#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
৪২,৪৩
আঁখির নাম নিয়ে চিৎকার করে করে কাঁদছে আদ্রিশ অন্ধকার কক্ষে বসে,বারান্দা হয়ে রাতের চাঁদের ছড়ানো কিছু আলো ঘরে প্রবেশ করেছে মাত্র,সেই আলোতেই আঁখি আর তার বিয়ের দিনের ছবি দেখে যাচ্ছে আর কাঁদছে।আজ চারদিন হলো ঠিকমতো খায়নি সে,ঘুম নেই চোখে,জীবন নিরর্থক হয়ে আছে তার,চারিদিকে যেন আঁখিকেই দেখতে পায়,কাজেও যায় না,আফসোস করে আজ নিজের হাতের নিজের গুছানো জীবন শেষ করে দিল,মোহের টানে ভালোবাসাকে তুচ্ছ করল,আজ মোহ শেষ হয়ে গেলেও ভালোবাসা হীনা জীবন্ত লা*শে পরিণত হয়েছে সে।এখন যে অন্ধকারেই বসে থেকে দিন পার করা তার কাজ,কোনোকিছুতেই মনোনিবেশ করতে সক্ষম হয় না সে আর।নেই এমন কোনো আশ্রয় যেখানে গেলে পাবে মনের অল্প প্রশান্তি,সব আপনজন তো নিজ হাতেই জীবন থেকে সরিয়েছে।তাদের কাছে ক্ষমা চাইবারও সাহস জুটিয়ে উঠতে পারছে না,কান্নার সাগরে ভেসে ভেসে ডাকছে আঁখিকে।
″আঁখি এই আঁখি, আসবে না ফিরে?চলে এসো না,আমি ভুল করে গেছি আঁখি দয়া করে ক্ষমা করে দাও,দেখো না আজ আমি নিঃস্ব, না খেঁয়ে থাকলে তোমার মতো কেউ জোর করে মুখে তুলে খাওয়ায় না আজ আর,মন খারাপ থাকলে কেউ এটা ওটা বলে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করে না,ইচ্ছে করে আমার সাথে ঝগড়া বাঁধায় না আর না তো নিজে থেকে কথা বলতে আসে,আমায় ক্ষমা করে দাও,আমি বুঝতে পারি নি,এখন যখন তোমায় অন্যের সাথে দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম তোমার সেদিন কতটা খারাপ লেগেছে রিদিকাকে আমার জীবনে মেনে নিতে গিয়ে।দয়া করে চলে আসো আমি পারব না তোমাকে অন্যের সাথে মেনে নিতে আর,আমি যে ভুল করে গেছি,ক্ষমা করে দাও আমায়।
না আঁখি আর নয় তোমাকে তো আমার কাছে ফিরতেই হবে,এখন তুমি আসতে না চাইলে আমাকে তো অন্য পথ অবলম্বন করতেই হবে।দিনশেষে তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে আঁখি।দেখে নিও।″
_______________
আজ ধুমধাম করে আঁখি আদৃতের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হলো,সকল গেস্টরা চলে গেলে হঠাৎ সেখানে এলেন ডা.সানিয়ার স্বামী রাকিব।রাকিব সোজা এসেই আঁখির উদ্দেশ্যে বলল।
″ডা.আঁখি সানিয়া যা করেছে ভুল করেছে আমি মানছি,তাই বলে তাকে জেলে দিয়ে দিবেন!ও তো ওর ভুলের সাজা পেয়েছে, আদৃতকে তো ও অবশেষে পায় নি,বরং কথাটা আপনি আমাকে জানালে এ নিয়ে ওর সাথে আমার অনেক বিবাদ হয়,কিন্তু ওকে কি জেলে দেওয়াটা জরুরি ছিল?আমাদের এই নিষ্পাপ সন্তানের দিকে তাকিয়ে হয়েও ওকে ক্ষমা করে দাও,প্লিজ। কেসটা তুলে নাও।″
