিংক, স্মোক করা থেকে বিরত থাকবে। আমার অনুপস্থিতিতে দুবছর কি করেছো আমার দেখার দরকার নেই, এখন যখন আমি আছি তখন আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার কথা রাখবে কিন্তু নাহ..চলে যাও। চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। (রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)

আধভিক: সিয়ু…

সিয়ারা: মরে গেছে সিয়ু!

সিয়ারার তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়ে দেওয়ায় আধভিক চুপ করে গেলো। দুজনেই কোনো কথা বলছে না। একটা পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে ঘরে। সিয়ারার মাথাটা গরম থাকায় উত্তেজনার বশে কি বলে ফেলেছে এখন ভাবছে সে। এদিকে আধভিক ধীরে ধীরে নীচের দিকে দৃষ্টি রেখেই পিছাতে শুরু করে। সেটা দেখে সিয়ারা ঝট করে বলে ফেলে,

সিয়ারা: কোথায় যাচ্ছো?

আধভিক: চলে যাচ্ছি।

সিয়ারা: ক..কি শুনতে বলছিলে?

আধভিক: এতক্ষণ যখন শোননি, তখন আর শোনার প্রয়োজন নেই।

আধভিক পিছন ঘুরে চলে যাওয়ার আগেই সিয়ারা আধভিকের বুকের সাথে মিশে যায় ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। কান্না মিশ্রিত গলায় বলে,

সিয়ারা: তুমি তো জানো আভি আমি পছন্দ করিনা তোমার ড্রিংক করাটা। তুমি আমাকে না জানালেও আংকেল আমাকে সেই প্রথমেই জানিয়েছিলেন এগুলো তোমার শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। আমি চাই না তোমার আর কোনো ক্ষতি হোক। এই দুই বছরে তুমি যে এসবের পরোয়া করোনি, শরীর খারাপ করেছো, নিজের ক্ষতি করেছো আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। তাই এগুলো স্ট্রিক্টলি বারণ করেছি নাহলে প্রথমে তো পুরোপুরি বারণ করিনি বলো? কেন বোঝো না তুমি আমায়?

সিয়ারা আর বলতে পারে না ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে তা দেখে আধভিক সিয়ারাকে জড়িয়ে ধরে। সিয়ারার হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়ে যায় আধভিক জড়িয়ে ধরলে।

অন্যদিকে,

দিয়ারা ক্লাবের বার সাইডে বসে আছে চুপচাপ। লাউড মিউজিক, সবার আনন্দ করা, ড্রিংক করা সব কিছুর মাঝে দিয়ারা নিজের ভাবনার জগতে হারিয়ে রয়েছে। এতো কি ভাবছে সে?

দিয়ারা: (মনে মনে — আজ অনেক কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি আমি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর না পেলেই ভালো হতো। কেন হলো এমন? কেন নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না আমি? আমি তো ঠিক করেছিলাম কখনও কাওর প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হতে দেবো না। তাহলে কীভাবে..কীভাবে?? কীভাবে আমি দেবদা কে ভালোবেসে ফেললাম? এখন বুঝতে পারছি কেন ও আমার সামনে আসলেই আমার বুকের ভিতরটা ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করতো। ও কোনো কিছু বললে আমি কেন এড়িয়ে যেতে পারতাম না। ওর সাথে থাকতে আমার এতো কেন ভালো লাগে। সারাদিন কেন ওকে নিয়েই ভাবছি। আর আজ, আজ যখন ওই মেয়েটা ও’কে জড়িয়ে ধরলো! এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিলো সময় জানো স্তব্ধ হয়ে গেছে, আমার পুরো পৃথিবীটাই নড়ে উঠেছিলো। আমি, আমি ভালোবেসে ফেলেছি দেবদাকে।….) না না না। এসব কি ভাবছি আমি? হয়তো, হয়তো এগুলো সব ভালো লাগার মধ্যে পরে। আমি ওকে ভালোবাসতে যাবো কেন? কদিনেরই বা পরিচয় ওর সাথে আমার? এই কদিনে ভালোবাসা হয় নাকি আবার? ধুর! কিন্তু…

হঠাৎই দিয়ারার মাথায় নিজের দিদি আর আধভিকের বিষয়টা মাথায় আসে। আধভিক তো প্রথম দেখাতেই মন দিয়ে বসে ছিলো ওর দিদিকে। আবারও সে নিজের মাথা থেকে ভাবনা গুলো ঝেড়ে ফেলে আর নিজেকে বলে,

দিয়ারা: ভিকি দা প্রথম দেখায় ভালোবেসেছে বলে যে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি তার কি মানে? আমি বেশি ভাবছি। ও হয়তো আমাকে নিয়ে এসব কিছুই ভাবে না। কিন্তু যদি তাই হয় তাহলে ও এত কেন পরোয়া করে আমি কথা না বললে, ওকে ভুল বুঝলে? উফ ভগবান! আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। (দু আঙুল দিয়ে কপালের দু পাশ চেপে) ওয়েটার! একটা স্কচ দিন।

