সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part_11

0
258

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part_11

_____________

” আইরাহ্ ”

হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাক শুনে দিশা আর আরু পেছনে তাকালো,

রিহান দাঁড়িয়ে আছে, রিহান ধীর পায়ে আরুর সামনে এসে দাড়ায়,

“কেমন আছো আইরাহ”

আরু ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,

” খারাপ থাকলে নিশ্চয়ই এভাবে রাস্তায় দৌড়াতাম না, অবশ্যই ভালো আছি”

রিহান মুচকি হাসলো,

“আমাকে জিজ্ঞেস করলে না আমি কেমন আছি!”

আরু ভ্রু কুচকে রিহানের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্ক্যান করে বলল,

“আমি তো দেখতেই পাচ্ছি, আপনি সুস্থ সবল বেডা মানুষ, তা আর জিগাইয়া লাভ কি”

রিহান থতমত খেয়ে গেলো,

” ওহ হ্যা তাই ই তো,তো কোথাও যাচ্ছিলে নাকি?”

“আমি যেখানে মন চাই সেখানেই যাবো সেটা আপনাকে বলতে যাবো কেন, আর আপনি এখানে কি করছেন?”

রিহান আমতাআমতা করে বলল,

“আবব না এমনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ তোমার সাথে দেখা, তাই ভাবলাম কথা বলে যায়”

আরু ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

“ওহ ভাইয়া, আমার না কাজ আছে, আপনি আমার বাবার বাড়িতে আসবেন সেখানে আমার মা আছে, মায়ের সাথে ইচ্ছে মতো কথা বলবেন, আজ তাহলে আসি,আল্লাহ হাফেজ!”

বলেই আরু দিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো,

দিয়া এতক্ষণ হা করে আরু আর রিহানের কথা শুনছিল,

” ওই ঝাড়ু, ওই বেটা ক্যাবলাকান্ত কে রে?”

আরু ঘাড় বাঁকিয়ে দিশার দিকে তাকালো,

” ফাস্ট অফ অল আমি আরু নট ঝাড়ু, দ্বিতীয়ত ওই বেটা হলো আমার মায়ের লতা পাতার আত্মীয়, খালি, গায়ে পড়ে কথা বলতে আহে!”

“- অহ, আজ বাদে কাল পরীক্ষা, বাড়িতে যাহ গিয়ে বেশি করে পড়, আমিও যাই ”

আরু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,

“ওম্মা গোওও এ দেখি ভুতের মুখে রাম রাম”

দিশা মুখ ছোট করে বলল,

” ভাই তুই তো না পড়েও পারিস আমি তো পড়েও পারি না”

” আচ্ছা যাহ, পরে ফেল করলে কইবি, আরু পড়তে দেই নায়,যাহ পড় গিয়া”

আরু আর দিশা বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়,

এভাবে চলতে চলতে পরীক্ষার দিন চলে আসলো,

পরীক্ষার দিন সকালে, তরু আরুর রুমে গিয়ে দেখে আরু এখন ও ঘুম

“আরু বোন আমার উঠ না, পরীক্ষা আছে ভুলে গেলি”

আরু ঘুমের ঠেলায় বলল,

” তুই যা তো, আমি ঘুমাবো”

“এই যে দেখ, সাড়ে ৮ টা বাজে ১০ টা থেকে পরীক্ষা আছে, পরে কিন্তু লেট হয়ে যাবে, বোন আমার উঠ না”

আরু ঠোঁট মুখ কুঁচকে বলল,

” দুর লেট হলে হবে, আমি দিপু খালার সাথে কথা কমু নে, এখন তুই যাহ”

” এমন ভাবে বলছে যেন দিপু মনি ওনার মায়ের পেটের খালা লাগে!’

” তুই যাবি!”

” তুই কি উঠবি না?”

” না মানে না ”

হঠাৎ আরু মুখে এক মগ পানি এসে পড়ার সাথে সাথে আরু লাফ দিয়ে উঠে বসলো,

” আম্মুওওও গোওও তোমার ছাদ ফুটো হয়ে গেছে গোওও”

আরু চোখ বন্ধ করেই চিল্লাচ্ছে, তরু আর উপাই না পেয়ে আরুকে খাট থেকে ধাক্কা মারে আরু ঠাস করে ফ্লোরে পরে যায়,ততক্ষণে আরুর ঘুম পুরোপুরি কেটেছে,

আরু নিচে বসে কামড়ে হাত দিয়ে রাগী স্বরে বলল,

” ওই ফহিন্নি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলি কেন?”

