কথা দিলাম ‘ 🌸❤️ ||পর্ব ~ ২১|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
263

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সিয়ারা: মা কোথায় দিয়া? আমি মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।

দিয়ারা: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) সেটা সম্ভব না দি।

সিয়ারা: সম্ভব না মানে? কেন সম্ভব না?

দিয়ারা চুপ করে মাথা নীচু করে থাকলে সিয়ারা দিয়ারার বাহু ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে,

সিয়ারা: কি হয়েছে মায়ের? (নার্ভাস কণ্ঠে)

দিয়ারা: দু বছর ধরে মা কোমায় দি।

সিয়ারার মাথায় বাজ পরলো দিয়ারার কথাটা শুনে। অবাক হয়ে দিয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকলে দিয়ারা সিয়ারাকে বলে,

দিয়ারা: সেইদিন ভিকিদাসহ পুরো বরযাত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পর মা’ও বেরিয়ে যায়। আমি অনেক অপেক্ষা করি যে এই হয়তো ফিরে আসবে কিন্তু অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও যখন মা আসে না। তখন আমি বের হই মা কে খুঁজতে। বাড়ি থেকে সবে রাস্তায় পা দিয়েছি সেই সময়ই খবর আসে যে বড়ো রাস্তায় মায়ের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। সেদিন থেকে আমি অনেক একা হয়ে গেছি দি। না তুই ছিলি আর মা তো থেকেও ছিলো না। ভাগ্যিস ভিকিদা ছিলো, ও না থাকলে মা তো থাকতোই না।

সিয়ারা বোনকে কাঁদতে দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে। দিয়ারা কেঁদে ওঠে দিদিকে এতদিন পর কাছে পেয়ে। কিছুক্ষণ পর দিদিকে ছেড়ে ও বলে,

দিয়ারা: দি! আমাকে যেতে হবে। আমার শুটের টাইম হয়ে যাচ্ছে। আমি এইখানে রোজই আসি, কালকে ফ্রি আছি। অনেক গল্প করবো, আজ আসি?

সিয়ারা: আচ্ছা আয়। আমার বোনটা কত্ত বড় হয়ে গেছে। (কপালে চুমু দিয়ে)

দিয়ারা: তুইই তো বড়ো করে দিলি আমায় এক ঝটকায়। আচ্ছা বাদ দে, মায়ের সাথে দেখা করার ইচ্ছা হলে বলিস। আমি নিয়ে যাবো। আজ আসলাম।

দিয়ারা বেরিয়ে গেলে সিয়ারা বোঝে বোনের মনে বেশ অভিমান জমেছে। তবে আধভিকের অভিমানের কাছে সেটা কিছুই না। বোন না হয় সবটা শুনলে, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে সবটা। কিন্তু আধভিক? সে তো প্রয়োজনের বেশি কথাই বলে না। এতো কিছু বলবে কখন? দুশ্চিন্তায় পরে যায় সিয়ারা।

অন্যদিকে,

আভাস বাবু ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে দেখতে পান না স্টাডি রুমে। চিন্তায় পরে যান। সঙ্গে সঙ্গে সোহামকে ফোন করেন। সোহম ফোনটা ধরতে না ধরতেই উনি বলতে শুরু করেন,

আভাস বাবু: সোহম, বাবাই বাড়ি নেই। ও কালকে রাতে যেভাবে ফিরেছিল সেটা দেখে ওর সাথেই ছিলাম সারারাত। কিন্তু ভোরের দিকে চোখটা একটু লেগে গেছিলো। এখন দেখছি ও বাড়ি নেই। তুমি একটু দেখো কোথায় গেছে। কিছু বাঁধিয়ে বসলো…

সোহম: স্যার অফিসে আছেন বড়ো স্যার। আপনি একটু শান্ত হন।

আভাস বাবু জানো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে সোফায় বসে পরলেন। সোহম আবার বললো,

সোহম: এতো চিন্তা করবেন না বড়ো স্যার, এমন করলে তো আপনার শরীরটা আবার খারাপ হয়ে যাবে।

আভাস বাবু: হোক! তাহলে যদি ছেলেটা নিজের ক্ষতি করার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে। একটু শান্তি পাবো তাহলে। সব সময় আমি যে কি ভয় নিয়ে থাকি আমিই জানি। প্রত্যেক মুহুর্তে মনে হয় এই বুঝি কিছু একটা বাঁধিয়ে বসলো।

