প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_৪

0
333

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪
,
এখান থেকে যতগুলো চাষের জমি দেখছেন এই সবগুলো আমাদের। আব্বার মুখ থেকে শুনেছি দাদু নাকি নিজে কৃষকদের সাথে মাঠে নেমে কাজ করতেন। আমাদের বাড়িটাও দাদু করেছে ওনি ওনার তিন ছেলেকে একসঙ্গে দেখতে চেয়েছিলেন। তাই বাড়িটা এতোবড় করেছেন। আমার তিন কাকু ছোট কাকুর চার ছেলে মেজো কাকুর দুই মেয়ে এক ছেলে আর আমার আব্বা সবার বড়। তাই আমি বাড়ির বড় মেয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি কত মজা করি। আর ওই যে দূরে পুকুর দেখতে পাচ্ছেন আমার যখন মন খারাপ হয় তখন ওই পুকুরের ঘাটে গিয়ে বসে বসে গাছের সাথে বাতাসের সাথে কথা বলি। যদিও আমার ওতোবেশি মন খারাপ হয় নাহ মাঝে মাঝে একটু যখন হয় তখন আরকি। শশী অনবরত মুখ নাড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে রোদ্রকে এটা ওটা দেখাচ্ছে কিন্তু রোদ্রের তাতে মন কোথায়। গাছে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুঁজে সে এই চঞ্চল হরিণী মেয়েটাকে দেখতেই ব্যাস্ত। শশী পিছনে ঘুরে রোদ্র কে বলল।

আরে আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো নিন আঁকা শুরু করুন নয়তো একটু পড়ে সন্ধ্যে নামলে তখন আর কিছুই আঁকতে পারবেন নাহ।

ভাবছি আজকে আর কিছু আঁকবো নাহ, আজকে তোমার সাথে সবকিছু দেখে নিয়ে কালকে নিরিবিলিতে আঁকবো।

ওদের কথা বলার মাঝেই শশী দেখতে পেলো ক্ষেতের মাঝ দিয়ে করা আইল দিয়ে তিনটা ছেলে ওদের দিকেই আসছে। রোদ্র ওদের চিনতে না পারলেও শশী ঠিক চিনতে পেরেছে। একটা চেয়ারম্যান এর বিগরে যাওয়া ছেলে আর পিছনে দুটো তার চেলা। ওরা শশীদের সামনে এসে দাঁড়ালো শশী আর রোদ্রের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, কিরে শশী এই বিকেলে পোলা নিয়া মাঠে কি করিস।

ছেলেটার কথা শুনে রোদ্র রেগে কিছু বলতে যাবে তখনি শশী হাত দিয়ে রোদ্রকে বাঁধা দিয়ে বলল, আরে আপনি কই যান আপনি পারবেন নাহ ওকে সোজা করতে তো আমি একাই একশো।

কথাটা বলে শশী একটু এগিয়ে গিয়ে বলল, কেনোরে শাহিন তোর চোখ কী নষ্ট হয়ে গেছে দেখিস না কি করি। ওনি আমাগো অতিথি তাই ওনাকে আমাদের গ্রাম দেখাতে এনেছি। বেশি ঝামেলা করিস নাহ নয়ত তোর ওই গালে আমার হাতের চড় পড়তে সময় লাগবে নাহ।

শশীর কথাশুনে শাহিন দাঁত বের করে হেসে ডান হাত গালে ঘষতে ঘষতে বলল, তোর ওই নরম হাতে চড় খেতে তো আমি এক পায়ে রাজি।

চড়টা যদি আমার হাতের খাও তাহলে দিনের বেলায় চোখে চাঁদ তারা দেখবে খাবে নাকি?

