#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_তেরো
#তারা ইসলাম
———————————————————————
দেখো ভালো হবে যদি তুমি রুদ্রর জীবন থেকে চলে যাও।আমি রুদ্রকে ভালোবাসি আর রুদ্রও আমাকে ভালোবাসে!
“সামনে বসা অতী-সুন্দরী রমণীটার কথা শুনে মৃদু হেসে বললাম- দুঃখিত আপু!আমি না রুদ্রর জীবন থেকে যাচ্ছি”না উনি আমাকে যেতে দিবেন।তাই আমাকে অহেতুক কথা বলে কোনো লাফ আপনার হবে না।
“মেয়েটা আমার কথা শুনে রেগে বললেন- রুদ্র শুধু আমাকেই ভালোবাসে।ওতো ভালো মনের মানুষ তাই তোমাকে ডি*ভো’র্স দিয়ে তোমার জীবনটা ন*ষ্ট করতে চাচ্ছে না।কিন্তু প্লিজ তুমি ওর জীবন থেকে সরে যাও!আর আমাদের দুইজনকে মুক্তি দাও।
“উনার কথায় এবার রাগে সারা-শরীর আমার রি-রি করতে লাগলো তাই এক-প্রকার রেগেই বললাম- আপু আপনার মাথা ঠিক আছে?আপনি আমার হাসবেন্ডের নামে যা-তা বলবেন আর আমি বিশ্বাস করে নিবো?স্যরি আপু ওতটুক বোকা আমি নয়।আর শুনেন আমরা একে-ওপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসি তাই আপনি আমাদের মাঝে না আসলে ভালো হবে।বলেই আমি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আসলাম।মারিয়া অসুস্থ তাই সে আসতে পারে’নি আমি একাই এসেছি।
“নূর চলে যেতেই ফারিয়া সে দিকে রা*গি চোখে তাকালো আর মনে মনে বললো- অনেক বড় ভুল করেছো মেয়ে!আমি তোমাকে শান্ত ভাবে বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলে।
—————————–
কি সমস্যা কথা বলছো না কেন?আর এভাবে কান্না করার মানে কি বলবে?
“রুদ্রর কথা শুনে উনার দিকে ছলছল চোখে তাকালাম আর মুখ কালো করে বললাম- আপনার পিছনে যে এত আশিকা আছে আমার জানা ছিলো না।
“উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন- আশিকা মানে?
“আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম- ছেলে মানে আশিক,আর মেয়ে মানে আশিকা।
“আমার কথা শুনে উনি কয়েক-সেকেন্ড আমার দিকে তাকালেন তারপর হু-হা করে হেসে উঠলেন আর বললেন- এসব অদ্ভুত কথা শুধু তুমিই বলতে পারো।বলেই হাসতে লাগলেন।
“উনার হাসি দেখে বিরক্ত লাগলো আমি ম’রি আমার জ্বালায়!আর উনি আছেন হাসির তালে তাই এক-প্রকার রেগেই বললাম- একদম হাসবেন না।আমার মুটেও ভালো লাগছে না আপনার হাসি।
“উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন- ভী’তুরানীর আজকে আবার কি হলো?
“আমি নাক ফুলিয়ে সকালের সব ঘটনা উনাকে খুলে বললাম।
“আমার কথা শুনে উনার চো’য়াল শ*ক্ত হয়ে এলো তারপর রাগ নিয়ে বললো- মেয়েটার কথা আবার বিশ্বাস করে নিয়েছো নাকি?
“আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম- দূর বিশ্বাস করতে যাবো কেন?কিন্তু মেয়েটা আপনাকে মনে হয় আসলেই ভালোবাসে,তাই আমার খারাপ লাগছে ইচ্ছা হচ্ছে মেয়েটার মাথা ফাটিয়ে দিতে আর কাউকে পাই’নি একজন বিয়াইত্তা ব্যাটাকেই পেলো”বলেই মন খারাপ করলাম!
