#কাননে_এত_ফুল (পর্ব-১৬ এবং শেষ)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
৩০.
সময় বহমান। দিন ফুরিয়ে যায় কখন কীভাবে তা টেরও পাওয়া মুশকিল। সেই সময়ের স্রোতেই ভেসে চলেছি আমি এবং আমার জীবন। আজ আমার জীবনের উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে। আমি এখন অষ্টাদশীর সেই কন্যা নই। এখন বিশে এসে ঠেকেছি বলা চলে। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি এখন অন্যের জীবনের সাথে আটকে আছি এবং থাকবও। আমাদের মাঝে অতি দ্রুতই আমাদের আরেকটি আপনজন আসতে চলেছে। অবশ্য একজন নয়, বলব দুইজন। আজকেই আমি আলট্রা করানোর পর জানলাম। আয়ান এখনও কিছু জানে না। জানানোর অবকাশ পাইনি। মিশনে গিয়েছে আজ এক মাস হতে চলল। কারো সাথে যোগাযোগ নেই। যাওয়ার আগে কোয়ার্টার থেকে আমাকে বাড়িতে দিয়ে গেছে। একা গর্ভবতী একটা মানুষকে ফেলে রাখা তো যায়না। শ্বাশুড়ি মা অবশ্য একপ্রকার যুদ্ধ করেছে আমাকে আনতে। আয়ান ভেবেছিল মা’কে নিয়ে রাখবে আমার কাছে তবে তিনি বারণ করলেন। এই অবস্থায় একা থাকলে টেনশন বাড়বে, ফলে বাচ্চার এবং আমার উভয়ের ক্ষতি হবে এই বলে তিনি আমাকেই নিয়ে এলেন। চারমাস আগে যখন এইখানে ছিলাম তখনও বাড়িটি কেমন খালি খালি লাগত। আর এখন বাড়ি ভরে আছে যেন! অভ্র, মানে যে এখন আমার দেবর। সে বিয়ে করেছিল সাত মাস আগেই। বউ নিয়ে চট্টগ্রাম ছিল এতদিন। এখন ঢাকায় ট্রান্সফার হয়ে এসেছে তাই বাড়িতে থাকে সবাই। অবন্তী আপুও এসেছে। স্বামী সংসার নিয়ে সেও দিব্যি আছে। অবন্তী আপুর স্বামী নামক ব্যক্তিটি হলো আমার সেই শত্রু মৃদুল ভাই। তাদের বিয়েটা যে কখনো হবে তা আমি ভাবিনি। কেউই ভাবতে পারেনি এক বছর প্রেম করে তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। মিফতা ভাইয়েরও বিয়ে হয়েছে আমার বান্ধবী পৃথার বড় বোন প্রিয়ন্তী আপুর সাথে। খালামণিদের পূর্ব পরিচিত ছিল তারা। খালুর ক্লাস মেট ছিল পৃথার আব্বু। মিফতা ভাইয়ের বিয়ের কথাটা মনে পড়লে শুধু বিয়েটা নয়, বিয়ে নিয়ে সেই বড় কাহিনিটাও বারবার মনে পড়ে যায়।
সেদিন ছিল কোনো এক বাদলা হাওয়ার পাগল করা দিন। চারিদিকে তুমুল বৃষ্টি। আমি সবে এইচ এস সি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন অবশ্য বিয়ের বছর পেরিয়েছে। আমার আয়ানের সাথে কোয়ার্টারের চলে যাওয়া ঠিক ছিল। কেবল পরীক্ষা টাই বাকি। বাড়ির সাথে যোগাযোগ ছিল বলতে মা ছাড়া সবার সাথেই স্বাভাবিক। অবশ্য মা আমার সাথে কথা না বললেও আয়ান এবং তার পুরো পরিবারের সাথেই খুবই সহজে মিলে মিশে গিয়েছিল। প্রথমে রাগ করেছিল পরে আয়ানকে তার ভীষণ রকম পছন্দ হয়। মূলত মেয়ে যে একটা সঠিক জায়গায় এসেছে এই ভেবেই সে খুশী। আমার সাথে কথা সরাসরি না বললেও এর ওর মাধ্যমে বলা হতো। মা আমার সাথে রাগ করেছিল কারণ তার ধারণা আমিই হয়তো আয়ানের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করেছি। আর তা তাকে জানাইনি পর্যন্ত। মা আজ পর্যন্ত ব্যাপারটা ক্লিয়ার করেনি আমার সাথে কথা বলে। আমিও অভিমানের পাল্লা ভারী করলাম। মা’য়ের সাথে কথা বলার আর চেষ্টা করলাম না। এতে আরো ভুল করলাম বোধ হয়। কেননা মা এর পরে আরো বেশি এড়িয়ে চলেছে আমাকে। তবে দিন দিন কমছে। কারণ আমি এখন সন্তানসম্ভবা আর সে হলো আমার মা। এই মুহূর্তে অঘোষিত ভাবে হলেও তাকেই আমার সবচেয়ে প্রয়োজন। আর বড় কথা এখন খালামণিও সব ভুলে আমাকে বুকে টেনে নিয়েছে। তাই শুধু শুধু রাগ নিয়ে পড়ে থাকলে তো হয়না। সবাই এখন যার যার জীবন গুছিয়ে ফেলেছে। কে কতটা করেছে জানিনা। তবে অনেকেই ক্ষত সারিয়ে ফেলেছে।