″দেখুন মি.রাকিব আপনার ওয়াইফের জন্য দুইটা মানুষকে কতটা যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা আপনি কল্পনায়ও ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না,এমন ধোঁকাদারির জন্য আমার আর ডা.আদৃতের মধ্যে যে কারো প্রাণের নাশও ঘটতে পারত তার দায় কি আপনার স্ত্রী নিতেন?আঁখি ছেড়ে দেওয়ার মেয়ে না,তাই প্রমাণ সহিত আপনার স্ত্রীকে জবাব দিয়েছি,তবুও আপনাদের বাচ্চাদের কথা ভেবে আমি কেস তুলে নিব কিন্তু এর আগে ওকে একটু সাজা কাটতে হবে,সবে তো কয়েকদিন হলো মাত্র,এক মাস না হয় জেলে কাটাক,এক মাস পর বাড়ি ফিরে আসবে আপনি নির্দ্বিধায় থাকতে পারেন।তা বসুন।″
″না কাজ আছে।″
মলিন মুখে চলে গেল রাকিব।
″আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব আঁখি?″
″হুম,করুন ডাক্তার সাহেব।″
″তুমি তো কাউকেই ছাড় দেও না,তবে আদ্রিশের বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ কেন নেও নি?″
″এমনও তো হতে পারে ওর বিরুদ্ধে এত ভয়াবহ কিছু করেছি যা কেউ জানে না।…হা হা হা″
কথাটা প্রথমে গম্ভীরত্ব নিয়ে বলল অতঃপর অল্প থেমে হেসে দিলো।
″কখনও কখনও আমার তোমাকে অনেক রহস্যময় মনে হয়।″
″এতো রহস্য খোঁজতে আসবেন না,পরে না আবার রহস্যের তলে হারাতে হয়।″
″তোমাতে হারানোর তো একটা সুযোগ চাই সুখপাখি,সুযোগ পেলে কখনও ছাড় দিতে চাই না,হোক না সে তোমার কোনো রহস্য অতলেই।″
″আর যদি রহস্য খোঁজতে এসে আমায় হারাতে হয় আবার?″
আঁখির মজার ছলে বলে যাওয়া কথাটা আঘাত করে গেল আদৃতের মনে,সাথে সাথে ঝাপটে ধরল তাকে,বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল।
″এমনটা বলো না কখনও সুখপাখি,পাগল হয়ে যাব আমি,আমি খোঁজব না কখনও এমন কিছু যার বদৌলতে আমার তোমাকে হারাতে হয়।″
″সত্যিই আপনি পাগল,কোথাও যাচ্ছি না আমি,এই তো আছি আর সারাজীবন থাকব আপনার হয়ে।″
______
আঁখিকে তা পরিবার তাদের কাছে নিয়ে এসেছেন।আঁখি এখন খান ম্যানশনেই থাকে।
আঁখি রেডি হচ্ছিল, আদৃত হঠাৎ করেই জেদ ধরল রেডি হয়ে থাকতে ওকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবে।তখন আঁখি জানতে পারল আশরাফ রায়হান খান আদ্রিশের নামে কেস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।হুটহাট গেল আঁখি তার বাবার কাছে।
″বাবা তুমি আদ্রিশের নামে কেস করতে যাচ্ছো?″
″হ্যাঁ,এতোদিন ওর বিরুদ্ধে স্টেপ নেইনি কারন আমি তোর উপর রেগে ছিলাম কিন্তু এখন তো নই,আমার মেয়ের সাথে এমন করা কেউ কখনও পার পেয়ে যেতে পারবে না।″
″না বাবা আমি কেস করে এতো ছোট সাজা ওকে দিতে চাই না,আমি চাই ও নিজের কাজে আফসোস করুক,ফিরে পেতে চাক হারিয়ে যাওয়া সব কিন্তু খালি হাতে ফিরে যাক,আর এমনটা হচ্ছে ও,তুমি জানো ও রিদিকাকে ছেড়ে দিয়েছে,ঘর থেকেও বের করে দিয়েছে আর এখন নিজে সারাদিন পথভ্রষ্ট হয়ে ঘোরাফেরা করে,আর কি চাই বলো।প্লিজ তুমি এবার কেসটেস করতে যেও না।″
″তবে তুই এতসব জানিস কি করে?″
″ওসব তুমি না জানলেও হবে বাবা,তোমার মেয়েকে কোনোদিক থেকে কম মনে করো তুমি?″
″হুম, এটা তো আমারই মেয়ে।আমার পাগলি প্রমত্ত অঙ্গনা।″
″আস্তে বলো বাবা পরে না পুলিশ আমায় ধরতে আসে,প্রমত্ত অঙ্গনা কিন্তু মানুষের খু*ন করে বেড়ায়,পুরো বাংলাদেশের পুলিশ ওকে খোঁজে বেড়াচ্ছে। হা হা।″
