#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_তেইশ
#তারা_ইসলাম
“বন্যেরা বনে সুন্দর,শিশুরা মাতৃ-কোলে।এই কথাটার মানে আগে না বুঝলেও এখন বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।আমি যখন কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরেছিলাম তখন আমার আসল আম্মু এসে আমাকে ঝাপটে ধরেছিলেন।আর আমিও নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠেছিলাম বার বার।আমার মনে হচ্ছিলো দুনিয়াতে আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।উনার গা থেকে কেমন জানি মা মা গন্ধ আসছিলো যে’টা আমি এত গুলা বছর পায়’নি।আমি তখন ভুলে গিয়েছিলাম আমার আম্মু কেমন কি করেন?আমি শুধু জানতাম উনি আমার আম্মু আর আমার উনাকেই লাগবে ব্যস।
“কান্না বন্ধ করে যখন আমি চুপ হয়ে গেলাম তখন আম্মু আমার মাথায় বুলিয়ে দিয়ে বললেন- ফায়জা?
“উনার সম্বোধনে আমি অবাক হলাম তাই অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন- মা আমার তোকে আমরা ছোট বেলায় ফায়জা নামেই ডাকতাম।
“আমি কান্না জড়িত গলায় বললাম- আম্মু তুমি আমাকে কিভাবে চিনলে?
“আমার কথায় আম্মু চোখের পানি মুছে বললেন- মা কি আর মেয়েকে না চিনে থাকতে পারে।
“আমি আর কিছু না বলে উনাকে ঝাপটে ধরে রইলাম।কি বা বলবো এখন আমার কি করা উচিত সেটা জানা নেই।শুধু এতটুক জানি আমার এই আম্মুকেই লাগবে।
——————————-
রুদ্র তোর কথা মতো জেসমিন রানীর থেকে শায়লা খাতুনের খুঁজ করতেই সে গড়-গড় করে সব বলে দিয়েছে।মনে হলো তারা একে-অপরের শক্রু।
“আমানের কথায় রুদ্র বাঁকা হাসলো তারপর শান্ত গলায় বললো- সবাইকে খবর’টা দে আমাদের এখনই বের হতে হবে।দেরি হয়ে গেলে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
“আমান বললো- ঠিক আছে তারপর ফোন রেখে দিলো।
“রুদ্র মনে মনে ভাবলো- শায়লা খাতুন যে তার নিজের শাশুড়ি হবে তা সে জীবনে ও ভাবে’নি।তার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে এমন কুৎসিত মহিলা তার শাশুড়ি।সে যায় হোক তাকে সে শাস্তু দিবেই দিবে।এর মধ্যে যদি নূর আসে তাহলে তাকেও শাস্তি পেতে হবে।আর সে বুঝতে পেরেছিলো যে জেসমিন ও যখন শায়লা খাতুনের লাইনে কাজ করে তখন সে নিশ্চয় জানে শায়লা খাতুন কোথায় থাকে?আর হলোও তাই এসব ভেবেই নিজের কাজে চলে গেলো।
———————-
আমি আর আম্মু এখন একটা বিছানায় বসে আছি তবে আমার মাথা আম্মুর কোলে রাখা।আর আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
“আমি হটাৎ বলে উঠলাম- আম্মু আমি তোমার সব অতীত তোমার থেকেই জানতে চাই?কেন তুমি এই কাজ’টা করো?
“আম্মু আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকালেন তারপর বললেন- সে অনেক কথা ফায়জা,পরে না-হয় বলি?
“আমি জোর গলায় বললাম- না আমি আজকেই সব শুনতে চাই।
“আম্মু আমার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব বলতে লাগলেন।
~ অতীত ~
আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি নিজের মা-বাবাকে পায়’নি।তবে আমি যার কাছে মানুষ হয়েছিলাম উনি বলেছিলেন আমাকে একটা ডাস্টবিনে পেয়েছিলেন।আর যে আমার লালন-পালন করেছিলেন তার নাম রায়লা খাতুন।উনি আমার পালিত মা ছিলেন।তবে উনার পেশা ছিলো মেয়ে পা*ছা*র করা বিভিন্ন দেশে।আমি সে-সব দেখেই বড় হয়েছিলাম।তবে উনাকে আমি কখনো ঘৃণা করি’নি বরং নিজ মায়ের মতোই ভালোবাসতাম।উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতোই রেখেছিলেন।যখন যা চেয়েছিলাম তা দিয়েছিলেন।এমন কি পড়া-লেখা ও করতে দিয়েছিলেন।
“আর আমি ছোট বেলা থেকে সুন্দর হওয়ার কারণে রাস্তা-ঘাটে অনেক বাজে পরিস্থিতিতে পরতাম।তবে আমরা যে এলাকায় থাকতাম সে একালাতে যখন আমার পালিত মায়ের ব্যাপারে সবাই জেনে যায় তখন কেউ আর আমাকে ডিস্টার্ব করতো না।আম্মুর অনেক পাওয়ার ছিলো তাই।এরপর জীবনটা অন্য-রকম চলছিলো।কিন্তু এস’এস’সি এক্সাম দেওয়ার পর একদিন আম্মু হটাৎ আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন- তোমার বিয়ে ঠিক করেছি আহান চৌধুরির সাথে।উনার অটেল টাকা পয়সা আছে উনি তোমাকে রাস্তায় দেখে পছন্দ করেছেন।আর গত-কাল পস্তাব ও পাঠিয়েছেন।উনার ভালো ব্যবসা আছে তাই আমি আর না করি’নি।আমি তাড়াতাড়ি তোমাকে উনার হাতে তুলে দিতে চাই।
“আমি সেদিন কিছু বলি’নি কারণ উনি আমার জন্য অনেক করেছেন।তাই আমি ও সে বিয়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।তবে অবাক নিশ্চয় হয়েছিলাম আমার মতো মেয়েকে কেন এত বড়লোক মানুষ বিয়ে করবেন?