তো যা বলছিলাম! সেই দিন মাগরীবের নামাযটা শেষ করেই আমি পড়ছিলাম হঠাৎ করেই তুমুল বৃষ্টি। আমি বারান্দায় ছুটে গেলাম। এই ঝড় হাওয়া আর তুমুল বেগে বৃষ্টিপাত হওয়া আমার বেশ পছন্দ। আমি তো মনের সুখেই ভিজছিলাম। কে জানতো আর্মিম্যান সেদিন বাড়ি ফিরবে। ভিজে একাকার হয়ে যখন রুমে ঢুকি চোখ কপালে। আর্মিম্যান নিজের গায়ের শার্টটা খুলে বসে আছে বিছানায়। আমি কয়েকবার চোখ বন্ধ করলাম আবার খুললাম। এই লোকটাকে তখনও আমি বেশ ভয় পাই। মিথ্যে বলব না ভয়টা দিন দিন বাড়ছে কমছে না। সেই বার সে এসেছিল পাঁচমাস পরে। কাজে কাজে আসা হয়না তার। আমিও তাকে আড়াল করতে পারলেই যেন বাঁচি। সে আমার জীবন একপ্রকার রুটিনের আওতা ভুক্ত করে রেখেছিল। ঘুমাতে যাওয়ার আগ থেকে ঘুম থেকে উঠা পর্যন্ত সব তার ডিসিপ্লিন মেনে করতে হয়। অবশ্য একদিক দিয়ে তা আমার উপকারে এসেছে। আমি একটা পার্ফেক্ট শেইপে পৌঁছে গেলাম। যেটা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের।
আমি যখন তাকে দেখে ভয়ে তটস্থ তখনিই ইয়া বড় এক ধমক দিয়ে উঠল।
-‘এই! তুমি বৃষ্টিতে ভিজেছো? এই সন্ধ্যায়! পাগল হলে নাকি!’
ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছিল। জবাব দিব কী? চুপ করে রইলাম। সে আবারও গর্জন করে উঠল,
-‘এক্ষুণি জামা বদলে আসো। ফাস্ট! পরে তোমাকে সাইজ করছি। যাও।’
আমি তার কথা মত কাবার্ড থেকে জামা বের করতে নিলেই সে আবারও বলল,
-‘শাড়ি পড়া কী এখনও শিখা হয়নি তোমার?’
আমি ভুলেই গেছিলাম। তার রুলসের মধ্যে একটা হলো আমাকে শাড়ি পড়তে হবে এবং তখন যখন সে বাসায় থাকবে। আর সে না থাকলে ওত দরকার নেই। তবে সে যদি বাসায় থাকে তখন পড়তেই হবে। অগত্যা শাড়ি পড়া শিখতে হলো। তাই মার্কেটে গেলেই শাড়িটাই কেনা হতো বেশিরভাগ সময়। আর যখন সে থাকেনা তখন টি শার্ট,প্লাজো পড়তাম যেমনটা বাসায় পড়তাম। কারণ পুরুষ মানুষ কেউ ছিল না। বাহিরে অবশ্য গার্ডস আছেই। তারা তো আর ভেতরে আসত না। অবন্তী আপু যেমন চলতো তিমনিই আমিও এই বাড়ির আরেকটা মেয়ে হয়ে চলতাম। সত্যি কথা বলতে তাদের সাথে মিশতে আমার খুব কম সময় লেগেছিল।
একেবারে গোসল সেরে শাড়ি পড়ে এলাম। সে এক পলক আমাকে দেখে নিজেও ফ্রেশ হতে চলে গেল ওয়াশরুমে। আমি বই পুস্তক গুছিয়ে রাখলাম। তারপর নিচে নেমে গেলাম। চা বানাতে হবে এখন। আমার শ্বাশুড়ি মা বিকেলে যে তার বোনের বাসায় গিয়েছিল তখনও ফিরেনি। অবন্তী আপু কোচিং থেকে এসেই ঘুম দিয়েছে। ডাকলাম কয়েকবার বলল মাথা ব্যাথা করছে। তো আমিও আর কিছু খেলাম না। একা একা ভালো লাগছিল না। চা বানিয়ে উপরে যাবো তখনিই টেলিফোন টা বেজে উঠল। মা কল করেছেন, বললেন সকালে আসবে। বৃষ্টির জন্য আসতে পারছেন না। আমি