″আরে হ্যাঁ, আমি কখনও কখনও ভাবি,তোকে আমি আদর করে প্রমত্ত অঙ্গনা ডাকতাম,কারণ তুই সারাদিন দুষ্টুমি পাগলামি করতি আর রেগে গেলে তো আর কথা নেই সে কি রূপ,তাই এমনটা ডাকতাম।কিন্তু একই নামে কেউ এভাবে মানুষ খু*ন করে বেড়াবে কে জানত।″
″আচ্ছা ওসব ছাড়ো বাবা,তুমি এখন আর কোনো কেস করছ না,ঘরে বসে রিলাক্স করো।″
________________
আঁখি আজ আদৃতের দেওয়া সেই কাতান শাড়িটা পরেছে,সাথে মেচিং করে হালকা কিছু জুয়েলারি পরে চুল ছেড়ে দিয়েছে,চোখে কাজল দিয়েছে আজ গাঢ় করে,হালকা করে লিপস্টিকও দিয়ে দিলো ঠোঁটে,ব্যাস আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই যেন মুগ্ধ হলো।পিছন থেকে মাইশা বলে উঠল।
″কি রে,ডা.সাহেবকে মারার ফন্দি করছিস না কি?এতো সাজসজ্জা,বেচারা তোর রুপে মগ্ন হয়ে না প্রাণ হারায়।″
″তোর মুখেই যতসব অলক্ষুণে কথা।″
″হুম, এখন থেকে স্বামীর অমঙ্গলের ভয় দেখছি।″
″তো হবে না কেন।স্বামী পরে হলেও আগে উনি আমার ভালোবাসা,আর আমি কখনও চাই না উনার সাথে বাজে কিছু হোক।″
″হুম,তা আমার কথাই লাগল তো দেখলি?″
″কি কথা?″
″এই তো বলেছিলাম না,একদিন এই পরিবার তোকে আবারও মেনে নিবে।″
″আমিও জানতাম আমার বাবা– মাম্মাম,আমার পরিবার কখনও আমাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।আর তোর দেওয়া আশ্বাসটা থেকেই তো শক্তি পেতাম।″
″মাইশার দেওয়া আশ্বাস মানে?″
আহিলের হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয়ে ভ্রু উঁচিয়ে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে বলা কথাটায় হকচকিয়ে উঠল মাইশা আঁখি দু’জনই,সাথে সাথেই দু’জনই জিহ্বায় কামড় দিয়ে দিল।এবার আহিলের কাছে পরিষ্কার হলো সবটা।
″বুঝতে পেরেছি আমাদের দ্বন্দ্ব থাকলেও বান্ধবী দু’জনের আলাপচারিতা বজায় ছিল।আর ওই বদের হাড্ডি মাইশা এতদিন আমার সাথে মিথ্যা বলছিল যে আঁখির সাথে ওর কোনো যোগাযোগ নেই।″
″তো কি হয়েছে?তোরা বাপ ছেলে যার তার সাথে ঝগড়া করবি আর তোদের হয়ে সবাই মা*রা*মা*রি*তে এগিয়ে যাবে না কি?হ্যাঁ আমাদের যোগাযোগ ছিল।এমনকি আমরা দেখাও করতাম প্রায়ই,আর এই যে বাপ হতে চলেছিস তা সবার আগে আমিই কনফার্ম করেছি।″
অবাক হয়ে আহিল মাইশার দিকে তাকালে মাইশা দাঁত কেলানো একটা হাসি দিয়ে দেয়।
″হয়েছে এখন গোয়েন্দা গিরি ছেড়ে রাস্তা থেকে সর তো আমায় এখন যেতে হবে আমার দেরি হচ্ছে।″
″হ্যাঁ,তোর মহারাজা সেই কখন থেকে এসে বসে আছেন।″
″ওকে তবে যাই।সর সর।″
গাড়িতে বসে আছে আঁখি আদৃত, আদৃত ড্রাইব করছে আর বার বার আঁখির দিকে তাকাচ্ছে।
″এই যে মিস্টার,হয়ত ড্রাইব করুন নয়ত গাড়ি আটকিয়ে আমাকে দেখুন,কারণ আপনি যা শুরু করেছেন একটা দূর্ঘটনা তো ঘটিয়েই ছাড়বেন।″
″দূর্ঘটনা তো তুমি ঘটিয়েছ সুখপাখি এমন রূপে আমার সামনে এসে,কালো শাড়িতে তোমার এই মোহনীয় রূপ কতটা যে হৃদয়কারা তা তোমাকে বুঝিয়ে তোলার সক্ষমতা এই অধমের নেই।শুধু বলব আজ আঁখিদ্বয় বাধা মানবে না,দেখে যাবে তোমাকে অপলকে।″