“আর একটা কথাও না ওয়াসরুমে যা তাড়াতাড়ি, উনারে ঘুম থেকে তুলা আর ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ করা একই, ওফফফ.”

বলেই তরু আরুর ঘর ছেড়ে বের হয়ে নিচে যায়,

আরু কতক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে ওয়াসরুমে যায়,

” কি নবাব বেটি উঠেছে?”

তরু নিচে নামতে মায়ের প্রশ্ন টি শুনতে পায়,

“তোমার মেয়ের জামাই এর কপালে ঢের দুঃখ আছে বলে দিলাম”,

তরুর কথা শুনে মিসেস আয়েশা মুচকি হাসে, তিনি জানে তার ছোট মেয়ে বড্ড বেশি ঘুম কাতুরে,

আরু রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে, আর সিড়ি দিয়ে নামার সময় মাহমুদ রাহমান ও নেমে আসে,

” কি মামনি,প্রিপারেশন কেমন?”

” ভালো বাবা”

“- আলহামদুলিল্লাহ, একদম ভয় পাবা না,,যা লিখবা ঠান্ডা মাথায় লিখবা”

আরু মুচকি হেসে বলল,

“মনে থাকবে বাবা”

তরু আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” আয় এদিকে আয় তো ”

বোনের ডাকে আরু মাথা কাত করে দেখে তরু খাবার প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে, আরু খুশি হয়ে বলল,

“আপু তুই খাইয়ে দিবি”

“হুম,,আয় তাড়াতাড়ি”

তরু সুন্দর ভাবে আরুকে খাইয়ে দেয়, শুধু এখন না প্রতিটি পরীক্ষার সময় ই তরু আরুকে খাইয়ে দেয় আর এক গাদা এডভাইস দিয়ে দেয় আর আরু তা খাবারের সাথে গিলে,

খাবার শেষে,

“আচ্ছা, তাহলে আমি এখন আসি,,দিশা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবে”

তরু বলে উঠলো,

” আমি আসবো?”

“আমি কি বাচ্চা নাকি! আজিব!”

“সাবধানে যাবি আর ভালো করে পরীক্ষা শেষ করবি”

“আচ্ছা বাবা আচ্ছা! ”

আরু মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরে,

রাস্তার মোড়েই দিশা আরুর জন্য অপেক্ষা করছিল,,
আরুকে আসতে দেখে দিশাও আরুর দিকে এগুলো,

” কিরে প্রিপারেশন কেমন?”

আরু মুচকি হেসে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ, তোর?”

দিশা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,

” পাস করার মতো”

তাদের মাঝে আর কোন কথা হয়নি,,,

_________________________

খান গ্রুপের অফিসে…

শুভ্র তার কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছে, এমন সময় দরজার বাইরে থেকে কেউ বলে উঠলো,

“May I come in, sir?”

শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“- ইয়েস কাম”

লোকটি ভেতরে ঢুকে সোজা শুভ্রের চেয়ারের সামনে বসে পরলো,

শুভ্র সামনের দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলো, কারন তার সামনে সয়ং অভ্র বসে আছে,
,গত ২ বছর অভ্রের কোন খোঁজ ছিলো না, শুভ্র কম চেষ্টা করে নি, অভ্রকে খোঁজার
কিন্তু কথায় আছে না যে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় যায় কিন্তু যে নিজে থেকে লুকিয়ে থাকে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

অভ্রের ব্যপার টাও ঠিক তেমন ই, তাই দিন কে দিন অভ্রর প্রতি শুভ্রের অভিমান আকাশ সম হয়ে গেছে যা অভ্র ক্ষনে ক্ষনে টের পাচ্ছে,

নিরবতা ভেঙে শুভ্র বলে উঠলো,,

” কে আপনি? কি দরকার এখানে?”

শুভ্রের প্রশ্ন শুনে অভ্র কাতর গলায় বলল,

” শুভি!”

শুভ্র গম্ভীর কন্ঠ বজায় রেখে ধীর স্বরে বলল,

” Sorry? Who is shovi? I am shovro,shovro khan”
“প্লিজ ভাই আমার ক্ষমা করে দে”

শুভ্র ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,

” আপনি কে? আর এখানে কেন এসেছেন? আর আমি ক্ষমা করার কে?”

