কাননে_এত_ফুল (পর্ব-১১) লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

0
250

#কাননে_এত_ফুল (পর্ব-১১)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৯.
বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। পড়ালেখা এখন খুব হেলিয়া দুলিয়া চলিছে। আমি জানিনা আমার আর পড়ালেখা ঠিক করে হবে কিনা! সেই আশাও করিনা এখন আর। আমি এখন শুধু ক্রাশ খাই। রীতিমত জিনা করতে থাকি। প্রথমে ভাবতাম অভ্র হয়তো আমার রিয়েল লাভ। পরে দেখলাম, তাকে কেবল ভালো লাগে। এর বাহিরে কিছুই না। কেননা! তার প্রতি বিশেষ অনুভূতি যদি থাকত তবে আমি তো আর দুইদিন আগেও ফিহার ভাই ফাহিমকে দেখে ক্রাশ খেতাম না! এমনকি আজকাল তিয়াস ভাইয়াকেও আড়চোখে দেখি। ভালোই লাগে! লোকটাও আমার সামনে কেমন একটা ভাব করে। সবদিক দিয়ে প্রেম, ভালোবাসা, ভালোলাগা এসব বিষয়ে ডুবে আছি। এখন এসব নিয়েই ভাবি। বাসায় কারো বিয়ের আলোচনা হলে কান খাঁড়া করে রাখি, এই বুঝি আমার জন্য কোনো প্রস্তাব এলো! অভ্রকে বিরক্ত করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেই সেটা এখন আর ছাড়তে পারিনা। শুনেছি নিতুন আপুর বাসায় বিয়ের যে চাপ টা শুরু হয়েছে তা অনেক কমে এসেছে। কালে ভদ্রে কেউ তোলে বিয়ের কথা। আমি বলেছিলাম যে এখন তবে অভ্রকে শান্তিতে চলতে দেই। সে বলল,
-‘এখন কিছু করিস না। ব্যাপারটা পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাক আমি ঐদিকটা গুছিয়ে নেই। অভ্রকে এখন বিরক্ত করা বন্ধ করলে হয়তো দেখা যাবে তোর কথা সে ভুলেই গেছে। আমার সাথে বিয়ে হবে এইটা নিয়ে ভাববে। আরেকটু সহ্য কর না বাবু! আর কিছুদিনই তো!’

আমার মস্তিষ্ক সায় দিল না। কিন্তু মন তো দূর্বল! নিতুন আপুর প্রতি আমার যে এক বুক ভালোবাসা আছে। সেটার টানেই আমি না করতে পারিনা তার কোনো কথায়। আচ্ছা! তার মনে কী আমার জন্য এমন টান হয়? হবেনা কেন? আলবৎ হয়। আমি জানি সেও আমায় ভালোবাসে আমার মত।

মা পায়েস করেছে। মিফতা ভাইয়ে খুব প্রিয় তো তাই বক্সে করে সবার জন্যই পাঠিয়েছে আমার হাতে। আমি সবে মাত্র খালামণিদের গেট দিয়ে ঢুকতে নিব তখনিই দেখি ডাক্তার অভ্রদের বাসার সামনে আর্মি দের জীপ! ওনাদের বাসায় আর্মি জীপ কেন? আর্মি এসেছে! কেন? ডাক্তারটা কোনো অপরাধ করে নি তো! হায়রে! বক্সটা দারোয়ানকে দিয়ে বললাম,
-‘চাচা খালামণির কাছে দিয়ে আসেন তো! জলদি!’
-‘আপনে যাইবেন না ঘরে!’
-‘আমি আসছি। আপনি গিয়ে দিয়ে আসেন।’