″দেখুন নজর লাগবে আমার,চোখ সরিয়ে রাখুন।″
″তোমাতে নজর লাগালোর অধিকারটুকু তো আমারই,কেন তার সুযোগ যেতে দিই?″
″আপনার গায়ে আমেরিকার বাতাস লেগেছে,নয়ত নিরামিষ ডাক্তার হঠাৎ এতো রোমান্টিক কেমনে হবে!তা এখন মনোযোগ সামনে দিলে খুশি হবো জনাব।আমাকে দেখার জন্য পুরো জীবন পাবেন।″
আঁখি আদৃতের গালে হাত দিয়ে চেহারা সামনের দিকটায় করল,আদৃত আলতো হেসে ড্রাইব করতে শুরু করল।আঁখিও হেসে বলল এবার।
″তা যাচ্ছি কোথায় বললেন না?″
″গেলে দেখতে পাবে,স্যারপ্রাইজ কাউকে বলে দেয় না কি?″
রিদিকা হুডি পরে মাস্কটাও পরে নিল,একদম তৈরি সে,আজ ছাড় দিবে না আদ্রিশকে,সেই ভাবনায় গেল আদ্রিশের বাড়ির দিকে তবে তখন আদ্রিশকে গাড়ি নিয়ে কোথাও বেরুতে দেখল।রিদিকা হুডি আর মাস্কটা খুলে এবার সাধারণ মানুষরূপে একটা সিএনজিতে উঠল।আদ্রিশের গাড়ির পিছু করতে শুরু করল।
চলবে…
#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৪৩)
রিদিকা হুডি,হাতমোজা আর মাস্ক মনে করে নিজের সাথে করে আনা ব্যাগে নিয়ে নিয়েছে,শরীর অনেক দূর্বল হয়ে গেছে তার,সামনের দাঁত সহিত প্রায় সব চুল উঠে গেছে।আদ্রিশ আদৃতের পিছন লোক লাগিয়েছিল,জানতে পেরেছে আদৃত আঁখিকে নিয়ে বর্তমানে এক জায়গায় যাচ্ছে, সেখানটার ঠিকানাও আদ্রিশ জানতে সক্ষম হয়েছে,বর্তমানে সেই উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে আজ যাই হয়ে যাক আদ্রিশ আঁখিকে ছিনিয়ে নিয়ে আসবে আদৃতের কাছ থেকে মন স্থির করে নিয়েছে।
এদিকটায় আদৃত আঁখিকে নিয়ে সুন্দর সে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে।
″আচ্ছা আঁখি রিদিকার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিলে না যে? তুমি আমায় সেদিন ইন্সপেক্টর জিসানকে কিছু বলতে দিলে না,আমার তোমাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে রিদিকা তোমাকে না কিছু করে বসে।আর আমার যতটুকু মনে হয় রিদিকাই প্রমত্ত অঙ্গনা।″
″রিদিকাই প্রমত্ত অঙ্গনা আমি শিওর,কিন্তু তার কোনো প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।আমি গতকাল ইন্সপেক্টর জিসানকে রিদিকা সম্পর্কে সবকিছু জানিয়েছি,আমিরুল আর নিলিমা কেসের জের ধরে ইন্সপেক্টর জিসান রিদিকার পরিবারের খোঁজে ওদের ঢাকায় থাকার স্থানে পৌঁছাতে পারলেও বরিশালে ওরা কোথায় থাকেন তা খোঁজে বের করতে পারেন নি।অতঃপর আমি সবকিছু জানালে উনি শিওর খবর পেতে বরিশাল যান রিদিকার বাড়িতে।আসলে উনারা বেশি বিভ্রান্তিতে ছিলেন কারণ রিদিকা আমিরুলের সাথে যশোরে তাহমিনা নামে ছিল,তার কারণ ছিল আমিরুল রিদিকাকে নিয়ে সেখানে থাকত সে খবর যাতে পরিচিত কেউ না পায় বা বুঝতে পারে,তাই ছদ্মনামে থাকছিল।তাছাড়া ওর পরিবার আর বেশ আত্নীয় স্বজন ওকে রিদু নামেই ডাকত,তাই আমিরুলের পরিবারের কাছ থেকেও ওর পুরো নাম জানতে পারেন নি ইন্সপেক্টর জিসান।″