“দেখতে দেখতে তোর বাবার সাথে আমার বিয়ে’টা হয়ে যায়।বিয়ের পর আমি এক নতুন জীবনে পা রাখি তোর বাবা আমাকে ভীষণ ভালো-বাসতো।আর এক-বছর সব ঠিকি যাচ্ছিলো।কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম তোর বাবার মেয়ের প্রতি আসক্ত।প্রায় বাসায় মেয়ে নিয়ে আসতেন এই নিয়ে অবশ্য আমাদের মাঝে অনেক জামেলা হয় তবুও উনি উনার সে কাজ থেকে বিরত থাকেন’নি।এর মাঝেই জানতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট,কত খুশির খবর ছিলো তবে আমি খুশি হতে পারি’নি।তোর বাবা যখন জানতে পারে তুই পেটে তখন অবশ্যই উনি খুশিই হয়েছিলেন।কিন্তু তবুও উনার যে বাজে কাজ উনি ছাড়েন’নি।এসব নিয়ে টেনশন করার ফলে আমি অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম।তাই একদিন আমাকে একায় হাসপাতালে যেতে হয় আর সেখানেই পরিচয় হয় লেয়ান জামানের সাথে যে তোর বর্তমান বাবা আরকি।
“উনার সাথে আমার পরিচয় হয় আমি হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর জ্ঞান হারানোর কারণে।উনিই আমাকে তখন সাহায্য করেছিলেন।হাসপাতালের মধ্যে নিয়ে গিয়ে জ্ঞান ফিরিয়েছিলেন।আর জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষণ পর উনার জিজ্ঞাস করার কারণে উনাকে ভাই মনে করে আমার দুঃখের সব কথা বলেছিলাম।আর উনার ছোট হওয়ার পরও উনি আমাকে আপা ডেকেছিলেন।উনি সেদিন বলেছিলেন আমার যা সাহায্য লাগে উনাকে যেন জানায় ভাইয়ের মতো।সেদিন উনি আমাকে বাড়িতে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।আর উনার মাধ্যমেই তোর বর্তমান মায়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম আমি।তারা হাসবেন্ড ওয়াইফ ছিলো তারা অনেক বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করেও নিতে পারেন’নি উনার ওয়াইফের সমস্যা থাকার কারণে।এরপর থেকে আমাদের সম্পর্কটা অনেক গাঢ় হয় তারা দুইজন আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো।
“কিন্তু এইদিকে যতদিন যেতে লাগলো তোর বাবার বাজে কাজ আরও বাড়তে লাগলো।যা আমি এক্কিবারেই মেনে নিতে পারছিলাম না।তোর নানুকেই এসব বলতে পারি’নি কারণ শুনলে কষ্ট পাবেন তাই।কিন্তু একদিন খবর এলো তোর নানু এক্সিডেন্ট করে মা’রা গেছে।সেদিন আমার দুনিয়া ধমকে গিয়েছিলো।আমি অনেক অনেক কেঁদেছিলাম।কারণ আমার এই গোটা দুনিয়াতে শুধু উনিই আমার আপন ছিলেন।তবুও আমি আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে’নি।
“যখন তুই দুনিয়ার আলো দেখলি তখন আমার পাশে তোর নিজের বাবা ছিলো না।সে তো ছিলো মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত।তবে তুই যখন আমার পেটেছিলি তখন তোর নাম তোর বাবাই রেখেছিলেন।উনি পেটে হাত দিয়ে বলেছিলেন- শায়ুরে আমাদের মেয়ে হবে আর তার নাম রাখবা ফায়জা চৌধুরি হলো ও তাই।
“আর এইদিকে আমার এমন করুণ অবস্থায় আমার পাশে ছিলো তোর বর্তমান মা-বাবা।