“আমার কথা শুনে উনি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন আর বললেন- অহহহ আচ্ছা মিসেসের তাহলে এই জন্যই রাগ হয়েছে।আরে বাবা কাউকে ভালোবাসা তো পাপ না সে ভালোবাসতেই পারে তাতে সমস্যা কি আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
“উনার কথা শুনেও আমি মুখ কালো করে বললাম- দাদি ঠিকি বলেছেন সুন্দর জামাই পে’লে কপাল ঝাল’পালা হয়।তাই তাড়াতাড়ি বা*চ্চা নিয়ে পেলাই উত্তম।
“উনি আমার কথা শুনে আমার পাশে বসে,আমার একহাত উনার হাতের মাঝে নিয়ে বললেন- আরে বোকা মেয়ে দাদি তো এমনে মজা করেই বলেছে কথা গুলা।আর শুনো বা*চ্ছা আল্লাহ যখন দেন আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।তারপর আমার হাত উনার বুকে রেখে বললেন- এই হৃদয়ে শুধু তোমার বসবাস নূর।
“আমি কিছু না বলে উনাকে শ*ক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম।আচ্ছা এত ভালোবাসা,এত সুখ,আমার কপালে সই’বে তো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
রেয়ান চৌধুরি বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।কিন্তু তার মন শুধু নূরময়ীর মধ্যে।আর তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে নূর আর রুদ্রর জড়িয়ে ধরে থাকার দৃর্শ্যটি।সেদিন সে কোনো কাজের জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো কিন্তু মাঝ-রাস্তায় রুদ্র আর নূরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতে দেখে তার মন একদম বি*ষে গিয়েছিলো।মনে মনে সে রুদ্র হিং’সা করতে লেগেছিলো
কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিলো।তারা হাসবেন্ড,ওয়াইফ পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ আছে তাই হয়তো একে-অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে।এসব স্বাভাবিক”কিন্তু তাও রেয়ানের মন মানছে না বার বার নূরময়ীকে নিজের করে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সেটা তার চরিএ এর সাথে যাবে না।এসব ভাবতেই রেয়ানের ফোন বেজে উঠলো।রেয়ান তাকিয়ে দেখলো তার বাবার সে প্রিয় পুরণো বন্ধু।আহান চৌধুরি”উনিই সে যে তাদের অসহায় অবস্থায় সাহায্য করেছিলেন।তাই’তো এত গুলা বছর চলে যাওয়ার পরও রেয়ান উনার খুঁজ-খবর নেন।
“রেয়ান ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো তারপর খুঁজ কবর নিতে লাগলো।
“ফোনের ওপাশে থাকা আহান চৌধুরি সালামের জবাব দিয়ে কিছুক্ষণ নরমাল কথা বলে বললেন- মাই বা*চ্ছা আমি দেশে ফিরছি কাল!তো আমাকে নিতে আসবে না।
“রেয়ান হেসে বললো- বাবাই(ছোট বেলা থেকেই রেয়ান উনাকে বাবাই বলে সম্মোধন করে) তুমি আসবে আর আমি নিতে যাবো না তা’কি করে হয়।
“আহান চৌধুরি বললেন- আমি দশ’টার মধ্যে পোঁছে যাবো।
“রেয়ান বললো- ঠিক আছে বাবাই।
“তারপর তারা কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।রেয়ান আজকে ভীষণ খুশি তার বাবাই ফিরছে ফারিয়া শুনলে একদম খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিবে।ভেবেই মুচকি হাসলো
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে যে আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবো তা কখনো আমি ভাবি’নি রুদ্র!কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলা বললাম উনাকে।
“উনি সোফায় বসে আমার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছেন।
“আমি ভাঙ্গা গলায় বললাম- আপনি এত গুলা’দিন পরিবারের সবাইকে ঠকিয়েছেন,সাথে আমাকেও,আপনি কেন এমন করলেন বলতে পারেন?
“উনি এবার রেগে বসা থেকে উঠে আমার সামনা-সামনি এসে বললেন- মুখ সামলে কথা বলো নূর।না বুঝে না জেনে আজে-বাজে বকবে না।আমার প্রফেশন টা আমার ইচ্ছা হলে সবাই কে বলবো!ইচ্ছা না হলে বলবো না সেটা একান্ত আমার ব্যাপার।
~কিছুক্ষন আগে~
~ উনার সাথে আমার দুইদিন ধরে দেখা না হওয়ায় উনাকে প্রচুর মিস করছিলাম।উনি কাজের জন্য নাকি উনার বাবার বাড়িতে যেতে পারেন’নি।তাই আমি ভাবলাম উনাকে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়।তাই উনাদের গাড়ি নিয়েই সকাল সকাল আমি বেড়িয়ে পরলাম উনার সে ফ্ল্যাটের দিকে।ওই ফ্ল্যাটের একটা চাবি আমার কাছে উনি রেখেছেন,যাতে উনি না থাকায় আমার সে ফ্ল্যাটে আসা যাওয়ায় সমস্যা যেন না হয় তাই।কিন্তু আমি খুশি মনে ফ্ল্যাটে ডুকতেই থমকে গেলাম।উনি পুলিশের পোশাক পরা,আর উনার সাথে আরও চার-পাঁচ জন পুলিশের পোশাক পরে সোফায় বসে উনার সাথে কি যেন কেসের কথা বলছেন।আর সব চাই’তে বড় কথা সেখানে থাকা একটা ছেলে উনাকে সম্মোধন করে বললেন- রুদ্র স্যার এই রাসেলের কেসটা আপনি সমাধান করার চেষ্টা করেন দেখবেন ইনশা-আল্লাহ সমাধান পেয়ে যাবেন।আর ব্যাটাকে ধরতেও পারবেন।
“উনি ওই ছেলেটাকে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই হুট করে উনার দৃষ্টি আমার দিকে পরলো।আর সাথে সাথেই উনি চমকে উঠলেন।আর উনার চমকানো দেখে সবাই আমার দিকে তাকালো।আর তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে ফেললেন।
“রুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন- তোমাদের সাথে থানায় গিয়ে এই নিয়ে আলোচনা হবে,এখন আসতে পারো।উনার কথায় সবাই বের হয়ে গেলেন।
~ বর্তমান ~
“আমি সোফায় বসে বসে কান্না করছি আর সব হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছি।উনি পুলিশ হিসেবেই হয়তো উনার কাছে পি*স্ত*ল টা ছিলো।
“উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন!আর রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন- নূর কান্না বন্ধ করো!বিশ্বাস করো আমার এসব একদম ভালো লাগছে না”তোমাকে এখানে কে আসতে বলেছে?আর এসেছো আমাকে বলে আসবা না?
