প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_১২

0
291

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১২
,
তাহলে তো বলতে হয় তোমাদের বংশই খারাপ। যে বংশের ছেলেরা বিয়ের আগেই কোনো মেয়েকে পেগনেন্ট করে দেয় সেই বংশের ছেলে হয়ে এতো বড় বড় কথা কীভাবে বলো তুমি।

কি বলুন তো যে যেমন সে সবাইকেই তার মতোই ভাবে।

সমুদ্রের কথায় মালবিকা রাগলো নাহ বরং একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, এতো যে বংশের বড়াই করছো তাহলে বিয়ের আগেই একটা যুবতি মেয়েকে কীভাবে ঘরে রাখো? এতোবড় একজন অফিসার এর কি এহেন কাজ মানায়? ভাবছি কথাটা বাইরে লিক হলে তোমার এই সম্মান বংশ ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। বড্ড আফসোস হচ্ছে তোমাকে এভাবে দেখে যতই হোক তোমার সাথে আমার কোন সময় তো একটা সম্পর্ক ছিলো মায়া তো লাগবেই।

মালবিকার কথাশুনে সমুদ্র রেগে দাঁড়িয়ে গেলো তবে রাগের প্রকাশ করলো নাহ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। আপনার ভাইয়ের ছেলেকেও একি কথা বলেছি। তাই সাবধান লিমিট ক্রস করবেন নাহ তাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কি হন।

কথাটা বলে সমুদ্র বেরিয়ে গেলো মালবিকা সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে টেবিল থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,
সমুদ্রের আসতে বেশ দেরি হয়ে গেলো নিজের কাছে থাকা অন্য চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। ডয়িং রুমের আলো না জ্বালিয়ে সোজা সিঁড়ি বেঁয়ে বইঘরের দিকে চলে গেলো। দরজাটা খোলায় ছিলো ওঘরে তখনো আলো জ্বলছে হয়ত কারো বন্ধ করতে মনে ছিলো নাহ। দেওয়ালের সাথে টাঙ্গানো বড় একটা ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সমুদ্র যেখানে ওর বাবার সাথে একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে ছবিতে থাকা মানুষগুলোকে গভীর নয়নে দেখলো তারপর হাতটা বাড়িয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করলো।

সরি।

ব্যাস তারপর পুরো ঘরজুড়ে নিস্তব্ধতা এই একটা শব্দের মধ্যে যেনো লুকিয়ে আছে কষ্ট অভিমান ব্যার্থতা। হঠাৎ পিছন থেকে আসা শব্দে সমুদ্রের ধ্যান ভাঙ্গলো ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ শব্দটা শুনে বোঝার চেষ্টা করলো আসলে শব্দটা কীসের। পিছন ফিরে আশে পাশে তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো নাহ। বইয়ের তাঁক পাড় হয়ে সামনের দিকে যেতেই দেখলো কোনায় রাখা চেয়ারে বসে টেবিলের উপর দুইহাত ভাঁজ করে তাতে মাথা দিয়ে শশী ঘুমিয়ে আছে। সামনে হাঁট করে খুলে রাখা বই সমুদ্র শশীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। ছোট করে কেটে রাখা এক গোঁছা চুল একপাশে পড়ে বন্ধ চোখ আর ঠোঁট টাকে আংশিক ঢেকে রেখেছে। সমুদ্র বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শশীকে দেখছে যেনো সে চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে নাহ। নিজের এমন কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে, মাথা নাড়িয়ে যথা সম্ভব গলার স্বরটাকে কঠিন করে শশীকে ডাকলো।

এই মেয়ে এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? উঠো আর সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।

সমুদ্রের কথায় শশীর কিছুই হলো নাহ শুধু একটু নড়েচড়ে আবার আগের মতো ঘুমিয়ে গেলো। সমুদ্র বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু শশী তবুও উঠলো নাহ। শেষে সমুদ্র উপায় না পেয়ে ওর এক আঙুল শশীর মাথায় ঠেকিয়ে ধাক্কা দিলো এবার শশী মাথা না তুলেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, আব্বা আমি রাতে খাইছি এখন আর খাবো নাহ এখন ঘুমাবো।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকালো। মেয়েটা কি পাগল আমাকে ওর আব্বা ভাবছে কথাটা ভাবতেই সমুদ্রের মুখটা তেঁতো হয়ে গেলো। এবার বেশ জোরেই শশীকে ডাক দিতে শশী চমকে উঠে বসলো, কাঁচা ঘুম ভাঙ্গায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে অনেক্ক্ষণ যাবত হাত মাথার নিচে থাকায় হাতটাও কেমন বেথ্যা হয়ে আছে। শশী ঘুম ঘুম চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর তাকানো দেখে ধমকে বলল, এভাবে এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? যাও রুমে যাও।