বলতে পারলাম না যে আয়ান এসেছে। তার আগেই তিনি কল কেটে দিলেন। শ্বাশুড়ি মায়ের স্বভাব হলো নিজের কথা বলা শেষে কলটা ঠুস করে কেটে দিবেন। এই নিয়ে মাঝে মাঝেই আমি আর অবন্তী আপু তার সাথে মশকরা করি। আমাদের বান্ধবীর মতো মানুষটা। রুমে এসে দেখি আয়ান ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হট শাওয়ার নিয়েছে। তবে হঠাৎ করেই একটা জিনিস দেখে বুকটা ধক করে উঠল। তিনি নিজের গলার কাছটায় হাত বুলাচ্ছিল বলে এতক্ষণ খেয়াল করিনি। যখনই গলা থেকে হাত সরায় দেখি গলা থেকে বুক পর্যন্ত একটা কাটা দাগ। বাজে ভাবে যখম হয়েছিল বোঝা যাচ্ছে। চায়ের কাপ রেখেই তার দিকে এগিয়ে গেলাম। সে ভ্রু কুঁচকে তাঁকালে তাকে পাত্তা না দিয়ে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। জায়গাটাতে আলতো ভাবে হাত ছোঁয়ালাম। চোখ গরম করে তার মুখের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
-‘কীভাবে হলো এমন?’
-‘হয়ে গেছে কোনো ভাবে।’
-‘আপনি আমাকে ইররেসপন্সিবল বলেন। নিজে কী?’
-‘আমি কী মানে! আমাদের প্রফেশনে এসব নরমাল। এই ছোট ছোট ঘা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না।’
-‘ছোট ছোট যখম একদিন বড় হয়ে ওঠে।’
-‘তুমি তো দেখছি ভালোই বুঝদার হয়ে গেছো।’
-‘হ্যাঁ! আপনি একাই বুঝদার মানুষ। আর কারো তো বুঝদার হওয়া যাবেনা।’
-‘রাগ দেখাচ্ছ?’
-‘দেখালে ক্ষতি কী?’
-‘ক্ষতি তো নেই। তবে রাগে স্পষ্ট অধিকারবোধ। কিন্তু কেন? বলেছিলে না আমি কোনো ম্যাটার করিনা তোমার কাছে।’
-‘আপনিও তো অধিকার দেখান।’
-‘কারণ তুমি আমার কাছে ম্যাটার করো মৌনতা।’
আমি চুপ করে গেলাম।
লোকটা মৃদু হাসে। তার এই মৃদু হাসিটা এত চমৎকার! আমি প্রেমে পড়ি বারবার এই হাসির। তবে বুঝতে দেই না। একহাতে আমায় বুকে আগলে নিয়ে বলে,
-‘তোমাকে আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে নিয়ে যাবো।’
-‘হু।’
-‘শুধু হু? না না করছ না যে?’
-‘না করে কী হবে? আপনি তো নিয়েই যাবেন।’
-‘তা তো নিব। আমার বউকে ছাড়া আমি কী শীতটাও পার করব?’
আমি দাঁত দিয়ে তার বুকে আলতো কামড় দিলাম। সে বলল,
-‘দিন দিন তোমার কামড়াকামড়ির স্বভাবটা বেড়েই চলেছে। কী করা যায় বলো তো!’
আমি চুপ করেই রইলাম। সে কিছু বলল না আর। আমি মুখ তুলে তার দিকে চাইলাম। চোখ বন্ধ করে এমন ভাবে আছে যেন পরম শান্তি অনুভব করছে। তার ক্ষ’ত’টায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। তারপর পরপর কয়েকটা চুমু খেলাম। তখনিই হাতের বাঁধন আলগা করে সে চলে গেল। তবে দরজার লাগানোর শব্দেই আমি থমকে গেলাম।
তারপরের মুহূর্তটা ছিল একদম অন্যরকম। দীর্ঘদিন পর তার মাতাল করা ছোঁয়া পেয়ে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না। চায়ের কাপের ধোঁয়া ওঠা চা টাও ঠান্ডা হয়ে গেল তাতে আর চুমুক দিয়ে তার স্বাদ গ্রহণ করা হলো না। বৃষ্টির গতি যেমন বাড়ছিল তেমনিই একে অন্যের সাথে আরো বেশি জড়িয়ে পড়লাম।
রাতে আবারও হট শাওয়ার নেওয়ার পর শরীর ঝিম ধরে গেল। জ্বর আসার সব লক্ষণ প্রকাশ পেল। তবে তিনি একদম ফিট। আমাকে বারবার বলছেন,
-‘বৃষ্টিতে ভিজেছ বলেই এই হাল হয়েছে। আর ভিজবা?’