পিছন থেকে আসা কারো গম্ভীর গলার স্বর শুনে ওরা সবাই পিছনে তাকালো দেখলো সমুদ্র আর জয় দাঁড়িয়ে আছে। জয়ের দুহাতে পিঠা একহাতের টা শেষ হয়ে গেছে অপর হাতেরটা সে তখন খেতে ব্যাস্ত। শাহিন সমুদ্র কে দেখে আর কিছু না বলে চলে গেলো। সমুদ্র আর একটু এগিয়ে এসে রোদ্রকে বলল, গ্রাম দেখতে আসার আগে জয় কে নিয়ে আসা যায় নাহ? ও একা একা কোথায় ঘুরবে বসে বসে আমার মাথা খাচ্ছে। আর যে কারো সাথে এভাবে চলে আসবি নাহ পরে বিপদে তুইই পরবি অন্য কেউ নাহ।

সমুদ্র কথাটা বলে সামনের পুকুর পাড়ে চলে গেলো। শশী রেগে রোদ্রকে বলল, দেখেছেন? আমি জানি ওনি শেষের কথাগুলো আমাকেই খুঁচা দিয়ে বলেছে।

শশীর কথশুনে রোদ্র হেসে বলল, তাহলে ভাইয়ার সামনে বললে নাহ কেনো? এখন ভাইয়া চলে যাওয়ার পরে বলছো কেনো?

আমি কি পাগল নাকি এমনিতেই ওনাকে দেখলে আমার ভয়ে হাঁটু কাঁপে শুধু শুধু ওনার সাথে লাগতে গিয়ে সেধে চড় খাওয়ার কি দরকার। কথাগুলো বিরবির করে বলে শশী রোদ্রকে বলল, ভাইয়া এখন চলেন বাড়িতে যায় বেলা প্রায় পড়ে এলো এই সময় মাঠে ঘাটে থাকা ভালো নয়।

রোদ্রও জয়ের হাত ধরে আইল দিয়ে হাঁটছে শশী পিছন ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রোদ্রকে বলল, ওনি আসবে নাহ?

কে ভাইয়া? আসবে হয়ত পরে।

পরে কেনো ওনাকে এখনি আসতে বলেন জানেন তো আমি কাকীর মুখ থেকে শুনেছি অনেক অনেক বছর আগে আমাদের এই মাঠে ইংরেজরা নীল চাষ করতো। ওনারা নাকি কৃষক দের উপর অনেক অত্যাচার করতো তো একদিন সব কৃষকরা মিলে ওই ইংরেজদের লিডারকে ধরে মেরে ফেলে এই মাঠেই নাকি কোথায় পুঁতে রেখেছিলো। এখনো রাত হলে নাকি ওনার আত্মা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়ায়।

শশীর কথাশুনে রোদ্র মুচকি হেসে বলল, তাহলে তো ভালোই দুই ইংরেজ একসাথে হয়ে দেশের হালচাল নিয়ে কথা বলবে সেখানে আমাদের কি কাজ বলো তার চেয়ে বরং চলো আমরা বাড়ি যায়।

শশী মাথা চুলকে আবারও পিছনে সমুদ্রের দিকে তাকালো এই লোকের ভয়ডর নাই নাকি এই ভর সন্ধ্যে বেলা কেমন পুকুরপাড়ে দাঁড়ায় আছে। কি জানি বাপু যায় যা ইচ্ছে করুক আমি বরং যায়।
,,,,,,,,,
কিরে হঠাৎ করে কোথায় লুকিয়ে পড়লি আমার ভয়ে।

ফোনের ওপাশ থেকে এমন উপহাস মূলক কথা শুনে সমুদ্রের হাতের মুট শক্ত হয়ে গেলো। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বাঁকা হেসে বলল, হিংস্র বাঘকে ডেকে নিজের বিপদ বাড়াস নাহ।

আরে ছাড়তো তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবি নাহ উল্টো নিজেই দু দুটো গুলি খেয়ে কুপকাত হয়ে আমার ভয়ে লুকিয়ে আছিস।

সমুদ্রের রাগ হলেও কিছু বললো নাহ কারণ ও জানে মূর্খের সাথে তর্ক করলে সময় নষ্ট ছাড়া অন্য কিছুই হবে নাহ। তাই চুপ করে থেকে বলল, তোকে সময় দিচ্ছি যত খুশি উড়ে নে আমি ফিরে আসলে দম ফেলানোর সময় পাবি নাহ।

