‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
ফ্ল্যাশব্যাক,
আধভিক আভাস বাবুর সাথে দাঁড়িয়ে গেস্টদের সাথে কথা বলছে। বলা উচিত, আভাস বাবু কথা বলছেন এবং আধভিক শুধু হেসে মাথা নাড়ছে। আধভিকের চোখ শুধু এদিক ওদিক ঘুরছে, মনে হচ্ছে কাওকে একটা খুঁজছে। নিজের হাতের ঘড়িটা দেখে সামনের দিকে তাকালো আধভিক।
আধভিক: (মনে মনে — অনেকটা সময় হয়ে গেলো, এখনও সিয়ারা এলো না কেন? সুধাংশু স্যার কি তাহলে রাজি হয়নি এখানে আসার জন্য? একবার ফোন করবো?…নাহ আমি কেন ফোন করবো? আমি কেন এত ভাবছি, আসুক না আসুক তা নিয়ে আমার ভাবার দরকার নেই। একটু বেশিই ভাবছি আজকাল।)
আধভিক মাথা থেকে সিয়ারার ভাবনা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো। নিজেকে সবার সাথে ইনভলভ রাখার চেষ্টা করেও সে বার বার বিফল হয়ে যাচ্ছে। নিজের মস্তিষ্ক, মন, চোখ সবকিছুই কথা শুনছে না তাঁর। মস্তিষ্কে সিয়ারার ভাবনা ঘুরছে, মন বলছে সিয়ারার সাথে যোগাযোগ করতে আর চোখ শুধু সিয়ারাকেই খুঁজছে অবাধ্য হয়ে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আধভিক পকেট থেকে নিজের ফোন বার করে নিলো সিয়ারাকে কল করার জন্য কিন্তু হঠাৎই সামনে এন্ট্রেন্সের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো আধভিকের।
সিয়ারা বলিউড স্টাইলে কালো রঙের ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরেছে সাথে কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ। শাড়িটা সিয়ারার শরীরের সাথে সেঁটে থাকায় তাঁর শরীরের গঠন, প্রত্যেকটি কার্ভ ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে যার ফলে সে লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। মেক আপ সে তেমন একটা করেনি, চুলগুলোকে উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে বেঁধেছে। তাতেই আশেপাশের সব ডিরেক্টর, প্রোডিসারেররা, তাঁর থেকে চোখ ফিরাতে পারছে না। এইসব আধভিকের মোটেও সহ্য হচ্ছে না। আধভিক সিয়ারার দিকে এগোচ্ছিল এমন সময় সে দেখে দিয়ারা তাঁর কাছে চলে গেছে।
দিয়ারা: দি!
সিয়ারা: আরে দিয়া, তোকেই খুঁজছিলাম আমি। বলছি, শাড়িটা ঠিক লাগছে? না মানে আমার কেমন একটা লাগছে এই শাড়িটা পরে।
দিয়ারা: দি? তুই এটা কি পরে এসেছিস?
সিয়ারা বোনকে আশে পাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করতে দেখলে সিয়ারা নিজেও আশে পাশে তাকায়। দেখে, সবাই কেমন জানো খারাপ দৃষ্টিতেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সিয়ারা: আমি কি করবো? আধভিকই তো নাকি এই শাড়িটা পরতে বলেছে আমাকে।
দিয়ারা: হোয়াট? লাইক সিরিয়াসলি? ভিকি দা তোকে এসব পরতে বলবে? একবার ভালো করে চেয়ে দেখ আধভিকদার রিয়্যাকশনটা।
দিয়ারার দাঁতে দাঁত চিপে কথা শোনার সাথে সাথেই সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকালো। দেখলো আধভিক নিজের সবচেয়ে ভয়ানক লুক নিয়েই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সিয়ারা: (ঘাবড়ে গিয়ে) কিন্তু আমি তো…
দিয়ারা: তুই চল আমার সাথে।
দিয়ারা সিয়ারাকে নিয়ে বার সাইডে আসে। তারপর জিজ্ঞেস করে পুরো বিষয়টা। সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ারাকে জানায়,
সিয়ারা: আজকে বিকেল বেলায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার আমাদের বাড়িতে আসে। আমাকে বলে আধভিক ওকে পাঠিয়েছে আমাকে ড্রেস দেওয়ার জন্য। আর যে এসেছিলো সে আধভিকের অফিসের তাই আমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম।
দিয়ারা: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) তুই নাম জানিস?