সোহম: এখন আর সেই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আপনাকে। খুব শীঘ্রই আপনি আপনার দু বছর আগের ছেলেকে ফিরে পাবেন।

আভাস বাবু: (কিছুক্ষণ চুপ করে) আমি আর সেটা চাই না সোহম। দু বছর আগের বাবাই কে ফিরে পাওয়ার পর যদি আবার দু বছরটা সহ্য করতে হয়? না না। দরকার নেই আমার। বাবাইকে অনেক কষ্টে বের করে আনছি আমি ধীরে ধীরে।

সোহম: পেরেছেন কি? যদি পারতেন তাহলে স্যার কিছু একটা বাঁধিয়ে বসবে এই ভয়টা পেতেন না প্রতি মুহুর্তে। আপনিও জানেন আর আমিও জানি যে, স্যারকে যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কেউ পারে তাহলে সেটা সিয়ারা।

আভাস বাবু: আমি আর কোনরকম কোনো আশা রাখতে চাইনা।

সোহম: সেটাই ভালো। কারণ বিষয়টা বড্ড কঠিন। দু বছর ধরে যেই অভিমানটা পোষণ করেছেন স্যার নিজের মনের মধ্যে সেটা পাহাড় সমান রূপ ধারণ করেছে। এই অভিমান ওদের মধ্যে অনেক উঁচু একটা দেওয়াল তৈরী করে দিয়েছে আর এই দেওয়াল ভাঙতে সক্ষম হওয়া টা মুখের কথা নয়।

আভাস বাবু: জানি না কি হতে চলেছে। আমার কেমন ভয় লাগে। সিয়ারাকে নিজের চোখের সামনে দেখে যদি আবার কিছু করে বসে বাবাই?

সোহম: এমনটা হবে না তা আমি বলতে পারি। সিয়ারা আর যাই পারুক না পারুক স্যারের প্রাণরক্ষা করতে পারবে। আচ্ছা আপনি আর চিন্তা করবেন না। স্যার আসছে আমি রাখলাম।

সোহম ফোন রেখে দিলে আভাস বাবু গতরাতের ঘটনায় ফিরে যান। দু বছর ধরে ছেলেটাকে যেভাবে দেখে এসেছেন গতরাতে তার থেকে খারাপ অবস্থায় দেখেছেন ঠিকই তবে একটা আশার আলোও দেখেছেন। তাই জন্যেই হয়তো সোহমের কথাগুলোর পরিবর্তে কোনো কথা বললেন না তেমন।

ফ্ল্যাশব্যাক……………………………..

সিয়ারা বাড়ি ঢুকে গেছে জেনে আধভিক নিজের বাড়ি ফিরে আসে। আজ কেন জানো বারে যেতে মন টানছে না। বাড়িতে এসে, নিজের কাছে থাকা একস্ট্রা চাবি দিয়ে সদর দরজা খুলে ভিতরে চলে যায় আধভিক। ড্রয়িং রুমে থাকা বিশাল বড়ো বার ওয়াল সেলফের থেকে একটা হুইস্কির বোতল নিয়ে, আধভিক স্টাডি রুমে চলে গেলো।

আভাস বাবু: মনে হলো দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। বাবাই কি তাহলে এসেছে? যাই একবার।

আভাস বাবু আধভিকের অপেক্ষা করছিলেন। একটা আওয়াজ পেয়ে উনি উঠে চশমাটা পরে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। ড্রয়িং রুমে এসে কাওকে দেখতে না পেয়ে ভাবেন হয়তো মনের ভুল। পিছন ফিরে ঘরে ফিরে যাচ্ছিলেন সেই সময় হঠাৎ কানে একটা সুর ভেসে আসে।

“তেরি মউজদগি সে
ইক হিফাজত থি মিলি
তু জো ছোড় গ্যায়া মুঝে
তোহ জিন্দেগি বিখরি…

আব তু ফির সামনে হ্যা
তোহ দিল কার রাহা সাওয়াল
কিউন ইস তারাহ বেওয়াফা হো গ্যায়া
তু দে দে জাওয়াব
হোকে যুদা ক্যায়া মিলা
ইয়ে বাতা দে আব ইয়াহান”

[গানটি হলো — O Sathi অরিজিৎ সিং- এর গাওয়া।]

আধভিক বোতলটা টেবিলে রেখে চেয়ারে মাথাসহ শরীরটা এলিয়ে দেয় পুরোপুরি। চোখ বন্ধ করে রয়েছে আধভিক। মাথাটা যন্ত্রণা করছে। যতবার সিয়ারাকে বলা নিজের কথাগুলোর সাথে সাথে সিয়ারার কান্না মাখা মুখটা মনে পরছে। ততবার বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠছে আধভিকের। ভালো লাগছে না কিছু। বারবার একটা কোথায় মনে হচ্ছে তাঁর, “ছেড়েই যখন যাওয়ার ছিলো তাহলে প্রতারণা করলে কেন সিয়ারা? আর যখন ছেড়ে চলেই গেছিলে তখন আবার সামনে কেন এলে?”