-‘বৃষ্টির দোষ দিচ্ছেন কেন? দোষ আপনার।’
-‘তুমি তো মানা করো নি।’
আমতা আমতা করে বললাম,
-‘আপনি চুপ করেন। আমি কী মানা করতাম! আপনার আক্কেল নেই?’
সারারাত জ্বরের যন্ত্রণা সহ্য করে সকালের দিকে একটু ঘুমাচ্ছিলাম। তখনিই ফোনে কল আসে। মৈত্রী আপুর কল। এতদিন পর তার কল পেয়ে ভ্রু কুঁচকে এলো। কলটা রিসিভ করলাম ওপাশ থেকে আপু বলল,
-‘কী খবর অর্নি? ভালো আছিস!’
-‘তুমি কল দিয়েছ এইটা দেখেই ভালো হয়ে গেলাম।’
-‘এতক্ষণ তবে খারাপ ছিলি?’
-‘না তেমন টা না। বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম গত সন্ধ্যায়। তাই জ্বর এসেছে।’
-‘জানি।’
-‘কী জানো?’
-‘কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিলি।’
-‘কীভাবে জানলে?’
-‘মিফতা দেখেছিল। তার জানালা থেকেই তো আয়ানের বেলকনি পুরোটা দেখা যায়।’
আমি থমকে গেলাম। আসলেই তো! মিফতা ভাইয়ের রুমের জানালা একদম আয়ানের বেলকনি বরাবর। সে আমার বৃষ্টিবিলাশ দেখছিল? আমি তো খেয়াল করিনি একদম। রাগ হলো। সে কেন দেখল? দেখে আবার জনে জনে বলতেও গেল!
-‘মিফতা ভাই এটা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে?’
-‘না তো। কাল নাকি মৃদুলও ছাদে ভিজেছে। ওরও জ্বর। টেবিলে মা ওকে বকছিল বাচ্চামি করেছে কেন? তখন মিফতা বলল তুইও কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিস। নিশ্চয়ই তোরও জ্বর এসেছে। মা সহ আমরা সবাই আহাম্মক বনে গিয়েছিলাম। মৃদুলকে দেখলাম চোরা চোখে বুঝলাম সেও দেখেছে। দুই ভাই তোকে বেশ ভালো করেই বৃষ্টিবিলাশ করতে দেখেছে। আর এইটা নিয়ে তাদের মনে বিরাট এক দুঃখ। এতদিনে হয়তো সবটা জানিস। মিফতা মৃদুল দুজনেই তোকে পছন্দ করত। অবশ্য এখনও হয়তো করে তুই বিবাহিত বলেই প্রকাশ করছেনা। আমারও তোকে এসব বলা উচিত হচ্ছেনা তবুও বলে দিচ্ছি কেন যেন! ভালো করেছিস অর্নি। খুব ভালো করেছিলি। যদি তুই এই দুইজনের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে তবে আমাদের পরিবারটা হয়তো ভেঙে যেত। ভাইয়ে ভাইয়ে দুরত্ব বাড়ত। আমরা বোকার মত তোর উপরে রাগ করেছি। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেনি যদি এমনটা হতো তবে কত বড় ক্ষতিই না হয়ে যেত!’