সিয়ারা: না। নাম তো জানি না তবে কাজ করতে দেখেছি।
দিয়ারা: ঠিক আছে তুই থাক এখানে। আমি, আমি দেখছি বিষয়টা।
বোন চলে যেতেই সিয়ারা নিজেও ভাবুক হয়ে পরে। এদিকে দিয়ারা ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্কভাবে চলতে থাকলে হঠাৎই ওর ধাক্কা লেগে যায় একজনের সাথে এবং ও পরে যাওয়ার আগেই ব্যক্তিটি ওকে ধরে নেয়। ব্যক্তিটিকে দেখতেই ওর চেনা লাগে তাই তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাঁড়ায় ও।
দিয়ারা: আই অ্যাম স্যরি। আসলে আমি অন্যমনস্ক ছিলাম তাই খেয়াল করিনি।
__ইটজ ওকে! আমারও একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিলো। বায় দ্যা ওয়ে, ইউ আর লুকিং বিউটিফুল।
দিয়ারা নিজের প্রশংসা আগেও অনেক ইয়াং ছেলেদের মুখে শুনেছে তবে এই ব্যক্তিটির প্রশংসা শুনে ও ব্লাশ করতে শুরু করে।
দিয়ারা: থ্যাংক ইউ অ্যান্ড ইউ আর লুকিং হ্যান্ডসাম।
__উম, সেটা তো রোজই লাগে আমাকে। নতুন কিছু না।
দিয়ারা হেসে ফেলে ব্যক্তিটির কথা শুনে। ব্যক্তিটিও মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিয়ারার দিকে তাঁকিয়ে হালকা হাসে। দিয়ারা নিজের হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
দিয়ারা: আচ্ছা, আমি যদি খুব ভুল না হই তাহলে আপনি কি দেবাংশু গাঙ্গুলি? সান অফ সুধাংশু গাঙ্গুলি?
দেবাংশু: ইয়াহ ইউ আর রাইট!
দিয়ারা: (হাত বাড়িয়ে) আমি দিয়ারা, দিয়ারা সান্যাল। সিয়ারা সান্যালের ছোটো বোন।
দেবাংশু অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে,
দেবাংশু: রিয়েলি? সিয়ার সাথে আপনার দেখা হয়েছে?
দিয়ারা: দেখা কথা দুটোই হয়েছে। তবে আমি চাইছি এই সময়টা আপনি একটু ওর কাছে থাকুন। ও বার সাইডে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমার একটু কাজ আছে তো তাই আমাকে যেতে হবে।
দেবাংশু: ওকে ফাইন। আমি ওকে কোম্পানি দিচ্ছি গিয়ে।
দিয়ারা: থ্যাংক ইউ। আচ্ছা আমি আসি এখন?
দেবাংশু: (হাতটা ছেড়ে দিয়ে) ইয়াহ সিওর।
দিয়ারা চলে গেলে সেদিকে তাকিয়ে রইল দেবাংশু। ওইদিকে তাকিয়ে থেকেই মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,
দেবাংশু: (মনে মনে — মাই গড! মেয়েটার উপস্থিতি কতটা শক্তিশালী ছিলো যে আমি এখনও ওর কথাই ভাবছি। আমার চোখে দেখা প্রথম মেয়ে যে এতটা পারফেক্ট। যেমন দেখতে, তেমন ফিগার আর তেমনই সুন্দর পার্সোনালিটি। যখন কথা বলছিলো তখনই চোখ ফেরাতে পারছিলাম না তারপর যখন হাসলো। উফ! এই প্রথমবার কোনো মেয়ে আমাকে এতটা প্রভাবিত করলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝড় তুলে দিয়ে গেলো পুরো শরীর জুড়ে।) এই প্রথমবার দেবাংশুর মন কাওর উপর পরেছে। টেস্ট করে তো দেখতেই হবে।
দেবাংশু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সিয়ারা যেদিকে আছে সেদিকে চলে যায়। অন্যদিকে সিয়ারা যখন দাঁড়িয়ে আছে নিজের মতো করে তখন হঠাৎ করেই কেউ ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। সিয়ারা চোখ তুলে তাকাতেই দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে সে ঘাবড়ে গেলেও প্রকাশ করে না।
