নিশীভাতি #২য়_পর্ব

0
960

#নিশীভাতি
#২য়_পর্ব

সব গুছিয়ে যেই শুতে যাবে অমনি খেয়াল করলো হুমায়রার ঘরের দরজাটা কেউ খুলেছে। পেছনে তাকাতেই আৎকে উঠলো সে। বাজারের চালের আরদের শফি দাঁড়িয়ে আছে। শফির ঠোঁটে বিশ্রী এবং কুৎসিত পৈশাচিক হাসি। চোখের দৃষ্টি অতিশয় নোংরা এবং কলুষিত। নিচের ঠোঁটখানা কামড়ে সামনে দাঁড়ানো রমনীর শরীরের খাজ দেখতে ব্যাস্ত সে। দরজার পাশে শফিকে দেখেই চিন্তাশক্তি ক্ষণিকের জন্য লোপ পেলো হুমায়রার। রাত এখন গহীন। এতো রাতে তার ঘরে প্রবেশ করার হেতু বুঝতে সময় লাগলো না তার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সে প্রবেশ করলো কি করে? হুমায়রার ঘরখানা একেবারে ভিটার পেছনে। এর পরেই পুকুরের ধার এবং বাশঝাড়। এই ঘরে প্রবেশ করতে হলে দাদার ঘর পার হয়ে আসতে হবে। দাদার ঘর দিয়ে শফি আসে নি, পেছনের বাশঝাড় দিয়ে আসার ক্ষমতা গ্রামের কারোর নেই। তবে সে এলো কি করে? হুমায়রার কণ্ঠ শুকিয়ে এলো। ভয়ে ভেতরখানা চুপসে এলো। তড়িৎ গতিতে ওড়নাখানা দিয়ে বুক আবৃত করলো সে। তেজী স্বরে বললো,
“তুমি এখানে কেন?”
“বিলকিস তোরে এতো ফ্যাকাশে লাগতেছে কেন? আমাকে তোর ভয় হইতাছে? ভয় পাস না”
“ফাও কথা থামাও। আর এক্ষন আমার ঘর থেকে বের হও। এক্ষন মানে এক্ষন”
“চটোস কেন রে? আমি তো তোর লগে একটু গল্প করতে আইছি। হুনলাম তোর বিয়া ভাইঙ্গে গেছে। তাই তোর খবর নিতে আইলাম।“
“তোমার মতলব আমার ঢের জানা আছে শফি ভাই। ভালোয় ভালোয় বের হও কইতাছি। নয়তো”
“নয়তো কি রে? হ্যা, মুই ও হুনি নয়তো কি?”

এবার ভোল পাল্টালো শফি। তার চোখে মুখের নোংরা হাসি প্রসারিত হলো, সেই সাথে প্রকাশ পেলো পশুবৃত্তি আচারণ। দরজার ধার থেকে এবার একদুপা করে এগুতে লাগলো সে। হুমায়রার চোখের ভয়ের গাঢ়ত্ব বাড়লো। পিছিয়ে গেলো সে দু কদম। শফির পশুবৃত্তি হুমায়রার ভীত চোখজোড়ায় তীব্র আনন্দ খুজে পেলো। বেশ রসিয়ে বললো,
“ভয় পাচ্ছোস কেরে, আমি তো তোর কোনো ক্ষতি করুম না। রাশাইদ্দার ভয়ে কতি পারতিছিলাম না। তয় তোরে ভালো লাগে না এমন পুরুষমানুষ এই গেরামে নাই। চিন্তা কর চেয়ারম্যানের পোলাও তোরে ভালা পায়। যাক গা, এখন আর মোর বাধা নাই। তোর বাপেরে বিশ হাজার টেকা দিছি। কহনো হুনছোস বেডায় টেকা দেয় বিয়া করনের জন্য। আমি দিছি। এহন আর কাম বাড়াইস না। একটু কাছে তো আয়”

বলেই শফি কাছে আসার জন্য উদ্ধত হতেই সাবধান করলো হুমায়রা। মোমখানা নিয়েই ভয় দেখালো তাকে,
“খবরদার, শফি ভাই। আগাবা না। ভালো হবে না। ভাইজান, দাদা। ভাইজান”
“হক্কলে ঘুম বিলকিস। এহন কেউ তোর কথা হুনবে না। আর ওই ছুডো মোমে মোর কি হইবো রে?”