মৈত্রী আপুর কথা শুনে নিরব হয়ে রইলাম। আসলে আমি এমনটা ভাবিনি। তাছাড়া ভাবার সময় পাইনি। আয়ান কখনোই আমাকে অতীতের কষ্ট বয়ে যেতে দেয়নি। আমি ভাবতেও পারিনি আয়ান আমাকে এতটা আগলে রাখবে। কখনোই সে আমার থেকে মিফতা ভাই বা মৃদুল ভাই সম্পর্কে জানতে চায়নি। আমাকে বকা ঝকা করুক তবে আমার অনুভূতির, আমার সম্মানও করে খুব। একটা মেয়ে তার স্বামী থেকে প্রথমে এটাই চায়। তবে আমার কেন যেন জানতে ইচ্ছা করে এখনও মিফতা ভাই আর মৃদুল ভাই কবে থেকে আমাকে অন্য নজরে দেখা শুরু করেছে? হঠাৎ করে? তাছাড়া আমিই কেন! অন্য কেউ কেন নয়? এক বুক হতাশা, আগ্রহ, পালিত দুঃখ নিয়ে আমার মনটা আজো কেঁদে ওঠে। বারবার মনে হয় আমি এতটা কষ্ট কাউকে কীভাবে দিতে পারি? একটা কথা বরারবরই সত্যি। সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তার চেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী আর কে হতে পারে! আমি যার বাম পাঁজোড়ের হাঁড় হতে সৃষ্ট তার সাথেই আমি আবদ্ধ। সবই পূর্বলিখিত। কেবল মাঝখানেই ঘটে যায় অনেক কাঙ্ক্ষিত, তবে তখন তা ঢেকে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নামক চাদরে।
দুপুরে রান্না করলাম আমি আর অবন্তী আপু মিলে। অবন্তী আপুর মনটা ভালো নেই দেখে বোঝা যায়। অনেক জোড়াজুড়ি করলাম বলল না কিছু। এমনকি আমাকে একটু রাগও দেখিয়েছে। তাই আর কিছু বললাম না। বিকেলে অভ্র আসে হঠাৎ করেই। তবে একা নয়! নতুন বউ নিয়ে আসে। সঙ্গে শ্বাশুড়ি মা ও ছিলেন। জানলাম যে তারই কলেজের জুনিয়র কে বিয়ে করেছেন। মেয়েটি অর্থাৎ তনিমা আপু তখন এমবিবিএস পাশ করে বের হয়েছেন। তবে তখন আর ইন্টার্নি করেনি। ঢাকায় আসার পরই করেছে। হঠাৎ করেই প্রেম করেছেন তারপর বিয়ে। আমার যেদিন এই বাড়িতে দ্বিতীয় দিন চলছিল তখন অভ্রর দৃষ্টি আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি লক্ষ্য করেছিলাম তার দৃষ্টিতেও শোকের ছায়া। মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো আমার ছোট খাটো ফ্লার্ট তার মনে হয়তো কিছুটা হলেও জায়গা করে নিয়েছিল। অবশ্য সময়ের তালে সেসব কেটে গেছে অতি দ্রুত। দেবর ভাবির একটা দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল আমাদের। তবে তার লাভ লাইফ নিয়ে কখনো জানতে চাইনি সেও বলেনি। না বলুক। আর ভালো লাগেনা এসব ব্যাপারে জানতে। শুনেছি নিতুন আপুর সাথে বিয়ের কথা যখন উঠেছে তখনই তা অভ্র নাকোচ করেছে। আমার সেখানে ওকে ভোলানোর কোনো মানেই ছিল না। নিতুন আপু মিথ্যে বলে দিনের পর দিন আমাকে এক দিকে ফেলে দিচ্ছিল। তার নাকি হিংসে হতো মিফতা ভাইয়ের আমার প্রতি করা কেয়ারিং স্বভাবগুলোর উপর। সেসব সে নিজেই এসে বলেছে। নিতুন আপু সেসময় সব বলেছিল কারণ আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাই। তবে তার নিজেরও তেমন একটা সুবিধা হলো না। কারণ মিফতা ভাই ঘোষণা দিলেন তিনি বিয়ে করবেন। এবং আগেই জানিয়ে রাখলেন মেয়ের বয়স হতে হবে পঁচিশ বা তার বেশি। মোটামুটি ম্যাচিউরড লেভেলের চেয়েছেন। আর সবদিক বিবেচনা করে প্রিয়ন্তী আপুকেই পছন্দ হলো। আমাকে খালু এমনকি মিফতা ভাইও নিমন্ত্রণ করেছিল। যেতে চেয়েছিলাম। তবে যাইনি। স্বাভাবিকভাবেই আয়ানের কাজ ছিল তাই সে বিয়েতে এটেন্ড করেনি তবে আমাকে যেতে বলেছিল। আমিও তৈরি হয়েছিলাম। তখনিই খালামণির কল। আমি তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। তখনিই একটা দাগ আমার মনটার উপরে স্পষ্ট ছাপ ফেলে দিল। খালামণি বলল,
-‘দ্যাখ অর্নি! মিফতাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছি। আমি চাইনা এখন বিয়েটা ভেঙে যাক। ওর তোর প্রতি দুর্বলতা আছে। তুই সামনে থাকলে হয়তো দেখা গেল মন বদল হয়ে গেছে। তুই আসিস না। কিছু একটা করে ম্যানেজ করে নে।’
আমার জবাবের অপেক্ষা করল না। খট করে কলটা কেটে দিল। ভাবতেও অবাক লাগে আমার এত প্রিয়, এত কাছের খালামণি আমাকে কখনো এই ভাবে বলবে। কিন্তু কী অযুহাতে বাসায় থাকব? একটু আগেও তো সবার সামনে কত হৈচৈ করলাম। এখন কীভাবে কী বলব? অবন্তী আপুরা সবাই এখনও তৈরি হচ্ছে। আমিই ঝটফট তৈরি হয়েছিলাম। এখন কী করি!