″হুম,এই রিদিকা সত্যিই ভাবনার বাইরে,আদ্রিশের কপাল বলতে হবে।হা হা হা হা।কি ফেলে কি আনল!″
″এতো খুশি হবেন না,আপনি কি জানেন আপনি নিজের কপালে কি জুটিয়েছেন?হয়ত বা রিদিকা থেকেও ভয়ংকর কেউ আমি।″
″তুমি যতই ভয়ংকর হউ না কেন ভালোদের জন্য সবসময়ই কল্যানকর,আর আমার জন্য তো আমার জীবন।″
″সবকিছুতে রোমান্টিক ডায়লগ এনে ঢুকানো মিস হয় না?″
″সাথে এতো সুন্দরী রমণী থাকলে যে কেউ রোমান্টিক হতে বাধ্য হবে।দেখো না আমি তোমার প্রেমে আসত ঢেঁড়স থেকে গাজরে পরিণত হয়ে গেছি।″
″আপনিও না,হা হা হা।যাক নিরামিষতা অল্প কেটেছে আপনার।কমপক্ষে হাসাতে তো পারেন এখন আমায়।″
″মুক্ত ঝরানো সেই হাসি দেখার জন্য তো আমি জোকার হতেও রাজি।″
″হয়েছে আর কিছু হতে হবে না ড্রাইবিং এ মনোযোগ দিলেই হবে বর্তমানে।″
___________
আঁখিকে নিয়ে আদৃত পৌঁছালো বেশ বড় একটা সুইমিংপুল প্রান্তে,সুইমিংপুলের পানিতে ভাসমান অজস্র ফুল,মধ্যখানে ফুল দিয়েই বড় একটা হার্ট বানানো আর তার মধ্যে লিখা দৃতখি।পুলের চারপাশে অজস্র বেলুন ও ফুল সাথে মোমবাতিও শোভা পেয়েছে।আঁখি এবার বেশ উৎসুখ হয়ে জানতে চাইল।
″এই দৃতখি এর মানে?″
″আদৃত + আঁখি =দৃতখি।সুন্দর না।″
″অদ্ভুত,একদম আপনার মতো।″
কথাটা বলে আঁখি মোহিত দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতের দিকে,কালো শার্টটা একদম তার গায়ের মাপ অনুযায়ী যা লেপ্টে আছে গা বরাবর,হাতের শক্ত পেশিগুলো জানান দিচ্ছে শার্টের ভিতর থেকেই,গালের সেই খোঁচা দাঁড়ি, সাথে তৃপ্তির সেই হাসিখানা,কপালে এসে লেপ্টে পরা চুল সবকিছুই আজ যেন আঁখিকে আবারও আরেকদফা আদৃতের প্রেমে ফেলছে।সেই ছয় বছর আগে আঁখি ঠিক এভাবেই তো এই সুদর্শন পুরুষের প্রেমে পরেছিল,আদৃতের সব দিক আঁখিকে তার প্রতি যেন টানত খুব করে, হঠাৎ আঁখির ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাল আদৃত।
″এই যে ডা.সাহেবা,কি এমন দেখছেন?″
″দেখছি কেউ কিভাবে এতটা নিঁখুত ভালোবাসতে পারে।কেন সেদিন সানিয়া আর আদ্রিশের ধোকায় পরলাম,জীবনের ছয় টা বছর আপনার মতো মানুষের সান্নিধ্য হারালাম।″
″পিছনে ফিরে তাকিয় না সুখ,হারিয়ে ফিরে পাওয়ার অনুভুতিটাও যে আলাদা এক ভালোলাগার শিহরণ তৈরি করে মনে,আছি তো আজ থাকব সারাজীবন, কথা দিলাম। তা চলো তোমাকে কিছু দেখাই।″
অতঃপর আদৃত আঁখিকে নিয়ে পুলের অন্য এক প্রান্তের দিকে গেল।সেখানেও লাল পোলাপের পাঁপড়িতে বড় একটা হার্ট বানানো,আদৃত সেই হার্টের মধ্যেখানে আঁখিকে নিয়ে দাঁড় করাল।তারপর হুট করে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল,হাতে আদৃতের লাল তাজা গোলাপ।প্রেমময় স্বর ফোটিয়ে বলতে লাগল।