হঠাৎই নিজের কপালে কাওর হাতের স্পর্শ পায় আধভিক। ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা টেনে জিজ্ঞেস করে,

আধভিক: ড্যাড! কেন এত রাত অবধি জেগে থাকো তুমি?

আভাস বাবু: ভাগ্যিস জেগে ছিলাম। নাহলে আমার ছেলের যে এই একটা গুন আছে সেটা কখনও জানতেই পারতাম না। তুই নায়ক না হোস গায়ক তো হতেই পারতিস?

আধভিক: (তাচ্ছিল্য হেসে) গানটা শুধুমাত্র আমার একাকীত্ব আর মন খারাপের সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে ড্যাড। মমের যাওয়ার পর আজ হয়তো আবার গাইলাম।

আভাস বাবু: (এক গাল হেসে) হ্যাঁ। তোর মা খুব ভালো গান গাইতো। আমার খুব ভালো লাগছে তুই আবার নিজের গানে ফিরেছিস বলে।

আধভিক: কিন্তু আমি তো এইভাবে ফিরতে চাইনি? অনেক যন্ত্রণার পরেই আমার ভিতর থেকে সুর আসে, বিষাদের সুর!

আভাস বাবু চুপ করে গেলেন আধভিকের কথায়। ছেলেটার চোখটা লাল হয়ে যাচ্ছে। হয়তো মাথার যন্ত্রণাটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কথা না বাড়িয়ে ছেলের জন্য বাম নিয়ে আসেন আভাস বাবু। বাম লাগানোর পর একটু ম্যাসেজ করে দিতে থাকেন।

আধভিক: ড্যাড আমি ঠিক হয়ে যাবো। রোজ এভাবে রাত জাগাটা ঠিক না তোমার জন্য। তুমি শুয়ে পরো।

আভাস বাবু: ভালো লাগছে কি না সেটা বল?

আধভিক: হম।

আভাস বাবু: তাহলে চুপটি করে থাক।

আধভিক কথা বাড়ায় না। আভাস বাবু লক্ষ্য করেন আধভিক চোখ বুজে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই চোখের কোণ বেয়ে জল গাল গড়িয়ে পরে। আভাস বাবু সেটা দেখে একটা হতাশার নিশ্বাস ফেলেন।

প্রেজেন্ট……………………………………

আধভিক: এখানে কি করছো সোহম? মিটিংটা অ্যাটেন্ড করনি?

সোহম: স্যার মিটিংয়ের টাইমটা একটু পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার শরীরটা ঠিক ছিলো না তাই আমিই…

আধভিক: দরকার ছিলো না। কখন শুরু হবে মিটিং?

সোহম: এক ঘন্টা পর। আপনি একটু কিছু খেয়ে নিন। রাত থেকে তো…

আধভিক: ড্যাড খবর দিয়ে দিয়েছে তাহলে। আমার ক্ষিদে পেলে খেয়ে নেব আমি। দিয়া শুটে গেছে, ওর জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ো ফেরার সময়।

আধভিক হিপ ফ্ল্যাস্কটা বার করে সেটা চুমুক দিতে দিতে চলে গেলো কথাটা বলে। সোহম বারণ করতে গিয়েও করলো না। আধভিক চলে যাওয়ার পর হঠাৎই সোহম সব ডিজাইনারদের উঠে দাঁড়াতে দেখলে সেইদিকে তাকায়। দেখে সিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ারা ওর কাছে আসলে ও বলে,

সোহম: সবাই তোকে দেখে অবাক হয়ে গেছে।

সিয়ারা: হম। এতদিন পর যে দেখছে। একটা সময় কাজ করেছি ওদের সাথে, চিনবে না এমনটা হয় নাকি?

সোহম: (হাসিমুখে) হম সেটাই। কিন্তু তুই এত সকালে এখানে কি করছিস? মনে হয় আরো আগে এসেছিস?

সিয়ারা: ভাগ্যিস এসেছিলাম। নাহলে অনেক কিছু অজানা থেকে যেত। আচ্ছা এসব ছাড়ো, তোমার স্যার কোথায়? অন্য কোনো কেবিনে গেছে?