অবশেষে মাথায় একটা কথা আসল। আমি সেই অনুযায়ী পার্সে কিছু টাকা নিলাম। প্রতিমাসে আয়ান দেয় কিন্তু আমার খরচ খুবই কম। তাই জমা ছিল অনেক। আমি মা’কে বললাম,
-‘কাজিনরা সব চলে যাচ্ছে এক মাইক্রো করে। আমিও তাদের সাথে যাচ্ছি।’
মা বারণ করল না। আমি আগেই বেরিয়ে পড়লাম। তবে বের হয়ে উল্টো পথ ধরলাম। সামনেই একটা চারতলা বিল্ডিং এর সামনে উবার কে ডেকে নিলাম। কাছেই ছিল এক দেড় মিনিটেই হাজির। সেই উবারে করে চলে গেলাম শপিংমলে। কি করব না করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। টাকা ছিল তাই তৎক্ষণাত একটা কুর্তি আর প্যান্ট কিনে চেঞ্জ করে নিলাম। তারপর মুভি দেখলাম, দুপুরের খাবার বিকেলে খেলাম। অবশেষে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছিলাম। টিএসসিতে গেলাম কী মনে করে। হাতে ব্যাগ আছে আর তাতে রয়েছে।শাড়িটা। ভাবলাম একটু চা খাই। আবহাওয়া সুন্দর। এখানে সবাই সবার মত আনন্দে। ভার্সিটি পড়ুয়া সবাই কী হাসি তামাশাতে মশগুল। আমার বারবার মনে হচ্ছিল আমার মতো কী এখন কারো মনে কষ্টরা খেলা করছে? করছে হয়তো। এই যে আমার বাহিরে সুখী মানুষের আবরণ তাদেরও হয়তো তা-ই। চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর ভাবছি নিজের জীবনের মোড় নিয়ে। তখনিই চোখে পড়ে রাস্তার ঐপাশে এলোমেলো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা আয়ানের উপর। এদিকেই ছুটে আসছে একপ্রকার। পেছনে দেখলাম এনামুল সাহেবও ছুটছেন। আমি ঘাবড়ে গেলাম। আজ মা’র টার খাবো নাকি জনসম্মূখে? চায়ের শেষ চুমুক দিয়ে বিল মিটিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলাম। তাদের আসার আগেই ভাবলাম ভিড়ে হারিয়ে যাব কিন্তু তা হলো না। আয়ান এসেই আমার হাতটা ধরে ফেলল। তার চোখ মুখ উদ্ভ্রান্তের মতোন দেখাচ্ছিল। এনামুল সাহেব হাঁপাতে লাগলেন। বললেন,
-‘ম্যাডাম! আপনি হারায় গেলেন কীভাবে!’
এই লোককে বারবার বলেছি ম্যাডাম ডাকবেন না তাও ডাকে। আর হারিয়ে গেলাম মানে? এই তো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি জল জ্যান্ত। এই লোকের কথা বার্তা একদম ছেড়াবেড়া লাগে। আয়ান বলল,
-‘তুমি এইখানে কী করছ? তোমার না মিফতার বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল? বাড়ি থেকে তুমি কয়েক ঘন্টা আগেই বেরিয়েছো মৌনতা! তোমার কী কান্ড জ্ঞান নেই?’
-‘হ্যাঁ ঠিকই তো ম্যাডাম। আপনি জানেন বিগত তিন ঘন্টা যাবৎ পুরো একটা ফোর্স লাগিয়ে খুঁজেছি আপনাকে! দেখেন! আমি আজকে এতো দৌঁড়াদৌঁড়ি করেছি যে পাঁচ কেজি ওজন তো কমেই গেছে।’
ব্যাপারটা বেশিই হয়ে গেল। আমি চোখ মুখ কুঁচকে নিলাম। আয়ান বার কয়েক নিজের চুলে হাত বুলায় মুখ-মন্ডল হাত দিয়ে ঢেকে রাখে। তারপর এনামুল সাহেবকে আদেশ দেয়,
-‘গাড়ি ডাকুন। রাইট নাও!’