″আংটি তো আগেই পরিয়ে দিয়েছি সুখ,তবে মনের কথা সোজা ভাষায় আজও প্রকাশ করতে পারি নি,ভাবতে পারো লাল গোলাপের আশ্রয়ে এই অধমের ভালোবাসা প্রকাশের এটা ছোট্ট এক প্রচেষ্ঠা মাত্র।তুমি আমার কাছে এই লাল গোলাপের মতই সুখ,যাকে পেতে আগে তার কাঁটার বিষাদ গায়ে মাখতে হয়েছে।তবে অবশেষে তার সান্নিধ্য পেয়েছি।আমার জীবনে শুধু একটাই চাওয়া সুখ।সে চাওয়াটা শুধু তুমি,পাওয়াটাও তুমি হবে অটল বিশ্বাস যে আছে আমার আল্লাহ তায়ালার প্রতি।ভালোবাসি বড্ড তোমায়,হারিয়ে গেলে নিজেকেই হারিয়ে যাব।বলো না ভালোবাসো আমায়ও।″
″ভালোবাসি, আমার ডাক্তার সাহেবকে।″
″সত্যিই বাসো তো!″
″ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।″
″আঁখির তিন তিন বার দিয়ে উঠা স্বীকারুক্তিতে আদৃতের খুশিতে দ্বিগুণ আমেজ যোগ হলো।উঠে দাঁড়িয়ে আঁখিকে জড়িয়ে নিল নিজের বুকের সাথেল।আঁখিও জড়িয়ে ধরল আদৃতকে।কিছুক্ষণ পর আঁখি বেশ লজ্জা নিয়ে আদৃতকে ছাড়িয়ে নিল নিজের কাছ থেকে,অতঃপর লজ্জামিশ্রিত হাসিতে তাকে পাশ কাটিয়ে চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগল।চারিদিকেই ফুল আর বেলুনের ছড়াছড়ি,কিছু কিছু জায়গা পরে পরেই লিখা,ভালোবাসি সুখপাখি।
ওয়েলকাম বেক টু মাই লাইফ হিটলার,দৃতখি, ভালোবাসি সুখ।আরও না জানি কতো কি।যা ফ্লোর থেকে নিয়ে আসপাশের দেয়ালগুলোতেও শোভা পেয়েছে,আঁখি একটা মোমবাতির পাশে দাঁড়িয়ে তার পাশে ফুলের পাপড়িতে লিখা দৃতখি শব্দটা বিমোহিত হয়ে দেখছিল ঠিক তখন আদৃত পিছন থেকে তার গলায় একটা ডায়মন্ডের নেকলেস পরিয়ে দেয়।অতঃপর আঁখিকে সেখানেই রাখা ফুলে সজ্জিত একটা আয়নার সামনে নিয়ে যায়,তার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে।
″পছন্দ হয়েছে?″
″হুম,কিন্তু আমার কাছে সবকিছুর থেকে বেশি পছন্দের আপনি।″
আদৃত আলতো হেসে এবার একটা লাল গোলাপ আঁখির কানে গুঁজে দিয়ে গাইতে শুরু করে।
বকুলের মালা শুকাবে…
রেখে দিব তার সুরভী…
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে…
মুছো না কো আমারি ছবি…
আমি মিনতি করে গেলাম…
আদৃত আঁখির হাত ধরে তাকে নিয়ে গিয়ে পুলের পাশটায় বসালো,তার হাত ধরে থাকা অবস্থায় তার পাশে বসল,এদিকে গানটা গাইতে থাকল।
এই মন তোমাকে দিলাম…
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।
এবার আঁখিও গাইলো।
তুমি চোখের আড়াল হও…
কাছে কি’বা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম।
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।
তুমি চোখের আড়াল হও…
কাছে কি’বা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম।
দু’জন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে গানটি গেয়ে গেল।যাতে ব্যক্ত করল দু’জন দু’জনাকে নিজেদের মনের প্রেমময় ভাব,গান শেষে বেশ লজ্জায় পরল দু’জনই,একে ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
পুলের পানিতে পা ভিজেয়ে রেখেছে দু’জনই,বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর আঁখি আদৃতের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদের প্রতি দৃষ্টি স্থির করল,আদৃত আঁখির হাত নিজের হাতে নিয়ে নিজেও চাঁদের প্রতি মনোনিবেশ করল।আজকের পূর্ণ চাঁদ,আঁখি আদৃতের জীবনের পূর্ণতার আভাস যেন দিয়ে যাচ্ছে।