দারোয়ান যেতেই আমি অভ্রদের বাসার গেট খোলা পেয়ে সোজা ভেতরে গেলাম কি ব্যাপার সেটা দেখতে।
আমি বাড়ির মূল ফটকে যেতেই দেখলাম নেভি ব্লু শার্ট পড়া অভ্র কানে ফোন রেখে কারো সাথে কথা বলতে বলতে এদিকেই হেঁটে আসছে। আমি তো আজ আবারও ক্রাশ খেলাম। আচ্ছা! দেখে তো মনে হচ্ছে সে আগের থেকে একটু ফর্সা হয়েছে আর একটু ভালো বডিও হয়েছে। লম্বাও তো লাগছে। আবার হাঁটার ধরন ও তো ভিন্ন! এ মা! গতকালও তো তাকে দেখলাম মোড়ের মাথায়। কালও তো ঠিক ছিল। এক রাতে এত পরিবর্তন? ঔষুধ টষুধ কিছু নিয়েছে নাকি! কৌতূহল দমন করতে পারলাম না। দ্রুত পা চালিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার মুখে সদা সর্বদা মুঁচকি হাসি লেগে থাকে এবারও ব্যতিক্রম নয়। আমাকে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে ফেলেছে। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ফোনটা কান থেকে নামাতেই আমি বললাম,
-‘আরেব্বাস! কী ব্যাপার মশাই? এত হঠাৎ এত বেশি হট হয়ে গেলেন কীভাবে!’
অভ্র এই কথা শুনে চোখ রাঙিয়ে তাঁকালো। আজব! এতদিন এত কথা বললাম কিছু বলত না লজ্জা পেত। এখন হঠাৎ সে কীভাবে নিজের এতটা পরিবর্তন আনলো? স্ট্রেঞ্জ!

-‘কী হলো? এমন চোখ রাঙানি দিচ্ছেন কেন? আমি তো আপনার প্রশংসাই করছি।’
অভ্র এবার ভারী গম্ভীর গলায় বলল,
-‘এই মেয়ে! কে তুমি? আমার সাথে এমন কথা বলছ কীভাবে! আর লাজ লজ্জা নেই নাকি!’
-‘ওমা! আমি কী আজ প্রথম বললাম নাকি? এই আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা হয়নি তো! আমাকে বলতে পারেন। আমি একদম বিশ্বস্ত মানুষ। কাউকে কিছু বলব না। ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি ইজিলি!’
-‘বাট হোয়াই? হু আর ইউ?’
-‘ডোন্ট ইউ নো মি?’
-‘সিরিয়াসলি! হাউ ক্যান আই নো ইউ! সাচ্ আ সিলি গার্ল।’
-‘এই ডাক্তার! একেবারে খবর করে দিব বলে দিলাম। আমাকে চিনেন না?’
রাগের মাথায় যে তার কলার চেপে ধরেছি সেটাও খেয়াল নেই। আমার সব রকম খেয়াল হলো তখন যখন অবন্তী আপু সেখানে উপস্থিত হয়। সে এসেই হাঁক ছাড়ল,
-‘বড় ভাইয়া!’
আমি অবন্তী আপুর ডাকে হুশে এসে তার কলার ছেড়ে দিলাম। এদিক সেদিক চেয়ে নিলাম। বিব্রত হয়ে পড়েছি খুব। আরো বেশি অবাক হলাম কেননা অবন্তী আপু অভ্রকে তো সবসময় ছোট ভাইয়া বলে ডাকে। এখন বড় ভাইয়া বলছে কেন? এটা কে! কোন বড় ভাই! অভ্র না?

অবন্তী আপু এগিয়ে এসে বলল,
-‘এসব কী অর্নি? তুমি ভাইয়ার কলার চেপে ধরেছ কেন? কী হয়েছে!’
-‘আসলে আমি এমনেই মানে মজা করেই ধরেছি আমাদের তো মজার সম্পর্ক। তাই আর কী!’
-‘মজার সম্পর্ক! আয়ান ভাইয়ার সাথে? কবে থেকে!’
অবন্তী আপু হেসে দিলেন। আমি এবার বোধ হয় আকাশ থেকে পড়লাম। ভ্যাবলার মত চেয়ে থেকে বললাম,
-‘আয়ান কে! এটা তো অভ্র ভাইয়া।’
-‘আরে ইনি আমাদের বড় ভাই। আমার আর ছোট ভাইয়ার বড় ভাই। হা হা! প্রথম দেখাতে সবাই এই ভুল করে ফেলে।’
-‘যময!’
-‘না ভাইয়াদের দুই বছর এজ গ্যাপ আছে। আমার চেহারাও তো একই খেয়াল করেছ?’