হুমায়রা গলা ছেড়ে চেঁচালো। শফি দমলো না, তার পা এগুলো হুমায়রার দিকে। মোম বিগলিত হয়ে অষ্টাদশীর তালুকে ক্ষত বিক্ষত করছে। কিন্তু তাতে খেয়াল নেই তার। সে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে মরিয়া। শফি খুব কাছে আসতেই হুমায়রা মোমখানা দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইলো। ফলে আগুনের লেলিহান শিখা লাগলো তার হাতে। জ্বলে যাওয়া হাত নিয়ে পিছিয়ে গেলো শফি। শান্ত কামাতুর চোখ এখন ক্রোধে জ্বলে উঠলো। গা/লি দিয়ে বসলো হুমায়রাকে। কিন্তু হুমায়রা দমলো না। পাশে বিছিয়ে রাখা বিয়ের শাড়িটায় আগুন জ্বালিয়ে দিলো। সেই জ্বলন্ত শাড়ি ফিকে মারলো শফির দিকে। এদিকে তার চিৎকার ভাঙ্গিয়ে দিলো শামসু মিঞা এবং রাশাদের ঘুম। ঘুমাতুর চোখেই তারা ছুটে এলো হুমায়রার ঘরে। ঘরে প্রবেশ করতেই ভীতু শফিকে নজরে পড়লো। মুহূর্তেই ঘুম উবে গেলো রাশাদের। কলার টেনে ধরলো সে শফির। আতিয়া খাতুন তার নাতনীর দিকে ছুটে গেলেন। হুমায়রার শরীর কাঁপছে, তার চোখজোড়া নিষ্পলক। জ্বলজ্বল করছে আহত বাঘিনীর ন্যায়। রাশাদের ক্রোধিত রুপ দেখে তোতলাতে লাগলো শফি,
“রাশাদ, মোর কথাহান হুন। মুই খারাপ মতলবে আই নাই।“

কিন্তু রাশাদ শুনলো না। সকাল থেকে অন্তরে চাপা ক্রোধ সব উগরালো শফির উপর। সাহস কি করে হয় বোনের ঘরে ঢোকার। শফি মারের এক পর্যায়ে বলেই বসলো,
“তোর বাপ মোর থেকে টেকা নিছে। গুইনে বিশ হাজার টেকা দিছি বিলকিসরে বিয়া করনের জন্য”

শফির কথাটা শুনতেই থমকে গেলো রাশাদ। নিজের বাবা জঘন্য ব্যক্তিত্ব সেটা ধারণা ছিলো কিন্তু কতটা জঘন্য হলে কোনো বাবা তার বিবাহযোগ্য মেয়ের ঘরে পরপুরুষ পাঠায়! শামসু মিঞা চুপ রইলেন না। নিজের চাষের শাবল দিয়েই আঘাত করে বসলেন শয়তানটাকে। নিজের ছেলের প্রতি এতটা ঘৃণা জন্মালো, যেই ঘৃণার পরিণতির শিকার হলো শফি। মার খেয়ে কোনো মতে ছুটে পালালো সে। কিন্তু যাবার আগে বলে গেলো,
“সে বিচার ডাকবে”

