সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part_13

0
417

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part_13

_____________

Flashback end.

কফিশপে বসে থাকতে থাকতে তরু এক পলক অভ্রর দিকে তাকালো,

” তো বললেন না তো কি বলবেন?”

অভ্র এক পলক তরুর দিকে তাকালো,

“তরু, I am sorry ”

তরু ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,

” For what?”

” Sorry. sorry for everything”

তরু তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো,

” sorry? কিসের জন্য একটু clearly বলবেন?আমাকে সবার সামনে অপমান করার জন্য? নাকি আমার ভালোবাসা কে ছোট করার জন্য আর নাকি আমার ভালোবাসা নিয়ে জোক্স,হাসি-তামাশা করার জন্য কোনটা?”

তরুর কথা শুনে অভ্র খানিক ক্ষন চুপ করে আছে, বলার আর কিই বা আছে তার, তবুও তো দোষ টা তারই,
কেন সে সবটা না জেনেই কথা বলেছিলো।

মৌনতা ভেঙে অভ্র নিজের চেয়ার ছেড়ে তরুর কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে তরুর হাতে হাত রাখে আর তরু সাথে সাথে ই তার হাত সরিয়ে নেই।

“তরু প্লিজ আমার কথা টা শুনো,আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দাও, তবুও আমার সাথে কথা বলো আমি আর পারছিনা,পাখি। প্লিজ.. ”

তরু অবাক কন্ঠে বলল,

“শাস্তি? শাস্তি আমি কাকে দেবো বলতে পারেন? কেন দিবো?অধিকার আছে আমার?
So এসব কথা না বলে আমাকে যেতে দেন আমার অনেক কাজ আছ,,অযথা সময় নষ্ট করতে চাই না”

বলেই সে শপ ছেড়ে বেরিয়ে যায়,

অভ্রও তাকে আটকায় না, কোন অধিকারে আটকাবে?তবে সে যে করেই হোক তরুকে মানিয়েই ছাড়বে।

অভ্রও শপ ছেড়ে বেরিয়ে যায়,,,

তরু রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর অতীতের কথা চিন্তা করছে,
_______________________________

আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগের কথা,

আরু তখন সবে মাত্র ssc exam দিয়েছে,আর সে HSC।

বছরের মাঝামাঝি তে, শীত প্রায় শেষ এমন সময়, আরু বায়না ধরলো সে তার ছোট ফুপুর বাড়িতে যাবে, আরুর ছোট ফুপুর বাড়ি চট্টগ্রাম, জায়গাটা খুব সুন্দর এবং নিরিবিলি বলে সেখানটা আরুর খুব পছন্দের জায়গা।

ছুটি পেলেই সে বাইনা ধরে ফুপির বাসায় যাবে, বাড়ির ছোট মেয়ে হওয়ায় আদরের পরিমাণ টা সবসময় ই বেশি তার, তাই তার বাবা আদরের মেয়ের কথা ফেলতে না পেরে দুই বোন কে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।

তরু এবং আরু ফুপুর বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে, বাসাটা তেমন ছোট নয়, ডুপ্লেক্স বাসা চার পাশে নানা রকমের ফল ও ফুলের বাগান।

ক্রলিং বেল বাজার খানিক পরে,

একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে, মেয়েকে দেখার সাথে সাথে ই আরু।

ইসু আপুওওওও বলে ঝাপিয়ে পড়ে তার উপর, দুই হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে থাকে,

এই হলো ইসরাত জাহান, আরুর ছোট ফুপির মেয়ে এক হিসেবে আরুর বেস্ট ফ্রেন্ড, সে তখন অনার্স ৪ র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি তে পড়ছে সে তার আরেকটা ছোট ভাই আছে যে আরুর থেকে ৩ বছরের বড় নাম যায়েদ হাসান।

” আরে আরে কি করছিস কি,এভাবে কেউ ধরে এখনি তো পড়ে যেতাম,পাগল মেয়ে”

আরু ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,

” আরে আপুনি তুমি যানো তোমাকে কত দিন পরে দেখলাম,, কতগুলা মিস করছি তোমাকে!”

ইসু হাসলো, আরুর নাক আলতো টেনে দিয়ে বলল,

” ইসস আমার মিষ্টি বোনটা বুঝি আমাকে এত মিস করছে, আচ্ছা যা ফ্রেস হহহ তারপর শুনছি তোর কথা”

বলার সাথে সাথে ই ইসু গিয়ে সোফায় ধপাস করে বসে পরে,

ইসরাত বাইরে তাকিয়ে দেখে তরু বাইরে দাড়িয়ে আছে.

” কিরে তুই ও কি বাইরে দাড়িয়ে থাকবি? ”

তরু চিন্তিত কন্ঠে বলল,

“তা নয় তো কি, তোমার বোন তো ব্যাগ না নিয়েই দৌড় এত বড় ব্যাগ আমি নিবো কিভাবে?”

ইসু উঠতে উঠতে বলল,

” ওহ আচ্ছা এই কথা, আচ্ছা তুই যাহ আমি নিয়ে আসছি”

তরু ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

“আচ্ছা, আপু ফুপ্পি কই?”

“আম্মু তো রান্না ঘরে,”

” আর যায়েদ ভাইয়া?”

