সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part_12

0
266

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part_12

________________

“আরু দরজা খোল, সোনা পাখি দরজা খোল না বাবা, মা ডাকছি তো শুনতে পাচ্ছিস?”

“আমি খুলবো না মা যাও তো তুমি”

ভেতর থেকে মেয়ের এরুপ উত্তর শুনে মিসেস আয়েশা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, গত ২ঘন্টা যাবত তিনি মেয়েকে ডেকে চলেছেন কিন্তু আরুর কোন হেলদোল তিনি দেখতে পাচ্ছেন না,

” আরু খোল না মা দরজাটা, রাতেও তো কিছু খাসনি, এখন সকাল ১১ টা, এত বেলা হলো কিছু তো খেয়ে নে না হলে শরীর অসুস্থ করবে তো ”

আরু বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠলো,

“আমি খাবো না মা, জোর করো না”

“কি হয়েছে আয়েশা? আরু দরজা খুলছে না কেন?”

পিছন থেকে মাহমুদ রাহমানের গলা শুনতে পেয়ে পিছন ফিরে তাকালেন আয়েশা রাহমান,

” দেখো না তোমার মেয়ে দরজা খুলছে না,!রাতেও কিছু খাইনি,”

” আচ্ছা সরো আমি দেখছি”

মিসেস আয়েশা স্বামীর অভয়বাণী শুনে দুরে সরে দাড়ালো,

“- আইরাহ মা আমার কি হয়েছে বাবাকে বলো, মা বকেছে?”

“বাবা তুমি যাও আমি এমনি তেই টেনশনে আছি”

” আরে বাবা এত টেনশন করার কি আছে,যা হবে ভালো হবে, দেখি খুলো তো মা, আমি জানি আমার মা কখনো বাবার কথা ফেলতে পারবে না, তাই না মা?”

আরু আর কিছু না বলে দরজা খুলে দিলো,

আরু সোজা বিছানায় বসে বিপরীতে মুখ করে বসে পড়লো,

মিসেস আয়েশা এবং মাহমুদ রাহমান ও আরুর রুমে ঢুকে পরলো,

“মা আমার কি হয়েছে সোনা? দেখো রেসাল্ট ভালো আসবে,বাবার উপর বিশ্বাস আছে না?বাবা বলছি তো, আর না হলে দেশের সবচেয়ে ভালো প্রাইভেট মেডিক্যাল এ পড়াবো তোমাই তাও এমন করে থেকো না সোনা”

মাহমুদ রাহমানের কথা শুনে আরু বাবার মুখোমুখি হয়ে বসলো,

” But বাবা আমি তো প্রাইভেট এ পড়বো না”

” দরকার পড়লে তোমাকে এভ্রোড পাঠাবো যদি তুমি চাও!”

আরু কাটকাট কন্ঠে বলল,

“পড়লে আমি পাবলিকেই পড়বো আর না হলে বিয়ে করে স্বামীর সংসার করবো,ব্যস.”

মাহমুদ হেসে উঠলো,

” শুনো মেয়ের কথা, তোমার বাবার কি কম টাকা আছে, তুমি যেখানে পড়তে চাও সেখানেই পড়াবো, এখন খেয়ে নাও”

— আরুর মা.. আরুর জন্য খাবার নিয়ে আসো,আমার মেয়েকে আমি খাইয়ে দিবো

আয়েশা রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,

” আচ্ছা যাচ্ছি”

কিছুক্ষণ পর….

আরুর মা খাবার দিয়ে গেছে,

মাহমুদ রাহমান মেয়েকে খাবার খাইয়ে দিতে দিতে বললেন,,

” কি ভাবছিস? ”

আরু ভাতের লোকমা চিবুতে চিবুতে বলল,

“বাবা, তরু আপু কই?”

“তরু তো সেই কোন সকালে বের হয়ছে এখনো তো আসলোনা”

আরু ছোট করে বলল,

“ওহ আচ্ছা”

খাওয়া শেষে…

মাহমুদ রাহমান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,

“রেসাল্ট পাবলিস্ট হতে আরু অনেক দেরি, এখন একটু রেস্ট নাও”

“- আচ্ছা, আপু আসলে আমাকে ডেকে দিও”

” আচ্ছা”

বলেই মাহমুদ রাহমান চলে গেলেন,

আরু সুয়ে সুয়ে ভাবতে লাগলো এত সকালে তরু গেলো কোথায়? কখনো তো এত সকালে বাড়ির বাইরে যায় না আজ হঠাৎ গেলো কোথায়?

_____________________________

তরু বসে আছে অভ্রের সামনে একটা কফি সপের ভেতরে,

তরু বেশ খানিকক্ষন চুপ থেকে নিজের মন কে শান্ত করে হঠাৎ করেই বলে উঠালো.

“কি ব্যাপার মিস্টার হায়দার? হঠাৎ এই কালসাপের সাথে দেখা করতে চাইলেন?আরো কি অপমান করার বাকি আছে?

অভ্র কাতর গলায় বলল
“শালিক, একবার আমার কথা টা শুনো?”

তরু ফুসে উঠলো,

“please Mr.Haidar, don’t call me shalik, my name is Toru, Toru Rahman”

“ওকে ওকে, তরু প্লিজ”

” হ্যা হ্যা বলুন, শোনার জন্য ই এলাম এতদুর” বলেই একটা তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিলো,

___________________

ফ্লাসব্যাক.

