নীলফড়িং #ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি #পর্ব ১০ .

0
108

#নীলফড়িং
#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#পর্ব ১০
.
.
সন্ধ্যায় আমি বসে রুগী দেখছিলাম, এমন সময় একজন রুগী এলো দরজা ঠেলে, আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করছিলাম। তাই তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম।

……জ্বি বসেন। বলেন আপনার কী কী সমস্যা হচ্ছে?

এই বলে আমি মুচকি হেঁসে রুগীর দিকে তাকালাম। তাকিয়ে আমি প্রচুর অবাক হয়ে গেলাম এমন কাউকে দেখব আশা করি নি। তাই কিছু বলতে না চেয়েও বলে উঠলাম।

……তুই এখানে?

…….সরি আসলে আমি জানতাম না তুই ডাক্তার পুস্পিতা রহমান। আমি আসলে শুনিছি কারো থেকে বাহির থেকে পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার এসেছে। তাই চলে এসেছি।

…….ইটস ওকে, এখানে পূর্ব পরচিত বলতে কিছু নেই, আপনি রুগী আমি ডক্টর এখানে শুধু এই সম্পর্ক অব্দি সীমাবদ্ধ। তাই আপনার ইচ্ছে হলে সমস্যা বলতে পারেন। না ইচ্ছে হলে চলে যেতে পারেন, আমি আমার এসিস্ট্যান্ট কে বলে দিচ্ছি সে আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দেবে।

…….না আমি সমস্যার কথা বলছি।

…….(ওহ সমস্যা গুলো বলল)

…….আপনি তো নিজেও একজন ডাক্তার তবে আমার কাছে আসতে হলো কেনো?

…….আমি আসলে সেদিনের পড়ে আর হসপিটালে যেতে পারিনি। পরিক্ষা গুলোও দেওয়া হয়নি। ওখানেই আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল, আর এগোতে পারি নি। অনেক সমস্যায় আঁটকে পড়েছিলাম যার জন্য পরিক্ষাটা আর দেওয়া হয়নি।

…….তাতেও তো অনেকটা বুঝতে পারেন, তাই না?

…….হ্যা বাট অনেক দিন হয়েছে পড়া ছেড়েছি, সংসার করতে গিয়ে সব ভুলে বসে আছি। তাই আর বুঝতে পারিনি।

……একটা টেস্ট দিচ্ছি করে নিয়ে আসবেন।

……..আচ্ছা তুই কী মনে করছিস কোনো জটিল সমস্যা?

…….রিপোর্ট করেন নিজেও বুঝতে পারবেন। আমি যতটুকু ধারণা করতে পারছি, আপনি প্রেগন্যান্ট।

আমার কথা শুনে ও মন খারাপ করে উঠে চলে গেল। আমি নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।

রাত তখন ৮ টা বাজে আমি চেম্বার থেকে বের হবো এমন সময় ইসলামীয়া হসপিটাল থেকে ফোন এলো এখনি যেতে হবে, মুমূর্ষু একজন পেশেন্ট এসেছে তাই। আমি রিকশা নিয়ে সেখানে গেলাম।

আমার ওটি করতে হয়েছিল যার জন্য বের হতে হতে প্রায় ১০: ৩০ মিনিট বেজে গেল। তাই হসপিটালে বসেই আব্বুকে ফোন দিলাম। আব্বু বলল আসছেন।

প্রায় ১১টা বেজে গেছে আব্বু এখনো আসছেন না। তাই আবার ফোন দিলাম। আব্বু ফোন রিসিভ করে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা মা আর একটু সময় বস, আমি তো যেতে পারিনি, তবে ফারিজ গেছে, তুই ওর সাথে চলে আসিস।

……কিন্তু আব্বু?

আব্বু ফোন রেখে দিলেন। ফারিজ, স্যারের ছোট ভাই। কিন্তু আব্বু না এসে ওকে কেনো পাঠালেন বুঝতে পারছি না। প্রায় ১০ মিনিট পড়ে ফারিজ এসে আমাকে ফোন দিল।

…….হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

…….ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাবী আমি ফারিজ বলছিলাম। আমি হসপিটালের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

……আচ্ছা আপনি ওখানেই দাঁড়ান আমি আসছি।

আমি ক্যাবিন থেকে বের হয়ে এগিয়ে গেলাম। গেইটের সামনে গিয়ে দেখলাম ফারিজ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে গেলাম।

…….আব্বুর কী হয়েছে?