“তারপর যখন তোর এক-মাস তখন তোর বাবার অবস্থা অনেক খারাপ।যার কারণে আমি তোকে সে পরিবেশে বড় করতে চাই’নি তাই মনে মনে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।আমার যায় হয়ে যাক তোকে ভালোভাবে বড় করবো।তাই তো লেয়ান ভাই আর রেহেলা ভাবির কাছে তোকে দিয়ে এসে আমি আমার পালিত মায়ের কাজ সামলেছিলাম।কাজ’টা করতে আমার কষ্ট হয়’নি কারণ সেগুলা দেখেই আমি বড় হয়েছি।আমিও শেষমেষ মায়ের পথে হেটেছিলাম।রাস্তা অনেক ছিলো কিন্তু আমি মায়ের কারণেই এটাকে বেঁচে নিয়েছিলাম।
“লেয়ান ভাই আর রেহেলা ভাবি অনেক খুশি হয়েছিলেন তোকে দিয়ে দেওয়ায় কারণ উনাদের কোনো নিজের সন্তান ছিলো না তাই।
“তারপর তোর বাবার কি হলো জানি না।তবে এতটুক জেনেছিলাম উনি আমাদের খুঁজেছেন উনার ভুল বুঝতে পেরেছেন।তবে উনি বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়েগিয়েছিলো।আমাদের খুঁজে না পেয়ে উনি দেশ ত্যাগ করেছিলেন।
“আর আস্তে আস্তে আমি শায়লা খাতুন থেকে হয়ে উঠলাম বড় ক্রি’মি’না’ল মেয়ে পা*ছা*র কারী শিলা।যার হাতে অনেক বড় বড় মানুষ বন্দি।উনি অতীতের সব কথা বলেই থামলেন।
~ বর্তমান ~
“আমি আম্মুর অতীতের সব কথা শুনে আবারো কেঁদে উঠলাম।বাবা যদি ঠিক থাকতেন তাহলে আমারও একটা নরমাল লাইফ হয়তো।আমি ও মায়ের ভালোবাসা পেতাম।আমি কেঁদে কেঁদে আম্মুকে বললাম- তাই বলে তুমি আমাকে অন্যর কাছে দিয়ে দিবা।
“আম্মু বললেন- কি করবো বল এই পরিবেশ যে ভালো না।তোকে যে শান্তিতে বাঁচতে দিতো না।আর শুন তোর ভবিষ্যৎ ভালো হওয়ার জন্যই তো আমি এইরকম করেছিলাম।আর হ্যা ছোট বেলা থেকেই আমি তোর খুঁজ-খবর রাখতাম।
“আম্মুর কথা শুনে আমি বা’চ্চা’মো গলায় বললাম- আমি কিছু জানি না।শুধু এতটুকু জানি তুমি আমার সাথেই থাকবে।তোমাকে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না।তবুও আমার তোমাকে চাই আম্মু।
“আম্মু আমার কথা শুনে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললেন- দূর পাগলি এমন হয়’নাকি তোর এখন আলাদা একটা সংসার আছে।আমাকে আমার মতো ছেড়ে দে।তোর যখন ইচ্ছা হবে তখন আমার কাছে চলে আসবি।
“আমি অভিমানি গলায় বললাম- আমি কিছু জানি
না শুধু এতটুক জানি তুমি এসব বাজে কাজ ছেড়ে আমার সাথেই থাকবে।
“আম্মু আমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন তারপর আরও কিছু বলতে যাবেন তার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো।আম্মু সেদিকে তাকিয়ে বললেন- হয়তো রাসেল এসেছে চল বলেই আমাকে সহ্য দরজার কাছে নিয়ে গেলো।আর আম্মু দরজা খুলতেই দরজার ওপাশের ব্যক্তিকে দেখেই আমার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো।
“আমি কাঁপা-কাঁপা ঠোঁট নিয়ে বলে উঠলাম- রুদ্র…..
———————-
(চলবে)
(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।আর ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)
(শেষ-পর্বটা আগামীকাল পেয়ে যাবেন।আর এত তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য আমি দুঃখিত।তবে কথা দিচ্ছি নেক্সট গল্পটা নূর আর রুদ্রকে নিয়েই হবে।আর ইনশা-আল্লাহ সে গল্পটা জগাখিচুড়ি করবো না।এখন থেকে অবশ্য প্রতিদিন একটা করেই পর্ব পাবেন।কারণ আগে রমজান থাকায় দুটো পর্ব করে দেওয়া যেত।কিন্তু এখন তো আর তা’না তাই একটা করেই পর্ব পাবেন।কিন্তু যেদিন পারি আবার আমি দুটো করে পর্ব দিবো)