অভ্র কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকালো,

“শুভ্র, তুই আমাকে মার কাট যা ইচ্ছে কর,তবুও এভাবে থাকিস না, তোকে ছাড়া আমিও তো ভালো ছিলাম না”

শুভ্র কাটকাট কন্ঠে বলল,

” আমাকে একা রেখে যাবার সময় মনে ছিলো না এসব কথা,”

“শুভ্র মানছি আমার ভুল হয়েছে প্লিজ ক্ষমা করে দে, কথা দিচ্ছি সব আগের মতো করে দিবো”

শুভ্র আর কিছু না বলে চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ায়,অভ্র ও যায় শুভ্রের পিছনে,

” শুভি, ক্ষমা করা যায় না এই হতভাগা কে?”

শুভ্র আর কিছু না বলে অভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেন ছেড়ে দিলে আবার হারিয়ে যাবে,

অভ্রের মুখে ফুটে উঠলো প্রাপ্তির হাসি, সে জানে শুভ্র কখনোই তার সাথে রাগ করে থাকতে পারনে না,

কিছুক্ষন এভাবে জরিয়ে ধরে রাখার পর,

“কিরে বেটা এভাবে ধরে রাখলে যে কেউ হঠাৎ ঢুকলে অন্য কিছু মনে করতে পারে, ছাড় আমারে”

শুভ্র চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,

“এতদিনে ও তোর বাদরামি গেলো না,শা*লা”

অভ্র হাসতে হাসতে বলল,

“যাবে কিভাবে,বানর বুড়া হলেও গাছে উঠা ভুলে না”

শুভ্র মুচকি হেসে বলল,

” এই বান্দর কে তরুই ঠিক করতে পারে”

তরুর কথা শুনে অভ্রের মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেলো,

সেটা খেয়াল করে শুভ্র বলে উঠলো,

“দুর শা*লা, মন খারাপ করিস কেন,সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে”

” তাই যেন হয়,কিছু ভেবেছিস কি করবি?”

শুভ্র একটা ছোট করে হাসি দিয়ে বলল,

” ভেবেছি তো অনেক কিছু বাট এখন কিছু ই করবো না,সময় হলে দেখতেই পাবি”

” ওকে”

” চল আজ সারা দিন আড্ডা দিবো,”

“শুধু তুই আর আমি নাকি,,বাকি ব্যান্ড পার্টিকেও ডাক”

তখন ই দরজায় দাড়িয়ে কেউ বলে উঠলো,,

“আর ডাকতে হবে না আমরা এসে গেছি”

কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে শুভ্র আর অভ্র দরজার দিকে তাকালো,

একে একে আকাশ, আশিক, তানভীর, দিহান প্রবেশ করলো ভেতরে।

সব গুলা দোস্ত বলে লাফ দিয়ে অভ্রের গায়ের উপর পরলো,

টাল সামলাতে না পেয়ে অভ্র সবগুলো কে নিয়ে সোফায় পরে গেলো,

একেক টার ওজন তো মাশাআল্লাহ,,

অভ্রের মনে হলো কয়েকরা হাতি ওর উপর পড়ছে।

তা দেখে শুভ্র তো পারে না মাটিতে গড়াগড়ি করে হাসে,

“শা*লার শা*লারা উঠ উপ্রেত্তে, আমারে ভর্তা বানাইলাইছে”

আকাশ ঠোঁট দুটো উঁচু করে চুমু দেওয়ার স্টাইলে বলল,

“দোস্ত তোরে কতদিন পরে দেখছি,,কতদিন তোরে চুমা দেই না”

অভ্র নাক মুখ খিঁচে বলল,

“ইয়াক থু,যা সর, চুমা লাগবো না আমার”

অবশেষে সবগুলো অভ্রের উপর থেকে উঠে,

অভ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে শুভ্র সহ সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে,

আজ যেন মনে হচ্ছে আবার সেই বন্ধুত্ব নতুন করে জীবিত হয়েছে,

আজ জোড়ছে পার্টি হবে,

বন্ধুদের দেখে অভ্রের উপর থেকে মনে হচ্ছে অর্ধেক ভার কমে গেলো,
বাকি অর্ধেক কমবে যখন সে তার প্রিয়সীকে নিজের করে পাবে তখন,

এটা আদৌও সম্ভব কি না তাতে অভ্র দ্বিধায় আছে তবে তাকে চেষ্টা তো করতেই হবে,
তরু যে তার প্রান ভোমরা,

এখন এসব চিন্তা না করে বন্ধু দের আড্ডায় সে মন দেয়।

_______________

এভাবে প্রায় অনেক দিন চলে গেলো,

দেখতে দেখতে আরুর পরীক্ষা শেষ,

রেজাল্ট ও দিয়ে দেবে, পুরা বন্ধে আরু মেডিকেল এর প্রিপারেশন নেয়,

রেজাল্টের দিন.

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here