অভ্র: (ভালো ভাবে সিয়ারাকে দেখে নিয়ে) কি ব্যাপার সিয়ারা? তুমি এখানে চুপচাপ একা একা দাঁড়িয়ে আছো যে? কোম্পানি দেওয়ার কেউ নেই বুঝি? বলতে পারো, আই অ্যাম অলয়েজ হেয়ার ফর ইউ। (বাঁকা হেসে)
সিয়ারা: বাট আই ডোন্ট নীড ইউ অভ্র। সো প্লিজ, লিভ মি আলোন।
কথাটা বলে সিয়ারা মুখ ঘুরিয়ে নিলে অভ্র আরো একটু কাছে এগিয়ে দাঁড়ায় সিয়ারার। এতে সিয়ারার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে কারণ ও বুঝতে পারছে অভ্র ঠিক কি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
অভ্র: তোমার মনে হয় ব্রো তোমাকে অ্যাকসেপ্ট করবে বলে? যে কি না তোমার খোঁজ জেনেও তোমার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেনি সে তোমাকে কেন অ্যাকসেপ্ট করবে সিয়ারা। তুমি ওর লাইফে এখন নেই, তুমি এখন অতীত ওর জীবনের।
সিয়ারা: ওর অভিমান হয়েছে তাই ও আমার কাছে যায়নি।
অভ্র: (হেসে) সিরিয়াসলি? তুমি বলতে চাইছো তোমার কখনও মনে হয়নি ব্রো কেন তোমার খোঁজ করলো না? কেন একবারও তোমাকে জিজ্ঞেস করলো না তুমি ওকে ছেড়ে কেন গেছো? এটাই বলতে চাইছো?
সিয়ারা কোনো উত্তর দিতে পারে না অভ্রকে। কারণ সত্যি ওর মনে এই প্রশ্নটা বার বার আসে। কেন আধভিক একবারও এলো না ওর কাছে ওর খোঁজ পেয়েও। একবারও ওর কেন মনে হলো না যে, সিয়ারা কেন ওকে ছেড়ে গেলো এই উত্তর ওর জানা দরকার। সিয়ারা এসবই ভাবছিল এমন সময় অভ্র হঠাৎই সিয়ারার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর গালে আঙুল ছুঁয়ে তা ধীরে ধীরে নীচে নামাতে থাকে। সিয়ারা সাথে সাথে পিছিয়ে যায়।
অভ্র: ডোন্ট ওয়েস্ট ইউর টাইম সিয়ারা। ব্রো তোমাকে অ্যাকসেপ্ট না করবে না তো কি হয়েছে? আমি আছি তো? আমাকে একটা চান্স দিয়ে দেখো, লাকি মনে করবে নিজেকে।
অভ্রের কথাটা শুনে সিয়ারা এক গালে হেসে আবারও এগিয়ে এসে নিজের জায়গায় দাঁড়ালো। কারণ সিয়ারা অনুভব করছে ওর শক্তি, সাপোর্ট সিস্টেম ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সিয়ারা নিজের কথা বলতে শুরু করার সাথে সাথে অভ্রের মতো ওর কপাল থেকে নিয়ে আঙুল নীচে নামানো শুরু করে।
সিয়ারা: থ্যাংক ইউ অভ্র আমাকে পুরো বিষয়টা এতো ভালো ভাবে বোঝানোর জন্য। থ্যাংক গড, তুমি আমাকে বোঝালে নাহলে আমি বড্ড বোকামি করে যাচ্ছিলাম। সো এর জন্য আমি তোমাকে গিফ্ট দিতে চাই।
কথাটা শেষ হতেই সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সিয়ারা অভ্রের গালে। অভ্র রেগে সিয়ারার দিকে তাকাতেই পিছনে আধভিককে দেখতে পায়।
অভ্র: ব্রো! তুই দেখলি? এই মেয়েটা আমার গায়ে হাত তুললো? (অতিরিক্ত রেগে)
আধভিক: হোয়াট? সিয়ারা তোর গায়ে হাত তুলেছে? কোথায়? আমি তো দেখিনি?
অভ্র: ওয়েট, ওয়েটার! তুমি দেখেছো তো এই মেয়েটা আমার গায়ে হাত তুলেছে?
ওয়েটার উত্তর দেওয়ার আগে আধভিকের দিকে তাকায়। সাথে সাথে একটা ঢোঁক গিলে বলে,
ওয়েটার: না তো, ম্যাডাম তো আপনার গায়ে হাত তোলেনি। কি বলছেন এসব?
