প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_৩

0
733

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩
,
মেজর ইকবাল হাসান এর তিন ছেলে বড় ছেলে সমুদ্র মেজো ছেলে রোদ্র আর ছোট ছেলে জয়। দুই ছেলের পরে মেয়ের আশায় আবার বেবি নিয়েছিলো কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হয়নি। তবে বড় ছেলে যতটা রাগী আর বদমেজাজি মেজোটা তার পুরো উল্টো শান্ত মেজাজের ছেলেটা ছবি আঁকা বেশ পছন্দের। বাবা আর বড় ভাই আর্মির বড় পোস্টে থাকলেও সে ওসব এ না গিয়ে আঁকাটাকেই বেছে নিয়েছে। রং তুলি নিয়ে খেলতে সে বেশ পছন্দ করে। শশী রোদ্রর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল।

আপনি সত্যি ছবি আঁকতে পারেন?

শশীর করা প্রশ্ন শুনে রোদ্র মুচকি হেসে বলল, অবশ্যই পারি। আমি মূলত তোমাদের গ্রামে এসেছি ইউনিক কিছু ছবি আঁকানোর জন্য কিন্তু আঁকার জন্য ভালো কোনো জায়গায় খুঁজে পাচ্ছি নাহ। তবে তুমি যদি একটু সাহায্য করতে তাহলে খুবি ভালো হতো।

অবশ্যই আমি আপনাকে সাহায্য করবো এই হিজলতলীর এমন কোনো জায়গা নেই যে আমি চিনি নাহ। কালকে আমি আপনাকে নিয়ে যাবো আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা তবে আমার একটা শর্ত আছে।

হ্যাঁ বলো কি শর্ত?

আগে আমার একটা সুন্দর করে ছবি একেঁ দিতে হবে তারপর।

রোদ্র শশীর মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, তোমার ছবিতো আমি আমার সবটা দিয়ে আঁকবো একদম নিজের মনের মতন করে।

ওদের কথা বলার মাঝেই ফট করে সমুদ্র দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। ওরা যেহেতু রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তাই সমুদ্র দরজা খুলে দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে একবার দুজনকে দেখে গটগট করে হেঁটে চলে গেলো। শশী সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, এই লোকটা কেমন যেনো আমি আমার জীবনে এমন লোক দেখেনি। বদমেজাজি আর অসভ্য লোক একটা।

শশীর কথা শুনে রোদ্র হেসে মজা করে বলল, আরে আস্তে আস্তে বলো ওনি শুনতে পাবেতো। তুমি জানো ওনি কে ওনি আর্মিতে চাকরি করে অনেক বড় পদে আর ওনার অনেক বড় বড় রাইফেল আছে সেটা দিয়ে যদি একবার তোমাকে গুলি করে তাহলে তুমিতো শেষ ভাই।

রোদ্রের কথা শুনে শশী ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে আবার সমুদ্রের যাওয়ার পথে তাকালো। শশীর এমন ভয়ে ভীতু হওয়া চেহারা দেখে রোদ্রের বেশ হাসি পেলো। হাসতে হাসতে শশীকে বলল, আরে আমি মজা করছিলাম ওনি আমার বড় ভাইয়া তবে তুমি ওনার থেকে একটু দূরে দূরেই থাকো নয়ত ওনার ওই হাতে আড়াই কেজি ওজনের চড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আমার বয়েই গেছে আমি তো ওনার সামনেই আর পড়বো নাহ।

কথাটা বলে শশী চলে গেলো আর রোদ্র শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে বলল, তোমার ছবিতো আমি যত্ন করে এখানে আঁকবো তবে রং তুলি দিয়ে নয় ভালোবাসার রং দিয়ে।
,,,,,,,,,,,
এই এলইডি লাইট এদিকে আসো কালকে আমাকে গোবরে ফেলে দিয়েছিলে আজকে তার বিচার হবে।

জোনাকি ছাঁদে এসেছিলো আচার চুরি করার জন্য। সে খবর পেয়েছে তার মা আচার রোদে দিয়েছে ছাঁদে সেটা নেওয়ার জন্যই এসেছিলো তবে তার এতো সুন্দর নামটাকে বদলে অন্যনামে ডাক শুনে পিছনে ঘুরে তাকালো দেখলো জয় দাঁড়িয়ে আছে। জোনাকি রেগে জয়ের দিকে তেড়েফুঁড়ে গিয়ে বলল, এই তুমি আমাকে কি বললে?

এলইডি।

নিজে কি হ্যাঁ ছোট্ট হাতি একটা সবসময় শুধু খেতেই থাকো খবরদার যদি আবার আমাকে ওসব উল্টো পাল্টা নামে ডাকো তাহলে এবার আপাকে বলে বকুলের মায়ের সাথে তোমাকে বেঁধে রাখবো।

আরে যাওতো তোমার ওই আপা আমার কিচ্ছু করতে পারবে নাহ। ওই যে ওখানে তাকাও ওটা কে জানো? আমার বড় ভাইয়া তোমাকে এক হাত দিয়ে একটা আছাড় মারলে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে নাহ।

জয়ের কথাশুনে জোনাকি দূরে ছাঁদের কিনায় তাকিয়ে দেখে লম্বা চওড়া বডি বিল্ডার মতো একটা লোক বসে ফোন টিপছে। জোনাকি ভয় পেলেও সেটা জয়কে বুঝতে না দিয়ে বলল, নিজে পারে না আবার ভাইকে ডেকে আনে ভীতু একটা।