ওয়েটার একটা গ্লাসে স্কচ ঢেলে দিতেই দিয়ারা গ্লাসটা নিয়ে নেয়। সামনের দিকে ঘুরে গ্লাসে চুমুক দেওয়ার জন্য ঠোঁট ছোঁয়াতেই কেউ টেনে ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে নেয়।

দিয়ারা: হোয়াট দ্যা…তু..তুমি?? (ভয় পেয়ে রাউন্ড চেয়ার থেকে নেমে) দেবদা, তুমি এখানে কি করছো? (ঢোঁক গিলে)

দেবাংশু: কেন? অর্জুন চ্যাটার্জীকে এক্সপেক্ট করছিলি? অবশ্য করবি না’ই বা কেন? সেই তো তোকে নিয়ে এসেছে এখানে তাই না? (দাঁতে দাঁত চেপে)

দিয়ারা: ইয়ে..না মানে আসলে…

দেবাংশু: আমি যখন আমার সাথে তোকে থাকতে বললাম তুই কি অজুহাত দিলি? না তোকে বাড়ি ফিরতে হবে। এই তোর বাড়ি ফেরা তাই না?

দিয়ারা: আব..ফেরার পথে অর্জুনের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো।

দেবাংশু: আমি যদি তোর ফ্ল্যাটে ড্রপ করে দিতাম তাহলে নিশ্চয় ফেরার পথে দেখাটা হতো না তাই না?

দিয়ারা: তোমার সমস্যাটা কোথায় আমাকে বলবে প্লিজ? আমি একজন অ্যাডাল্ট। আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি যার সাথে ইচ্ছা তাঁর সাথে যেখানে খুশি যেতে পারি।

দেবাংশু: তুই বলতে চাইছিস আমার সাথে থাকতে তোর ইচ্ছা করছিলো না?

দিয়ারা: হ্যাঁ তাই! আমার ইচ্ছা করছিলো না তোমার সাথে থাকতে। প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দাও। কিসের এত অধিকার বোধ তোমার আমার উপর? কোনো অধিকার নেই আমার উপর তোমার বুঝেছো?

দেবাংশু নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে রাখে। নিজের চোয়াল শক্ত করে সরে যায় ওখান থেকে। দেবাংশু চলে যেতেই দিয়ারা জানো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। মনে মনে প্রশ্ন জাগে ওর,

দিয়ারা: (মনে মনে — সত্যি তো, কিসের এত অধিকারবোধ ওর আমার প্রতি? আমি যেমন তানিশাকে ওর সাথে দেখে মেনে নিতে পারেনি, দেবদাও কি অর্জুনকে….তাহলে কি দেবদাও আমার মত সেম ফীল করছে? আমি ওর জন্য যা ফীল করি, ও’ও কি আমার জন্য…??)

হঠাৎ করেই দিয়ারার একটা ভালো লাগা শুরু হলো। এমন সময় অর্জুন এসে ওকে ড্যান্স করার জন্য অফার করলে দিয়ারা প্রথমে না করে দেয় কিন্তু তারপরে বাধ্য হয় যেতে ড্যান্স ফ্লোরে। হালকা ড্যান্স করতে করতে ওর হঠাৎ চোখ যায় দেবাংশু ড্রিংকের গ্লাস হাতে নিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। দিয়ারা নিজেকে ছাড়িয়ে ওখানে যাবে ভাবতেই তানিশাকে দেবাংশুর কাছে যেতে দেখে ও। দেবাংশু ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলে দিয়ারা আর কিছু না বলে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়।

অর্জুন: কি হয়েছে দিয়া? এনি প্রবলেম?

দিয়ারা: আব, না না। কিছু না।

অর্জুন দিয়ারার চাহুনি অনুযায়ী পিছন দিকে তাকাতেই দেখে দেবাংশু ওদের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। দেবাংশুর চাহুনি, মুখের অভিব্যক্তি দেখে অর্জুন অবাক হয় কিন্তু সবথেকে বেশি অবাক হয় যখন দেবাংশুর হাতে ড্রিংকের গ্লাস দেখে।

অর্জুন: (মনে মনে — দেব ড্রিংক করছে? সিরিয়াসলি?)

অর্জুন মাঝে মধ্যেই তাকাতে থাকে দেবাংশুর দিকে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না দেবাংশু একের পর এক ড্রিংক শেষ করছে। একটা সময় গিয়ে যখনই ও দেখলো দেবাংশু একটা বোতল তুলে নিয়েছে হাতে সঙ্গে সঙ্গেই সে দিয়ারার দিকে ফিরতে বাধ্য হলো।

দিয়ারা: অর্জুন আমাকে যেতে হবে। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলে নেবো।

অর্জুন: হ্যাঁ কিন্তু কোথায় যাচ্ছ? আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।

দিয়ারা: আমি চলে যেতে পারবো। থ্যাংক ইউ আজকে কোম্পানি দেওয়ার জন্য। আমি আসছি।

অর্জুন দেখলো দেবাংশু বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই দিয়ারাও বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে। অর্জুন কিছু না বলে সেও ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here