#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৫
,
তখন পুকুর ঘাট থেকে আসার পরেই রাগে রাগে হাতের ব্যান্ডেজ আর বুকে থাকা ব্যান্ডেজ খুলে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে সমুদ্র। প্রায় শুকিয়ে আসা ঘাঁতে টান পড়ায় সেটা আবার কাঁচা হয়ে ক্ষত স্থান থেকে অনবরত রক্ত ঝরতে লাগলো। সেই সময় রেগে গাছে পাঞ্চ করায় সেখানেও লাল হয়ে ছিঁলে গেছে। কিন্তু সমুদ্রের সেদিকে খেয়াল কোথায় সেতো এখন নিজের রাগ মেটাতে জেদ করে বেথ্যা সয্য করছে। শশী আচমকা রুমে এসে এসব দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে কাঁপা গলায় বলল।
এতো রক্ত? এসব কি করে হলো এই ব্যান্ডেজ খুললো কীভাবে আর এতো রক্ত ঝড়ছে আপনি তবুও কাউকে ডাকেননি কেনো?
রুম থেকে বেরিয়ে যাও।
বেরিয়ে যাবো মানে কি কত রক্ত বের হয়েছে আমি এখুনি আপনার মাকে ডাকছি।
কথাটা বলে শশী বেরিয়ে যেতে গেলে সমুদ্র রেগে পিছন থেকে শশীর চুলের বেণী ধরে টেনে একটু পিছিয়ে এনে রক্ত মাথা হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে বলল, কথা বললে শোনো নাহ? আমি বলেছি তো কারো করুণা আমার চাইনা। আর একটা কথাও বলবে নাহ চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে যাও।
শশী সমুদ্রের হাত নিজের গলা থেকে সরানোর চেষ্টা করতেই সমুদ্র ওর গলা ছেড়ে দিলো। শশী কাশতে কাশতে একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শশী বের হতেই সমুদ্র মেঝে থেকে ব্যান্ডেজ গুলো কুঁড়িয়ে নিয়ে হাতের রক্ত মুছতে লাগল তখনি রুমে হুরমুর করে শাহানারা এসে দৌড়ে সমুদ্রের কাছে গিয়ে কান্না করে বলল।
এসব কীভাবে হলো ব্যান্ডেজ খুললো কীভাবে আমাকে একবার ডাকবি নাহ। কত রক্ত বের হয়েছে তুই কেনো এমন করিস বলতো আর কত জ্বালাবি আমায়।
কথাটা বলে শাহানারা নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়ে রক্ত মুছে দিতে লাগল। ততক্ষণে রোদ্র নতুন ব্যান্ডেজ আর ক্ষত স্থানে লাগানোর জন্য মলম নিয়ে আসছে। সমুদ্র রেগে সবার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা শশীর দিকে তাকালো। এই মেয়েটাই সবাইকে বলেছে সমুদ্র ওর মাকে শান্ত করার জন্য বলল, তেমন কিছু হয়নি মা তুমি এতো কান্নাকাটি করো নাতো অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর রোদ্র মাকে নিয়ে যা এবং বাকি সবাই এখান থেকে যান আমি ঠিক আছি।
সমুদ্রের কথাশুনে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জামশেদ মাস্টার কেবলি খেতে বসেছিলো মেয়ের মুখে কথাটা শুনতেই এঁটো হাত নিয়েই দৌড়ে এসেছে সাথে ওনার দুই ভাইও এসেছে। তবে সমুদ্রের এমন কথা ওনার মোটেও ভালো লাগেনি ছেলেটা কেমন যেন লাগাম ছাড়া। নেহাত অতিথি তাই নয়ত নিজের ছেলে এমন হলে কাঁচা কুঞ্চি দিয়ে পিটিয়ে সোজা করে দিতাম। শাসন একবারই করবো ছোট বেলা থেকে ঠিকমতো শাসন করলে এখন এই অবস্থা হতো নাহ। সবাই চলে গেলেও রোদ্র আর শাহানারা যায়নি। শশী ভয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে তখন কেমন গলা চেপে ধরেছিলো আর একটু হলে তো শ্বাস আটকে মরেই যেতাম। কথাটা মনে হতেই শশী নিজের গলায় হাত দিলো সেখানে অল্প সল্প রক্ত লেগে আছে। সমুদ্র দরজার দিকে তাকিয়ে শশীকে দেখতে পেয়ে ধমকে বলে উঠল।
এই মেয়ে তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও।
ছেলের এমন কান্ডে শাহানারা বেজায় চটে গেলেন সমুদ্র কে ধমক দিয়ে বলল, ওকে ধমকাচ্ছিস কেনো ও গিয়ে না বললে তো জানতেই পারতাম নাহ। আর তোকে তো চিনি তুইও বলতি নাহ।
রোদ্র শশীর দিকে এগিয়ে এসে নরম গলায় বলল, ভাইয়ের কথায় কিছু মনে করো না। ভাই একটু রাগী কি বলোত বড় ভাইয়া হলো খানিকটা নারকেল এর মতো বাইরেটা শক্ত কিন্তু ভিতরটা নরম। যাও অনেক রাত হয়েছে তুমি নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