গাড়ি হাজির হতে সময় খুব কমই লাগল। গাড়িতে ওঠার পরেও একটা কথা বলেন নি তিনি। এনামুল সাহেব কিছু বলতে নিয়েছিল কয়েকবার কিন্তু আমাদের দুজনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে টুপ করে কথাগুলো গিলে নিয়েছিলেন।
বাড়িতে এসে তিনি আমাকে ফেলেই ভেতরে চলে এলেন। আমি ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত তার পিছু নিলাম। সে ফিরেও চাইল না। রাতে মা এসে বললেন কি হয়েছিল আমি মিথ্যে বলে কেন বের হয়েছি এই সেই নানান কথা। তনিমা আপু চট্টগ্রাম থেকে কল দিলেন। বললেন,
-‘তোমার আক্কেল জ্ঞান আছে? তোমার নিখোঁজের সংবাদের সবাই একপ্রকার পাগল হয়ে গিয়েছিল। আয়ান ভাই তো পাগলামি করছিল সাথে সাথে অভ্রও। সে তো আর একটু হলেই রওনা দিত ঢাকার উদ্দেশ্যে। তখন ভাই জানালেন যে তোমাকে পেয়েছে। আর এমন করবেনা। ভাইয়ের সাথে রাগ করে এমন করবে? লোকটা তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসে। সামান্য মন মালিন্যর জন্য এমন করবেনা একদম। পরের বার সম্পর্কের কেয়ার করব না বয়সে ছোট তাই দুই তিন ঘা লাগিয়ে দিব।’
উনি কী তবে আমাদের ঝামেলা হয়েছে বলে ব্যাপারটা চালিয়ে দিয়েছেন? আমি তনিমা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
-‘কী বলেছেন উনি?’
-‘কী বলেছে তা নিয়ে আবার কথা বলতে যেও না। তেমন কিছু বলেনি বলেছে পার্সোনাল প্রবলেম। তো পার্সোনাল প্রবলেম আর কী হতে পারে?’
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। কেঁদেই দিলাম। রাতে তিনি ঘুমানোর আগে আমাকে বলল,
-‘আমি জোর দিচ্ছি না তবে তুমি চাইলে বলতে পারো কী কারণে এমন করলে।’
আমি আর কিছু লুকাইনি। সবই খুলে বললাম তাকে। সে খুব মনযোগ দিয়ে শুনে বলল,
-‘মৌনতা শোনো! আমাদের জীবনে এমন মানুষ আছেন যারা আমাদের খুবই ভালোবাসেন। তবে সেটা তারা বুঝতে দেয় না। রাগ আর কিছুটা খারাপ ব্যবহার দিয়ে আড়াল করে ফেলে সেই ভালোবাসা। আমরা তাই সেটা কখনো ধরতে পারিনা। তবে একটু খুটিয়ে দেখলেই সব ঝকঝকা ফকফকা ভাবে দেখা যায়। সেই দেখারও একটা ভিন্ন দৃষ্টি আছে। সেটা হলো প্রিয়জনের প্রতি যত্নের দৃষ্টি। তোমার খালামণি রাগ যতটা করেছেন তার চেয়েও বেশি করেছেন অভিমান। তাই তোমার উচিত তার অভিমান ভাঙানো। যা করেছ আমি বলব না খারাপ করেছ। এটাও ভালো ছিল। একান্তে সময় কাটানো সবচেয়ে ভালো একটা ব্যাপার। নিজেকে সময় দিতে কয়জন পারে? এতে আরেকটা লাভ ও হয়েছে কিন্তু। তোমার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদে তোমার মা কেঁদে কুটে হয়রান। খালামণি চিন্তা করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখনও তাদের অবস্থা নড়বড়ে। কাঁদুক। কারণ আমি মনে করি তাদের এই ক্ষেত্রে কাঁদা জরুরী। কাঁদলে রাগ কমে, মন হালকা হয়। তুমিও চাইলে কাঁদতে পারো। মন খুলে কাঁদো। ঠিক আছে?’
আমি ভুলে গেলাম বাকি সবার কথা। আয়ানের বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম। প্রথমবারের মতো এবারও চরম বিশ্বস্ত স্থান তার বুকটাকেই মনে হলো। তখন বুঝতে পারলাম। এই লোকের আমার প্রতি এমন অনুভূতি আছে যা বাকি সবার অনুভূতিকেও হার মানাবে। সবচেয়ে বড় কথা আমি তাকে ভালোবাসি। নিজের অজান্তে আমি তাকে ভালোবাসি। ক্রাশ তো বহুত খেয়েছি এই দমবন্ধকর অনুভূতি তো কারো জন্য অনুভব করিনি। এই অনুভূতি শুধু তার জন্যই। একান্তই তার।
৩১.