সোহম: কনফারেন্স রুমে গেছে মনে হয়।

সিয়ারা: আচ্ছা। তুমি হালকা কিছু খাবার মানে ওই স্যান্ডউইচ পাঠিয়ে দাও কনফারেন্স রুমে। আসছি আমি।

সিয়ারা সবার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে কনফারেন্স রুমেr উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলো। কনফারেন্স রুমে ঢুকবে ঠিক তার আগের মুহূর্তে একটা মেয়ে ওর পথ আটকে দেয়।

সিয়ারা: কিছু বলবেন?

__অনেক কিছুই বলবো। প্রথমত, আমি আপনাকে চিনি না। আপনি কে, কোথা থেকে এসেছেন কিছুই জানি না। দ্বিতীয়ত, এসেই এইভাবে পুরো অফিসে কি উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেটাও জানি না। তাই সেইসব না জেনে আমি আপনাকে কনফারেন্স রুমে ঢুকতে দিতে পারি না।

সিয়ারা: (হাসিমুখে) প্রথমত, আমার যতদূর মনে হয় আপনি একটু নতুন। মানে এখানে কাজ করছেন এক বছরের বেশি হবে না। দ্বিতীয়ত, আমি আমার উদ্দেশ্যের দিকেই এগোচ্ছি। আর মোটামুটি কম বেশি সবাই আমাকে চেনে তাই তাঁদের কোনো অসুবিধা হয়নি আমার ঘুরে বেড়ানোতে। সো, প্লিজ আপনি একটু সাইড দিন আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

সিয়ারা মেয়েটিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ঢুকতে গেলে মেয়েটা বাঁধা দেয়।

__আমি তো আপনাকে চিনি না। সো আমার প্রবলেম আছে। তাই আপনি আমাকে বলতে বাধ্য আপনি কে? আর কেন এই অফিসে এসেই স্যারকে খুঁজছেন।

সিয়ারা: আগে আপনার স্যারকে একটু ঠিক করেনি। তারপর না হয় আপনি আপনার স্যারের থেকে উত্তর গুলো নিয়ে নেবেন। উনি ভালো বলতে পারবেন “আমি কে?”

সিয়ারা ঢুকেই দরজা লক করে দেয় কনফারেন্স রুমের। সামনে তাকিয়ে দেখে আধভিক চুপ করে যেভাবে সকালে বসে ছিলো সেভাবেই বসে আছে। মাঝে মধ্যে হিপ ফ্ল্যাস্কে চুমুক দিচ্ছে। সিয়ারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলে আধভিকের মুখটা দেখে মায়া হয়। আস্তে করে টেবিলে বসে আধভিকের বুকে, ঠিক যেই জায়গায় ওর নামটা লেখা আছে সেখানে হাত রেখে ডেকে ওঠে,

সিয়ারা: আভি!

আধভিক চোখটা খুলতেই সিয়ারার চোখে চোখ পরে। দুজন একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে। সেভাবেই ধীরে ধীরে আধভিক উঠে সোজা হয়ে বসে আর সিয়ারা ঝুঁকে পরে আধভিকের দিকে।

আধভিক উঠে দাঁড়ায়। মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

আধভিক: কেন এসেছেন?

সিয়ারা মনে মনে হাসে আধভিকের গলার আওয়াজ শুনে। বেচারা নেশায় থাকলে অন্য সবার সাথে চিৎকার করে কথা বলবে কিন্তু সিয়ারা সামনে থাকলেই আওয়াজ নীচে। আর সিয়ারা যদি রাগ দেখায় তাহলে তো হয়ে গেলো, সব কথা জড়িয়ে গিয়ে তুতলে যাবেন মশাই। সিয়ারা নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয় আধভিকের বাহু ধরে,

সিয়ারা: আপনার জন্যেই তো আসতে হলো। চলেই তো গেছিলাম, কিন্তু শান্তি আর কোথায় পেলাম? এক মুহুর্তের জন্য শান্তি পাইনি। তবে ফিরে আসলে যে এমন কথা শুনতে হবে ভাবিনি।

আধভিকের চোখ ছল করে ওঠে, কিছু বলে না সে। সিয়ারা ধীরে ধীরে আধভিকের বুকে মাথা রেখে বাম হাত দিয়ে হিপ ফ্ল্যাস্কটা নিয়ে নেয় আধভিকের হাত থেকে। অন্যদিকে আধভিক সিয়ারা বুকে মাথা রাখতেই চোখ বুজে নেয়।

সিয়ারা: সকাল সকাল এসব খাওয়ার জিনিস? (মাথা তুলে)

আধভিক: দাও ওটা।

সিয়ারা: চুপচাপ বসো।

আধভিক: দিয়ে দাও ওটা।

সিয়ারা: মাথা ফাটিয়ে দেবো এটা দিয়ে মেরে একবারে। বসতে বলেছি না ওখানে? আবার এটা চাইছো কোন সাহসে?