শশী ঢুলুঢুলু চোখে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু ওমনেই আবার চেয়ারে বসে পড়লো। এতো ঘুম নিয়ে কি এভাবে হাঁটা যায় নাকি এই লোকটার উপর বেশ বিরক্ত লাগছে মন চাইছে মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিই তাহলে যদি মাথাটা ঠান্ডা হয়। শশী কোনো রকমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সমুদ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেও বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,
হাতে একটা খাম নিয়ে শশী সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। বাড়িতে আপাতত সে ছাড়া কেউ নেই রোদ্র আজকে চলে যাচ্ছে এই জন্য সবাই এয়ারপোর্টে গেছে। শশীকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু শশী যায়নি, রোদ্র যাওয়ার আগে শশীর হাতে এই কাগজটা দিয়ে বলেছে ও চলে যাওয়ার পর এটা পড়তে। শশী বিছানায় বসে কাগজটা মিলে ধরতেই দেখলো ওখানে অল্প কয়েকটা শব্দ লেখা শশী পড়তে শুরু করলো। আজ থেকে আগামী এক বছর আমি আমার খুব ভালো বন্ধুর থেকে দূরে থাকবো। তবে আমি সব সময় তোমাকে অনুভব করবো, নিজের খেয়াল রাখবে আর মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। আমি আসতে আসতে তো তুমি অনেকখানি বড় হয়ে যাবে আর তখন আমি তোমাকে একটা কথা বলবো। যেই কথা আজ পযন্ত কাউকে বলিনি আমি জানি কথাটা শোনার পর তুমি অবশ্যই অবাক হবে আর তখন তোমার মুখটা দেখতে যা লাগবে নাহ। সেই সময়টর জন্য আমাকে এখন একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে, আচ্ছা যাই হোক অনেক অনেক ভালো থেকে আর নিজের যত্ন নিও।
পুরো চিঠিটা পড়ে শশী ভাজ করে পাশের ছোট টেবিলটাই রেখে দিলো। ও ভেবেই পাচ্ছে নাহ এই কথাগুলো তো সামনাসামনি বলা যেতো তাহলে এতো ঘটা করে চিঠি লেখার কি দরকার। শশী বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলো তখনি কলিং বেল বেজে উঠল। শশী উঠে বসে ভাবছে খুলবে কি না কারণ এখন বাড়িতে কেউ নাই আর সমুদ্ররা একটু আগে বেরিয়েছে তাহলে এই সময় কে আসতে পারে আর দরজা খোলা কি ঠিক হবে? এতোক্ষণে বেশ কয়েকবার কলিং বেলটা বেজেছে এবার না খুললে হয়ত নষ্টই হয়ে যাবে। শশী উড়নাটা মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো, সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে আস্তে করে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই শশী দেখলো ওপাশে একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ সুন্দর কালার করা চুলগুলো কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ ছুঁই ছুঁই শশী ওনাকে দেখে কিছু বলবে তার আগেই মহিলাটা শশীকে বলল,

আচ্ছা তাহলে তুমিই সেই মেয়ে হুম সমুদ্রের পছন্দ আছে বলতে হবে। সামনে থেকে সরো আমাকে ভিতরে যেতে দেও।

কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই আর আমি আপনাকে চিনিও নাহ আন্টি আসুক তারপর না হয়।

এই মেয়ে তুমি আমাকে এসব বলার কে তুমি জানো আমি কে? এসব কথা তুমি আমায় বলো কোন অধিকারে সমুদ্র আসলে ওকে জিগাস করে নিও আমি কে আর এই বাড়ির সাথে আমার কি সম্পর্ক এখন সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।

কথাগুলো বলে মালবিকা শশীকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো। শশী দরজাটা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ওর জীবনে এমন মেয়ে মানুষ কখনো দেখেনি , মালবিকা সোজা গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো তারপর হাতের আঙুল দিয়ে শশীকে ডাকলো। শশী গুটি গুটি পায়ে মালবিকার সামনে এসে দাঁড়ালো, শশীকে পা থেকে মাথা অবধি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকে মালবিকা বাঁকা হেসে বলল, তুমি তো দেখছি ফুটন্ত কড়ি এখনো ফুল হতে অনেক দেরি। বুঝলাম না সমুদ্রের মতো দায়িত্ববান ছেলে এমন গোলাপের কড়িতে মজলো কীভাবে। তোমাকে তো সমুদ্র ছুঁতেই তুমি মূর্ছা যাবে আচ্ছা যাকগে এখন যাও আমার জন্য এককাপ কফি বানিয়ে আনো।

শশী ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে নাহ একে তো এই মহিলাকে চেনে নাহ তার উপর এভাবে একা বাড়িতে কি সব কথা বলছে। হয়ত ওনাদের কোনো আত্মীয় হবে এই জন্য শশী কিছু বললো নাহ সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।

#চলবে??

আজকের পর্বটা অনেক অগোছালো হয়েছে কি লিখেছি নিজেই জানিনা মাথায় কিছু আসছিলো নাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here