আমি এইচ এস সি খুব ভালো করে দিলাম। অবশ্য ততদিনে আমার পেটে নতুন প্রাণের আগমন ঘটে। আয়ান চিন্তায় ছিল ভীষণ বয়স কম বলে। তবে সামলে নেয় পরবর্তীতে। ডাক্তার বলেছেন সমস্যা হবে না। সাবধানে থাকলেই চলবে।
এরই মাঝে একদিন অবন্তী আপু এলেন আমার রুমে। এসে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর অপরাধীর মতো গলার স্বর নিচু করে বললেন,
-‘মনে আছে একদিন বৃষ্টির দিন আমি তোমায় রাগ দেখিয়েছি? সেদিন রাগ দেখানোর কারণ আমি যখন ছাদে গিয়েছিলাম তখন দেখি মৃদুল আর তুমি দুজনেই দুই জায়গায় ভিজছো। তুমি তোমার মত ভিজছো আর সে তোমার দিকে অপলক চেয়ে। তুমি হয়তো জানোনা আমি আর মৃদুল রিলেশনে গিয়েছিলাম তখন। রিলেশনের দুই মাস চলে। তাই এখন আর ভাই বলিনা। রিলেশনে আমিই আগে হাত বাড়িয়েছে। সে হাত ধরেছিল। তবে সেদিন সেই মুহূর্ত আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত করে দিয়েছিল। রাগ সব তোমার ওপর এসে পড়ে। পরবর্তীতে বুঝলাম তোমার তো কোনো দোষ নেই। দোষটা ভাগ্যেরই। এমনই হওয়ার ছিল হয়তো। তবে মৃদুল আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করছে। আজ বলেছে আমাকে বিয়ে করতে চায়। কাল সপরিবারে প্রস্তাব নিয়ে আসতে চলেছে।’
আমি হেসে দিলাম। জড়িয়ে ধরে শুভকামনা জানালাম। তাদের এসব কখন হলো জানিনা। তবে আমি খুশি হলাম। মৃদুল ভাইয়ের একটা গতি হোক খুব করে চাইতাম। অবেশেষে তা হতে চলল।
পরদিন খালামণি এসে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে এক কান্ড করল। মাফ চায় বারবার। আমি বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশ সাদা মাটা ভাবে ঘরোয়া ভাবেই অবন্তী আপু আর মৃদুল ভাইয়ের বিয়ে হয়। আমরাও কোয়ার্টারে চলে এলাম বিয়ের দুইদিন পরই। তারপর থেকেই দুজন একা একসাথে ছোট্ট সংসার সাজাচ্ছি। দিন বেশ যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ওনার মিশন।
বর্তমানে আমি দাঁড়িয়ে আছি দোতালার লিভিং রুমের খোলা বাতায়নের সামনে। তখনিই চোখে এসে পড়ে কালো রঙের একটা গাড়ি। গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিটিকে দেখে আমার মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল। সে ও হঠাৎ করেই এদিকে তাঁকালো। আমাকে দেখেই প্রশস্ত হাসে। আমি লজ্জায় চোখ নামালাম। দিন দিন লজ্জা বাড়ছে। অভ্র যে পেছনে ছিল খেয়াল করিনি। সে বলল,
-‘ভাবী? ভাই তো এসেছে। পার্বতীর মতো লম্বা আঁচল ফেলে ছুটে যাচ্ছো না কেন?’
আমি সপ্রতিভ হাসলাম। বললাম,
-‘আপনি জানতেন উনি আসবেন?’
-‘না তো। আমি জানতাম ভাই আসবে।’
এই বলে হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলেন। আমি খেয়াল করলাম নিচে আয়ানের সেই চেনা পরিচিত গম্ভীর গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তবে সেদিকে আর গেলাম না। বসে পড়লাম এইখানের বড় সোফার এক কোণায়। মনটা বারবার বলছে,
-‘আমার স্বামী এসেছে। আমার ভালোবাসার মানুষটা এসেছে।’
আমার কাননে ফুল তো ছিল অনেক। তবে এই সব গুলোর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবই আমার জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তাই যা আমার ছিল আমি সেটাই সাদরে গ্রহণ করলাম।
~সমাপ্ত~
(দীর্ঘ সময়ের অবসান হলো। গল্পটি অবশেষে শেষ হলো। আমি কতটা দিতে পেরেছি জানিনা তবে ভালো লাগছে এই সমাপ্তি শুরু থেকে যেমন ভেবেছি তেমন লিখতে পেরে ভালো লাগছে। এখন কথা হচ্ছে কতটা গুছিয়ে লিখেছি? আপনারা কিন্তু রিভিউ দিবেন। এই ব্যাপারে কার্পণ্য করবেন না একদম। রিপ্লাই দেওয়া হয়না তবে আমি কিন্তু সবার মন্তব্য পড়ি। এতদিন যারা পাশে ছিলেন সবার জন্য ভালোবাসা রইল।
#বি:দ্র: সময়ের অভাবে রি-চেইক দিতে পারলাম না। ভুল ধরিয়ে দিবেন।)