আধভিক: সোহম? তুমি কিছু দেখেছো? দেখলে এক্ষুনি জানাও আমাকে।
সোহম: না স্যার! আমিও তো কিছু দেখিনি।
অভ্র সবটা বুঝে আর কিচ্ছু বলে না। শুধু সিয়ারার দিকে ক্ষিপ্র চাহুনি নিয়ে তাকায় আর চলে যায় সেখান থেকে। সিয়ারা হাসিমুখে আধভিকের দিকে তাকাতেই ওর হাসি নিমিষে গায়েব হয়ে যায়। আধভিক সেই ভয়ানক লুক দিয়েই ওখান থেকে চলে যায় অভ্রের পিছনে। ঠিক সেই সময় সিয়ারার কাছে দেবাংশু আসে।
দেবাংশু: বাহ! বেশ ভালোই সাপোর্ট পাচ্ছিস তো তুই আধভিকের থেকে। যা মনে হয়, ধীরে ধীরে বরফের পাহাড় গলতে শুরু করেছে। বাট ওয়েট আ মিনিট! তুই এটা কি পরেছিস সিয়া?
প্রথমে মজার ছলে কথা বললেও পরমুহুর্তে সিয়ারাকে পুরোপুরি দেখে দেবাংশু রেগে যায়।
সিয়ারা: দেব, বিশ্বাস কর আমি বুঝতে পারিনি এইভাবে আমাকে ঠকানো হবে।
সিয়ারা বোনকে যা যা বলেছিলো তাই তাই দেবাংশুকে বলতেই দেবাংশু বলে উঠলো,
দেবাংশু: লাইক সিরিয়াসলি সিয়া? আমি মেনে নিলাম এই ড্রেসটা তোকে আধভিক পরতে বলেছে বাট তুই এতে কমফর্টেবল ফীল করছিস না। তাও তুই এটা পরে আসবি? না তোর ইচ্ছার কোনো দাম নেই নাকি? ও পরতে বলেছে তাই পরতে হবে? শুধুমাত্র ওর অভিমান ভাঙাতে হবে বলে?
সিয়ারা: শুধুমাত্র আধভিককে আমি ভালোবাসি বলে। ওর ইচ্ছা, অনিচ্ছার দাম আছে আমার কাছে। ও শাড়ি পরা পছন্দ করে খুব তাই যখনই আমি দেখেছি শাড়ি তাও আবার লাল রঙের তখন আর অত কিছু ভাবিনি। একবার নিজে ভালোবেসে দেখ, তখন এগুলো বলতে হবে না আমায়।
দেবাংশুর হঠাৎ করেই দিয়ারার কথা মনে পরে যায় কিন্তু ও মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
দেবাংশু: দরকার নেই আমার এসব ভালোবাসার মামলায় পরার। না ভালোবাসবো, না কষ্ট পাবো। তুই চল, একটু ড্যান্স করি আমরা।
দেবাংশু সিয়ারাকে টেনে ড্যান্স করতে নিয়ে চলে গেলে সিয়ারা বাঁধা দিতে পারে না। স্লো মিউজিকে ড্যান্স করতে করতে সিয়ারা দেবাংশুকে জিজ্ঞেস করে,
সিয়ারা: দেব তুই এমন কেন বল তো? ভালোবাসার নাম শুনলেই জ্বর চলে আসে তোর। তুই কি সত্যিই কখনও কাওকে নিয়ে সিরিয়াস হবি না? কাওকে ভালো লাগেনি তোর?
সিয়ারার প্রশ্নটা শুনে দেবাংশুর চোখের সামনে দিয়ারার কথা বলা, হাসিমুখ ভেসে উঠলো। দেবাংশু চোখ বন্ধ করে নিয়ে সাথে সাথে আবার খুলে বলে,
দেবাংশু: আমাকে দেখেই মেয়েরা এমন হাবুডুবু খেয়ে যায় যে আমার আর তাঁদেরকে পছন্দই হয় না। তাছাড়া আমি এইসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী না জানিসই তো তুই।
সিয়ারা: (হেসে) আধভিকও কিন্তু প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী ছিল না, আর তারপরে ওর ঠিক কি অবস্থা হয়েছে সেটা তোকে বলতে হবে না নিশ্চয়?