…….ভাবী তুমি গিয়েই দেখে নিও, এখন ওঠো না হয় আরও দেরি হয়ে যাবে।

……হুম।

আমি বাইকে উঠে বসলাম। ফারিজ বাইক স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল।

……ভাবী তুমি আমাকে আপনি করে কেনো বলছ? আমি তোমার বড় তো হবো না ছোটই হবো, আর দ্বিতীয় সম্পর্কেও তোমার ছোট দেবর হবো আগামীতে ইন’শা’আল্লাহ। তাই তুমি আমাকে এখন থেকে তুমি করেই বলবে কেমন?

…….আমি হালকা হাঁসলাম।

বাসায় গিয়ে দুজনেই ভেতরে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আব্বু সোফায় বসে আছেন, স্যার আব্বুর সামনে বসে আব্বুর পা ব্যান্ডেজ করছেন। যা দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে এগিয়ে গেলাম।

…….আব্বু কী হয়েছে তোমার? আমাকে নিতে যাওনি দেখেই আমি বুঝে ছিলাম কিছু একটা তো হয়েছে? কীভাবে হলো আব্বু?

……..আরে তুই এত টেনশন নিশ না। আমি ঠিক আছি। ওই গেটের সাথে পা বেজে একটু ব্যথা পেয়েছিলাম, আর তা ফারিজ দেখে নিলো। এরপর সে ফাইয়াজ কে ফোন দিয়েছে বাসায় আসার জন্য, এমন কী আমাকে ধরে এখানে বসিয়ে দিয়ে তোকে নিতে গেছে।

…….আঙ্কেল এটা মোটেই একটু ব্যথা নয়। আপনার আঙুলে অনেকটা লেগেছে, আপনি কাল বরং একটা টেস্ট করিয়ে নিবেন। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে না হয় আমি নিজেই যেতাম আপনাকে নিয়ে।

…… আরে ফাইয়াজ তুমি তো বাবা আমার মেয়েকে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছ।

…….কেনো আব্বু আমি কী কচি খুকি কিছু বুঝি না? তুমি একটু সাবধানে চলা ফেরা করবে, তা না দেখো তো কী থেকে কী হয়ে গেল।

…….ফাইয়াজ, ফারিজ নাও চা নাও।

……আন্টি এগুলো কেনো? রাত ১১:৩০ মিনিট বাজে আপনি শুধু শুধু এগুলো কেনো করতে গেলেন?

…….আরে বাবা বেশি কিছু নয় একটু চা ই তো করেছি। ধরো ধরো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নে পুস্পিতা তুই ও নে।

সবাই চা নিয়ে বসে পড়ল। আব্বু চা খেতে খেতে বলে উঠলেন।

…….পুস্পিতা আজ তবে তোর এত দেরি হলো কীভাবে?

…….আব্বু ওই আসলে একটা ইমারজেন্সি পেশেন্ট ছিল, সার্জারী করতে হয়েছিল। তাই দেরি হয়ে গেছে।

এরপর স্যার আর ফারিজ চলে গেল। আমি ফ্রেশ হয়ে এলাম সবাই মিলে খাবার খেয়ে নিলাম।

খুব সকাল সকাল উঠে আজও ছাদে গেলাম। দেখলাম স্যার এক্স্যাসাইজ করছেন। আমি গিয়ে গাছে পানি দিয়ে চলে আসতে নিলাম। ঠিক তখনই স্যার বলে উঠল।

……..শোনো?

…….(ঘুরে গিয়ে চারিদিকে উঁকি ঝুঁকি মেরে) আমাকে বলছেন?

…….. না রোজ ওই ছাদে যে ভূতটা গাছে পানি দিতে আসে তাকে বলছি।

…….. কীহ আমাদের ছাদে ভূত আসে রোজ? ওহ গড কাল থেকে সেই তবে পানি দিবে, এই ঠান্ডায় এমনিতেও আমার আসতে ইচ্ছে করে না। তবে আমি গেলাম।

এই বলে যেতে নিলাম স্যার রাগী লুক নিয়ে বলে উঠলেন।

…….এই মেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে একটু কথা শুনতে পারো না? একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে।

আমি স্যারের কথায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। স্যার কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে তার রাগ কিছুটা কমিয়ে আমাকে বলে উঠলেন।

…….তুমি কী জানো কাল রাহাত আনোয়ার হসপিটালে চৈতী এসেছিল?

…….হুম জানি। কারণ সে আমার কাছেই এসেছিল।

…….মানে? কিন্তু কেনো?

…….ডাক্তার দেখাতে, সে নাকি জানত না যে আমিই ডক্টর পুস্পিতা রাহমান। সে শুনেছে ভালো একজন ডক্টর এসেছে বাহির থেকে পড়াশোনা কমপ্লিট করে তাই এসেছে।

…….তুমি তাকে রুম থেকে বের করে দাওনি?