আরে ছাড়তো তুই আমার টিকিটাও ছুঁতে পারবি নাহ, তোর সামনেই আমার ড্রাগস এর ব্যাবসা রমরমা চলছে কিছু করতে পেরেছিস? ওহ শোন আজকে রাতে বাইরে থেকে এক ট্রাক নতুন মাল আসবে তোকে জানিয়ে রাখলাম পারলে ঠেকা। আমি ভাবছি বাইরের দেশ থেকে টাকা খরচ করে এসব আর না এনে বরং দেশেই শুরু করি কি বলিস। আমাদের দেশে তো আবার ইয়াং ছেলেদের অভাব নাই তাদের কেই কাজে লাগাবো। কিরে চুপ হয়ে গেলি কেনো কিছু বল।

ভাবছি তোকে আর কিছু বলবো নাহ কারণ পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।

সমুদ্রের কথাশুনে ওপাশের লোকটা যেনো ভারি মজা পেলো হাসতে হাসতে বলল, তুই আর আমাকে কি বলবি যে নিজের বাপকেই রক্ষা করতে পারলো নাহ তার আবার এতো কথা।

সমুদ্র চোখ বন্ধ করে মুঠো করা হাতে পাশের গাছে জোরে একটা পাঞ্চ মারলো। ওপাশের লোকটা যেনো সমুদ্রের অবস্থা বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে তাই আবার বলা শুরু করলো। জানিস তো ভাবছি এবার সামনের নির্বাচনে আমিই দাঁড়াবো আমার বাপ আর কতদিন এসব করবে বল ছেলে হিসাবে তো আমারও একটা কর্তব্য আছে।

ওই যে বললাম বাঘ সব সময় বাঘই থাকে যতই সে আহত হোক নাহ কেনো। বিড়াল ক্ষমতা পেলে দুই দিনের জন্য নিজেকে বাঘ মনে করলেও বিড়াল বিড়ালই থাকে।

তুই সালা বড়ই জেদী তোকে তো সুযোগ দিছিলামই আমার বোন তোকে পছন্দ করে ওকে বিয়ে করলে এতোকিছুই হতো নাহ। তোর বাপও বেঁচে থাকতো। চল তোকে আরো একবার সুযোগ দিলাম আমার বোনকে বিয়ে করে আমার সাথে হাত মেলা। কি বলতো এক রাজ্যে দুই রাজা থাকে নাহ।

সেটাই এক রাজ্যে একটাই রাজা থাকে তবে সেটা কে সেতো সময় হলেই দেখা যাবে।

বাহ এই না হলো কথার মতো কথা কি বলতো সামনের জন্য শক্তিশালী না হলে যুদ্ধ করে মজা পাওয়া যায় নাহ। তুই আর আমি একদম এক টার্গেট আলাদা হলেও আমাদের পছন্দ একদম এক। আর আমরা কেউই নিজের পছন্দের জিনিস অন্যকে দিতে নারাজ আমার কি মনে হয় বলতো এই জন্য দেখিস ভবিষ্যতে তোর সাথে বিশাল যুদ্ধ লাগবে আমার।

আর সেই যুদ্ধে আমি না জিতলেও তোর মৃত্যু নিশ্চিত।

সেটা তো সময় হলেই দেখা যাবে।

সমুদ্র ফোন কেটে সামনে তাকালো লাল হওয়া সূর্য টা তখন মেঘের আড়ালে লুকাতে ব্যাস্ত। চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,
সমুদ্র কে রাতের খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে কিন্তু ও আসেনি তখন বাড়ি ফিরে রুম থেকে আর বের হয়নি। জয়কে বলেছিলো ডাকতে তবে সে এখন রোদ্রের সাথে ছবি দেখতে ব্যাস্ত আর জোনাকি ঘুমিয়ে গেছে এই জন্য শশীকেই পাঠালো। শশী সিঁড়ি দিয়ে বিরক্তি ভাবে উপরে উঠছে যেনো তার সমুদ্র কে ডাকার কোনো ইচ্ছেই নেই। বাবার কাছে নেক্যা কান্না করে নিজের রুম আবার ফিরে পেয়েছে তবে তার পাশের রুমটাই সমুদ্রের। অপন মনে নক না করে রুমে ডুকতেই শশী সামনে তাকিয়ে আতংকে চিৎকার করে বলে উঠল।

একি এটা কি করছেন আপনি?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here