দেবাংশু: ইয়াহ, তারপর কষ্টটাও তো ওকে পেতে হয়েছে তাই না? আমি সেই কষ্টটাই পেতে চাই না সিয়া। টাইম পাস করছি, ফ্লার্ট করছি এটাই ঠিক আছে। রিলেশনশিপের থেকে ফ্লার্টেশনশিপ মাচ বেটার। এটলিস্ট হার্ট ব্রেকের কোনো বিষয় থাকে না।
সিয়ারা: ভালোবাসা বিষয়টা বড্ড অদ্ভুত দেব। কখন কীভাবে কার প্রতি তুই ফীল করতে শুরু করবি, ভালোবাসতে শুরু করবি তুই নিজেই জানবি না। আর একবার যখন সেটা রিয়েলাইজ করবি তখন তোর মনে হবে সেই মানুষটাকে না পাওয়ার কষ্টটা তাঁকে হারিয়ে ফেলার কষ্টর থেকে অনেক অনেক বেশি। তখন তুই পারবি না নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে। বুঝলে চাঁদু?
সিয়ারা দেবাংশুর চুলটা একটু এলোমেলো করে দিলে দেবাংশু হেসে বলে,
দেবাংশু: সে যখন হবে তখন দেখা যাবে। এখন তো মজা করি।
সিয়ারা: সেই, খালি মেয়েগুলোর ফিলিংস নিয়ে খেলা তাই না?
দেবাংশু: অন গড বলছি আমি মেয়েগুলো কে প্রথমেই বলে দি আমি রিলেশনশিপে ইন্টারেস্টেড নই। মেয়েগুলো তারপরেও নিজে যেচে আমার সাথে ফ্লার্ট করে। আ, তুই জানিসই তোর ভাই কতটা হ্যান্ডসাম সো মেয়েরা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। (রোয়াব দেখিয়ে)
সিয়ারা: কিছুই না মেয়েগুলোর চোখ দেখানোর প্রয়োজন আছে।
দেবাংশু: (গাল ফুলিয়ে) তুই এভাবে বলতে পারিস না আমাকে সিয়া।
সিয়ারা দেবাংশুর মুখের অভিব্যক্তি আর কথা শুনে হেসে ওঠে। তারপর নিজের হাসি থামিয়ে ধীরে ধীরে দেবাংশুকে বলে,
সিয়ারা: ভালোবাসা খুব সুন্দর একটা অনুভুতি দেব। এটা এমন একটা অনুভুতি যা সবাই জীবনে একবার না একবার অনুভব করতে চায়। হ্যাঁ এটা ঠিক যে এর কারণে আমাদের কষ্ট পেতে হয়। কিন্তু একটু ভালো করে ভেবে দেখ? আমরা ভালোবাসার কারণে কি কষ্ট পাই? অনেক ক্ষেত্রে আমরা সঠিক মানুষকে ছেড়ে ভুল মানুষকে বেছে নিই। এখানে কি ভালোবাসার দোষ? অনুভূতি কখন কার উপরে আসবে সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই দেব। কিন্তু যখন আমরা ভালোবাসি সেটা সঠিক হোক বা বেঠিক মানুষ হোক, অনুভূতিটা কিন্তু খুবই সুন্দর। যখন সুন্দরটা মেনে নিতে পারছি তখন কষ্টটাও তো মেনে নিতে হবে তাই না? আর যেক্ষেত্রে মানুষটা সঠিক হয় সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির কারণে হয়তো কষ্ট পেতে হয়। একটা কথা কি জানিস? এই জীবনে সবার কপালে ভালোবাসা পাওয়া থাকে না। যাঁরা পায় তাঁরা অনেক ভাগ্যবান।
সিয়ারার কথাগুলো দেবাংশু মন দিয়ে শুনছিল। এমন সময়ে ওদের মিউজিকটা চেঞ্জ হয়ে হঠাৎই অন্য একটা মিউজিক বেজে উঠলো।
“হার কিসিকো, নাহি মিলতা
ইয়াহা প্যায়ার জিন্দেগি মেইন।
খুশ নসীব মেইন হাম, জিনকো হ্যান মিলি
ইয়ে বাহার জিন্দেগি মেইন।”
গানের লাইনগুলো বেজে উঠতেই হঠাৎই সিয়ারার চোখ আধভিককে খুঁজতে লাগে এবং সে পেয়েও যায়। বার সাইডের দিকে তাকাতেই দেখে আধভিক হেলান দিয়ে একই হাতে হোয়াইন আর সিগারেট নিয়ে বসে আছে। একবার করে হোয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর একবার করে সিগারেটে টান দিচ্ছে। চোখগুলো লাল হয়ে রয়েছে তাঁর। সিয়ারা নিজের অজান্তেই কখন যে দেবাংশুর থেকে সরে এসেছে সেই খেয়াল নেই ওর।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
বিঃদ্রঃ আগামী পর্বের মধ্যেই আশা করছি ফ্ল্যাশব্যাক শেষ হয়ে যাবে।