″ভালোবাসি সুখ।″
″আমি ভালোবাসি আমার ডা.সাহেবকে।″
তখনই পিছন থেকে আদ্রিশের ঝাঁঝালো স্বর কানে এলো দু’জনের,আদ্রিশ আঁখি বলে চেঁচিয়ে উঠেছে,আদৃত আঁখি কিছু না বুঝে হতভম্ব হয়ে উঠে দাঁড়ালে আদ্রিশ আর তাদের ভাবার কোনো পথ না দিয়ে সোজা আদৃতের মুখে কিছু স্প্রে করলে আদৃত জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল সাথে সাথেই।আদ্রিশ সে সুযোগে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে আদৃতের উপর ঝাঁপিয়ে পরতে নিলে আঁখি তাকে এক ধাক্কাতে বেশ দূরে ছিটকে ফেলে।
″তোমার সাহস হলো কি করে আদ্রিশ আমার ডা.আদৃতের উপর এভাবে অ্যাটাক করার?উনার সাথে শক্তিতে পেরে উঠার সক্ষমতা তো নেই তোমার তাই উনাকে অজ্ঞান করেছ তাই না,তবে ভেব না আমি বেঁচে থাকতে উনার কিছু হতে দিব।″
″আঁখি তুমি এমনটা করো না আঁখি,কেন ওই আদৃতের প্রতি দরদ দেখাচ্ছ,তুমি তো শুধু আমার আঁঁখি,তুমি আমার সাথে চলো আমি আদৃতকে কিছুই করব না।″
″লজ্জা করল না তোমার ওই নোংরা মনে আবার আমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে,অন্য নারীর শরীরে মন ভরে গেছে তো এখন এসেছ আবার আমার কাছে।″
″আঁঁখি ক্ষমা করে দাও,প্লিজ ফুলপরি,আর কখনও এমন হবে না,চলো না আমার সাথে প্লিজ।″
আদ্রিশ কেমন জানি অস্বাভাবিক আচরণ করছে,যেন মানসিক ভারসাম্যহীন কেউ,আঁখি এবার বেশ তাচ্ছিল্য সহিত বলল।
″এই পাগলামি তোমার ততদিন ঠিক ছিল যতদিন তুমি এক আমিতে আবদ্ধ ছিলে আদ্রিশ,তোমার এসব এখন দেখতে আমার ডং আর ন্যাকামো ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না,প্লিজ তুমি চলে যাও।″
″আমি তোমাকে না নিয়ে যাবো না।″
এই বলে আঁখির হাত ধরে তাকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াবে তখনই তার মাথায় প্রচন্ড জোরে একটা আঘাত করে পিছন থেকে কেউ একজন,সাথে সাথে আদ্রিশ জ্ঞান হারিয়ে লুটে পরে,আঁখি ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুডিওয়ালা মাস্ক পরিহিত কাউকে,বুঝতে তার বাকি নেই কে সেই জন,হুডিওয়ালা জন এবার ছু*রি নিয়ে আদ্রিশের উপর প্রহার করতে নিলে আঁখি তাকে এক ঘুষিতে বেশ দূরে ফেলে দেয়,তেড়ে গিয়েই এক টান দিয়ে তার মুখের মাস্ক খুলে ফেলে,চুরের মতো তাকিয়ে থাকে রিদিকা তার দিকে,এবার আঁখি তাচ্ছিল্য হেসে বলল।
″আমি জানতাম রিদিকা তুই ই নকল প্রমত্ত অঙ্গনা,যে নিজের স্বার্থের গায়ে আঘাত দেওয়া লোকদের খু*ন করে বেড়ায়,যাকে বলো বদ্ধ উন্মাদ।″
″হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল,আমি প্রমত্ত অঙ্গনা,আমিই সবার খুন করেছি।ওই শিউলি,আব্দুল, মিশু,আমিরুল,নিলিমা,কলি,লিজান,ইয়াসমিন সবার খুন আমি করেছি আর এখন তোকেও মারব।তারপর আদ্রিশকে মারব,আমি সবাইকে মেরে ফেলব যারা আমার পথের কাঁটা হবে।
চলবে…