কাল রাতে..
তরু ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, এমন সময় তরুর ফোনের রিংটোন হঠাৎ করেই বেজে উঠলো,,

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে এটা আননোন নাম্বার তাই সে আর রিসিভ করলো না,
তরু সচরাচর কোন আননোন নাম্বার রিসিভ করে না।

ফোনের রিংটোন বন্ধ হবার সাথে সাথে পুনরায় আবার বেজে উঠলো,
তরু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তখন প্রায় ১২ টা, বিরক্তিতে তরুর কপাল খিঁচে গেলো,
একরাশ বিরক্তি নিয়ে সে মোবাইল রিসিভ করলো,

“- আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”

অপর পাশ নিশ্চুপ, কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো সে,

” কি হলো কথা বলুন, কে আপনি, এত রাতে একজন মেয়েকে ফোন দেয়া কোন ধরনের সভ্যতা?”

অপর পাশ তখন ও নিশ্চুপ,

তরু কিছুক্ষন অপেক্ষা করে লাইন কেটে দিলো ,

ফোনটা টেবিলে রাখার সাথে সাথে আবার বেজে উঠলো,

তরু ফোন হাতে নিয়ে দেখে সেম নাম্বার,ফোন রিসিভ করে,,

” এই যে মিস্টার অর মিসেস, কি দরকার আপনার? বারবার ফোন দিচ্ছেন কেন?”

অপর পাশে কোন সাড়া শব্দ নেই,

তরু বেশ রেগে গেলো, এতরাতে ফোন দিয়ে কথা বলে না ফাইজলামি পাইছে নাকি

“, ধুর বা*ল, আবার যদি ফোন দেছ, মোবাইলের ভেতর দিয়ে গিয়ে তোরে থাপরামু!”

বলেই তরু ফোন কেটে দিলো, রাগে তার শরীর রি রি করছে,

“শা*লা কথা বলবি না তো ফোন দিলি কেন,আবার যদি ফোন দেস তবে সত্যি সত্যি ই ফোনের ভিতর দিয়ে গিয়ে ওরে থাপরামু, বেদ্দপ”

মনে মনে কথা টা বলেই.

তরু ডোর লক করে বিছানায় সুয়ে পরে,

হঠাৎ আবার ফোনটা বেজে উঠে,

এবার সে উঠে বসে, মনে মনে ঠিক করতে থাকে সে এখন কি বলবে,

বকা ঝকা রেডি করে ফোন টা হাতে নেই, নাম্বার না দেখেই সে কলটা রিসিভ করে,

“ওই তুই আবার ফোন দিসিস,কথা বল!”

অপর পাশ থেকে কেউ অনেকটা ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
” শালিক”

চেনা কন্ঠ শুনতে পেয়ে তরু র চারপাশ কেমন যেন নিস্তব্ধতাতে ছেয়ে গেলো,তরু ধীরে ধীরে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নাম্বার টা দেখে, সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা মিস্টার অভদ্র.

আজ থেকে ২ বছর আগে যখন সব কিছু স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো, তখন এই অভদ্রের নাম টা শত চেষ্টা করে ও ডিলিট করতে পারেনি, শত হোক এই অভদ্র কেই নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসেছিলো তরু, পুরনো কথা মনে পড়তেই মুখে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্যের হাসি,

ফোনের ওপাশ থেকে অভ্রর ডাকে,পুনরায় তরু ফোনটা কানের পাশে ধরে,

“শালিক পাখি শুনতে পাচ্ছো?”

“হ্যালো কে বলছেন?”

অভ্র তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো,

” শালিক চিনতে পারছো না? আমি তোমার অভদ্র”

” sorry Mr. First of all.. আমি তরু রাহমান..
secondly.. আমি কোন ভদ্র বা অভদ্রকে জাজ করতে ফোন টা ধরি নি,so time waste না করে আপনার পরিচয় দেন”

অভ্র আমতাআমতা করে বলল,

“আমি অভ্র. চিনতে পেরেছো?”

তরু চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” শুধু ই অভ্র? এর আগে পিছে কিছু নেই? ”

” তরু প্লিজ আমি জানি আমার প্রতি তোমার আকাশ সম রাগ অভিমান, তবুও একটি বার কথা বলো প্লিজ”

‘শুনোন মিস্টার আমি আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি সো নাম টা বলেন”

“অভ্র হায়দার”

তরু মুচকি হেসে বলল

” তো মিস্টার হায়দার কেন ফোন দিয়েছেন জানতে পারি?”

অভ্র অনুরোধের স্বরে বলল,

“তরু, আমি শুধু একটি বার তোমার সাথে কথা বলতে চাই, দেখা করতে চাই, প্লিজ না করো না ”

” সরি মিস্টার হায়দার, সম্ভব না, আমি অচেনা কারো সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক নই”

“দয়া করো তরু, শুধু কাল আর কখনো তোমাকে এরকম বিরক্ত করবো না”
,
” ঠিক আছে সকালে মেসেজ করে বলবেন কোথায় আসতে হবে”

বলেই তরু ফোন রেখে দিলো,

পুরাতন সেই ঘা আবার জীবিত হয়ে উঠেছে,বুকের বা পাশ টা কেমন জানি চিনচিন ব্যাথা করছে,চোখ থেকে পরছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি।

—— এমনটা না হলেও পারতো——-

চলবে……..

[ প্লিজ সবাই গঠন গত মন্তব্য করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here