” ওও তো বাইরে, ঢাকা থেকে ওর ফ্রেন্ড আসছে ওদের নিয়ে ঘুরতে গেছে, চলে আসবে”

“আচ্ছা”

, বলেই সে ঘরে চলে যায় আর আরু সোফায় বসে টিভি অন করে,

ইসু ব্যাগ নিয়ে ঘরে এসে দেখে আরু টিভি অন করছে, ইসু ঠাস করে টিভি টা অফ করে দিলো।

ইসু রাগী দৃষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তোকে না বলছি ফ্রেস হতে তাও তুই টিভি অন করছিস,যা ফ্রেস হো গিয়ে,”

আরু ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে সোজা রান্না ঘরে ফুপির কাছে চলে যায়

মিসেস মাহিয়া কাজ করছে, পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পিছনে তাকালো আদরের ভাইয়ের মেয়েকে দেখে তিনি তো মহা খুশি,

” কিরে সোনা পাখি কেমন আছেস?”

“ভালো না” মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে কথা টা বলল আরু।

“ওমা কেন রে? কি হয়েছে? ”

“তোমার মেয়ে আমাকে টিভি দেখতে দেয়না”

“- ওমা তাই নাকি, আচ্ছা তুই ফ্রেস হহ গিয়ে আমি ওকে বকে দিবো নে”

” আচ্ছা”

______________________

বিকেল তখন প্রায় ৪ টা,,,

আরু, ইসু এবং তরু বাইরে ঘুরতে যাবার জন্য বের হয়,

তারা প্রথমে যায়,চট্টগ্রাম ফয়েজ লেক,এটা একটা পার্ক এর মতো।

আরু চারপাশে তাকিয়ে বলল,

“ওয়াও আপু জায়গাটা খুব সুন্দর,”

ইসু খানিকটা ভাব নিয়ে বলল,

“হুমমম,দেখতে হবে না কাদের এলাকা”

ইসুর কথা শুনে আরু তখন খিলখিল করে হেসে উঠে,

“আচ্ছা তোরা বস আমি কিছু খাবার নিয়ে আসি”

ইসু চলে যায়, তখনই তরুর ফোনে কল আসে সেও আরুকে বসতে বলে কল পিক করে একটু দুরে যায়,

ঠিক তখনই আরু দেখতে পাই,

কয়েকজন ছেলে একসাথে একটা গাছের নিচে ঘাসের উপর বসে গিটার বাজাচ্ছে,

আরু একটু ভালো করে শোনার জন্য তাদের সামনে গিয়ে বসে,

তাদের মধ্যে যে গান গাইছে তার গানের গলা খুব সুন্দর, আরু একটু ভালো করে ছেলেটাকে দেখতে লাগলো,

ছেলেটা যে একদম ধবধবে ফর্সা তা কিন্তু না, তবে তার গায়ের রংটা ফর্সা বললেই চলে, ঠোঁট যুগল লাল না তবে সুন্দর, চোখ বন্ধ করে সে গান গাইছে,আরু গিয়ে সোজা ছেলেটার একদম সামনে গিয়ে বসে।
চারপাশে অনেকেই হা করে দেখছে,

ছেলেটা গান শেষ করে চোখ খুলে সামনে অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে খানিকটা চমকে উঠে,

“কে তুমি? ”

আরু বলে উঠলো,

“আরে আংকেল, আপনার গান গুলা খুব জোস, আমাকে শেখাবেন?”

ছেলেটা অনেকটা রাগী দৃষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,

“এই পিচ্চি, আংকেল কাকে বলো,আমাকে দেখে কি তোমার আংকেল মনে হয়েছে?”

” তবে? কি ডাকবো? আপু তো বলছে অপরিচিত কাউকে ভাই না বলতে হয়তো মামা নয়ত চাচা, কিন্তু আপনাকে তো চাচা বলা যাবে না,চাচা কেমন জানি বুড়া বুড়া ফিল হয় তাই আংকেল বললাম”

ছেলেটা কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলে উঠলো,

” ভাই শুভ্র বাদ দে, বাচ্চা মেয়ে”

বলেই সে আরুর সামনে আসে,

” হাই আপু আমি অভ্র,তুমি?”

“আমি আইরাহ, আইরাহ রাহমান”

” বাহ সুন্দর নাম তো, কার সাথে এসেছো এখানে?”

আরু ঠোঁট উল্টে বলল,

-“আমার আপুর সাথে”

ছেলেটা আশেপাশে তাকিয়ে বলল,

“তোমার আপু কোথায়? ”

“ওই যে আপু” বলেই আরু আঙুল দিয়ে তরুকে দেখায়।

অভ্র আরুর আঙুল অনুসরণ করে তাকায়

দেখে একরা মেয়ে খুব দ্রুত এদিকে ই আসছে,,

পড়নে তার জলপাই রঙের কুর্তি,চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি করা।

তরুকে দেখে অভ্র তো চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে, আর কখনো তার এমন অনুভূতি হয়নি।

“সরি সরি আমি জানতাম না আমার বোন এখানে চলে আসবে,সরি, ওও অনেক বিরক্ত করেছে তাই না,সরি হে!”

তরুর কথা বোধহয় অভ্র শুনতে পেয়েছে কি না সন্দেহ,

একধ্যানে সে তরুকেই দেখছে,,,

তরুর সে দিকে খেয়াল নেই,সে তো আরুকে বকতেই ব্যস্ত.

বকে ঝকে সে আরুকে নিয়ে চলে আসে,

আর অভ্র সে দিকেই তাকিয়ে ই ছিল।

রাতে…

চলবে…

[ কেমন লাগলো? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here