আধভিক: এ..এসব ঠিক না।

কথাটুকু বলে চুপ করে বসে পরে আধভিক চেয়ারে। সিয়ারা যা ভেবেছিলো তাই, একটুও বদলায়নি। সিয়ারা উঠে দাঁড়িয়ে সোফায় হিপ ফ্ল্যাস্কটা ছুঁড়ে ফেলে আধভিকের কপালের দু পাশে ম্যাসাজ করতে শুরু করে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে। আধভিক সব সময়ের মতো সিয়ারা সামনে থাকায় নেতিয়ে পরেছে। গতরাতে যেই তেজ দেখিয়েছিল তার এক শতাংশও এখন ওর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।

সিয়ারা আধভিকের মাথা টিপে দিতে দিতে খেয়াল করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা ওদের দেখছে। ও তাকাতেই মেয়েটা দরজা দিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সোহম দরজা খুললে সিয়ারা চোখ দিয়ে ইশারা করে খাবারটা রেখে যায়।

সিয়ারা: আভি, এই! উঠে খাওয়ারটা খেয়ে নাও আগে।

আধভিক: (উঠে বসে) আমি খাবো না। ভালো লাগ…

সিয়ারা: (দাঁতে দাঁত চেপে) কি বললে?

আধভিক: (ঢোঁক গিলে) আমি, আমি…আমি সকালে এসব খাই না। স..সেটাই বলছিলাম।

সিয়ারা: খেতে না কিন্তু এখন খাবে। বুঝেছো?

আধভিককে খাইয়ে দিতে শুরু করে সিয়ারা। খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন সিয়ারাকে আধভিক জিজ্ঞেস করে,

আধভিক: এতো অধিকার খাটাচ্ছো যে?

সিয়ারা: হম, আমার মানুষের উপরেই তো খাটাচ্ছি।

আধভিক: তাহলে ছেড়ে গিয়েছিলে কেন?

সিয়ারা: বলবো। বলার জন্যেই তো এসেছিলাম। কিন্তু যা অবস্থা বানিয়ে রেখেছ বলবো কীভাবে আর? এখন সোজা বাড়ি যাবে আর গিয়ে রেস্ট নেবে।

আধভিক: আমি এখনই জানতে চাই। (সিয়ারার হাত ধরে)

সিয়ারা: বললে কিছু মনে থাকবে? কিছুই মনে থাকবে না। বলাটাই বেকার এখন। এজন্যেই বলি দিন রাত এইসব গোলা অবধি গিলে বসে থাকবে না। চলো, ওঠো এখন।

আধভিককে দাঁড় করিয়ে সিয়ারা বাইরে নিয়ে যায় আর সোহমকে বলে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে জানো একদম ঘর অবধি দিয়ে আসে। সোহম সেটা শুনে মাথা নেরে আধভিকের দিকে তাকিয়ে দেখে আধভিক চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো প্রতিবাদ করছে না। মনে মনে হাসে সোহম, কারণ সে যা ভেবেছিলো তাইই হচ্ছে।

সিয়ারা: (মনে মনে — তোমাকে এখনই সবটা জানিয়ে দিতে পারলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হতো না। কিন্তু যা অবস্থা করে রেখেছো তাতে বলেও লাভ হতো না। সকালে তাও ঠিক ছিলে এখন তো একদমই মনে রাখার মতো অবস্থায় নেই। আমি জানি নেশা কেটে গেলেই তুমি আবার আমাকে দূরে ঠেলে দেবে। তখন তোমার উপর কোনরকম অধিকার খাটাতে দেবে না। দেখতেই চাইবেনা হয়তো আমাকে, কথা শোনা তো দূরের কথা।]

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

বিঃ দ্রঃ এমনটা করে সিয়ারা কি ঠিক করলো? এরপর সত্যি ও বলার সুযোগ পাবে তো? নাকি আবার পরিস্থিতি সব কিছু বদলে দেবে? কি মনে হচ্ছে আপনাদের?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here