“আমি কিছু না বলে নিজের ভয় কাটানোর চেষ্টা করলাম।মনে মনে নিজেকে শাসিয়ে বললাম- নূর তুই কি ন্যাকামো শুরু করেছিস।বা*চ্চা তুই এত কেন ভয় পাস!সে পুলিশ হলেও তোর হাসবেন্ড!নিজেকে নিজে আরও কিছুক্ষণ বকে শান্ত হলাম।তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- আপনি বললেন না কেন আপনি পুলিশ?
“উনি রেগে বললেন- নূর সেটা বলতেও আমি ইচ্ছুক নই!শুধু এতটুকু যেনে রাখো আমি চাই’না আমার কারণে পরিবারের কেউ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাক।
“আমি কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালাম এক-প্রকার অভিমান নিয়ে বললাম- আমি ওই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি আপনি এখানেই থাকবেন!খবরদার আমার শশুড় বাবার বাড়িতে একদম যাবেন না।আপনি মিথ্যা বলে এসেছেন এতদিন ধরে সেখানে যাওয়ার আপনার কোনো অধিকার নেই।আমি বাড়িতে গিয়ে সবাইকে আপনার সত্যটা বলে দিবো।
“আমার কথায় উনি মৃদু হাসলেন তারপর বললেন- ঠিক আছে যাও সমস্যা নেই।যদি আমি ওই বাসায় এক্কিবারের জন্য না ফি’রি তখন আবার কেঁদে কেটে জ্ঞান হারিও না।আরে যাও যাও বলে দিও সবাইকে আমার জন্য আরও ভালো হবে!যে কথাটা আমি বলতে চেয়েও পারি’নি সেটা তুমি বলে দিয়ে আমার উপকার করে দাও।
“উনার কথা শুনে রেগে আমি আবার সোফায় বসে পরলাম।উনি হেসে আমার পাশে বসে আমার কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললেন- নূর কিছু কিছু কথা আমি একান্ত রাখতে পছন্দ করি!আশা করি এতে তোমার কোনো সমস্যা হবে না?
“আমি কিছু না বলে চুপ-চাপ বসে রইলাম।
“উনি দুষ্টুমি হেসে বললেন- বসে আছো কেন?তুমি না চলে যাবে বলেছিলে?
“আমি রেগে বললাম- যাবো না আমি।
“উনি এবার হেসে বললেন- তাহলে থাকো সমস্যা কি?আমার এখন উঠতে হবে থানায় যেতে হবে।তুমি রাতের ডিনার রেডি করে রাখিও যদি না পারো খাবার অর্ডার করে নিবো সমস্যা নেই।
“আমি বললাম- খাবার অর্ডার করতে হবে না আমি রান্না করতে পারবো।আর কখন ফিরবেন?
“উনি উঠে দাঁড়িয়ে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললেন- রাত হবে একটু তবে আমি তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করবো।
“আচমকা উনার এমন কাজে অবাক হলেও মুচকি হেসে বললাম- আমি অপেক্ষায় থাকবো….
————————————-
(চলবে)
(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।আর ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)
(আজকে আর পর্ব দেওয়ার কথা ছিলো না কিন্তু সময় পেয়ে যাওয়ায় লিখতে বসে গিয়েছিলাম।তাই আপনাদের আর অপেক্ষা না করিয়ে পর্বটা দিয়েই দিলাম।পরের পর্ব ইন-শা-আল্লাহ শনিবারে আসবে।এখন থেকে আস্তে আস্তে সব রহস্যের ঝট আমি খুলবো।একটু ধের্য্য সহ্যকারে পড়ুন।আর অনেকের কাছে হয়তো রুদ্র আর নূরের ভালোবাসা গুলা ন্যাকামো লাগছে তার জন্য আমি দুঃখিত।তবে সামনের পর্ব গুলার জন্য অপেক্ষা করুন ইন-শা-আল্লাহ আপনাদের নিরাষ করবো না)