*******
শফি সত্যি সত্যি বিচার ডেকেছিলো। কিন্তু চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন তাকেই দোষী সাব্যস্ত করলেন। কারণ রাত তিনটে একটি যুবতী মেয়ের ঘরে প্রবেশ গর্হিত অপরাধ। অবশ্য শফি তার বিশ হাজার টাকাও দাবি করলো। কাওছার বিচারে উপস্থিত ছিলো না। আজ পাঁচদিন যাবৎ সে নিখোঁজ। অবশ্য শামসু মিঞা তার শাবলে ধার করে রেখেছেন। ছেলেকে ছবক যে দিতে হবে।
হুমায়রা সেদিনের পর থেকে আবারও নির্বিকার আচারণ করছে। রাশাদ ও তাকে নিয়ম করে কলেজে দিয়ে আসছে এবং নিয়ে যাচ্ছে। এবার ইন্টার পরীক্ষা দিবে সে। তার পড়াশোনার প্রতি অকৃত্রিম আকর্ষণ। রাশাদও চায় তার বোন সেই তিক্ত স্মৃতিগুলো ভুলে জীবনে এগিয়ে যাক। মায়ের খোঁজ নেবার ইচ্ছে একবার হয়েছিলো। কিন্তু নেয় নি। যে মানুষ নিজ থেকেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তাকে যেচেপড়ে খোঁজার মানে নেই। তবে বাবার খোঁজ পেয়েছে সে। আপাতত শফির টাকা দেবার ভয়ে পাশের গ্রামে লুকিয়েছে। রাশাদ মজলিশে কথা দিয়েছে সে টাকা ফেরত দিবে। দেলওয়ার হোসেন জানেন রাশাদের কথার নড়চড় হয় না। ছেলেটি অতিমাত্রায় ভদ্র এবং সুশীল। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করে এখন গ্রামের বড় বাজারে একটি ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতির দোকান আছে। খুব মন্দ বেঁচাকেনা নয় তার। তাই সে টাকাটা দু মাসের মধ্যে পরিশোধ করে দিবে। দেলওয়ার হোসেন শুধু ভাবে এই কাওছারের ঘরে এমন ছেলে কি করে হলো! বোন অন্ত প্রাণ রাশাদ। মাকে যে ভালোবাসতো তা নয়। কিন্তু মার প্রতি এখন সে উদাসীন। মার প্রতি তার ক্ষোভ নেই। কিন্তু খানিকটা অভিযোগ রয়েছে। বোনের বিয়ের দিনেই এমন জঘন্য পদক্ষেপ কেনো! মানছে তার বাবা ভালো নয়, তাই বলে সেদিন! ইহজনমে কখনো দেখা হলে শুধাবে,
“মা তোমার কি একটি বারও হুমায়রার কথা মনে পড়ে নি?”

“ভাইজান, কিছু ভাবছো?”

হুমায়রার কথায় সম্বিৎ ফিরলো। স্মিত হেসে বলল,
“কিছু না, তুই বাড়ি যেতে পারবি তো?”
“হ্যা”
“এই টাকাটা রাখ”
“এটা দিয়ে কি হবে?”
“বিপদে কাজে লাগতে পারে”

পাঁচশত টাকা হাতে গুজে দিলো রাশাদ। হুমায়রাকে কলেজ গেটে নামিয়েই মোটরসাইকেল স্টার্ট দিলো। হুমায়রা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষটি কখনো নিজের মনের কথা কাউকে প্রকাশ করে না। তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ ও পায় না। সর্বদাই মুখে শান্ত হাসির প্রলেপ লাগিয়ে রাখে সে। হুমায়রা খুব করে চায় তার ভাইজানের জীবনে এমন কেউ আসুক যার সাথে অন্তত মনের কথাগুলো যেনো বলতে পারে।

******
কলেজ শেষে বান্ধবীদের না বলেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো হুমায়রা। নসীবন পেলো না, তাই ইজি বাইকে করেই রওনা দিলো। বাজার পর্যন্ত যেতে পারলেই ভাইয়ের দোকান। কিন্তু রাস্তায় বাধলো বিশাল ঝামেলা। বিশাল একটি গাড়ী নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দিয়ে বসলো ইজি বাইকটিকে। অমনি বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উলটে পড়লো পিচঢালা রাস্তায়………..

চলবে

[একচল্লিশ হাজার ফলোয়ারে লাইক মাত্র ৭০০ এ কি মানা যায়? অনেকদিন পর বড় আশা নিয়ে ব্যাক করেছিলাম। কিন্তু এখন সব বৃথা মনে হচ্ছে। যাক তবুও লিখছি এই আশায় যে কেউ তো পড়ছে। বেশি বড় করার ইচ্ছে নেই। কারণ রেসপন্স ছাড়া লেখার ইচ্ছেও থাকে না। বিশ পর্বের মধ্যেই শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। আমার দ্বিতীয় ই-বুক “চাঁদ বলে হাতটি ধরো” পুরো গল্প পাবেন শুধুমাত্র বইটই এপে মাত্র ৬০টাকায়। শুরুতেই বইটই অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here