আমি এতদিন অবন্তী আপুকে এত খেয়াল করার মত কিছুই পাইনি। তাই খেয়ালও করিনি। আজ খেয়াল করতেই দেখলাম তাদের গালের দিকে একইরকম। মূলত আন্টির চেহারা তাদের। আমার আপু আর আম্মুও একদম এক চেহারার। রঙেই পার্থক্য কেবল। আমি এবার ভারি ভয় পেলাম। আড়চোখে তাঁকাতেই দেখলাম আয়ান নামক পুরুষটি কেমন করে চেয়ে আছে। রাগ আর বিরক্তি তার চোখে মুখে স্পষ্ট। সে অবন্তী আপুর দিকে তাঁকিয়ে বলল,
-‘এই মেয়ে কে অবন্তী! তোরা চিনিস?’
-‘হ্যাঁ! মিফতা ভাইদের কাজিন। খালাতো বোন হয়।’
-‘মিফতার বোন?’
-‘হুম।’
-‘ওহ। মিফতার বোন হলে তার স্বভাব এমন কেন? গায়ে পড়া মেয়ে একটা!’

আমাকে এমন একটা কথা শুনিয়ে লোকটা চলে গেল। দেখলাম সেই আর্মি জীপে বসেই ড্রাইভ করতে করতে চলে গেল। লজ্জায় অপমানে আমার মুখ চুপসে গেল একদম। অবন্তী আপু বলল,
-‘বড় ভাইয়া আর্মিতে তো তাই তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়না সবসময়। তোমার সাথে দেখাও হয়নি আগে। তুমি আমার এই রাগী ভাইয়ের কলার চেপে ধরেছ? আমি ভাবতেই পারছিনা।’
-‘আমি তো বুঝতে পারিনি। অভ্র ভাইয়া মনে করেছিলাম।’
-‘অভ্র ভাই হলে অবশ্য কিছু হতো না। তবে বড় ভাইয়া একটু অন্যরকম। রাগ কর না তার কথায়।’
-‘আচ্ছা উনি আর্মিতে? আর্মিতে থেকেও এত ফর্সা! রোদে পুড়ে তো কয়লা হওয়ার কথা। কাজ কাম করে না নাকি!’
-‘আরে কী বল! ভাইয়াদের কত স্ট্রাগল করতে হয় আইডিয়া আছে! আর ভাইয়ার এই ব্যপার সবাইকেই ভাবায়। ভাইয়া রঙ বাবার মত পেয়েছেন। আমাদের বাবাও এমন মানে অনেক ফর্সা ছিল। ফরেনারদের মত। আমেরিকান আর্মিরাও তো কষ্ট করে রোদে থাকে তারা কী কালো হয়ে যায়? রঙ একটু নড়বড়ে হয়ে যায়। তবে কালো হতে হবে এমন নেই। ভাইয়া আরও ফর্সা ছিল। এখন তো একটু আঁচ এসেছে। তবে এখনই বেশি সুন্দর লাগে। আগে তো তার সাদা টা আমার সহ্যই হতো না। আমরা মধ্যম লেভেলের আর সে কীনা একদম দুধ সাদা। মানা যায়!’

অবন্তী আপুর কথা শুনে হেসে দিলাম। আমার অবন্তী আপুর সাথে আসলে তেমন কথা হয়নি কখনো। তবে আজ কথা বলে মনে হচ্ছে সে একজন পার্ফেক্ট সঙ্গী! কথা বলার জন্য! মনের মধ্যে ঘটনাটা খচখচ করতে থাকে। ধুর কি কান্ড ঘটালাম!

২০.
কলেজ শেষে বাসায় আসতে নিতেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। আমার অবস্হা খারাপ। ভিজে বাজে এক অবস্হা। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ছাতাও নেই। তখন সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। কাঁচ নামিয়ে কেউ ভেতর থেকে বলে উঠল,
-‘গাড়িতে এসে বস অর্নি!’
ভালো করে দেখি অভ্র আর তার ভাই। কোনটা কে বুঝতে খুব একটা সময় লাগল না।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here