তুমি কি হ্যাঁ তুমিও তো তোমার বোনকে ডেকে আনো।

ওদের ঝগড়ার মাঝেই সমুদ্র নিচে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসতেই জয় কাঁদো কাঁদো গলায় সমুদ্র কে বলল, বড় ভাইয়া জানো কালকে এই মেয়েটা আমাকে গোবরে ফেলে দিয়েছিলো। বিশ্বাস করো আমি কোনো দুষ্টমী করেনি একদম শুধু শুধু। ওর গরুর বাচ্চা কে গরু বলেছিলাম তাই জন্য, এখন তুমি বলো ভাইয়া গরুকে গরু না বললে কি বলবো।

ওর নাম বকুল ওটা বললেই হতো।

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে একবার জোনাকির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল, এই বয়সে এতো অকাম না করে ভালো করে পড়াশোনা করো। এরপর যেনো আর এমন করতে না দেখি।

কথাটা বলে সমুদ্র চলে গেলো আর জয় বিশ্ব জয় করার মতো একটা হাসি দিয়ে সমুদ্রের পিছনে গেলো। জোনাকি রেগে ধুপধাপ পা ফেলে শশীকে খুঁজতে গেলো যে করেই হোক আপাকে বলে এই মস্তান মার্কা লোকটাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।

“””””””””
গোসল সেরে জামা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। যদিও কলপাড়ে বদলানো যেতো বাড়িতে এখন পুরুষ লোক তেমন কেউ নেই তবুও সেই খারাপ লোকটা আছে। এই জন্য সোজা নিজের রুমে চলে এসেছি এখানে আর কেউ আসবে নাহ। বিকেলে আবার রোদ্র ভাইয়াকে ছবি আঁকানোর জায়গায় নিয়ে যেতে হবে উফফ কত কাজ আমার। একা একা কথাগুলো বলছিলো আর এক এক করে শরীল থেকে ভিজে কাপড় গুলো খুলে মেঝেতে রাখছিলো শশী। সবটা খুলে গায়ে একটা গামছা পেঁচিয়ে খাটে রাখা শুকনো জামাগুলো সোজা করছিলো তখনি রুমের দরজা খুলে কেউ রুমে ঢুকে পড়ল। শশী হাতে জামা নিয়ে সামনে তাকালো সমুদ্র খালি গায়ে শুধু একটা টাওজার পড়ে আছে৷ জিম করা শ্যামবর্ণের বডিটা যে কোনো মেয়েকে আর্কষিত করতে সক্ষম। বুকের বাঁ দিকে একটা নতুন করে ব্যান্ডেজ লাগানো। শরীলে লম্বা লম্বা অনেক গুলো কেটে যাওয়া দাগ শশী হা করে সেদিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র এভাবে শশীকে দেখে একটু বিব্রতবোধ করলো তবুও সেটা প্রকাশ না করে চেয়ারে রাখা নিজের ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে দরজার দিকে চলে গেলো। বেরোনোর আগে পিছনে না ফিরেই গম্ভীর স্বরে বলল।

চেঞ্জ করার সময় দরজা আটকাতে হয় এইটুকু সাধারণ ঙ্গান নেই।

কথাটা বলেই শব্দ করে দরজা আটকিয়ে চলে গেলো। দরজা আটকানোর শব্দে শশীর যেনো হুঁশ ফিরলো ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল চোখের কোণে পানি জমে গেছে। ওনি এভাবে আমাকে দেখে ফেললো ছিঃ দরজা আটকানোর কথা মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছে। খানিকক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর কেনো জানি মনে হলো দোষ টা আসলে ওই লোকটার কারণ ওনি যখন দেখলো দরজা খোলা তখন ওনার উচিত ছিলো চলে যাওয়া তা না করে সরাসরি রুমের মধ্যে চলে আসলো। এভাবে একটা মেয়ের রুমে কেউ ঢুকে পড়ে? না না এর একটা বিচার করতেই হবে। কথাগুলো ভেবে জামা পড়তেই নিচে থেকে জোনাকির ডাক ভেসে আসলো গলা ফাঁটিয়ে ওকেই ডাকছে। শশী দ্রুত ভিজে কাপড়গুলো হাতে নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

আপা তুই বল আমি কত ছোটো আর আমার মত এতো ছোটো মানুষ কে ওনি ধমক দিয়েছে এটা কি ঠিক? আমিতো বকুল কেও কখনো ধমক দেয়নি আর ওনি আমাকে কীভাবে ধমক দিলো। তুই এর বিচার করবি যদি না করিস তাহলে আমি কিন্তু দুপুরের ভাত খাবো নাহ।

ছোট বোনের কথাশুনে শশী বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। ও নিজেই ওই দানব লোকটাকে ভয় পায় সেখানে বিচার করবে কীভাবে। কিন্তু নাহ বিচার করতেই হবে আমার ছোট বোনকে যখন ধমক দিয়েছে তখন তো ওনাকে শাস্তি পেতেই হবে। কথাগুলো মনে মনে ভেবে শশী জোনাকির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, তুই যা ভাত খেয়ে নে আমি ভেবে দেখছি ওনাকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়।

শশীর কথা শুনে জোনাকি খুশি হয়ে গেলো। মাথার দুইপাশে ঝুটি ধরে নাচতে নাচতে খেতে চলে গেলো। আর শশী চড়াটের উপর শুয়ে শুয়ে ভাবছে কীভাবে সমুদ্র কে নাকানি চুবানি খাওয়ানো যায়। ভেজা চুলগুলো মাটি ছুঁই ছুঁই তখনি রোদ্র সেখানে এসে মিস্টি হেসে বলল

কি ছোট্ট পাখি যাবে নাহ?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here