শশী আরেকবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আজকে ও যতটা ভয় পেয়েছে এমন ভয় এই জীবনে পায়নি। এভাবে কেউ কারো গলা চেপে ধরে নাকি এই জন্যই বলে সেধে কারো উপকার করতে হয় নাহ। কথায়ই তো আছে উপকারীকে বাঘে খাই।
,,,,,,,,,,,,
আজকে বৃহস্পতিবার বিধায় হাফ বেলায় ছুটি হয়ে গিয়েছে। দুই বোন স্কুল থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নিয়েছে। সামনেই শশীর এসএসসি পরিক্ষা বাবা বলেছে পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে ফোন কিনে দিবে। এই জন্য সামনের কয়েকটা মাস ঘুরাঘুরি একটু কমিয়ে দিয়ে পড়াশোনায় মন দিয়েছে। সিঁড়ি বেঁড়ে উঠানে নেমে চড়াটের উপর বসতেই রান্নাঘর থেকে পারভিন মেয়েকে ডেকে উঠল। শশী দৌড়ে রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই পারভিন মেয়েকে বলল।
এই গরম পানিটা কলপাড়ে রেখে একটু সমুদ্র কে ডেকে আনতো মা। দুপুর গড়িয়ে গেলো এখনো গোসল করেনি ওর জন্য গরম পানি করেছি।
শশীর কালকে রাতের ঘটনা মাথায় আসতেই বলল, আমি পারবো নাহ অন্য কাউকে বলো।
কাকে বলবো আর বাড়িতে কেউ আছে নাকি তোর ছোট কাকী জুনাইদ কে ঘুম পাড়াচ্ছে। আর মেজো গরুর গোয়াল পরিষ্কার করছে। জোনাকি তো বই গুলো রাখতে যত দেরি না খেয়েই দৌড়ে পাড়ায় চলে গেছে। এই গরমের মধ্যে তুই আর আমায় জ্বালাস নাহ তো জলদি ডেকে আন পানি ঠান্ডা হয়ে যাবে।
গরমের সময় আবার গরম পানি করেছো কেনো ওনার শীত লাগছে নাকি?
শোনো মেয়ের কথা ছেলেটা অসুস্থ তারউপর কালকে রাতে যা হলো তোর আব্বা তো অনেক রেগে গিয়েছিলো। ক্ষতস্থান গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ঔষধ লাগাতে হবে। এখন বেশি কথা না বলে যাতো।
শশী বিরক্তি নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে উঠান পযন্ত আসলো তারপর কি মনে করে আবারও রান্নাঘরে গিয়ে ওর মাকে বলল, আচ্ছা মা ওনারা আমাদের বাড়ি থেকে যাবে কবে?
মেয়ের এমন ধারা কথা শুনে পারভিন রেগে গেলো। এসব কি ধরনের কথা শশী ওনারা মেহমান যতদিন ইচ্ছে থাকবে তোর এতো চিন্তা কিসের বেশি কথা না বলে সমুদ্র কে ডেকে নিয়ে আয়।
,,,,,,,,
বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে সমুদ্র উত্তরের খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনি দরজা খোলার শব্দ হলো বিরক্ত নিয়ে সেদিকে তাকাতেই দেখলো শশী দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র কপাল কুঁচকে উঠে বসে কিছু বলার আগেই শশী বলল।
মা আপনার জন্য গরম পানি করে কলপাড়ে রেখে দিয়েছে। আমাকে পাঠালো আপনাকে ডাকার জন্য জলদি আসেন।
কথাটা বলে শশী চলে যাওয়া ধরতেই সমুদ্র পিছন থেকে ডেকে উঠল, এই মেয়ে শোনো নাম কি তোমার?
সমুদ্রের এহেন প্রশ্নে শশী পুরাই অবাক হয়ে গেলো পুরো গ্রামের মানুষ তার নাম জানে অথচ এই বেডা আমাদের বাড়িতে থেকেই আমার নাম জানে নাহ মাথার তাড় ছেঁড়া হলে যা হয়। মনে মনে কথাগুলো বলে শশী মুখে বলল, শশী।
নামটা একদম বাজে শশী কারো নাম হয় নাকি আচ্ছা কিসে পড়ো তুমি?
লোকটা বলে কি আমি নাকি চাঁদের মতো দেখতে তাই আব্বায় ভালোবেসে নাম রাখছে শশী আর এই লোকটা বলে কিনা বাজে। শশী রেগে সমুদ্রের পরের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, বলবো নাহ আর আমি অচেনা কাউকে এতোকিছু বলি নাহ।
কথাটা বলে রুম থেকে চলে গেলো শশীর এমন কাজে সমুদ্র কপাল কুঁচকে বিরবির করে বলল, বিয়াদপ মেয়ে একটা বড়দের সম্মান করতে শেখে নাই। ছোটো থেকে শাসন না করলে যা হয় আদরে আদরে বাঁদড় তৈরি হয়েছে।
কথাটা বলে বিছানা থেকে নেমে বাইরে চলে গেলো গোসল করতে হবে। আর যতদ্রুত সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে যলদি কাজে জয়েন করতে হবে অনেক রেস্ট করা হয়েছে আর নয়।
#চলবে?