…….নাহ কারণ সে আমার পেশেন্ট আর আমি একজন ডক্টর, সে হসপিটালে না এসে যদি আমার বাড়িতেও আসত তবেও আমি তাকে বের করে দিতাম না। কারণ আমার মা সব সময় বলে, ঘর আমাদের না আল্লাহর সে আমাদের যদি এই বাড়ি ঘরের যোগ্য না ভাবত তবে এগুলো আমাদের দিত না। তবে এই বাড়িতে কাউকে আসতে দেবো না এটা বলার আমরা কারা? কখনো কাউকে এটা বলবি না যে এখান থেকে বেরিয়ে যাও। তাই বলতে পারিনি তাকে বেরিয়ে যেতে। আর যেহেতু আল্লাহ তায়া’লাই আজ আমাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছেন। আমার কী যোগ্যতা যে আমি নিজ ইচ্ছেতে এতদূর আসব? তবে কীভাবে কাউকে অপমান করি? আর সে যা করেছে তার শাস্তি তাকে মহান আল্লাহ তায়া’লা দিবেন, আমি যদি বিচার করতে যাই তবে আল্লাহ তায়া’লা কী করবেন?

…….কী জন্য আসছিল?

……He is pregnant.

……তুমি শিওর?

…….হুম বাট রিপোর্ট করতে দিয়েছি, বাকিটা রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। কিন্তু ভাবনার বিষয় কী জানেন? ও খবরটা শুনে খুশি হতে পারেনি।

…….তাই?

……হুম। যাক বাদ দিন, অন্য কারো কথা ভেবে নিজেদের মূল্যবান সময় কেনো নষ্ট করব? আপনি তো মেডিকেলে যাবেন তাই না?

…….হ্যা কেনো?

…….না এমনই যান তবে, আমারও বের হতে হবে। কাল যে সার্জারী-টা করলাম ওই পেশেন্ট কে একটু দেখতে যেতে হবে।

…….ওকে। (আমি যেতে নিলাম স্যার বলে উঠল)

…….শোনো, রেডি হয়ে নিচে থেকো।

এই বলে স্যার নিচে চলে গেলেন। আমি একটু দাঁড়িয়ে মুচকি হেঁসে পা বাড়িয়ে নিচে চলে এলাম। ভাবছি, স্যারের আবার কী হলো? রাগ ভাঙছে মনে হচ্ছে একটু একটু করে। তাই হাঁসলাম।

ব্রেকফাস্ট করে রুমে গিয়ে দেখলাম ৮:৩০ মিনিট, ভাবলাম আজ একটু অন্য রকম সাজব। তাই ড্রয়ার থেকে একটা ড্রেস বের করে রেডি হয়ে মা কে আওয়াজ দিলাম। মা এসে আমাকে দেখে বলে উঠল।

…….কী করছিস তুই?

…….মা প্রশ্ন করো না এটা পড়িয়ে দাও।

…….হঠাৎ শাড়ি কেনো?

…….এমনিতেই, ইচ্ছে করছে তাই।

……তাই নাকি অন্য কিছু?

…….মা অন্য কী হবে হ্যা? নিজেই তো মাঝে মধ্যে বলো শাড়ি পড় তোকে ভালো লাগবে। আজ বারণ করছ পড়তে?

…….আরে না বারণ কেনো করব? আমি তো বলছি হঠাৎ করে আমার মেয়ের শাড়ি পড়ার মন জাগলো কেনো?

……..মা তেমন কিছু না এমনই পড়ছি।

…….ঠিক আছে বুঝে নিলাম না হয় তাও।

আমি হালকা হাঁসলাম। মা আমাকে খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দিল, কালো রঙের শাড়ির সঙ্গে সব ম্যাচিং করে পড়ে নিলাম।

…….মা কেমন লাগছে তোমার মেয়ে কে? (আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে)

…….এক কথায় বললে অসাধারণ লাগছে।

…….তাই মা?

…….হ্যা তাই।

…….আচ্ছা তবে এখন আমি আসছি।

……সাবধানে যাস। না হয় একটু দাঁড়া তোর আব্বু দিয়ে আসবে।

……না মা আমি চলে যাবো।

আমি এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম, হাসতে হাসতে। গেইট খুলে বের হতেই দেখলাম স্যার গাড়ীর সাথে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিলো, এরপর চোখ সরিয়ে নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। আমিও গিয়ে অপর পাশে উঠে বসে পড়লাম। সিট ব্যালট বেঁধে নিলাম।

……আজ কোনো স্পেশাল দিন নাকি?

……না তো স্যার কিন্তু কেনো?

…..না এমনিতেই।

স্যারের প্রশ্নর মানে আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। বাট এড়িয়ে গেলাম।



চলবে………..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here